ভালোবাসি_প্রিয়
পর্ব_১৯
#সুলতানা_সিমা
দিহান অরিনকে এভাবে টর্চার করবে অরিন তা স্বপ্নেও ভাবেনি। সে ভাবত দিহানই একমাত্র মানুষ যে তাকে বুঝে,কেয়ার করে। কিন্তু না বুঝেনি তাকে দিহান। দিহানের পায়ের নিচে নিজের হাতটা ছাড়াতে অন্য হাতে দিহানের পা সরাতে চাইল অরিন। দিহান আরও জোরে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল”
_স্বামী চাই অধিকার চাই তাইনা? কী মনে করেছ তুমি যা খুশি তাই করবে আর আমি সব সয্য করে নিব? উঁহু এতটা ভালো মানুষ আমি নই। [বসে অরিনের চুলের মুঠি ধরে] আজ তন্দ্রার সাথে এনগেজমেন্ট নয় বিয়ে হবে। আমার বউ হয়ে থাকবে তন্দ্রা আর তার চাকরানী হয়ে থাকবে তুমি।
দিহানের মুখে তন্দ্রা নাম শুনে অরিন চমকে ওঠে। কিঞ্চিৎ স্বরে ঠোঁট নাড়িয়ে বলে ওঠে” তন্দ্রা?”দিহান আরও জোরে চুলে মুঠি ধরে বলে”হ্যাঁ তন্দ্রা” অরিন ব্যথায় আহহহ বলে আর্তনাদ করে চোখ খিঁচে ফেলে।দিহান অরিনকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে উপরের দিকে চলে যায়। তার বাবা মা কে বলবে গিয়ে কিভাবে বিয়ে হয়েছে । অরিনকে এর শাস্তি সে দিবেই দিবে। তন্দ্রাকে নিজের বউ করে এনে সেই শাস্তিটা দ্বিগুণ করে দিবে সে। চুপ থাকার সময় শেষ সে বুঝে গেছে অরিন কোনো ভালো টাইপের মেয়ে নয়। অরিন তার পরিবারের জন্য বিপদজনক তাই সবাইকে সব টা জানানো উচিৎ।
অরিনের প্রতি তার রাগ হচ্ছে ভিষণ রাগ হচ্ছে। কাল রাতে তারা সবাই মিলে নীলদের বাসায় গেছিল নীলের বাসায় তালা ঝুলানো ছিল। শাওনের বাসায় গিয়ে শাওনকে পায় কিন্তু শাওনের মা অসুস্থ বলে শাওন তার সাথে যায়নি। একাই রাত দুইটা পর্যন্ত সে নীলকে খুঁজেছে। এমন কোনো জায়গা নাই যেখানে সে ফোন দিয়ে খুঁজ নেয়নি। কিন্তু কোথায় পায়নি খুঁজে। তিনটার দিকে বিছানায় কাত হয়েছিল সাথে সাথে চোখ লেগে যায়। আর তার দেড় ঘন্টা পরেই অরিনের আগমন ঘটে। এই সময় দিহানের জায়গায় যে কেউ থাকলে তারও মেজাজ খারাপ হতো। একটার উপরে আরেকটা প্রেশার সে নিতে পারছে না।
_______________
কলিং বেল বেজে ওঠতেই লারা এসে দরজা খুলে দিল। দরজা খুলতেই দেখল জিহান দাঁড়িয়ে আছে। চেহারায় চিন্তার চাপ। লারা বলল”
_মাত্রই তো বের হলেন চলে আসলেন যে? কিছু ফেলে গেছেন?” জিহান কোনো উত্তর দিলনা পাশ কাটিয়ে ভেতরে চলে গেল। দরজা বেজিয়ে লারাও পিছু পিছু গেল। জিহান রুমে গিয়ে আলমারি থেকে কাপড় বের করে লাগেজ গুছাতে লাগল। লারা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছে কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পাচ্ছেনা। জিহান নিজের লাগেজ গুছাতে গুছাতে বলল”
_তোমার লাগেজ গুছানো না থাকলে গুছিয়ে নাও।
_আমরা কি কোথাও যাবো?
