ভালোবাসি_প্রিয় পর্ব_১১

0
2002

ভালোবাসি_প্রিয়
পর্ব_১১
#সুলতানা_সিমা

ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে দিহান,নীল,শাওন। তিনজনের মনে চলছে একই প্রশ্ন। কি রহস্য লুকিয়ে আছে এ বিয়ের পেছনে? কাল দিহান ফোন দিয়ে তাদের ডেকেছিল তারা আসতে পারেনি। তাই সকাল সকাল দু’জন এসে দিহানের বাসায় হাজির। কিন্তু দিহানের থেকে সব শুনে তারা স্তব্ধ হয়ে যায়। নীল শাওন কিছুতেই বিশ্বাস করতে চায়নি এটা সত্য। কিন্তু সত্যি তো সত্যিই হয় তাকে মিথ্যে বললে তো আর সেটা মিথ্যে হয়ে যায়না। তিনজন চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল নিরবতা ভেঙে শাওন বলল”

_আমার মনে হয় অরিনের বিষয়ে খুঁজ খবর নেওয়া উচিত? আসলে সে কি চায়? কি তার পরিচয়? তার পরিবারের সবাই কি করে? বা সে থাকে কোথায় সব কিছুই। সব তথ্য পেলে আমার মনে হয় কিছুটা হলেও জানা যাবে এই বিয়ের পিছনে কি কারণ আছে।
_আমার মনে হয় শাওন ঠিক বলছে।[নীল]
_আমরা চাইলে লুপার থেকে সব জানতে পারি।[শাওন]
_না না লুপাকে কিছু জানানো যাবেনা। ও কিছু একটা শুনলে সেটা সবাইকে না শুনালে ওর পেটের ভাত হজম হয়না।[দিহান]
_অরিনের বিষয়ে তো জানতে পারি তাইনা?[নীল]
_হুম তাও ঠিক। আমি লুপাকে কল করে ছাদে আসতে বলছি।

দিহান লুপাকে কল দিয়ে ছাদে আসতে বলল এবং একা সাথে যেন কেউ না আসে সেটাও বলল। কিছুক্ষণ পরে লুপা ছাদে আসল। কালো রংয়ের একটা প্লাজু পড়ছে সাদা টি-শার্ট, চুল গুলা এলোমেলো,চশমা পড়েনি আজ টানাটানা চোখ গুলা কিছুটা ফোলা,ঠোঁটও হালকা ফোলে আছে, ফর্সা ত্বকে সুনালী রোদ লেগে চিকচিক করছে। নীলের কাছে লুপাকে আবেদনময়ী লাগছে। চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে ঘুম থেকে মাত্র উঠে আসছে। নীল লুপার থেকে চোখ সরিয়ে নিল। এভাবে তাকিয়ে তাকলে তার নেশা ধরে যাবে। চাপা একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে গাছে বসা কলরব করা পাখির গুলার দিকে তাকাল। লুপা তাদের সামনে এসে দাঁড়ালো। আড়চোখে একবার শাওনের দিকে তাকিয়ে গালের পাশে ছড়িয়ে থাকা চুল কানে গুজল। দিহানকে উদ্দেশ্য করে বলল”

_কেন ডাকছো ভাইয়া?
দিহান চুপ থাকল কিছু বলল না। আসলে কি বলবে সে ভেবেই পাচ্ছে না। লুপা শাওনকে বলল”
_কেমন আছেন শাওন ভাইয়া?
_হুম ভালো তুমি কেমন আছো?
_জি ভালো।
_আমিও ভালো। আমাকেও জিজ্ঞেস করতে তাই আগেই বলে দিলাম। [কথাটা বলে একটা চোখ টিপ দিল নীল]
লুপা নীলের দিকে কপাল কুঁচকে তাকাল। তার চেহারায় বিরক্তি ফোটে উঠছে। দিহানকে বলল কি বলার তারাতাড়ি যেন বলে সে কলেজ যাবে। দিহান একটু চুপ থেকে তারপর বলল ”

