শ্রাবন সন্ধ্যা পর্ব:-৩৫
#আমিনা আফরোজ
রূপগঞ্জের বাজার তখন বেশ রমরমে হয়ে ওঠেছে। রাজুর ছোট চায়ের দোকানটিতেও বেড়েছে ব্যস্ততা। ছোট সেই চায়ের দোকানে ভীর জমেছে খদ্দেরের। রাজুও মহাআনন্দে চা বানাতে ব্যস্ত।
শাট প্যান্ট পরিহিত মেয়েটি তখন রাজুর দোকানের সামনে এসে দাঁড়ালো এদিক ওদিক তাকিয়ে রাজুকে এসে বলল,
–“গ্রামে থাকার মত কোন হোটেল হবে?”
মেয়েটির প্রশ্ন শুনে রাজু অবাক হয়ে বলল,
–“গেরামে হোটেল পাইবেন কন থাইকা আপা?”
রাজুর কথা শুনে মেয়েটি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করল,
–“কি? গ্রামে থাকার মত কোন হোটেল নেই?”
–“জি না আফা।”
এতক্ষন অব্দি রাজু আর অপরিচিত মেয়েটির কথা শুনছিল মিন্টু মিয়া। চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে ফোকলা হেসে মেয়েটির উদ্দেশ্যে বলল,
–“আফা কি গেরামে নতুন নি?”
মেয়েদের এবার রাজুর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মিন্টু মিয়ার দিকে তাকালো। গ্রামের ভাষা খুব একটি বুঝতে পারছে না সে তবুও কোনরকমে বলল,
–“জি আমি গ্রামে আজকেই নতুন এসেছি। এখানে কয়েকদিন থাকা যাবে এমন কোন বাড়ি আছ?”
মিন্টু মিয়া আবারো পান খাওয়া ফোকলা দাতে হেসে বলল,
–“এইডা নিয়া আর কোন চিন্তা করোন লাগতো না আফনের।আফনি এক্কেবারে ঠিক মানুষের কাছেই আইছেন। এই মিন্টু মিয়া থাকতে আপনার আর কোন ভয় নাই বুঝছেন আফা।”
মিন্টু মিয়ার অতিরিক্ত কথা শুনে এবার বেশ বিরক্ত হচ্ছে মেয়েটি সেই কখন থেকে সে লোকটিকে একটি প্রশ্ন করে যাচ্ছে কিন্তু লোকটি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে উল্টোপাল্টা বকেই চলেছে। এভাবে আর কতক্ষন দাঁড়িয়ে থাকতে হবে কে জানে? মেয়েটি মন্টুমিয়ার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
–“তাহলে তো ভালোই হলো । আপনি বরং আমাকে জায়গাটা একটু দেখে দিন। আমি তো এই গ্রামেই নতুন এসেছি তাই রাস্তাঘাট খুব একটা চিনি না।”
–“এইটা কোন কাম হইলো আফা। আপনি একটু হানি দাঁড়ান আমি এখনি আপনার লইয়া যাইতাছি।”
মিন্টু মিয়া আগন্তুক মেয়েটির উদ্দেশ্যে কথাটি বলে রাজুর দিকে তাকিয়ে বলল,
–“দামটা বাকির খাতায় লিখে রাখিস। পরে দিমুনি।”
মিন্টু মিয়ার কোথায় রাজুর মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না বরংচ একটু বিরক্তি সূচক দৃষ্টিতে মিন্টু মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
–“ঠিক আহে। আমি লেইখা রাখমু নি।”
রাজুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মিন্টু মিয়া আগন্তুক মেয়েটিকে নিয়ে পা বাড়ালো চেয়ারম্যান বাড়ির উদ্দেশ্যে। গ্রামের রাস্তা দিয়ে এই প্রথম হেঁটে চলেছে মেয়েটি। গ্রাম জিনিসটা বরাবর অপছন্দের ছিল। কিন্তু তার আপন মানুষটিকে কাছে পাওয়ার জন্য সেই গ্রামে আসতে হয়েছে তাকে। আশেপাশের দিকে তাকিয়ে এক মনে হেঁটে চলেছে মেয়েটি। নীরবতা কাটিয়ে মিন্টু মিয়াই প্রথমে বলে উঠলো,
–“আফা কিছু মনে না করলে একটা প্রশ্ন করি?”
লোকটির অতিরিক্ত কথা বলা খুব একটা পছন্দ হচ্ছে না মেয়েটির তবুও দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
–“বলো।”
–“আফনের নামটা কি আফা?”
–“নেহা।”
–“অনেক সুন্দর নাম আফা। আপনি গেরামে আইলেন ক্যান?”
–“কিছু কাজ আছে তাই এসেছি। আচ্ছা আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি বলুন তো?”
