ভালোবাসি_প্রিয়_সিজন_টু
পর্ব_৩১
#সুলতানা_সিমা
যত দিন যাচ্ছে ততই যেন গরম বেড়ে চলছে। রাতে শীত অনুভব হলেও দিনটা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে যায়। মাথার উপর সূর্য উঠলেই যেন সূর্য আগুন ঢালতে শুরু করে। এই তীব্র গরমের মাঝে ভারি গহনা, গাউন শাড়ী পড়ে তৈরী হচ্ছে শান্তি নীড়ের মেয়ে ও বউগুলা। আজ জিহানের সঙ্গীতের অনুষ্ঠান। এখন বিকেল পাঁচটা বাজে। সন্ধ্যা ৬টায় অনুষ্ঠান শুরু হবে। কনে পক্ষ নাকি রিসোর্টে পৌঁছে গেছে। আর তাঁরা এখনো বাসা থেকেই বের হয়নি। শান্তি চৌধুরী উনার তিন ছেলেকে অনেক আগেই রিসোর্টে পাঠিয়ে দিয়েছেন। বাসার সবাইকে তাড়া দিচ্ছেন তাড়াতাড়ি বের হওয়ার জন্য। দিলারা চৌধুরী সুমনা চৌধুরী সায়রা চৌধুরী ও দিহানের ফুপিরা আগেই রেডি হয়ে গেছেন। অরিন একটা শাড়ী নিয়ে গেস্ট রুমে ঢুকলো। কাল দিহান গিয়ে জহুরা বেগমকে নিয়ে এসেছে। অরিন একবার না বলেছিলো৷ কারণ তাঁর মনে হচ্ছিলো কেউ চায়না অরিনের পক্ষের কেউ বিয়েতে আসুক। অরিন না বললেও দিহান শুনেনি। সে চায় অরিন কখনো অপূর্ণ না থাকুক। জহুরা বেগমকে শাড়ীটা দিয়ে তাড়াতাড়ি রেডি হতে বলে চলে আসলো।
রুমে এসে দেখলো দিহান রেডি হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো ব্লেজার পড়েনি। অরিন বলল,”এখনো আগের মতোই আছেন? তাড়াতাড়ি রেডি হন না।” দিহান উঠে এসে অরিনের পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। অরিন মৃদু ধমকে বলল,”ছাড়েন তো। সবসময় মন শুধু প্রেম প্রেম পায় তাইনা?” দিহান অরিনের ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে বলল,”হুম খালি প্রেম প্রেম পায়। এটা আমার অসুখ। একটু ট্রিটমেন্ট করলেই পারো।
_আপনার মতো পাগলকে ট্রিটমেন্ট করতে গেলে আমি নিজেই পাগল হয়ে যাবো।
_আমি পাগল?
_সন্দেহ আছে?
” দিহান অরিনকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,”তাহলে তুমি পাগলের বউ।
_বলেছি না আমার বর তুলে কথা বলবেন না।
_কেন? তোমার বর তুলে কথা বললে কি হবে?
_দেখতে চান?
_দেখাও।” অরিন দিহানের মাথার পিছে একটা হাত রেখে তাঁর দিকে এগিয়ে গেলো। অরিনের উদ্দেশ্য দিহানের ওষ্ঠযুগল। দিহান বুঝতে পেরে চোখ বন্ধ করে দেয়। দুজনের ঠোঁট ছুঁই ছুঁই,,,
_দিহান নানুমনি বলেছে তু,,,,,।” শাওনের কণ্ঠ স্বরে দিহান ও অরিন চট করে দুজন দুদিকে ছিটকে যায়। শাওন ও সাথে সাথে পিছন ঘুরে যায়। তিনজনই অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়ে গেছে। দিহান গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,”তুই তোর দিশাকে নিয়ে যা। আমি আসছি।”
শাওন চলে যায়। দিহান আর অরিনকে এই অবস্থায় দেখে বুকে চিনচিন ব্যথা অনুভব করছে সে। হঠাৎ করে কেন জানি নিঃশ্বাসটাও তাঁর বিপক্ষে লড়তে লাগলো। শ্বাস ফেলতে খুব কষ্ট হচ্ছে। দিহানের পাশে যতবারই অরিনকে দেখেছে ততবারই তার এই রকম হয়েছে। আচ্ছা কখনো কি অরিনকে ভুলে যেতে পারবে না? এক তরফা ভালোবাসাও এতো তীব্র হয় কি করে?
শাওন চলে গেলে অরিন বলল,”ভাইয়ার দিশা বললেন কেন?
দিহান অরিনের কোমর জড়িয়ে ধরে বলল,”তোমার ননদ প্রেম করে শাওনের সাথে।” কথাটা শুনে অরিন এমন ভাবে তাকায় যেন সে আকাশ থেকে পড়েছে। অরিন বলল,”
_কি বলছেন এগুলা? উনারা প্রেম করে? আর আপনি এটা এতো সহজে বলছেন?
_তো কি করবো? প্রেম কি শুধু ওরাই করছে? আর শাওন কি খারাপ ছেলে নাকি? তাছাড়া শাওন আমাদের জন্য অনেক করেছে অরিন। ওইদিন শাওন না থাকলে সবার কথায় আমাকে মাথা ন্যাড়া করে গ্রাম থেকে বিদায় দিতো। সাথে তোদেরও বাড়ি থেকে তুলে দিতো। তবুও আমাদের বিয়ে দিতো না।
_কিন্তু আমার বিশ্বাস হচ্ছেনা। দিশা আপু আর শাওন ভাই। মানে উনারা যে হারে ঝগড়া করে যেন সাপে নেউলে সম্পর্ক।
_তাঁর জন্য মাঝে মাঝে আমারও সন্দেহ হয়। আচ্ছা বাদ দাও এবার দেখি কি দেখাবা।
_কি?
_একটু আগে না বললা দেখাবা?
_কি?
_আগে কি করতে যাচ্ছিলা?
_কি?” দিহান রাগি লুকে তাকাল। অরিন ফিক করে হেসে দিয়ে বিছানা থেকে সিলবার কালার ব্লেজারটা নিয়ে দিহানকে পড়াতে পড়াতে বলল,”বাচ্চার বাবা হতে যাচ্ছেন এবার একটু বাচ্চামো ছাড়েন।
_আমি বাচ্চামি করি?
_নয়তো কি?
_ওকে আর করবো না।” বলেই দিহান চলে যেতে লাগে। অরিন দিহানের ব্লেজার ধরে টান দিয়ে দিহানকে খুব কাছে নিয়ে আসে। দিহান গাল ফুলিয়ে আছে। অরিন দিহানের কপালে চুমু এঁকে দিলো। দিহান এখনো গাল ফুলিয়ে আছে। অরিন দিহানের গালে চুমু দিছি হালকা করে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। দিহান মৃদু হেসে অরিনের কপালে চুমু দিয়ে অরিনকে জড়িয়ে ধরে বলে,”উফ বউপাখিটা রাগও ভাঙাতে জানে।”
_হয়েছে এবার যান। আমি আসছি।
_আমার সাথে যাওয়া যাবেনা বুঝি?
_আরে আমি তো আপুদের গাড়িতে যাবো। ওরা জোর করছে। তাছাড়া আপনারা সব ভাই এক সাথে যাবেন আমি আপনাদের মাঝখানে কি করবো?
_ওকে তাহলে তাড়াতাড়ি আসো।” দিহান চলে যেতে পা বাড়ায়। রুম থেকে বের হতেই তাঁর পা পিছলে চিৎ হয়ে ফ্লোরে পড়ে যায়। নিজেকে আটকাতে ফুলদানি ধরেছিলো সাথে সেগুলাও পড়ে। অরিন দৌড়ে এসে দিহানকে ধরে। দিহান কোমরে অনেক ব্যথা পেয়েছে। তাঁর মনে হচ্ছে কোমর ভেঙে গেছে। অরিন চেঁচিয়ে সবাইকে ডাকতে লাগে। একে একে সবাই দিহানের রুমে দৌড়ে আসে শুধু শাওন বাদে। সে কই আছে কে জানে? সবাই দিহানকে তুলতে চায় দিহান উঠতে পারছে না। শুধু মাথাটা তুলতে পারছে বাকি সব যেন ভেঙে গুড়িয়ে গেছে। মাথা তুলে আবার ফেলে দেয়। শান্তি নীড়ের সবার চোখে মুখে আতঙ্কের চাপ। দিহানের চোখ থেকে একফোঁটা জল গড়িয়ে কান পর্যন্ত চলে গেলো। দিহানের চোখে পানি দেখে অরিন দিহানের হাত ধরে বুকের সাথে জড়িয়ে ডুকরে কেঁদে উঠে। এতো মানুষের সামনে এভাবে কাঁদতে তাঁর মোটেও লজ্জা লাগছে না। এখানে এতো এতো মানুষ তাঁর চোখে পড়ছে না। তাঁর চোখে পড়ছে শুধু দিহানের কষ্ট। মিহান আর জিহান অনেক কষ্ট করে দিহানকে তুলে দাঁড় করায়৷ দিহান দাঁড়ানোর পর সবাই স্বস্থির নিঃশ্বাস নিলো। সবাই ভেবেছিলো দিহানের কোমর বা মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে। অরিনের কান্না শুনে দিহান ব্যথিত চোখে তাঁর দিকে তাকালো। ম্লান হেসে অরিনকে ইঙ্গিত দিলো,সে ঠিক আছে এভাবে না কাঁদতে। সুমনা চৌধুরী চোখটা মুছে বললেন,”দরজার বাইরে এতো তৈল কে ফেলেছে?” কারো মুখে উত্তর নেই৷ সবার চোখে মুখে একই প্রশ্ন,এমন কাজ কে করলো? জিহান বলল,”আচ্ছা বাদ দাও। হয়তো কেউ ভুল বসত ফেলে দিছে।
_ভুল কাজের জন্য কতো বড় ক্ষতি হতো ভাবতে পারছিস?” রাগান্বিত স্বরে বললেন শান্তি চৌধুরী। দিহান বলল,”আমি ঠিক আছি দাদুমনি। চলো। বের হওয়া যাক। ওরা তো রিসোর্টে পৌঁছে গেছে বলল।” শান্তি চৌধুরী বললেন, “আচ্ছা ওরা যাক। তুই চল ডাক্তারের কাছে যাবি।
_দাদুমনি আমি সত্যি ঠিক আছি। যাও তোমরা আস্তে আস্তে বের হও আমি পাঁচ মিনিট রেষ্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।”সুমনা বললেন,
_হুম আমরা বের হচ্ছি তুই একটু রেষ্ট নিয়ে আয়।”
সবাই দিহানের রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। অরিন দৌড়ে এসে দিহানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগে। দিহান অরিনের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”কিছু হয়নি পাগলী। আমি ঠিক আছি দেখো। কান্না থামাও।
_আমি আপনার সাথে যাবো।
_কেন?
_আপনাকে আর কখনো একা ছাড়বো না আমি। কখনো আমার চোখের আড়াল হতে দিবো না। আমি বুঝে গেছি দিহান আমি সব বুঝে গেছি। আমি সব হারিয়ে বেঁচে গেছি আপনাকে হারালে মরেই যাবো। মরে যাবো আমি।” দিহান অরিনের মাথাটা নিজের বুক থেকে তুলে অরিনের দুগাল ধরে বলল, “বউপাখি কি বলছো এসব? কি বুঝে গেছো?
