শ্রাবনসন্ধ্যা পর্ব:-৩৯

0
1085

শ্রাবনসন্ধ্যা পর্ব:-৩৯
#আমিনা আফরোজ

ব্যস্ততম নগরীর এক বাসস্ট্যান্ডে এসে দাঁড়িয়ে আছেন সামাদ মিয়া আর ওনার স্ত্রী জমিলা বেগম। আমন্ত্রণ পেয়ে অনেক আগেই ঢাকায় আসতে চেয়েছিলেন কিন্তু বাড়িতে অতিথি রেখে তো আর আসা যায় না । তাই গত চারদিন ঢাকা-মুখ হতে পারে নি তারা। তবে অতিথি বিদায় নেবার সাথে সাথে মিন্টু মিয়া বাড়ির দায়িত্ব বুঝে দিয়ে স্ত্রীকে সাথে নিয়ে ঢাকার বাসে উঠে পড়েন সামাদ মিয়া।

স্বামীর সাথে এই প্রথম ঢাকায় এসেছেন জমিলা বেগম। এর আগে কখনো রূপগঞ্জের বাহিরে কোথাও আসা হয় নি ওনার। পরিবার থেকেও তেমন বাহিরে আসার সুযোগ ছিল না তখন। আর বিয়ের পরেও তেমন ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ আসে নি। আসবেই বা কি করে বাবা-মা যার সাথে বিয়ে দিয়েছিল তার তো আর ওনাকে নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর সময় না ছিল তখন আর আসে এখন। আজও হয়ত এই আলিশান শহরে আসা হতো না ওনার যদি না ছেলে ডেকে পাঠাত। ঢাকা নামক ব্যস্ততম নগরীর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন তিনি। আশেপাশের বিরাট দালানকোঠা গুলোর দিকে তাকিয়ে ছিলেন অনেকক্ষন। দালান কোঠার আভিজাত্যের ছোঁয়া স্পষ্ট দৃষ্টিগোচর হচ্ছে ওনার। দালানকোঠা ছেড়ে এবার আশেপাশের তাকালেন তিনি। এদিকটায় লোকজনের আনাগোনা অনেক বেশি বলে মনে হচ্ছে ওনার কাছে। কিন্তু সবাইকে যে তার কাজে ব্যস্ত দেখে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন তিনি। চুপিসারে প্রানভরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন ।

প্রায় মিনিট দশেক পর নেহালকে দেখতে পেলেন জমিলা বেগম। এতদিন পর ছেলেকে দেখে ওনার চোখ ভরে ওঠল নোনা পানিতে। নেহাল কাছে এগিয়ে এলে ছেলেকে পরম মমতায় জড়িয়ে কেঁদে ওঠলেল জমিলা বেগম।

জমিলা বেগমকে কাঁদতে দেখে কিঞ্চিত বিরক্ত হলেন সামাদ মিয়া।

–” মাইয়া মানুষ লইয়া এই এক ঝামেলা যহন তহন কান্না জুরাইয়া দেয়। বলি এতো কাঁদার কি আছে?

কথাগুলো অনেকটা বিড়বিড় করেই বললেন তিনি। তারপর নেহালের উদ্দেশ্যে বললেন,

–” আব্বা কেমন আছেন আপনি?”

বাবার গলার স্বর শুনে নেহাল মুখ তুলে তাকাল ওর বাবার দিকে । এতক্ষণ মায়ের মমতার আঁচলে ছিল ও। বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,

–” ভাল আছি , আপনি কেমন আছেন আছে?”

–” ভালোই আছি।”

–“বাদবাকি কথা না হয় বাসায় গিয়ে বলবেন। অনেকক্ষণ হলো এখানে দাঁড়িয়ে আছেন বোধহয়।আসলে আমার আজ কলেজে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিলো বিধায় একটু দেরি হয়ে গিয়েছে। এজন্য কিছু মনে করবেন না বাবা। বাসায় চলুন। বিশ্রাম নিতে হবে আপনাদের। অনেক দূর থেকে এসেছেন, আপনাদের বোধহয় ক্লান্তি লাগছে।”

ছেলের কথা শুনে সামাদ মিয়া হেসে বললেন,

–“আপনারে দেইখা সব ক্লান্তি দূর হয়ে গেছে আব্বা। তয় এহন বাড়ি যাওন দরকার। আপনাকে অনেক কথা কওনের হামার।”

–” ঠিক আছে আগে বাড়ি চলেন তারপর সব কথা শুনব আপনার।”

বাবা-মাকে নিয়ে নেহাল ওর গন্তব্যের দিকে চলে গেল। বাবা মায়ের সাথে কথা বলে দিন দুয়েকের মধ্যেই বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবে রোদেদের বাড়িতে। তবে রোদকে নিয়ে এখনও দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে নেহাল। সন্ধ্যাকে যে নেহাল ভুলে গেছে রয়েছে এমনটা কিন্তু নয়। সন্ধ্যাকে ভোলা ওর সম্ভব নয়। হয়ত কখনো ভুলতে পারবে না ও ওর শ্যামলতাকে। তবে রোদের জন্য যে ওর মনে আলাদা জায়গার সৃষ্টি হয়েছে তা বেশ বুঝতে পারছে নেহাল । বিয়েটা সন্ধ্যার উপর প্রতিশোধ নিতে করছে নাকি রোদকে ভালোলাগার কারনে করছে এ নিয়ে নিজেও বেশ সন্দিহান নেহাল।তবে এটুকু নিশ্চিত রোদের সাথে ওর পারিবারিকভাবে বিয়েটা হচ্ছে । দেখা যাক নিয়তি ওদের চারজনের জীবন কোন দিকে নিয়ে যায়? নিয়তি যে দিকে ইশারা করবে সেদিকেই যাবে নেহাল।

এদিকে রোদ গত চার দিন পর আজ একটু সুস্থ বোধ করছে । সেদিন সত্যি সত্যি নেহাল ওকে ত্রিশ মিনিট রোদে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল। অনেক মিনতি করেও রেহাই পায় নি সেদিন। তার ফলশ্রুতিতেই গত চার দিন জ্বরে পড়ে ছিল রোদ। এতেও নেহালের মাঝে কোন অনুসোচনা আসে নি। রোদ অসুস্থ হওয়ার পরেও বলেছে,

–“তোমার নিজ কৃতকার্যের জন্যই আজ অসুস্থ হয়ে পড়ে আছো তুমি । এতে আমার কোন দোষ দেখতে পাচ্ছি না আমি। আর না আমার মাঝে কোন খারাপ লাগা কাজ করছে বরং আমি আরো খুশি হয়েছি। এতে করে পরবর্তীতে কেউ ডাকলে তুমি আর ধেই ধেই করে তার পিছু পিছু যাবে না। আমার শাস্তির জন্য হলেও কিছুটা হলেও শিক্ষা অর্জন হয়েছে তোমার। এজন্য আমাকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত তোমার, তা না করে আমাকে দোষারোপ করছো?”

সেদিন নেহালের কথা শুনে নিজে থেকে আর কোন যোগাযোগ করে নি রোদ। নেহালও আর পাল্টা কোন যোগাযোগ করে নি রোদের সাথে। অভিমানে রোদের আকাশ আজ কালো মেঘে ঢেকে আছে।অভিমান দূরে ঠেলে রোদ ছাদের দিকে ছুটল। আকাশ দেখলে যদি মনটা ভালো হয়ে তবে ক্ষতি কি। কিছুটা সময় না হয় কাটুক আকাশের শুভ্র মেঘের সাথে। কিন্তু রোদের আর ছাদে যাওয়া হলো না তার আগেই তীব্র আওয়াজে ফোনের রিংটোন বেজে উঠল। রোদ তড়াৎ গতিতে কল রিসিভ করল।

–“হ্যালো রোদ। কি খবর তোর?জ্বর কমেছে কি?”

প্রিয়ন্তির প্রশ্ন শুনে রোদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

–” এক এক করে প্রশ্ন কর প্রিয়ন্তি।এক সাথে এত প্রশ্ন করলে কোনটার উত্তর দিবো বলতো?”

–“এক এক করে উত্তর দে।”

–“জ্বর কমেছে একটু। তবে ভালো লাগছে না কিছুই । তুই কি একটু বাসায় আসবি প্রিয়ন্তি?”

–“ঠিক আছে আসছি আমি।”

প্রিয়ন্তির সাথে কথা শেষ করে আবারো আনমনে হয়ে গেল রোদ। রোদের ভাবনার রাজ্যে জুড়ে শুধুই নেহালের প্রতিচ্ছবি। না ওর আর ভাববে না নেহালকে। মানুষটা একবারো খোঁজ নিলো না।রোদ কি এতোটাই ফেলনা নাকি?

এদিকে শ্রাবন আর সন্ধ্যা নিজের মাঝে কিছুটা সময় কাটিয়ে ঘরে ফিরে এসেছে। শ্রাবনকে তো আবার আজ অফিসেও যেতে হবে। আজ সন্ধ্যা নিজের হাতে শ্রাবনকে টাই পরিয়ে দিচ্ছেন।আর শ্রাবণ অপলক দৃষ্টিতে সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে আছে। নিত্যদিন মায়াবতির নতুন নতুন রূপের প্রেমে পড়ছে ও। মাঝে মাঝে শ্রাবণের ইচ্ছে করে ওর মায়াবতীকে বুকে শক্ত করে জড়িয়ে রাখতে যেন অন্য কেউ ওর মায়াবতীর দিকে তাকাতে অব্দি না পারে। শ্রাবনকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সন্ধ্যা বলে উঠলো,

–“এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? কি এমন দেখছেন এক দৃষ্টিতে?”

–“তোমাকে দেখার তৃষ্ণা কখনো মিটবে না আমার।”

–” তাই বুঝি।”

–“হুম।তোমাকে যত দেখি ততই যেন দেখার তৃষ্ণা আরো বেড়ে যায় আমার।কত রাত যে নিদ্রাহীন হয়ে এই মায়াবী মুখশ্রি দেখেছি তার কোন হিসাব নেই। তোমার ঐ দুই চোখের গভিরতায় নিজেকে হারিয়েছি বারংবার। তবুও আমার তৃষ্ণা মেটে নি।”

শ্রাবনের কথাগুলো সন্ধ্যার মনে কাঁপন ধরে দিল। মনে এক অন্যরকম অনুভুতির সৃষ্টি হলো।সেই অনুভূতির জোয়ারে নিজেকে সামলাতে না পেরে নিজেকে সঁপে দিলো শ্রাবনের বুকের মাঝে। শ্রাবণ ও তার মায়াবতীকে পরম ভালোবাসায় জড়িয়ে নিল নিজের মাঝে।

(আসসালামুয়ালাইকুম। আজকের পর্ব কেমন লেগেছে জানাবেন আর ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটা শেষের দিকে এসেছে।খুব বেশি হয়ত লাগবে না শেষ হতে।আশা করি গল্পের শেষ অব্দি আপনাদের সাথে পাবো। আর যারা নীরব পাঠক আছেন তারা দয়া করে সাড়া দিবেন। আপনাদের সাড়া পেলে লেখার আগ্রহ বেড়ে যায়। ভালো থাকবেন সবাই।হ্যাপি রিডিং ???)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here