#অভিমান
#২০
…………..
.
.
মাকে দেখে আমি থমকে দাঁড়িয়ে গেলাম,অবিশ্বাস্য চোঁখ নিয়ে উনার দিকে তাকালাম ,আমি তাকাতেই উনি মৃদু হেসে হাত দিয়ে ইশারা করে দেখালেন মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য ,
আমি ছলছল চোখ নিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে মায়ের সামনে স্তির হয়ে দাঁড়ালাম,আমাকে দেখেই মা দাড়িয়ে গেলেন,
আমি কিভাবে রিয়েক্ট করবো বুঝতে পারছিলাম না,মায়ের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম ,
হঠাৎ মা আমাকে জরিয়ে ধরে কেঁদে উঠলেন,
মা আমাকে জরিয়ে ধরতেই আমার এত দিনের কষ্ট অভিমান জল হয়ে চোঁখ দিয়ে গড়িয়ে পরতে লাগল,
আমি অজোরে কাঁদতে লাগলাম ,মাকে বুকে থেকে কান্না জরিত কন্ঠে বলতে লাগলাম,
-তোমাকে আমি এতো এতো ফোন দিয়েছি কথা বলার জন্য তুমি আমার সাথে কেন কথা বল নি ,তুমি জানো আমার কত কষ্ট হয়েছে,
আমার সাথে আর রাগ করে থেকো না মা ,আমাকে ক্ষমা করে দাও,আমার ভুল হয়ে গেছে মা ,
কেঁদে আমি কথা বলেই চললাম,
মা আমাকে বুক থেকে সরিয়ে নিজের চোঁখের জল হাত দিয়ে মুচে হাসি মুখে আমাকে সোফাতে বসিয়ে আমার চোঁখের জল মুচে দিতে দিতে বলতে লাগলেন ,
-শান্ত হো মা আর কাঁদিস না,তোর কোনো ভুল হয় নি ,ভুল আমাদের হয়েছে ,তোকে ভুল বুঝে অনেক কষ্ট দিয়েছি,
মায়ের কথা শুনে আমি প্রশ্নবিদ্ধ চোখে মায়ের দিকে তাকালাম,আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না এসব কি বলছেন মা,
আমাকে এভাবে অবাক হতে দেখে মা আবার বলে উঠলেন,
-আজ সকালে কাব্য আমাদের বাসায় গিয়েছিল,
ও সব কিছু আমাদের বলছে নিজের দোষ শিকার করে নিয়ে আমার আর তোর বাবার কাছে ক্ষমা চেয়েছে,
এই বিয়েতে তোর কোন দোষ ছিল না,
আমি বিস্ময়ভরা দৃষ্টি নিয়ে মায়ের কথা শুনতে লাগলাম ,
মা কিছুটা থেমে আবার বলতে লাগলেন,
-প্রথমে সবটা শুনে আমি রেগে গিয়েছিলাম,কিন্তু তোর বাবা আমাকে শান্ত হয়ে সবটা শুনতে বললেন,তারপর কাব্য ওর মনে থাকা সব কথা আমাদের সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে বলল,কেন ও এমন করল,এভাবে মিথ্যে কেন বল,।
ওর রাগের কারনে তুই যে ওকে ভয় পেয়ে পালিয়ে বেরাতি,ওর ভালবাসার কথা তোকে বলতে না পারা,সব কিছু বলল।
ওর সব কথা শুনে বুঝতে পেরেছি ছেলেটা তোর প্রচন্ড ভালবাসে।তোর জন্য আমরা এমন কাউকেই চেয়েছিলাম যে তোকে খুব ভাল রাখবে আগলে রাখবে ।আমরা দেখে শুনে তোর বিয়ে দিলেও হয়তো কাব্যের থেকে ভালো কাউকে তোর জন্য খুঁজে পেতাম না।ওর করা কাজটা হয়তো
ঠিকছিল না কিন্তু যা হয়ে গেছে সেটা তো আর ফিরানো যাবে না।
এই বিয়ে নিয়ে তোর বাবা আর আমার কোনো আপত্তি নেই।আমরা সব কিছু মেনে নিয়েছি।সব মা ,বাবাই চায় তার মেয়ে যেন ভালো থাকে সুখে থাকে ,তুই যদি কাব্যের সাথে থাকিস ও কখনও তোকে অসুখি রাখবেনা।তোর বাবা তোদের দুজনকে এক সাথে আমাদের বাসায় যেতে বলেছেন।
মায়ের কথা শুনে কিছুক্ষন আমি বিস্ময়ে থ মেরে বসে রইলাম,মা বাবাকে গিয়ে উনি কি এমন জাদু করলেন যে মা উনাকে ক্ষমা করে দিয়ে উনার গুনগান গেয়েই চলছেন।
আমি চারিপাশে তাকিয়ে উনাকে খুঁজতে লাগলাম,এখানেই তো ছিলেন এরি মাঝে কোথায় চলে গেলেন।
.