_আচ্ছা লুপা ওই যে অরিন ওর সাথে তর কতদিনের পরিচয়?” দিহানের কথায় অরিনের কপাল আবারও কুঁচকায়। দিহানকে বলে”
_কেন ভাইয়া হঠাৎ এমন প্রশ্ন?
_আগে বল তারপর বলছি।
_দু বছরের।
_ওর বাসা কোথায়?
_এসব হঠাৎ কেন জানতে চাচ্ছ ভাইয়া?
_তুই তো সবার সাথে মিশিস না এই একটার সাথে মিশলি তাই জানতে ইচ্ছে হল।
_এখানে বাসার কি সম্পর্ক?” নীল বুঝে গেল লুপার থেকে এভাবে কিছু জানা কঠিন তাই সে কথা বলা শুরু করল ”
_আমি বলছি। আসলে আমাদের একটা ফ্রেন্ড তোমার বান্ধবীকে খুব পছন্দ করছে তাই আমরা ওর বিষয়ে জানতে চাই।” নীলের কথায় লুপার বুকের ভেতর ধুক করে উঠল। শাওন কি অরিনকে পছন্দ করে নাকি? লুপা শাওনের দিকে তাকিয়ে কিঞ্চিত স্বরে জিজ্ঞেস করল”
_শাওন ভাইয়া অরিনকে পছন্দ করেন?
_আরে না না আমি না আরেকটা।” শাওনের জবাব শুনে লুপা যেন প্রান ফিরে পেল। ছোট করে শ্বাস ছেড়ে বলতে লাগল”

_আমি জানিনা ভাইয়া তোমাদের বন্ধু এটা কি করে বা কেমন। যদি ভালো মানুষ হয় তাহলে কথা এগুতে পার। আমি চাই ওর জীবনে কেউ আসুক যে ওকে এই জাহান্নাম থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসবে।
_জাহান্নাম থেকে মানে? বুঝিয়ে বল। [দিহান]

_জানো ভাইয়া ও না একটা অনাথ মেয়ে। ওর মা নেই বাবা নেই আপন বলতে ওর কেউই নেই। [লুপার কথা শুনে দিহানের বুকের ভেতর ছেৎ করে উঠল] শুধু আছে ডাইনি রূপি একটা সৎ মা আর উনার বাচ্চারা। সেই ছোট্ট থেকে ও মা হারা সৎ মায়ের অত্যাচার সয্য করে করে এখনো বেঁচে আছে। ওর নিজের খরচ টা নিজেকে চালাতে হয়। মাত্র তিন হাজার টাকার একটা টিউশনি করে। ওর জন্য এটাই নাকি অনেক। এই তিন হাজার টাকা দিয়ে ও পুরো মাস চলতে পারে। আসলে তাকে পারতে হয়। যেখানে আমরা সপ্তাহে সপ্তাহে শপিং করি সেখানে সে দুটো জামা দিয়ে ছ’মাস চলতে পারে। নাহলে যে তার লেখা পড়ার খরচ চালাতে পারবে না। [একটু থেমে] জানো ভাইয়া সেদিন আমার বার্থডেতে এসে আমার হাতে বই দিয়ে মাথা নিচু করে বলছিল দোস্ত হাতে মাত্র পাঁচ’শ টাকা ছিল রে তাই কিছু আনতে পারিনি রাগ করিস না প্লিজ। [এইটুকু বলেই লুপার গলা ধরে এলো। একটা ঢোক গিলে ধরা গলায় আবারও বলতে শুরু করল] ও যখন এ কথা বলছিল আমার ভেতরটা দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছিল। নিজের প্রতি রাগও হচ্ছিল। এর আগের দিন আমি ওদের বাসায় গিয়ে ওর কাছে চা চাইলাম কিন্তু ও যখন পাতিলে চা বসাল ওর সৎ মা এসে পাতিল টা নামিয়ে তাকে কথা শুনিয়ে গেল। আমি দেখেও না দেখার বান করে বসে থাকালাম। যেন ও লজ্জা না পায়। সে এসে আমাকে নিয়ে রেস্টুরেন্ট নিয়ে গেল। আমি ভাবলাম শেষে বিলটা আমি দিয়ে দিব তাই ইচ্ছেমতো অর্ডার করলাম। হঠাৎ বাসা থেকে ফোন গেল আব্বুর প্রেসার বেড়ে গেছে আমি তারাহুরো করে বেরিয়ে আসলাম বিলটাই দিলাম না। পরে ওকে দু’হাজার টাকা দিলাম কিন্তু ও নিলনা উল্টো রাগ দেখাল। [চোখের পানিটা মুছে] তোমাদের বন্ধুর যদি এই ক্ষমতা থাকে ওকে ভালোবাসা দিয়ে ওর সব কষ্ট দূর করে দেওয়ার তাহলে বিয়ের প্রপোজাল পাঠাও আর যদি এই ক্ষমতা না থাকে তাহলে দয়া করে উনাকে ওর ধারে কাছেও যেতে না বলবে।”

