ভালোবাসি_প্রিয়_সিজন_টু পর্ব_৩৪

0
1008

ভালোবাসি_প্রিয়_সিজন_টু
পর্ব_৩৪
#সুলতানা_সিমা

ঘৃণা! খুবই ছোট একটি শব্দ। কিন্তু এটা বিশাল প্রভাবশালী শব্দ। একজন মানুষকে ক্ষতবিক্ষত করে দেওয়ার মতো একটা অস্ত্রের নাম। যেটা আপনার দিকে ছুঁড়ে মারলে, আপনাকে তিলে তিলে শেষ করার জন্য অন্য কোনো অস্ত্রের প্রয়োজন পরবে না। আর নিজের ঘৃণা নিজের উপর ছুঁড়ে ফেলা হয়। তাহলে তো পুরো জীবনটাই বিষাক্ত লাগে। তখন তিলে তিলে মরার থেকে একেবারেই মরে যেতে ইচ্ছে করে। অরিনেরও এখন তাই ইচ্ছে করছে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। তাঁর খুব ইচ্ছে করছে আকাশের তারা হয়ে যেতে। আজ পাঁচদিন হয়েছে জিহানের বিয়ের। সেদিন হলুদের ওই ঘটনার পর থেকে অরিন অন্যরকম হয়ে গেছে। যতক্ষণ দিহান কাছে থাকে সে ভালো থাকে। দিহান চোখের আড়াল হলেই সেদিনের ঘটনাটা মনে পড়ে যায়। সেদিন সে নিজের স্বামীর সাথে ছিলো না। ভাবতেই তাঁর ঘা রি রি করে উঠে। ঘৃণায় শরীরের মাংস সব ঝরে পরতে চায়। ইচ্ছে করে অদৃষ্ট ব্যক্তির ছুঁয়ে দেওয়া অঙ্গটুকু কেটে কেটে ফেলে দিতে। একটা পরপুরুষ ছুঁয়েছিল তাকে এর থেকে ঘৃণিত শব্দ আর কি হয়ে পারে? সেদিন যখন রুম থেকে বের হয়ে দিহানকে দেখেছিলো। তাঁর গায়ের পশম গুলো দাঁড়িয়ে গেছিলো। তাঁর স্বামী বাইরে অথচ সে ঘরে ছিলো অন্য কারো সাথে?

[সেদিন,,,,]