সারাটা দিন খুব ভালো কাটল সবার সাথে মা সারাদিন আমাদের সাথেই ছিলেন,এত দিনে মনে হল বুকের উপর থেকে একটা পাথর নেমে গেল,মা বাবা আর আমার উপর রেগে নেই ,এখন থেকে যখন খুশি তখনই মায়ের সাথে কথা বলতে পারবো।
মানুষটাকে যতটা খারাপ ভেবেছিলাম ততটা খারাপ ও উনি নয়,কারো সাথে সময় না কাটালে কথা না বললে তার সম্পর্কে জানা যায় না,দূর থেকে উনাকে দেখে আমি নিজের মনে খারাপ ধারনা করে নিয়ে ছিলাম ,ভেবেই নিয়েছিলাম উনার থেকে জগন্য মানুষ এই পৃথিবীতে নেই,কিন্তু উনার সাথে থেকে সময় কাটিয়ে বুঝতে পারলাম মানুষটা রাগী হলেও তার মাঝে অসম্ভব সুন্দর একটা মন আছে।যেটা শুধু উনার কাছের মানুষেরা আর যারা উনার সাথে সময় কাটিয়েছে তাঁরাই বুঝতে পারবে।মানুষটা অনেক রহস্যজনক আমি কিছুতেই উনাকে বুঝতে পারিনা,উনি এমন একজন যে নিজের ভালবাসার মানুষ অন্য কোনো ছেলের সাথে কথা বলে সেটা মেনে নিতে না পেরে কোনো দিক না ভেবেই শাস্তি দিয়ে দিবে।আবার ভালবাসার মানুষটা যদি রাত দুটোর সময় আইসক্রিম খেতে চায় সেটা বিনা দ্বিদায় হাসি মুখে এনে দিতে কুন্ঠাবোধ করবে না।
সারাদিন অবাক করা দৃষ্টি নিয়ে উনাকে দেখে গেলাম,
কত সুন্দর সবার সাথে হাসি তামাশা করছেন ,কেউ দেখলে বিশ্বাস করবে না যে এই মানুষটা মাঝে মাঝে রেগে এত ভয়ংকর হয়ে যায়।মায়ের সাথে কত খোলামেলা ভাবে কথা বলছেন কোনো জরতা ছাড়া দেখে মনে হচ্ছে উনি মায়ের কত যুগের পুরনো জামাই,কিন্তু মাএ আজই মা উনাকে জামাই হিসেবে মেনে নিয়েছেন।
.