কথাগুলা বলে লুপা চলে গেলো। দিহান মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে। ওর বুকের ভিতর তোলপাড় চলছে। লুপার প্রতিটি কথা তার কলিজায় সুচের মতো বিঁধেছে। অরিনকে বলা সব কঠিন কথা গুলা একে একে মনে পড়ছে।

[তোমাকে কেন জানি আমার কাছে এইরকম ড্রেসেও ক্ষেত ক্ষেত লাগছে। আচ্ছা তুমি কি বস্তিতে থাক?]
কথাটা মনে পড়তেই দিহান চোখ খিঁচে ফেলল। তখনই তার চোখে ভাসল সেদিনে দৃশ্য।
[যাক ভালো হয়েছে লুপা তোমায় একটা ড্রেস পড়তে দিয়েছে নয়তো অনুষ্ঠানের সুন্দর্যই নষ্ট হয়ে যেত। যা পড়ে আসছিলা]

দিহান সাথে সাথে চোখ খুলে ফেলল। তারপর লুপার কথা কানে বেজে উঠল।

[ যেখানে আমরা সপ্তাহে সপ্তাহে শপিং করি সেখানে সে দুটো ড্রেস দিয়ে ছ’মাস চলতে পারে। নাহলে যে তার লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারবে না।]

কথাটা মনে পড়তেই একটা ঢোক গিলে কান্না আটকাতে চেষ্টা করল দিহান। আবারও কানে বাজল।

[মাত্র দু’শ টাকার একটা বই নিয়ে এসে পেট পুড়ে খেয়েও গেলা আবার ফ্রিতে একটা ড্রেসও পেলা] কথাটা মনে পড়ার সাথে সাথে লুপার বলা কথা কানে বাজল”
[জানো ভাইয়া সেদিন আমার বার্থডেতে এসে আমার হাতে বই দিয়ে মাথা নিচু করে বলছিল দোস্ত হাতে মাত্র পাঁচ’শ টাকা ছিল রে তাই কিছু আনতে পারিনি রাগ করিস না প্লিজ।]
দিহানের শ্বাস ভারি হয়ে গেল। শ্বাস ফেলতে তার কষ্ট হচ্ছে। আবারও কানে বাজল”

[তোমাকে আমার পরিবারের কেউই মানবেনা। কজ তুমি আমার যোগ্য নও। না তোমার ফ্যামিলি স্টাটাস না তোমার সুন্দর্য না তোমার চলাফেরা কোনো কিছুই আমার ধারে কাছেও আসেনা। তুমি জানো আমি যাকে ভালোবাসি তার ফ্যামিলি স্টাটাস কেমন? অনেক ভালো পরিবারের মেয়ে সে তোমার মতো মিডেল ক্লাস না। আর সে দেখতেও অনেক সুন্দর। সমাজে কিভাবে চলতে হয় সেটা তার জানা আছে তোমার মত ফকিন্নি বেশে কোথাও যায়না]

দিহানের গাল বেয়ে দু’ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো। একের পর এক কথা কানে এসে বিকট শব্দে বাজতে লাগল। সব গুলা কথা একত্র হয়ে একটা ভয়ানক শব্দ হতে লাগল। দিহান কানে হাত দিয়ে চিৎকার করে বলে উঠল “স্টপ”। বলে হাটু গেড়ে বসে পড়ল। অরিনের জন্য তার কষ্ট হচ্ছে খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে ইচ্ছে করছে অরিনের জীবন থেকে সব কষ্ট মুছে দিতে ইচ্ছে করছে অরিনকে একবার ছুঁয়ে দেখতে যে মেয়েটাকে একটু আগে তার কেউই মনে হয়নি তাকে এখন তার সব কিছু মনে হচ্ছে। কিন্তু কেন? সে তো অরিনকে ভালোবাসে না সে ভালোবাসে তন্দ্রাকে তাহলে অরিনের কষ্ট শুনে এতো খারাপ কেন লাগছে তার?

চলবে…..।

আমি আমার রিডার্সদের ভালোবাসি। বিশেষ করে যারা আমায় গঠনমূলক মন্তব্য করে লেখার আগ্রহ জাগান।তাই গল্প দিয়েই দিলাম। মন খারাপ তাই পার্ট ছোট হইছে। সরি কাল বড় করে দিব।?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here