_আমি বুঝে গেছি দিহান। ” কান্নার কারণে অরিন কথা বলতে পারছে না। দিহান অরিনের চোখের পানি মুছে বলল,”একটুও কাঁদবে না সোনাপাখি।জানো তুমি কাঁদলে খুব কষ্ট হয় আমার? প্লিজ কান্না থামাও।” অরিন কান্না থামায়। কিন্তু তাঁর ফুপানি থেকে যায়। দিহান অরিনকে জড়িয়ে ধরে অরিনের মাথায় চুমু খায়।
_______________
সবাই গাড়িতে বসে আছে প্রায় পনেরো মিনিটের মতো। কিন্তু এখনো লুপার বের হওয়ার কোনো নাম গন্ধ নাই। তাঁর অপেক্ষা করতে গিয়ে চারটা গাড়ি থেকে একটা গাড়িও ছাড়ছে না। সবাই একসাথে যেতে চাইছে কিন্তু লুপার জন্য সবাই বিরক্ত হয়ে বলছে চলে যাবে। কখন থেকে সবাই ডাকছে কিন্তু সে আসছেই না। এতো সাজ সাজতে হবে কেন? সায়রা চৌধুরী মেয়ের এমন কান্ডে রেগে গেলেন। এক রাশ বিরক্তি নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে বাসার ভেতর যেতে লাগলেন। মিহান উনার হাবভাব বুঝতে পারে। উনি গিয়ে লুপাকে বকাঝকা করবেন। যা মুখে আসে তাই বলবেন। তারপর লুপা গাল ফুলিয়ে বসে থাকবে কান্নাকাটি করবে। যা মিহান মোটেও সয্য করতে পারেনা। তাঁর বোনকে কেউ বকলে তাঁর বোন কাঁদলে সে একদমই সয্য করতে পারেনা। চট করে সে গাড়ি থেকে নেমে উনাকে আটকিয়ে নিজে গেলো লুপাকে আনতে।
উপরে এসে দেখলো লুপা কিছু একটা খুঁজছে। আর বাসার সবাই কিনা ভাবছে লুপা রুমে সাজগোজ করছে। মিহান এসে লুপার মাথায় চাপড় দিলো। লুপা তেজ নিয়ে পিছনে তাকায়। মিহানকে দেখে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আবার নিজের কাজে মন দেয়। মিহান ড্রেসিংটেবিলের উপর থেকে চিরনি টা নিয়ে চুল আচড়াতে আচড়াতে বলল,”কি রে ডাইনি কি খুঁজছিস আমি ভাবলাম তুই সাজগোজ করছিস।” লুপা কিছু বলল না। মিহান চিরনিটা রেখে বালিশ তুলে কিছু খুঁজার ভঙ্গি করে বলল,”কি খুঁজতেছিস বল,আমিও হেল্প করি।” লুপা আলমারির কাপড় বের করে ছুঁড়ে ফেলতে ফেলতে বলল,”তুমি আমাকে হেল্প করবে? তোমার নিজের জামাগুলা আমি খুঁজে দিয়ে এসেছি।
_খোটা দিচ্ছিস?
_খোটা দিবো কেন? যেটা সত্যি সেটাই বললাম।
_আচ্ছা বল কি খুঁজছিস?
_তোমাকে শুনতে হবেনা যাও এখান থেকে।
_শুনে দেখি তোকে হেল্প করতে পারি কিনা।
লুপা কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলল,
_আমার ফোন খুঁজে পাচ্ছিনা।
_তুই ফোনের পিছনে এতো সময় নষ্ট করছিস? এরকম ফাংশনে তোর ফোন টিপার সময় আছে? আয় চলে আয় বাসায় এসে খুঁজবি।
_বাসায় এসে খুঁজে কি হবে? আমি পিক তুলবো কি দিয়ে?
_কেন অন্য কারো ফোনে পিক তুলবি। প্রয়োজনে আমার ফোন নিবি। তাছাড়া ফটোগ্রাফার তো আসবে। ফটোগ্রাফার দিয়ে না তুললে বাসায় তো অনেকের ক্যামেরা আছে তাঁদের গুলায় তুলবি।
_আমার নিজের ক্যামেরা নাই তো অন্যকারো ক্যামেরায় কেন তুলবো? আর ফটোগ্রাফার কি আমার জন্য একা আনা হইছে যে আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকবো পিক তুলার জন্য? আর বলে দেই আমি অন্যের ফোন দিয়ে পিক তুলিনা।
_অন্যের দেওয়া ফোন চালিয়ে বলছিস অন্যের ফোনে পিক তুলিস না?
_একটা ফোন দিয়েছো বলে খোটা দিচ্ছো?
_তোকে একটা ফোন দিয়েছি আমি?