দিহান অরিনের সামনে এসে বলল,”কই থাকো বলতো? কতক্ষণ ধরে তোমায় খুঁজছি।” অরিন বিস্ময়ভরা চোখে দিহানের দিকে তাকিয়ে আছে। মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে গেছে। দিহানের শরীরে হাত বুলিয়ে দেখতে লাগলো। হাত ধরে উল্টে পাল্টে দেখলো। বুকে হাত দিয়ে দেখলো। মুখের উপর হাত রাখলো। এই মূহুর্তে অরিনকে উন্মাদ মনে হচ্ছে। দিহানের শরীরের গঠন, মুখের খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি, সরু নাক, সিক্স প্যাক বডি, হাতা ফোল্ড করে পাঞ্জাবী পড়া। একই ব্রেন্ডের পারফিউম। হ্যাঁ! ঠিক এরকমই তো ছিলো৷ অন্ধকারে তো এটাই আন্দাজ করেছে সে। দিহান অরিনের দুহাত ধরে বলল,”বউপাখিটা! কি করছো এসব?” অরিন অস্পষ্ট ঠোঁটে ক্ষীণ স্বরে বলল,”ক্ক ক্কই ছিলেন?
_এটা তো আমার প্রশ্ন। তুমি কই ছিলে?
_ওওওই ওইইইইখানে। আ আ আপনি। আমি ভেবেছি আ আপ আপনি,,,,”অরিন আর কিছু বলতে পারলো না। তাঁর দুনিয়া যেন উল্টে যাচ্ছে। চোখে অন্ধকার দেখছে। চারদিকটা ঘুরছে। হঠাৎ চোখ বন্ধ করে ঢলে পড়লো দিহানের উপর। দিহান হন্তদন্ত হয়ে বলল,”এই বউপাখি কি হয়েছে তোমার? বউপাখি। বউপাখি চোখ খোলো। এই বউপাখি।” দিহান চেঁচিয়ে সবাইকে ডাকতে লাগে। কেউ শুনেনা। কেমনে শুনবে? মিউজিকের সাউন্ডে কিছু শুনার উপায় নেই। দিহান অরিনকে কোলে করে গাড়িতে নিয়ে তুলে। অনুষ্ঠান শেষের দিকে ছিলো বলে শান্তি নীড়ের সবাইও দিহানের এসেছিলো। জ্ঞান ফেরার পরে অরিন নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিস্কার করে। ডাক্তার নাকি নিষেধ করেছিলো অরিনকে বেশি হইচইপূর্ণ পরিবেশে না থাকতে। সেদিন দিহান প্রশ্ন করেনি অরিনের কি হয়েছিলো। শুধু মত্তের মতো বলেছিলো। বউপাখি কষ্ট হচ্ছে না তো। তুমি ঠিক আছো তো। পরের দিন বিয়েতে একমিনিটের জন্যেও অরিনের হাত ছাড়েনি। যেন হাতটা ছেড়ে দিলেই অরিন হারিয়ে যাবে। বাকি সব অনুষ্ঠানে দিহান অরিনের সাথে চুম্বকের মতো লেপ্টে ছিলো৷ এই কদিন ধরে দিহান বার বার অরিনকে জিজ্ঞেস করে অরিনের কি হয়েছে কিন্তু অরিন বলে কিছুই হয়নি। তবুও দিহান বার বার জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে। আজ সকালে দিহান আধা ঘন্টার মধ্যে তিন-বার জিজ্ঞেস করেছে কি হয়েছে এক সময় অরিন রেগে যায়। এবং রেগে একটু গলা উঁচিয়ে বলে, “প্রতিদিন কেন একটা কথা জিজ্ঞেস করতে হবে?বার বার বলছি তো কিছু হয়নি তবুও কেন জিজ্ঞেস করেন?” দিহান অরিনকে কিছু বলেনি। রাগ করে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। রুম থেকে বের হওয়ার সময় টাস করে দরজা লাগায়। অনেক্ষণ পরে দিহান না আসলে অরিন অনেক কল দেয় দিহান ধরেনা। এক সময় ফোন বন্ধ করে রাখে। একটুপরে আবার মেসেজ দিয়ে বলে,”খেয়ে নাও।” অরিন সাথে সাথে কল দেয় ফোন বন্ধ পায়। অরিনও কষ্টে নিজের জায়গা থেকে নড়েনা। দিহান যাওয়ার পর থেকেই যে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে এখনো আছে। সে ই বা কি করবে? কোন মুখে স্বামীকে বলবে আমি একটা পরপুরুষকে আপনি ভেবেছি। সেদিনের ঘটনাটা তাকে খুঁড়ে খুঁড়ে খায়। সে দিহানকে বলতে চায় সেদিনের কথাটা,কিন্তু বলতে পারেনা। যতবারই বলতে গেছে তাঁর গলা দিয়ে কথা বের হইনি।

_বউপাখি।”

দিহানের ডাকে চমকে উঠে অরিন। তৎক্ষণাৎ পিছন ঘুরে তাকায়। তাকিয়ে দেখে পিছনে হাত দিয়ে দিহান দাঁড়িয়ে আছে। দিহানের দিকে তাকিয়ে অরিনের অভিমানী অশ্রুটা চোখ ফেটে বেরিয়ে আসলো। এতোক্ষণ যতই ভেবেছিলো দিহান আসলে আর তাঁর দিকে তাকাবেই না কথা বলবে না। কিন্তু এখন সব ভুলে গেছে। দিহানের মুখটা দেখলে তাঁর রাগ,অভিমান কষ্ট সব দূর হয়ে যায়। যেন দিহানের চেহারা কোনো জাদু দিয়ে তৈরি। যার দিকে তাকালে দুনিয়ার সব ভুলে যায় সে। দিহান অরিনের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে এক হাতে কান ধরে বলল,

“সরি বউপাখি। আমার কি দোষ বলো? আমি তোমার মন খারাপ দেখতে পারিনা। তোমার মলিন মুখটা দেখতে আমার সব খুশি হারিয়ে যায়। মাফ করো প্লিজ।

অরিন অশ্রু চোখে হেসে উঠে। দিহান পিছন থেকে হাত সামনে আনলো। দিহানের হাতে একটা ফুলের ঝুড়ি যেখানে মাত্র তিনটা গোলাপ। তিনটা তিন রংয়ের। লাল,সাদা,কালো। বাকি সব গুলা চকলেট আর আইসক্রিম। অরিন অবাক হয়ে তাকালো৷ দিহানের কাজ গুলা তাকে সবসময় অবাক করে। দিহান বলল,” তুমি কি আমায় পড়তে দিবে তোমার সেই চাপা অধ্যায়ের গল্প। যেটা থেকে শুরু হয়েছিলো তোমার মন খারাপের দিন।” অরিন ঝুঁকে দিহানের কপালে চুমু এঁকে বলল, “কে বলেছে আমার মন খারাপ?
_আমি দেখি বউপাখি। তুমি শুধু আমার সামনে আসলেই হাসিমুখে থাকো নয়তো সারাক্ষণ মুখটা মলিন করে থাকো। ” অরিন ঝুড়ি হাতে নিয়ে দিহানকে তুলে দাঁড় করালো তারপর জড়িয়ে ধরে বলল, “যেদিন আপনাকে দেখেও মুখটা মলিন করে থাকবো। সেদিন মনে করবেন আমার সত্যিই মন খারাপ।”দিহান অরিনের কপালে চুমু এঁকে বলল, “মাফ করেছো?
_উঁহু।
_দেখো ভুল কিন্তু তোমারও ছিলো।
_আর আপনি যে ফোন বন্ধ করে রেখেছিলেন।
_কি করতাম। তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছিলাম না। তোমার কণ্ঠ শুনলে এইটুকুও থাকতে পারতাম না।
_আমিও সরি। খুব উঁচু গলায় কথা বলে ফেলছি।
_ গরম গরম আদর দিলে গরম গরম মাফ দিবো নয়তো দিবোনা।” অরিন লুচ্চা বলে হেসে উঠে দিহানের পেটে চিমটি কাটে দিহান আউচ বলে সজোরে হেসে উঠে।

_____________________________________

ভার্সিটি থেকে বের হয়ে গাড়ি নিয়ে শাওন বসে আছে দেখে কপাল কুঁচকে ফেললো দিশা। সে বুঝতে পারেনা দিহান এই শাওনের মাঝে কি এমন পাইছে যে সবকিছুতে দিশার হেল্প এ শাওনকে পাঠায় দিহান। জিহানের বিয়ের পরে আজ প্রথম ভার্সিটি আসলো সে। দিহানকে ফোন করে বলল তার একটু শপিংয়ে যেতে হবে দিহান যেন আসে। দিহান নিজে না এসে শাওনকে পাঠিয়ে দিবে জানলে জীবনেও দিহানকে বলতো না আসতে। শাওনকে দেখলে তাঁর বুকটা পুড়ে যায়। কোনো ভাবেই পারেনা নিজেকে আটকাতে। এই কদিন নিজের সাথে যোদ্ধ করে করে শাওনের থেকে দূরে থেকেছে সে।

শাওন গাড়ি থেকে দিশাকে ডাক দেয়। দিশা শুনেও না শুনার ভান করে দাঁড়িয়ে থাকল। শাওন গাড়ি থেকে নেমে দিশার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। দিশা মুখ ফিরিয়ে নিয়ে অন্যদিকে তাকায়। শাওন বলে,”কি রে ডাকছি শুনছিস না কেন?” দিশা ক্ষীণ গলায় বলল, “ইশি আসুক।” শাওন দাঁড়িয়ে থাকল। প্যান্টের পকেটে হাত রেখে চারদিকে তাকিয়ে চারদিকটা দেখতে লাগলো। হঠাৎ একটা ছেলে এসে দিশার চুল ধরে টান দিয়ে বলল,”এই পেত্নি আমায় বলে আসলি না কেন?” দিশা ছেলেটার পিঠে একটা কিল দিয়ে বলল,”চুল ধরে টান দিলি কেন বান্দর। যা সর এখান থেকে।
_আমি সরবো না। আয় আজ মন বড়সড় ভালো তোকে ফুচকা খাওয়াবো।
_কেন রে কয়টা মেয়ে ফটিয়েছিস আজ? যে পার্টি দিচ্ছিস?
_ফুচকা খাওয়ালে পার্টি হয়ে যায়?
_তোর মতো ফকিররা মাঝে মাঝে কাউকে কিছু খাওয়ালে পার্টিই হয়।
_আমি ফকির?
_সেটা গিয়ে তোর বাপকে জিজ্ঞেস কর।” ছেলেটা হাতের ব্যাগ নিয়ে দিশার পিঠে মারলো। দিশা প্রথমকে রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে ছেলেটাকে এলোপাতাড়ি মারতে লাগলো। দৃশ্যটা দেখে শাওনের কলিজাটা মুচড় দিয়ে উঠলো। কতদিন হয়ে গেলো দিশা তার সাথে ঝগড়া করে না। ইশি দৌড়ে এসে দিশার আর ছেলেটার ঝগড়া বন্ধ করে দিশাকে টেনে গাড়িতে নিয়ে উঠলো। শাওন গাড়িতে উঠেই গাড়ি স্টার্ট দেয়। কেন জানি খুব খারাপ লাগছে তাঁর। মনটা বলছে দিশা কেন অন্য ছেলের সাথে এতো মিশবে? শাওন একবার আয়নায় তাকালো৷ দিশা আয়নায় তাকিয়ে এতোক্ষণ শাওনকে দেখে যাচ্ছিলো। শাওন তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হয়ে যায়। দিশা চোখ সরিয়ে নেয়। শাওন আবার তাকালো এখন দিশা তাকিয়ে নেই৷ দিশার এই চুপ থাকাটা শাওনের সয্য হচ্ছে না। দিশাকে উদ্দেশ্য করে বলল,”তোদের নাকি শপিং করতে হবে? কোথায় যাবো বল।” ইশি কিছু বলতে যাবে তার আগেই দিশা বলে,”আমি আজ শপিং করবো না ইশি। অন্য একদিন করবো।
_আজ করলে ক্ষতি কি?” বলল শাওন। দিশা কিছু বলল না। ইশি বলল,”জানিস শাওন ভাই আমাদের কি কপাল। প্রথমে বড় ভাইয়ার বিয়ে এখন আবার আমাদের দিশার বিয়ে তাও এই মাসের মধ্যে।” ইশির কথা শেষ হওয়া মাত্রই অনেক জোরে ব্রেক করে শাওন। ইশি বলে,”কি হলো?” শাওন কিছু বলল না। তাঁর কেমন যেন লাগছে। ইশিকে বলল,”ক ক কই আ আ আমি তো শুনলাম না।”
_আজ এ নিয়ে বাসায় কথা হবে তখন শুনে নিবি।
শাওন পিছন ঘুরে একবার দিশার দিকে তাকালো। দিশা বাইরে তাকিয়ে আছে। সেদিনের কঠোর কথা গুলা বলার জন্য শাওনের খুব খারাপ লাগছে। দিশার মাথা নথ করে বলা ওই কথাটা চোখে ভাসছে,সরি শাওন ভাই। আমি বুঝিনি।

__________________________

প্রায় দশমিনিট ধরে খাবারের সামনে বসে আছে নীল। রাগে তাঁর ফর্সা নাক লাল হয়ে আছে। দাঁত কিড়মিড় করে বার বার হাত মুঠো বন্ধ করছে। জিহানের বিয়ে থেকে তাঁর পরিবার আসার সময় তাকে বাসায় আসতে বলেছিলো। সে বলে দিয়েছে, যেদিন আমার ভালোবাসা মেনে নিবে সেদিন বাসায় ডাকবে। পাঁচদিন অপেক্ষা করলো। তাঁর বাসা থেকে একটা ফোনও এল না। নীল অবাক হয় তাঁর পরিবারের এহেন কান্ডে। কারণ সে এই বংশের একমাত্র ছেলে। আর তাঁর দূরে থাকা নিয়ে কিনা কারো মাথা ব্যথা নেই? মনে মনে জেদ ধরে আর আসবে না এই বাড়িতে। কিন্তু লুপাকে ছাড়া সে আর পারছে না। সেদিন অরিনের হাতে ধরা খাওয়ার পর থেকে লুপা নীলের ধারে কাছেও আসেনা। নীল না তাকালে নীলের দিকে তাকিয়ে থাকে। নীল তাকালেই চোখ সরিয়ে নেয়। নীল লুপাকে লুপাকে কিছু ইশারা দিলে লুপা না বুঝার ভান করে থাকে। ফোনে কল দিলে লুপা ফোন কেটে মেসেজ দেয়। তার একটাই কথা আগে পরিবার মানাও। অসয্য হয়ে নীল আজ বাসায় আসে। ভাগ্যক্রমে তাঁর বাবাকে বাসায় পায়। দাদীকে বাবাকে এক করে দুজনকে অনুরোধ করে বলে তাঁদের সম্পর্ক মেনে নিতে কিন্তু উনারা কিছুতেই মানবেন না। শেষমেশ নীল উনাদের পায়ে ধরে তবুও মানাতে পারেনি। এখন চলে যাবে শিলা চৌধুরী তাকে খাবার টেবিলে এনে টেনে বসালেন। উনার এমন একটা কান্ডে নীল বিরক্ত হয়। উনি কি ফাজলামো করছেন?

শিলা চৌধুরী অনুরোধের গলায় বললেন, “বাবা অল্প খেয়ে নে। দেখ তোর পছন্দের কলিজা বুনা করেছি।” নীল কপালের ফুলে উঠা রগটা আঙুল দিয়ে চেপে ধরলো। নিজেকে কিঞ্চিৎ শান্ত করে বলল,”আম্মু এখনো সময় আছে। উনাদের বলো সবকিছু ভালোয় ভালোয় মেনে নিতে। নয়তো খুব খারাপ হবে।” নীলের বাবা সিঁড়ি ভেঙে নামতে নামতে বললেন,”খারাপ তো তুমি দেখবে যদি আমাদের কথা মেনে না নাও।
নীল রেগে বসা থেকে উঠে দাঁতে দাঁত চেপে বলল, ”
_আপনি কি খারাপ দেখাবেন? আমাকে ত্যাজ্য করে দিবেন? তাহলে শুনে নেন। আপনার মতো বাবা থাকার থেকে না থাকাই ভালো।” নীলের কথা শেষ হতেই শিলা চৌধুরী নীলের গালে টাস করে একটা থাপ্পড় মারলেন। নীল রাগে টেবিলে একটা লাত্তি দিয়ে চেঁচিয়ে বলল, “কেমন বাবা মা তোমরা? নিজের সন্তানের ভালো থাকা না বুঝে নিজের জেদটাকে প্রাধান্য দিচ্ছো। এতোটা দিন আমি কোথায় ছিলাম। রাস্তায় ছিলাম নাকি কারো বাসায় ছিলাম। খেয়ে ছিলাম নাকি উপোস ছিলাম এই খুঁজটা পর্যন্ত তোমরা নাওনি। তোমরা তো আমার সুখ চাওনা। চাইলে এমন করতে না।
_হ্যাঁ নেইনি। কারণ আমরা আমরা জানি তুমি ওই নষ্টা মহিলার বাড়িতেই ছিলে। আর ওখানেই খেয়েছিলে ঘুমিয়েছিলে।
_মুখ সামলে কথা বলবেন আব্বু। নষ্টা বলতে হলে আগে নিজের মাকে বলুন।” নীলের বাবা তেড়ে এসে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে নীলের গালে টাস টাস করে পর পর চার-পাঁচটা থাপ্পড় দিলেন। নীলের মা বাঁধা দিতে আসলে উনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে আরেকটা থাপ্পড় মারবেন নীলের দাদী আটকে ফেলেন। নীলের বাবা চিৎকার করে বললেন,”ছাড়ো মা। ও খারাপ হয়ে গেছে। ওকে পিটিয়ে ঠিক করা উচিত।
_চুপ কর। ও এখন ছোট নেই যে পিটিয়ে ঠিক করবি।
_কি ছোট নেই বলছো তুমি মা? বড় হয়ে গেছে যখন তাহলে বুঝেনা কেন? এই মেয়েটাকেই কেন ওর লাগবে? ওই মেয়ের মায়ের চরিত্র কতটা খারাপ ছিলো সেটা তো তাঁর হিস্ট্রি পড়লেই জানা যায়। আমি কি করে আমার একমাত্র সন্তানের জন্য এমন মহিলার মেয়ে আনবো? ও বলছে আমি নাকি ওর সুখ চাইনা, তাহলে ওকে জিজ্ঞেস কর মা শামু মেয়েটাকে বিয়ে আনতে এক কথায় রাজি হয়েছিলাম কেমনে? আমি নাকি আমার জেদটাকে প্রাধান্য দিচ্ছি। আরে জিজ্ঞেস কর গিয়ে ওই বাড়ির দারোয়ানকে দিনে কয়বার ফোন দিয়ে তোর খুঁজ খবর নিয়েছি। প্রতিদিন পারসেলে তোর কোনো বন্ধু খাবার পাঠাতো নাকি সেটা তোর বাপ পাঠাতো জিজ্ঞেস কর তাদের। আমার মতো বাবা থাকার থেকে নাকি না থাকাই ভালো।” এইটুকু বলে থামলেন উনি। শেষের কথাটা বলতে উনার গলা ধরে আসে। চোখটা জ্বলছে উনার। আর কিছু না বলে উপরে চলে যান তিনি।