পরের দিন সকালে আমি পরলাম এক মহা জামেলায়
আমি উনাকে ব্লেজার না পরিয়ে দিলে ,টাই না বেধে দিলে উনি কিছুতেই অফিসে যাবেন না,বাধ্য হয়ে সব কিছু করে দিতে হলো।অফিসে যাওয়ার আগে আমাকে জরিয়ে ধরে বলে উঠলেন ,
-খুব খুব বেশি ভালবাসি তোমাকে ,নিজের খেয়াল রাখবে,দুপুরের খাবার খাবে ,রুমের বাইরে এসে চুল খোপা করবে না,নিলয়ের সাথে অযথা কথা বলতে যাবে না,ফোন দিলে ফোন ধরবে,
আমি চুপচাপ উনার সব কথা শুনে যেতে লাগলাম,
কি পাগল লোক কয়েক ঘন্টার জন্য অফিস যাচ্ছে আর উপদেশ শুনে মনে হচ্ছে কয়েক বছরের জন্য বিদেশ চলে যাচ্ছে।
আমি নিজেকে উনার কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলাম,
-লেট হয়ে যাচ্ছে দেখতে পারছো না,এবার যাও তো,যাচ্ছো অফিসে কিছু ঘন্টার জন্য এমন ভাব করছো মনে হচ্ছে কয়েক যুগের জন্য দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছো।
আমার কথা শুনে উনি মৃদু হেসে বলে উঠলেন,
-তুমি কি বুঝবে সুহারানী ,তোমাকে কিছু ঘন্টা না দেখে থাকাটা যে আমার জন্য কতটা কষ্টের ,যেদিন ভালবাসবে সেদিন বুঝবে ভালবাসার মানুষকে কয়েক ঘন্টা না দেখে থাকাটা কয়েক যুগের সমান।
উনার কথা শুনে আমার মুখে বিরক্তির আভা ফুঠে উঠল,আমি কপট রাগ দেখিয়ে বলে উঠলাম,
-হয়েছে হয়েছে আমার এত বুঝে কাজ নেই,তুমি যাও তো,না কি এসব বলে না যাওয়ার ফন্দি আটছো।
আমার কথা শুনে উনি আবার মৃদু হেসে আমার দুই গালে হাত দিয়ে কপালে একটা গভীর কিস করলেন,
তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠলেন,
-খুব মিস করবো তোমায় সুহারানী,নিজের খেয়াল রেখো আর আমি জানি তুমি আমাকে একটুও মিস করবে না ,তবুও যদি কোনো কারনে মন খারাপ লাগে ফোন দিও,বলেই উনি চলে গেলেন।
আমি ঠায় দাঁড়িয়ে উনার যাওয়ার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলাম,
তারপর একটা স্বস্তির নি:শ্বাস ফেললাম,যাক বাঁচা গেল কিছু সময় উনার জ্বালাতন থেকে মুক্ত হলাম,
শান্তি মত একটু চলাফেরা করতে পারবো।
.
উনি চলে যাওয়ার কিছুক্ষন পর নিলয় আসল ওকে এই সময় আমার রুমে দেখে একটু অবাকই হলাম,
এভাবে নক না করে হঠাৎ রুমে ঢুকে পরায় আমি একটু অস্বস্তিবোধ করলাম।
ও এখানে আসছে থেকে আমার রুমে একবার ও আসে নি ,আমি ব্রু কুচকে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম ,
-তুই এই সময় এখানে কিছু বলবি??
আমার কথা শুনে ও একটা হাসি দিয়ে আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল,
-এমনি আসলাম তোর সাথে গল্প করতে,ভাবলাম কাব্য ব্রো বাসায় নেই তুই হয়তো বোর ফিল করছিস।
আমি কি বসতে পারি?
ওর কথা শুনে আমি কিছুটা বিরক্তিবোধ অনুভব করলাম,বিরক্তিটা নিজের মাঝে চাপা দিয়ে জোর করে মুখে সামান্য হাসি এনে বললাম,
-বসতে পারবি না কেন বস,অনুমতি না নিয়ে রুমে ঢুকে পরলে আর বসার জন্য অনুমতি চাইছিস কেন ,
আমার কথা শুনে ও বোধ হয় একটু লজ্জা পেল তার পরও বসে পরলো,
আমি রুম গোছাচ্ছি আর ও বসে বলে আমারদের কলেজ লাইফের টুকিটাকি গল্প করছে ,হঠাৎ ও বলে উঠল,
-সুহা তোর সাথে কাব্য ভাইয়ার বিয়ের ঘটনাটা একটু বল না ,তোদের প্রেম কিভাবে হলো,কিভাবে বিয়ে করলি আর পালিয়ে কেন বিয়ে করলি?
ওর কথা শুনে আমি চমকে উঠে ওর দিকে তাকালাম।হঠাৎ ও এমন প্রশ্ন করছে কেন??
#_চলবে?
লেট আপলোডের জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত ?