শ্রাবন সন্ধ্যা পর্ব:-৪১

0
1046

শ্রাবন সন্ধ্যা পর্ব:-৪১
#আমিনা আফরোজ

রাতের আকাশে মিটিমিটি তারা। সেই সাথে বয়ে চলেছে মৃদুমন্দ বাতাস। তন্দুরি চিকেনের অর্ডার দিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসে আছে নেহাল আর শার্ট প্যান্ট পরিহিত এক তরুণী। যার আপাদমস্তক অভিজাত্য আর অহমিকা দিয়ে মোড়া। ঢাকার পুরানা পল্টনের বাইতুল ভিউ টাওয়ারের তোরো তলার ভবনের উপর অবস্থিত বার্ড আই নামের রূপটপ রেস্টুরেন্টের ছাদে বসে আছে ওরা। ছাদ থেকে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম, ঢাকার বিভিন্ন সুউচ্চ ভবন এবং ব্যস্ততম সড়কের চলা গাড়ি দেখা যাচ্ছে। সেই দিকেই অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেয়েটি। সামনে বসে থাকা ছেলেটির সাথে কিভাবে কথা শুরু করবে তা বুঝতেই পারছেনা সে। তাই বাইরের দিকে তাকিয়ে মনে মনে কথা গুলো গুছিয়ে নিচ্ছিল তরুণীটি। মেয়েটির এমন নীরবতা দেখে নেহাল নিজেই বলে উঠলো,

–“আমাকে কি যেন জন্য ডেকেছিলেন তা তো বললেন না মিস নেহা?”

নেহালের কথা শুনে চমকে উঠলো মেয়েটি। নেহালের সামনে বসে থাকা মেয়েটি আর কেউ নয় স্বয়ং নেহা। বিকেলে অনেক অনুরোধ করার পর ও নেহালের সাথে দেখা করতে পেরেছে। নেহাল তো কিছুতেই আসতে চাচ্ছিল না আজ। নেহার এত অনুরোধে শেষ অব্দি ফেলতে না পেরে এখানে আসার জন্য রাজি হয়েছে।

নেহাকে এখনো চুপ করে থাকতে দেখে নেহালের ভ্রু-কুচকে গেল। বিকেলে রোদের সাথে কথা বলার পরেই নেহা কল দেয় ওকে। আননোন নাম্বার দেখে প্রথমে রিসিভ করতে না চাইলেও পরে কল রিসিভ করে নেহাল। কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে অচেনা কোন মেয়ের রিনরিনে কন্ঠস্বর শুনতে পেল ও। অচেনা মেয়ের কন্ঠস্বর শুনে আরো খানিকটা ভ্রূ-কুচকে গেল ওর।মেয়েটি তখনো ওকে ডেকেই চলছে।

–“হ্যালো। আপনি কি অভ্র আহমেদ নেহাল বলেছেন?”

নেহাল ওর গম্ভীর পুরুষালী গলায় বলল,

–” জি।আপনি কে আছেন?”

–“আমাকে আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী বলতে পারেন।”

–“বেশ। আপনার নামটা কি জানতে পারি?”

–“জি অবশ্যই। আমি মারজিয়া খান নেহা।”

–“আপনি আমার পরিচিত বলে তো আমার মনে হচ্ছে না।”

–“আমি আপনার পরিচিত নই তবে পরিচিত হতে চাই আপনার সাথে। আপনি কি আজ আমার সাথে দেখা করতে পারবেন। কিছু জরুরী কথা ছিল আমার।”

–“কি জরুরী কথা?”

–“তা না হয় আসলেই জানতে পারবেন?”

নেহাল নেহার কথা শুনে বেশ দোটানায় পড়ে গেল।একদিকে রোদের সাথে দেখা করার কথা অন্যদিকে নেহা। বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে নেহাল বলে ওঠল,

–“আজ আমি দেখা করতে পারবো না।আপনার সাথে অন্য কোন দিন পরিচিত হবো।আজ আমি একটু ব্যস্ত আছি।”

নেহা নেহালের কথা শুনে আরো বেশি অনুরোধ করতে লাগলো। সন্ধ্যাকে নিয়ে আর বেশি সময় নিতে চাচ্ছে না ও। নেহার এমন অনুরোধ দেখে শেষ পর্যন্ত রাজি হতে হলো নেহালকে। একটা লোককে আর কতবারই বা না করা যেতে পারে।

–“ঠিক আছে আমি আসব।আপনি লোকেশনটা মেসেজ করে জানিয়ে দিবেন।”

নেহালের কথা শুনে নেহা মুচকি হেসে কৃতজ্ঞতা স্বরে বলল,

–“আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।আমি লোকেশনটা আপনাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি ।আপনি সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পর চলে আসবেন।আমি আপনার জন্য অপেক্ষায় থাকব।”

নেহাল আর কোন কথা না বলে কল কেটে দিয়ে রোদকে কল দেয়। আপাতত রোদকে সামলাতে হবে ওকে।রোদ তখনো ছাদেই দাড়িয়ে ছিল। আবারো নেহালের কল দেখে চটজলদি কল রিসিভ করল।

–“বাহ্ তোমার তো দেখছি বেশ উন্নতি হয়েছে ।’

রোদ নেহালের কথা শুনে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,

–” কেন বলুন তো ?”

–“এই যে আমাকে একবারের বেশি দুইবার কল করতে হয়নি এবার। তোমাকে এজন্যই বলি আমার সাথে থাকো আস্তে আস্তে তোমার উন্নতি হতে থাকবে।”

–” আপনি কি বলতে চাচ্ছেন বলুন তো? আমি কি তবে এখন অনুন্নত হয়ে আছি ?”

–“তুমি তো এখন একটা গাধী হয়ে আছো। আমার সাথে থেকে থেকে তোমাকে মানুষ বানাচ্ছি আমি। ইস্ কি কষ্ট আমার শেষ পর্যন্ত কি না একটা গাধীকে বিয়ে করতে হয়েছে আমার।”

–” বাজে কথা রাখুন। কি কারনে কল দিয়েছেন সেটা বলুন?”

–” হ্যা ভালো কথা মনে করেছো। যা বলার জন্য তোমাকে ফোন করেছি। আজ আর তোমাকে কষ্ট করে আসতে হবে না। সবকিছু ভেবে দেখলাম তুমি তো গাধী মানুষ, রাতের বেলায় এসে যদি তুমি আবার হারিয়ে যাও তাহলে তোমার বাবাকে আমি কি জবাব দিবো বলো তো? তাই সবদিক ভেবে সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা আগামীকাল বিকেলে দেখা করব ঠিক আছে।”

রোদ মনে মনে খুশি হলেও মুখে বলল,

–” আমি তো ভেবেছিলাম আজকে সন্ধ্যাটা আপনার সাথে কাটাবো । কিন্তু আমার ইচ্ছেটা অপূর্ণই রয়ে গেল। কোন ব্যাপার নয় আমরা বরং কালকে বিকেলটা একসাথে কাটাবো।”

–” কি করব বল, তোমার মত গাধী আর পিচ্চি মেয়েকে নিয়ে তো খুব ঝামেলা তাই না? তোমার মাথা তো শুধু আবার গোবর পোড়া । ”

নেহালের কথা শুনে রোদ রেগে বলল,

–“আপনি আবার আমাকে অপমান করছেন?”

–” কই না তো?”

–” আপনার সঙ্গে আর কোন কথা নেই আমার।বদ লোক একটা। সবসময় আমাকে কথা শোনানোর জন্য তৈরি থাকেন।”

নেহাল কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে কল কেটে দিলো রোদ। রোদকে রাগাতে পেরে হো হো করে হেসে উঠলো নেহাল। মেয়েটাকে রাগাতে বেশ ভালোই লাগে ওর।

অতীতের ভাবনা থেকে বের হয়ে আসলো নেহাল। তারপর নেহার দিকে তাকালো। নেহাও ততক্ষনে কথাগুলা নিজে নিজে সাজিয়ে নিয়েছে। নেহালের তাকানো দেখে বলল,

–“আমি যে জন্য আপনাকে ডেকেছি তাতে আপনার উপকারই হবে অপকার হবে না।”

–“তা না হয় বুঝলাম কিন্তু কথাটা কি বলুন তো?”

–” আপনি সন্ধ্যাকে এখনো ভালোবাসেন তাই না?”

নেহার কথা শুনে নেহাল অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,

–” আপনি সন্ধ্যার কথা কিভাবে জানলেন?”

নেহা হেসে বলল ,

–“শুধু সন্ধ্যার কথাই না আরও অনেক কথাই জানি আমি ? ”

–“কি কি জানেন আপনি?”

–” আরে আরে এত ব্যস্ত হচ্ছে কেন ? সবই বলবো আপনাকে। আপনাকে বলবো বলেই তো এখানে এসেছি তাই না? একটু ধৈর্য ধরুন।”

–” ঠিক আছে বলুন তাহলে ।”

–“আপনি কি জানেন সন্ধ্যার বিয়ে হয়ে গেছে?”

–“জি জানি আমি।”

–” বাহ তাহলে তো আরো ভালো হলো।”

–” কেন বলুন তো?”

–” আমাকে আর শুরু থেকে কিছু বলতে হবে না ।”

নেহা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আবারো বলে উঠলো,

–” আপনি যদি সন্ধ্যাকে এখনো ফিরে পেতে চান তাহলে আমার কাছে একটা আইডিয়া আছে।”

নেহার কথা শুনে মুখ তুলে তাকালো নেহাল। নেহার চোখে চোখ রেখে বলল,

–” সন্ধ্যাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিলে আপনার কি লাভ হবে বলুন তো?”

নেহা মুচকি হেসে বলল,

–” আপনি যেমন সন্ধ্যাকে ভালোবাসেন ঠিক আমিও তেমন শ্রাবনকে ভালোবাসি। শ্রাবনকে আমি আজকাল থেকে ভালোবাসি না ওকে সেই ছোটবেলা থেকেই আমি পছন্দ করি । হয়তো শ্রাবনের সাথে বিয়েটা আমারই হতো যদি না মাঝখানে সন্ধ্যা আসতো।”

নেহাল চুপ করে থেকে নেহাকে বললো,

–” আপনার আইডিয়াটা শুনি আগে।”

নেহালের কথা শুনে নেহা ওর আইডিয়াটা একে একে বলতে লাগলো নেহালকে। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

–“যদি আমরা এ প্লান মতাবেক কাজ করতে পারি তবে তুমি তোমার সন্ধ্যাকে পেয়ে যাবে আর আমি আমার শ্রাবনকে।–

–“তোমার প্ল্যানটা পরবর্তীতে ভেবে দেখব আমি। আপাতত এখন আমার বাসায় যেতে হবে, পরে কথা হবে তোমার সাথে ।”

কথাগুলো বলে নেহাল নেহার থেকে বিদায় নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে চলে গেল। নেহাল চলে যেতেই ক্রুর হাসি ফুটে উঠল নেহার ঠোঁটে। নেহালকে ও ওর আসল পরিকল্পনা সম্পর্কে বলে নি। সন্ধ্যাকে এত সহজে কি করে ছেড়ে দেয় ও? ওর আর শ্রাবনের মাঝে আসার জন্য যে শাস্তি পেতেই হবে সন্ধ্যাকে।নেহালকে ও ঠিক রাজি করিয়েই ছাড়বে। সন্ধ্যার আগামী দিনগুলোর কথা ভেবে হাসতে হাসতে চলে গেল নেহা।

চলবে

(আসসালামুয়ালাইকুম।আজকের পর্বে কি লিখেছি নিজেই জানি না। জানি না ঠিক কতটা গুছিয়ে লিখতে পেরেছি। আপনাদের কাছে আজকের পর্ব কেমন লেগেছে জানাবেন আর ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।ভালো থাকবেন সবাই।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here