ভালোবাসি_প্রিয়_সিজন_টু পর্ব_২৭

0
996

ভালোবাসি_প্রিয়_সিজন_টু
পর্ব_২৭
#সুলতানা_সিমা

নিজের স্বার্থে পেটের সন্তানের বুকে ছুরি চালালে কেমনে আম্মু? আমি তো তোমারই সন্তান তাইনা?” শিলা চৌধুরী কাপড় ভাঁজ করছিলেন,নীলের কথা শুনে উনার হাত থেমে যায়। চোখে মুখে আতঙ্ক নিয়ে পিছন ফিরে থাকান তিনি। নীল দাঁড়িয়ে আছে। তাঁর চোখ দুটো রক্তলাল। অতিরিক্ত কান্না করার কারণে চোখ ফুলে আছে। চুল গুলা যেন কেমন হয়ে আছে। মনে হচ্ছে চুল ধরে টেনেছে। হাতে অনেক কামড়ের দাগ। শিলা চৌধুরীর বুকটা ধুক করে উঠলো। অতিরিক্ত কষ্ট পেলে বা কান্না করলে নীল নিজের চুল টেনে ছিঁড়তে লাগে। নিজের হাতে নিজে কামড় কাটে। নীল কি তাহলে আজ অনেক কষ্ট পেয়েছে? অনেক কেঁদেছে? আর এটাই বা কেন বলল নীল? লুপার সাথে হওয়া অন্যায়ের কথা কি জেনে গেছে সে? ভাবতেই খুব চেনা একটা ভয় উনাকে বোবা বানিয়ে দিলো। মুখ খুলে নীলকে প্রশ্ন করতে পারলেন না “নীল কেন এটা বললি তুই? কী হয়েছে তোর?

ধীর পায়ে এসে ঘরে ঢুকে মায়ের সামনে দাঁড়ালো নীল। শিলা চৌধুরী স্পষ্ট দেখতে পারছেন নীলের চোখে উনার প্রতি ধিক্কার। আচমকা নীল উনার কোমর জড়িয়ে বসে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। শিলা চৌধুরীর বুঝতে বাকি নেই নীল যে সব জেনে গেছে। ভয়ে পায়ের শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। এক ঢোক গিলে পা শক্ত করে দাঁড়ালেন। কাঁদতে কাঁদতে নীল বলল,”তুমি যদি বলতে তোমার ভালোর জন্য লুপাকে ভুলে যেতে আমি ভুলে যেতাম আম্মু। তুমি কেন লুপার সাথে এমন করলে? দাদী ফুপি না হয় পর, তুমি তো ওর আপন ছিলে, তুমি কেমনে এটা করলে বলো? সবদিক থেকে লুপা কষ্ট পেয়েছে আমিও বাদ যাইনি আম্মু, আমিও তাকে কষ্ট দিয়েছি। সব থেকে বেশি কষ্ট দিয়েছি। লুপা তো ওর কষ্টটা হালকা করতে পারবে ওর বাবা মায়ের বুকে মাথা রেখে। আমি তো তাও পারবো না। আমার বাবা মা-ই যে আমার বুকে ছুরি চালিয়েছে। আমি তো লুপার থেকেও অসহায় আম্মু। না পারবো ভালোবাসার কাছে ফিরে যেতে না পারবো তোমাদের আঁকড়ে ধরতে। আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে আম্মু। বাঁচতে একটুও ইচ্ছে হচ্ছেনা আমার।”

নীলের শেষ কথাটা শুনে আঁতকে উঠলেন শিলা চৌধুরী। উনি আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলেন এমন একটা সময় এমন একটা দিনের জন্য। সত্য কখনোই চাপা থাকেনা। উনি জানতেন নীল অবশ্যই একদিন না একদিন সব জানবে আর ঝুলি ঝুলি প্রশ্ন নিয়ে এসে উনার সামনে বসবে। হ্যাঁ জেনে গেছে নীল। এখন ঝুলি ঝুলি প্রশ্ন নিয়ে উনার সামনে হাজির সে,কিন্তু উনার কাছে কোনো উত্তর নেই। উনি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। বুকের ভেতর চলছে যন্ত্রণার তুফান। নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে। খুব ছোট। কি এমন হয়ে যেতো সংসার ভেঙে গেলে? এমন লুপার সাথে এমন করলেন? এমনটা না করলে তো আজ এমন দিন আসতো না। হোক সংসারে অশান্তি তবু সন্তান তো ভালো থাকতো। শিলা চৌধুরী গাল গড়িয়ে পরলো চোখের নোনাজলে। নীল হঠাৎ উঠে দাঁড়ালো। শিলা চৌধুরী কান্নাজড়িত গলায় বললেন, “আমি তোর খারাপ চাইনি রে নীল।” নীল তাচ্ছিল্য হেসে বলল,”ভালো চাইতে? তুমি জানতে না আমি লুপাকে ভালোবাসতাম? তারপরও এমনটা করলে কেমনে বলো? এর থেকে তো ভালো হতো আমার খাবারে বিষ মিশিয়ে আমাকে খাইয়ে মেরে দিতে। তবু তো প্রতি রাতে নতুন করে মরতে হতো না। তুমি জানোনা আম্মু তোমাদের এসবের কারণে কতটা অন্যায় হয়েছে লুপার সাথে। তোমার সংসার ধরে রাখো আম্মু। আমার থেকে তো ওটাই বড় তাইনা?” বলেই নীল দ্রুত পায়ে হেঁটে তার রুমে চলে আসলো। শিলা চৌধুরী দৌড়ে নীলের পিছু আসলেন। নীল আলমারি থেকে কাপড় চোপড় বের করে ভাঁজ ছাড়াই যেটা যেভাবে পারে ওভাবেই ব্যাগের ভেতর ঢোকাচ্ছে। শিলা চৌধুরী এসে বাঁধা দেন নীল তাঁর মতোই কাপড় ঢুকাতে থাকে। প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র ব্যাগে ঢুকিয়ে মায়ের পাশ কেটে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। শিলা চৌধুরী নীলকে ডাকতে ডাকতে পিছু পিছু বেরিয়ে আসলেন। নীলের দাদী উনার রুম থেকে বেরিয়ে এসে নীলকে জিজ্ঞেস করলেন,”দাদুভাই কই যাচ্ছিস তুই?” নীল উনারও পাশ কেটে চলে যায়। একবারও পিছন ফিরে না তাকিয়ে চলে আসলো বাসা থেকে। মা ও দাদী পিছন থেকে অনেক ঢাকলেন শুনলো না সে। নীলের দাদী শিলা চৌধুরীকে বললেন, “কি বলেছো তুমি ওকে ও এভাবে রাগ করে বেরিয়ে গেলো কেন?” শিলা চৌধুরী কিছু বললেন না। উনি শূন্য দৃষ্টিতে বাইরে তাকিয়ে আছেন। নীলের বলা শেষ কথাটা বিকট আওয়াজে উনার কানে বাজছে,”তোমার সংসার ধরে রাখো আম্মু। আমার থেকে তো ওটাই বড় তাইনা?

________________________________

সন্ধ্যা ৬:৩০! মাগরিবের নামাজ শেষ করে ড্রয়িংরুমে বসেছে সবাই। সুমনা চৌধুরী আজ সারাদিন অরিনকে কোনো কাজ করতে দেননি। উনি নিষেধ করেছেন আর কিছু না করতে৷ নামাজ শেষে অরিন উনার কথা না শুনেই কিচেনে চলে গেলো। মাগরিবের নামাজ শেষে এক কাপ চা খাওয়ার নেশা শান্তি নীড়ের সবারই আছে। সবাইকে একটু চা বানিয়ে খাওয়ালে তাঁর নিজেরও শান্তি লাগে। তবে আজ শান্তি লাগছে না। মনটা আজ খুব খারাপ। দুপুরে দিহানের সাথে কথা হয়েছিলো। আজ নাকি দিহানের রুমের থাই গ্লাস ভেদ করে তাঁর বেড বরাবর একটা গুলি এসে ঢুকেছে। দিহান অনুমান করছে কেউ কাউকে গুলি করেছিলো কিন্তু তাঁর হাত ভুল ভাবে চালিয়েছে। তবে অরিন কেন জানি এটা মানতে পারছে না। দিহান কয়েকদিন থেকে বলছে তাকে নাকি কেউ ফলো করছে। কেউ না তো আছে যে দিহানের ক্ষতি চায়, কিন্তু দিহান এটা মানতেই চায়না। সে ব্যাপারটা তুচ্ছ বলে উড়িয়ে দিচ্ছে।

অরিন কিচেনে আসার একটু পরে লুপা কিচেনে গেলো। তাঁর মুখটা বিষন্ন চোখ মুখ শুষ্ক। দুপুরে বাসায় এসে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বসে ছিলো আর এখন বের হলো। কেমন যেন রোগা রোগা লাগছে৷ অরিন খেয়াল করে দেখলো লুপা দু রকম দুটো স্যান্ডেল পরেছে। সে কি হুসে নাই? লুপা পানি খেয়ে চলে যেতে লাগলে অরিন ডাক দিলো,”লুপা!” লুপা দাঁড়ায়। পিছন ঘুরে অরিনের দিকে জিজ্ঞাসুক চোখে তাকিয়ে থাকে মুখে কিছু বলেনা। অরিন বলল,”তোমার কি হয়েছে লুপা?” লুপা না সূচক মাথা নাড়ালো মানে কিছুই হয়নি। অরিন বলল,”চা বানাচ্ছি বসো গিয়ে।” লুপা কিছু না বলে চলে গেলো। লুপা অস্বাভাবিক আচরণে অরিন অবাক হয়। এই বাড়িতে যদি কেউ বেশি কথা বলে সেটা শান্তি চৌধুরী ও লুপা। দুজনই কারণ ছাড়া বকবক করে। এই বাড়িতে আসার পর থেকে শান্তি চৌধুরীকে তেমন বকবক করতে দেখেনি অরিন। শুধু শুনেছে উনি লুপার মতো বকবক করেন। অরিন দেখেছে লুপা সবসময় বকবক করতেই থাকে। অরিনের মাঝে মাঝে মনে হয় মন খারাপ বলে যে একটা কথা আছে সেটা মনে হয় লুপা জানেইনা। কিন্তু আজ এমন কি হলো যে লুপা মনটা এতো খারাপ লাগছে?

চা নিয়ে ড্রয়িংরুমে গেলো অরিন। লুপা মিহানকে কাঁধে মাথা রেখে মিহানের এক হাত জড়িয়ে ধরে বসে আছে। দিলারা চৌধুরী ঠিক করেছেন কাল বাসার সবাই শপিংয়ে যাবে। কি কি কিনবেন না কিনবেন তা বলে দিচ্ছে সবাই আর লিষ্ট করছে মিহান। সায়রা চৌধুরী বললেন, “আম্মা এতোগুলা শপিং একদিনে করা যাবেনা।” সুমনা চৌধুরী আর দিলারা চৌধুরীও সায়রার সাথে সহমত প্রকাশ করলেন। শান্তি চৌধুরী বললেন,”ঠিক আছে। কাল থেকে শপিং শুরু। বিয়ের আগের দিন পর্যন্ত কিনতে থাকো যা যা কিনতে হয়। আর আমার শপিং শুধু অরিন করবে।” অরিন মৃদু হাসলো। চায়ের ট্রে টি-টেবিলে রেখে সবাইকে চা দিলো। সুমনা চৌধুরী সবার হাতে কাপ তুলে দিতে সাহায্য করলেন। লুপা চা নিলো না সে খাবে না। শান্তি চৌধুরী চা নিতে নিতে বললেন,”অরিন দিহানের কি হয়েছে রে? দুপুরে শুনলাম কি নিয়ে ঝাড়ি দিয়ে কথা বললি?” শান্তি চৌধুরীর কথায় উপস্থিত সবার চোখ অরিনের দিকে চলে যায়। অরিনের কিছুটা অস্বস্তিবোধ হয়। সে বলল,”
_কিছু হয়নি দাদুমনি। উনার নাকি মনে হচ্ছে কেউ উনাকে ফলো করে। আমি বলছিলাম সাবধানে থাকতে উনি বলেন এটা তেমন কিছু না। এটা নিয়ে আরকি একটু,,,,” অরিনের কথা শুনে সবার চেহারায় চিন্তার রেখা ফুটে উঠলো। শান্তি চৌধুরী মাথা ঝিমঝিম করে উঠলো। দিহান দেশে থাকতেও এটা বলেছে তাঁর নাকি মনে হয় কেউ তাকে ফলো করে। এখন আবার এটা বলছে। এমন তো নয় কেউ দিহানের ক্ষতি করতে চায়। অজানা ভয়ে উনার কলিজা লাফ দিয়ে উঠলো। মিহান বলল,”দাদুমনি তুমি দিহানকে ফোন করে বলো বড় ভাইয়ার [জিহান] সাথে চলে আসতে। ভাইয়া চলে আসলে ও একা হয়ে যাবে এদিকে আমরাও ওর টেনশনে ভালো থাকবো না। তাঁর চেয়ে ভালো চলে আসুক।” দিশা বলল,”কিন্তু ভাইয়া কী আসবে? আর এভাবে আসা যাওয়া করতে থাকলে কি লেখাপড়ার ক্ষতি হবেনা?
_না হবেনা। ভাইয়ার সাথে আবার চলে যাবে। ভাইয়া চলে আসলে ও একা হয়ে যাবে না? তখন তো ওর জন্য আরো রিক্স। দাদুমনি তুমি দিহানকে ফোন করে বলো চলে আসতে।” শান্তি চৌধুরী দিয়াকে পাঠালেন উনার ফোন আনতে৷ তখনই কলিংবেল বেজে উঠল। দিশা গিয়ে দরজা খুলে দেয়।

দরজার বাইরে দাঁড়ানো ব্যাক্তিকে দেখে অবাকের সিমানা পেরিয়ে দাঁড়িয়ে যায় সে। ইশি এসে দিশার পাশে দাঁড়ায়। দিশা ইশিকে বলল,”ইশি রে হাতির পা পড়েছে শান্তি নীড়ে। আজ তুই কয়টায় ঘুম থেকে উঠেছিস ইশি? সূর্য কোন দিকে উঠেছে দেখছিলি?
_আজ মনে হয় পশ্চিম দিকে সূর্য উঠেছে রে।” ইশি কথা শেষ হতে না হতেই তার মাথায় একটা চাপড় পরে। ইশি মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে চেঁচিয়ে বলে,”এই নীলের বাচ্চা। মারলি কেন?
_আমাকে হাতি ডাকলি কেন? আমি হাতি?
_হাতি আমি ডাকছি নাকি ও ডাকছে?
_সে যাই ডাকুক তোরাই তো ডেকেছিস। যা সর রাস্তা ছাড়।
_হ্যাঁ সরবো তো। তবে আজ হঠাৎ তুই আমাদের বাসায় কেন?
_আমি বিয়েতে এসেছি সর তো।
_হুম তাই বল। কিন্তু তোর চোখ মুখ এমন কেন? দিশা দেখতো ওকে দেখে কেমন যেন ডাকাত ডাকাত লাগছে না?” নীল ইশিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ভেতরে ঢুকলো৷ দিশা আর ইশি জোরে হেসে উঠে।

ভেতরে ঢুকেই নীলের চোখ গেলো মিহানের কাঁধে মাথা রাখা লুপার দিকে। লুপার মুখটা একদম শুষ্ক লাগছে। নীলের বুকটা হু হু করে উঠলো। মিহান আর শান্তি চৌধুরী উচ্চ স্বরে নীল নাম উচ্চারণ করতেই লুপা মাথা তুললো। নীল শান্তি চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরে আছে। লুপার কলিজা মুচড় দিয়ে উঠে। কালকের ঘটনার পর দ্বিতীয়বার নীলের সাথে দেখা হোক চায়নি সে৷ অথচ আজ দেখা হয়ে গেলো। নীল সবার সাথে সৌজন্যমূলক কথা বলে লুপার দিকে তাকালো। লুপা লিষ্ট হাতে নিয়ে সেটা দেখছে। চোখ তুলে উপরে তাকাচ্ছে না সে। নীল লুপার সাথে কথা বলতে চায় কিন্তু কথা তাঁর জবান দিয়ে বের হচ্ছে না। লুপার সাথে হওয়া অন্যায়গুলা চোখে ভেসে উঠছে। ড্রাইভারের বলা কথাগুলা কানে বাজছে। চোখে ভেসে উঠছে রেস্টুরেন্টে লুপাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার দৃশ্যটা। এতো এতো মানুষের সামনে কত বাজে কথায় গালাগালি করলো সে লুপাকে। আর লুপা কিনা সব মুখ বুজে সহ্য করে নিলো। নীলের বুকটা হু হু করে উঠলো। এতো ভালোবাসার পরেও কিভাবে সে লুপাকে কষ্ট দিতে পারলো? শুকনো এক ঢোক গিলে লুপাকে বলল,”কেমন আছিস লুপা?”
লুপা না শুনার ভান করে বসে থাকলো। মিহান নীলকে বলল,”চল উপরে ফ্রেশ হবি।”
_হুম চল।”

নীল মিহানের সাথে উপরে চলে গেলো। লুপাও তাঁর রুমে চলে যায়। নীলের মুখটা এমন দেখাচ্ছে কেন? ও কী কেঁদেছে নাকি অসুস্থ? লুপা নিজেকে দমায়। নীলকে নিয়ে ভাবতে চায়না সে। বই নিয়ে পড়তে বসলো। যে করেই হোক নীলকে ভুলতে হবে৷ যে তাঁর চোখের ভাষা বুঝলো সে কেমন ভালোবাসা মানুষ? তাকে ভালোবেসে কি লাভ?

রাত ৯টা নীল এসেছে অনেক্ষণ হলো। সেই যে লুপাকে সোফায় বসা দেখেছিলো আর দেখেনি৷ একটাবার লুপার সাথে কথা বলতে মনটা আঁকুপাঁকু করছে। যতক্ষণ না লুপার কাছে ক্ষমা চাইবে সে ততক্ষণ কোনো স্বস্থি নেই তাঁর। মিহানের একটা কল আসতেই সে ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে যায়। নীল দেরি না করে সাথে সাথেই রুম থেকে বেরিয়ে সোজা লুপার রুমে যায়। এতক্ষণ মিহানের জন্য বের হতে পারেনি। লুপার রুমে লুপা নাই নীল সব রুমে গিয়ে একেকবার উঁকি দিয়ে দেখলো লুপা কোন রুমে আছে। কোথাও লুপাকে পায়নি সে। হঠাৎ নীলের মনে হলো লুপা ছাদে হতে পারে। নীল ছাদে গেলো৷ ছাদের ডানদিকে রেলিং ধরে লুপা দাঁড়িয়ে আছে। পেছন থেকে দেখেও লুপাকে চিনতে ভুল করেনি নীল। বুকটা ভারি হয়ে আসছে তাঁর। এই ছোট্ট মেয়েটা কিনা জীবনে এতো লড়েছে অথচ কেউ তা টেরই পায়নি? নীল গিয়ে লুপার পিছনে দাঁড়ালো। কান্নায় বুকটা ফেটে যাচ্ছে তাঁর। ইচ্ছে করছে লুপাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদতে। নীল লুপাকে ডাকতে গিয়ে বোধ করলো তাঁর গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। কান্নায় তাঁর গলা আটকে গেছে। দু’কয়েক ঢোক গিলে নিজেকে শক্ত করে ডাক দিলো,”লুপা।”

হঠাৎ নীলের কণ্ঠে নিজের নাম শুনে চমকে উঠে লুপা। তড়িঘড়ি করে চোখ মুছে পিছন ফিরে থাকালো সে। নীল তাঁর খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে। লুপা দু পা পিছিয়ে যায়। নীলের চাহনি আজ অন্যরকম লাগছে। তাঁর চোখ যেন চিৎকার করে কিছু বলছে। আজ এই চোখে ঘৃণা নেই অবহেলা নেই ধিক্কার নেই কোনো হিংস্রতা নেই। নীলের চোখে পানি। লুপা অবাক হয়। তাঁর অবাক হয়ে তাকানো দেখে নীল চোখটা মুছে বলল, “এখানে অনেক ঠান্ডা এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?” লুপা কিছু না বলে পাশ কেটে চলে যেতে চায়। নীল লুপার হাত ধরে ফেলে। লুপা ঝাড়া দিয়ে নীলের হাত ছাড়িয়ে বলে,”আমার হাত ধরার অধিকার আমি কাউকে দেইনি৷” লুপা চলে যেতে পা বাড়ায় নীল আবার লুপার হাত ধরে ফেলে। এবারও লুপা ঝাড়া দেয়, কিন্তু নীলকে ছাড়াতে পারেনি৷ আচমকা নীল লুপাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠে। লুপা ৪৪০ ভোল্টের শকড খেলো। তাঁকে নীল জড়িয়ে ধরেছে? এতো নরম আচরণ? বিস্ময়, নীলের ছোঁয়ায় লুপা জমে যায়। নীল তাঁর কাঁধে মাথা ঠেকিয়ে বিড়বিড় করে বলে,”সরি লুপা।” নীলের গলা কান্নাভেজা। লুপা গম্ভীর গলায় বলল, “ছাড়ো আমায়।”
_সরি বাবুই। আমাকে ক্ষমা করে দে প্লিজ। তুই আমাকে সবকিছু বলতে পার,,,,,,,,,”নীলের পুরো কথাটা না শুনে লুপা চেঁচিয়ে বলল,”

_প্লিজ ছাড়ো।”বলেই ধাক্কা দিয়ে নীলকে সরিয়ে দেয়৷ তীক্ষ্ণ চোখে নীলের দিকে তাকিয়ে তাকে সে। রাগে তাঁর শরীর কাঁপছে। নীল অসহায় চোখে তাকাল৷ লুপা চেঁচিয়ে বলে, “কি চাই একটা “শ্যা মেয়ের কাছে? একটা নষ্টা মেয়েকে ছুঁতে দ্বিধা হয়না? brothel Queen না? কেন এসেছো brothel Queen এর কাছে? যৌবনের চাহিদা মেটাতে?” নীল মাথা নিচু করে ফেললো। কি বলবে সে? এগুলা তো তারই বলা কথা। লুপার মুখ থেকে কথাগুলা যেন বিষাক্ত তীর হয়ে এসে কলিজায় ঢুকছে। তাহলে সে যখন বলতো তখন লুপার কেমন লাগতো? এতোদিন পাওয়া লুপার কষ্টটা অনুভব করতে পারছে নীল। লুপা দুকদম এগিয়ে এসে নীলের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,”একটা সত্যি কথা কি জানো? এতোদিন তোমাকে ঘৃণা করার অভিনয় করলেও এখন সত্যি সত্যি ঘৃণা করি। এতো বেশি ঘৃণা করি যে আমার মন চাচ্ছে তোমার স্পর্শ লাগা অঙ্গ গুলা কেটে ফেলে দেই।” নীল হাঁটু গেড়ে বসে ডুকরে কেঁদে উঠলো। নীলের কান্না দেখে লুপার কলিজা ছিঁড়ে ছিঁড়ে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে নীলের মাথা বুকে চেপে ধরে বলতে, “প্লিজ কেঁদো সয্য করতে পারছি না আমি।” কিন্তু এটা করবে না লুপা। নীলকে এখন সে ঘৃণা করে খুব বেশি ঘৃণা করে। নীল লুপাকে বলল, “ফিরে আসবি আমার জীবনে? আবার আমার অবুঝপাখি হবি প্লিজ? তোর কোলে মাথা রেখে সারাটা জীবন ঘুমাতে দিবি প্লিজ?

চলবে,,,,,,!

কেউ ছোট পর্ব বলে অভিযোগ করবেন না প্লিজ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here