নীলের ঠোঁট কাঁপছে। খুব কান্না পাচ্ছে তাঁর। মার খেয়েছে এতে তাঁর কোনো কষ্ট নেই। কষ্ট হচ্ছে তাঁর ভাগ্য দেখে। লুপার মতো করে তারও খুব বলতে ইচ্ছে করছে। উপরওয়ালা কেন তাকে এই ভাগ্য দিলেন যে ভাগ্যে লুপা নেই। নীল চোখটা মুছে দৌড়ে গিয়ে তাঁর বাবার সামনে দাঁড়ালো। উনি থেমে যান। নীক চট করে বসে উনার পা জড়িয়ে বলে,”সরি আব্বু। আমি বুঝিনি। আমার মাথা ঠিক নেই আব্বু। বিশ্বাস করো ওকে আমি খুব ভালোবেসে ফেলেছি। ওর মা খারাপ ওতো খারাপ নয়। প্লিজ আব্বু মেনে নাও না ওকে। প্লিজ। মনে করো এটাই তোমার কাছে আমার শেষ চাওয়া। আমি আর কোনোদিন কিচ্ছু চাইবো না আব্বু। প্লিজ আব্বু মেনে নাও।
_পা ছাড়ো নীল।
_আব্বু প্লিজ একটা বার আমায় বুঝো।
_ঠিক আছে তোমার দাদীর পায়ে ধরে আগে ক্ষমা চাও।” নীল অবাক হয়ে বলল উনার পায়ে ধরে কেন ক্ষমা চাইবো?
_কারণ তুমি উনাকে বকা দিয়েছো।” নীল বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলল,”তাহলে তোমার বোনকে এনে আমার মায়ের পায়ে ধরিয়ে ক্ষমা চাইতে বলো। উনিও আমার মাকে বকা দিয়েছেন।
_বের হও আমার বাসা থেকে।
_তুমি এখন না বললেও আমি বেরিয়ে যাবো আব্বু। তবে একা নয় সাথে আমার মাকে নিয়ে। যদি কখনো ফিরে আসি সাথে লুপাকে নিয়ে আসবো।

চলবে,,,,,,,।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here