–“এই গ্রামের চেয়ারম্যান এর বাড়িত যাইতাছি। ঐহানে আপনার থাকা ব্যবস্থা কা হইবো। কোন কিছুর সমস্যা হইবো না আপনার।”
–“তা না হয় বুঝলাম কিন্তু আর কতক্ষণ লাগবে বলুন তো? সে কখন থেকে হেঁটে চলেছি, হেঁটেই চলেছি।”
–“আর মিনিট পাঁচেকের রাস্তা বাকি আছে আফা।”
লোকটার কথা খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হলো না নেহার কাছে । তবুও এই সময় এই লোকের উপরই নির্ভর করতেই হবে ওকে, এছাড়া আর কোন উপায় দেখতে পাচ্ছে না ও। আপাতত এই রূপগঞ্জে দিন চারেক থাকতে হবে ওকে। সন্ধ্যার বিষয়ে সব খোঁজখবর নিয়ে তবেই ঢাকা ফিরতে পারবে ও।
মিনিট চারেক এর মাথায় নেহা একটি বড়ো বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো। মিন্টু মিয়ারকে বাড়ির ভেতরে ঢুকতে দেখে নেহাও গুটি গুটি পায়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকলো। বাড়ির উঠানে কাঠের চেয়ারে এক মধ্যবয়স্ক লোককে বসে থাকে দেখতে পেল নেহা। লোকটি ওদের দিকে উৎসব দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । কৌতুহল চেঁনেহার প্রতি তা বুঝতে খুব একটা সময় লাগলো না নেহার। নেহাও সেদিকে তাকিয়ে রইল। নেহা বাড়ির আশেপাশে তাকিয়ে দেখতে লাগলো এত বড় বাড়িতে আর কোন লোকসমাগম না দেখে ভ্রু কুঁচকে গেল নেহার। এ আধপাগল লোকটা কোথায় নিল ওকে। মিন্টু মিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখল লোকটি ততক্ষনে কাঠের চেয়ারে বসে থাকা লোকের সাথে ফিসফিসিয়ে কি যেন বলছে। হয়তো নেহার ব্যাপারেই কথা হচ্ছে ওদের মাঝে। প্রায় মিনিট পাঁচেক পরে চেয়ারে বসে থাকা লোকটি উঠে দাঁড়িয়ে নিহার দিকে এগিয়ে এলো তারপর মোলায়েম কন্ঠে বলল,
–“বয়সে তুমি হামার ছোটই হবা তাই তোমার হামি তুমি করেই কইলাম, কিছু মনে কইরো না। তোমার যতদিন থাকবার ইচ্ছা হয় তুমি এহানে থাকতে পারবা। আর তোমার যা প্রয়োজন হয় আমাক কবা আর মিন্টু তো আছেই।”
নেহা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানাল। নেহার সম্মতিতেই সামাদ মিয়া আবারো বলে উঠলো,
–“দেখছো কোথায় কোথায় তোমারে হামার পরিচয় দিই নাই। হামি এই গেরামের চেয়ারম্যান। গেরামের উন্নতি করায় আমার কাজ।”
কথাগুলো বলে স্ত্রীকে ডাকলেন তিনি। স্বামীর ডাক শুনে বাইরে বেরিয়ে এলো জমিলা বেগম। স্বামীর সাথে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটিকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন কেনো। জমিলা বেগমকে দেখে সামাদ নিয়ে বললেন,
–“হামাগোর বাড়ির কিছুদিন অতিথি হয়ে থাকবো মাইয়াডা। তুমি ওরে ঘরে লইয়া যাও।”
বেগম খুশিমনে নেহাকে নিয়ে অন্দরমহলে চলে গেল। এমন একটা সুন্দর মেয়ে নেহালের জন্য তিনি চেয়েছিলেন ছিলেন কিন্তু ছেলেটা কি না শেষমেশ একটা কালো মেয়ের জন্য পাগল হল। সবই নিয়তি।
এদিকে আজ সকাল থেকে সন্ধ্যার মন খারাপ হয়ে রয়েছে। সন্ধ্যা কলেজ না যাওয়াতে শ্রাবণ রাগ করে সন্ধ্যার সাথে কথা বলে নি। সন্ধ্যা নিজে থেকে কয়েকবার কল করেছিল শ্রাবনকে কিন্তু শ্রাবণ কল রিসিভ না করে ফোন বন্ধ করে রেখেছে। শ্রাবণ কথা না বলায় সন্ধ্যার মন খারাপের মাত্রাটা যেন দ্বিগুন বেড়ে গেল।
মনের কোনে অভিমানেরা এসে ভীর জমালো। দুচোখ ভরে ওঠল নোনা পানিতে। সন্ধ্যা ভাবল আজ বরং ও নিজের হাতে শ্রাবনের জন্য রান্না করে তা অফিসে নিয়ে যাবে। সন্ধ্যাকে সামনাসামনি দেখে আর ওর রাগ করে থাকতে পারবে না শ্রাবণ। তাই ভাবনা মোতাবেক ঝটপট রান্না করতে লেগে গেল সন্ধ্যা।
চলবে
(কেমন হয়েছে জানাবেন আর ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। দীর্ঘ দিন গল্প দিতে না পারার কারণে আমি দুঃখিত। এখন থেকে নিয়মিত গল্প পাবেন আপনারা। আর আপনারা সবাই ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বেশি বেশি করে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করুন। ভালো থাকবেন।হ্যাপি রিডিং ??)