_আমি তোমাকে যা বলছি তাই কর।” জিহানের ধমক শুনে লারা চুপ হয়ে যায়। তার লাগেজ এখনো গুছানো আছে। লাগেজটা নিয়ে এসে জিহানের সামনে দাঁড়াল। জিহান লারার দিকে তাকিয়ে বলল”
_বোরকা পইড়ো।
_আমার তো বোরকা নাই।
_থাকবে কেমনে ক্লাবে ক্লাবে অন্ত**স পড়ে ঘুরলে তো আর বোরকা লাগেনা। প্রস্টিটিউট কোথাকার।
লারা মাথা নিচু করে ফেলল। জিহানের মুখে এমন কথা শুনতে শুনতে সে অবস্তু হয়ে গেছে। তবুও তার কষ্ট হয়। তাকে এভাবে কথা বলার সাহস কারই ছিলনা। নিয়তি আজ তাকে এতকিছু সয্য করাচ্ছে। বুক ছিড়ে আসা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে লারা খাটের এককোণে বসল। জিহান যখন কাপড় গোছাচ্ছে সে আর দাঁড়িয়ে থেকে কি করবে? জিহান তো তাকে একটা কাপড় ধরতেও দিবেনা। লারাকে বসতে দেখে জিহান বলল”
_কি ব্যাপার বসেছ কেন?
_তো কি করব?
_কি ? আমি তোমাকে একটা কথা বলেছি বলে আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করছ?
_আমি তো স্বাভাবিক ভাবেই কথাটা বললাম। আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন?
_তুমি আমার সাথে তর্ক করছ?
_আমি কখন তর্ক করলাম?
_তুমি আবার তর্ক করছ?
লারা চুপ হয়ে গেল। আসলে সে কোন কথাটা বললে যে সেটা সঠিক কথা হবে সেটাই সে ভেবে পায়না। সে যেই কথা বলে বা যেই কাজ করে সেটাতেই জিহান তার ভুল ধরে। লাগেজ গুছানো শেষ হলে জিহান লারাকে আসো বলে নিজের লাগেজ নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে লারাও তার পিছু পিছু বের হয়। বাইরে এসে জিহান গাড়িতে বসে কিন্তু লারা দাঁড়িয়ে থাকে। সে পিছনে বসবে নাকি সামনে বসবে সেটা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যায়। কোথায় বসলে যে জিহান তাকে ঝাড়ি দিবেনা সেটা বুঝতে পারছেনা।
_কী হয়েছে খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছ কেন? ওঠো এসে।
_আব,,, মানে আমি কোথায় বসব?