“লুপা রেগে গেলো। ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে একটা পারফিউম নিয়ে মিহানের উপর ছুঁড়ে মারলো। মিহান ক্যাচ করে নেয়। তারপর জুতোতে পারফিউম দিতে দিতে বলে,”কোনো মেয়ে ডান্স করতে করতে যদি লুটিয়ে পড়ে সুঘ্রাণে যেন উঠতে না পারে।” লুপা মিহানের উপর বালিশ ছুঁড়ে বলল,”বের হও বলছি। নয়তো আব্বুকে গিয়ে এক্ষুনি বলে দিবো তুমি সিগারেট খাও।”
_তুই তো দেখছি আমাকে বড় ভাই বলে সম্মান পর্যন্ত করিস না। বুঝেছি তোকে বিয়ে দিতে হবে।
_জানো আমার সাথের সব মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। শুধু তাই নয় তাদের বাচ্চাকাচ্চাও আছে। আর আমি? আমি এখনো সিঙ্গেল।” মিহান চোখ বড় বড় করে আহাম্মকের মতো তাকাল। কোথায় ভেবেছিলো বিয়ের কথা বললে চুপ হবে কিন্তু এতো উল্টা চুপ করিয়ে দিলো৷ মিহান হাতের পারফিউমটা বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে বলল,”তোর জীবিনেও বিয়ে হবেনা। আর বিয়ে হলেও তোর বিয়েতে আমি একটা টাকাও দিবো না।” বলেই মিহান রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। লুপা আরো কিছুক্ষণ খুঁজাখুঁজি করে না পেয়ে শেষমেষ ব্যর্থ হয়ে চলে গেলো।
____________________
শান্তি নীড়ের সবাই যখন রিসোর্টে আসলো তখন ঠিক ছয়টা বাজে। দিশা,ইশি,অরিন, দিয়া, লুপা তাঁরা পাঁচজনই পড়েছে সিলবার কালার গাউন। দিহান অরিনের সাথে ম্যাচিং করে একটা ব্লেজার পড়েছে। নীল নেভী ব্লু ব্লেজার ও শাওন হোয়াইট ব্লেজার। তাদের পা রিসোর্টে পড়তেই সবাই একসাথে চিৎকার দিয়ে উঠলো। জিহানের বউকে গোল্ডেন কালার একটা লেহেঙ্গা পরিয়েছে। সাজগোজ তেমন করেনি কিন্তু অনেক সুন্দর লাগছে। অরিন দিহানকে চাপা গলায় বলল, “এই দেখেন ভাবিকে কি সুন্দর লাগছে।” দিহান মিষ্টি করে হেসে বলল,”আমার বউয়ের থেকে বেশি সুন্দর লাগছে না।” অরিন ভেংচি কাটে। বন্ধু বান্ধব সবার দেখা হলে দিহান অরিনকে আসছি বলে তাঁদের সাথে আলাপ করতে চলে যায়। পাত্রপক্ষ সবাই পাত্রিপক্ষ সবার সাথে সৌজন্যমূলক কথা বলে অন্যদের সাথে কথা বলতে চলে যায়। তারপর জিহানকে এনে তাঁর বউয়ের পাশে রাখা হয়৷ মেয়েটার নাম লারা। জিহান লারার পাশে দাঁড়িয়ে মাথাটা কিঞ্চিৎ ঝুকে ফিসফিসিয়ে বলল, “খুব সুন্দর লাগছে।” লারা লজ্জায় লাল হয়ে যায়। জিহান লারার একটা হাত ধরে দাঁড়ায়। জিহানের হাতের কিঞ্চিৎ ছোঁয়া, এতেই লারার গায়ের পশমগুলো দাঁড়িয়ে গেছে। এতোদিন জিহানের সাথে শুধু ফোনে কথা হয়েছে। তারপর জিহান দেশে আসার পর দুদিন দেখা হয়েছে তবে এভাবে স্পর্শ করা হয়নি তাদের। এটাই প্রথম। তাই হয়তো এতো শিহরণ।
ইশি দুহাতে গাউনের দুদিক ধরে তুলে হেঁটে হেঁটে আসলো। লারার সামনে এসে বলল,”কি গো ভাবি তোমরা নাচবে না?” জিহান বলল,”না ও নাচবে না। তোরা নাচ গিয়ে যা।
_আমি তোমাকে বলেছি?