_আমার মাথায় বসো। গাড়িতে কি জায়গা নেই নাকি?।” লারা চুপচাপ গাড়িতে ওঠে বসে। জিহান আবারও ধমক দিয়ে বলে।
_সামনের সিটে কেন বসেছ পিছনে যাও।” লারা বের হয়ে পিছনে চলে গেল। লারা বাম দিকের সিটটায় বসল জিহান বলল”
_বামের সিটে কেন ডানের সিটে বস। “লারা ডানের সিটে বসে। জিহান গাড়ি স্টার্ট দিবে তখনই বলে ওঠল”
_এই সামনের সিটে আস।” লারার এবার মেজাজ খারাপ হয়ে যায় সে গাড়ি থেকে বের হয়ে সামনে গিয়ে বসে। টাস করে গাড়ির দরজা লাগায়। জিহান আবারও ধমক দিয়ে বলে”
_এতো জোরে গাড়ির দরজা লাগাও কেন? যদি ভেঙে যায়।
_সরি।
_সিট বেল্ট লাগাও।
_জ্বি।
জিহান গাড়ি স্টার্ট দিল। লারার ইচ্ছে করছে একবার জিজ্ঞেস করতে কোথায় যাবে তারা কিন্তু ভয়ে আর জিজ্ঞেস করা হচ্ছেনা। গেলে দেখতে পারবে তারা কই যাচ্ছে সেটা ভেবেই চুপ করে বসে থাকল।
____________________________
অরিনের প্রতি লুপার অনেক রাগ হচ্ছে। সে বেস্ট ফ্রেন্ড হওয়ার সত্তেও তাকে অরিন কিছুই জানায় নি? নীলের জন্য তার মনটা এমনিতেই খারাপ তারপর তাদের পরিবারের সম্মান নিয়ে অরিনের এমন কাজ লুপার মনকে আরও বিগড়ে দিয়েছে। অরিনের নামটা মনে আসতেই বিরক্ত বিরক্ত লাগছে। বেহায়া মন চাইছে একবার গিয়ে অরিনকে দেখতে কিন্তু পরক্ষণে নিজের ইচ্ছে দমিয়ে দিচ্ছে। অরিনকে নিয়ে এমন কিছু সে কখনোই কল্পনা করেনি। বাড়ির সবাই আস্তে আস্তে রেডি হচ্ছে দিহানের বিয়ের জন্য। এখনো মেহমান আসেনি একটু পড়েই এসে যাবে। জিহানও নাকি আসছে। সবাই এনগেজমেন্ট এ এসে বিয়ে খাবে ভেবেই হাসি পাচ্ছে লুপার। সবাই আয়োজন ছোট করে করতে চাইছিল কিন্তু তার সো কল্ড আম্মু বলছেন এটা নাকি এই বাড়ির প্রথম বিয়ে তাই এটা বড় করে হওয়া চাই।
চোখ বন্ধ করে খাটে বসে আছে দিহান। কেন জানি তার ভেতরটা খুব কাঁদছে। অরিন তার সাথে এমন করেছে বলে নাকি সে অরিনের সাথে এমন করছে বলে ভেতর কাঁদছে সে বুঝতে পারছে না। বার বার চোখে ভেসে ওঠছে অরিনের কান্নারত চেহারা। কি এমন হয়েছে তার যে সে এভাবে এমনটা করল? সত্যি কি অরিন তাদের পরিবারের শত্রু নাকি অন্য কিছু? সে তন্দ্রাকে বিয়ে করে ভুল করবে না তো? দিহানের মাথা ভনভন করতে লাগল মাথায় কিছু আসছেনা তার। সার্ভেন্ট অরিনের লাগেজটা এনে দিহানের রুমে রেখে গেছিল। সেখানে চোখ পড়তেই দিহান ওঠে গিয়ে লাগেজ খুলল। লাগেজে কয়েকটা দামি দামি শাড়ি আর ড্রেস আছে । দেখে কিঞ্চিৎ কপাল কুঁচকে গেল দিহানের। অরিন এত দামি কাপড় চোপড় কই পেল? একটা শাড়ি লুপার মায়ের একটা শাড়ির মতো লাগল পরক্ষণে ভাবলো হয়তো লুপা দিয়েছে অরিনকে। বাট বাকি শাড়ি গুলা কে দিল? লাগেজটাও কেমন চেনাচেনা মনে হচ্ছে।লাগেজের ভিতর অরিনের মোবাইল রাখা। লাগেজে মোবাইল ফোন দেখে হাসি পেল দিহানের। ফোন হাতে নিয়ে স্কিনের পাওয়ার জ্বালাতেই দিহান শকড খেল। অস্পষ্ট ঠোঁটে বলে ওঠল তন্দ্রার সাথে অরিনের ছবি?
চলবে…….।
সময় মতো রহস্য খোলাসা হবে তাই প্লিজ একটু ধর্য ধরুন।❤
গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি❤