_আমাকে নিয়েই তো বলেছিস।”
_তোমাকে নিয়ে বলেছি তো কি হইছে? তুমি নাচবা না থাকো। ভাবি নাচবে।
_ও নাচবে না। ওর শরীর খারাপ।” জিহানের কথায় লারার লজ্জায় মাটির নিচে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে। কাল কথায় কথায় জিহানকে নিজের অসুস্থতার কথা বলে দিয়েছিলো। যার ফল আজ এতোটা লজ্জা পেলো। ইশি লারার কপালে হাত দিয়ে বলল,”কই খারাপ। ভাবি ঠিক আছে। আসো ভাবি।
_লারা তুমি যাবা না।” ইশি জিহানকে ভেংচি কেটে লারার হাত ধরে বলল,”ভাবি ভাইয়ার কথা শুনবে নাতো চলো আমাদের সাথে নাচবে।” জিহান লারার হাতে টান দিয়ে তাঁর দিকে এনে বলে,”ও নাচবে না তোরা গিয়ে নাচ যা।” ইশি তাঁর দিকে টান দিয়ে বলল,”ভাবি আমাদের সাথে নাচবেই নাচবে।
_বললাম তো নাচবে না।” অরিন দূর থেকে দাঁড়িয়ে মজা নিচ্ছে৷ এভাবে লারাকে নিয়ে ভাই বোনের টানাটানি করা দেখে তাঁর পেট ফেটে হাসি আসছে। কিন্তু সম্পর্কে জিহান তাঁর ভাসুর বলে স্টেজে গিয়ে কিছু বলতে পারলো না। নয়তো সেও সেখানে যোগ দিতো। এখন শুধু দূর থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা নিতে থাকলো।
______________________
নীল অনেক্ষণ ধরে দেখছে লুপা একটা ছেলের সাথে কথা বলে যাচ্ছে। লোকটাকে ছেলে বলাও যাবেনা। বয়স হয়তো ৪০/৪৫ হবে৷ কিন্তু দেখতে একদম ইয়াং মাথায় চুল কিছুটা পড়তে শুরু করছে তবে হ্যান্ডসাম হওয়ার এগুলা চোখে পরার আগে তাঁর সৌন্দর্যটা চোখে পরছে। বয়স হলেও নীল এটাকে ছেলেই বলল। এতোক্ষণ নীলের সামনে তাঁর বাবা ছিলেন বলে নড়তে পারেনি। যেই উনি অন্যদিকে যাবেন সাথে সাথে নীল দৌড়ে এসে লুপার সামনে দাঁড়ায়। এভাবে আসায় লুপা ও তার পাশে দাঁড়ানো ছেলেটা অবাক হয়ে থাকলো। নীল ছেলেটাকে বলে,”ভাই সে কখন থেকে দেখছি কথা বলে যাচ্ছেন। কি নিয়ে কথা হচ্ছে?” লুপার সামনে দাঁড়ানো ছেলেটা ভ্রুযুগল কুঁচকে তাকায়। নীল বলে,”যা কথা বলার বলেছেন এবার যান। ওর ধারে কাছেও আসবে না আর।” ছেলেটা লুপাকে প্রশ্ন করে,”এটা কে লুপা?”
_এটা? এটা আমার ,,,,,
_হাসবেন্ড। হাসবেন্ড আমি ওর।” নীলের কথায় লুপা হা হয়ে বড় বড় চোখে তাকাল। সে তো ফুপির ছেলে বলতে যাচ্ছিলো। লুপার পাশে দাঁড়ানো ছেলেটা লুপার দিকে বিস্ময়ভরা চোখে তাকাল। লুপা শুকনো এক ঢোক গিলে বলে,”আসলে,,,””নীল আবারও লুপার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলে,”আসলে আমরা বিয়ে করেছি এটা কেউ জানেনা। আমরা লুকিয়ে বিয়ে করেছি। আমাদের একটা বাচ্চাও আছে। এটাও কেউ জানেনা। জানেন কেউ যেন সন্দেহ না করে সে জন্য আমি ওদের বাসায় গুনে গুনে তিনবছর যাইনি। বিশ্বাস না হলে ওর আম্মুকে ডেকে জিজ্ঞেস করুন।” নীল চারদিকে তাকিয়ে সায়রা চৌধুরীকে দেখে উনাকে দেখি বলল,”ওইইইই যে পিংক শাড়ি পরা ওটা ওর আম্মু। মানে আমার শাশুড়ী।” নীলের কথাগুলো শুনে লুপার আত্মা শুকিয়ে যায়। লুপার সামনে দাঁড়ানো ছেলেটা হাতের গ্লাস রেখে কটকট করে হেঁটে সায়রা চৌধুরীর দিকে যায়। নীল লুপাকে বলে,”দেখ যাচাই করতে যাচ্ছে।” লুপা রাগি লুকে তাকিয়ে বলল, “ওটা কে জানো? আমার মামা। আপন মামা।” নীল মাত্র একটা লাড্ডু মুখে ঢুকিয়েছিলো। লুপার কথা শুনে লাড্ডু মুখে নিয়ে হা করে তাঁর দিকে তাকালো।
চলবে,,,,,,,।
গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি❤❤