যখন_তুমি_এলে পর্ব : ৩৪।

0
594

#যখন_তুমি_এলে
লেখা: জাহান লিমু
পর্ব : ৩৪।

ফোনটা হাত থেকে পড়ে গেলো। সাচীর হাত-পা কাঁপছে অনবরত। সাচীও সাথে সাথে দপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো। ফোনটা বন্ধ হয়ে গেছে। উপরের গ্লাসটা ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা হাতে নিলো সাচী। তখনো রেডিও চলছে। আর ভেসে আসছে সেই শ্রুতিমধুর কন্ঠ। যেই কন্ঠে সাচী নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলো, আজ থেকে একবছর আগে। অবশ্য হিসেব করতে গেলে সময়টা আরো বেশি হবে। একবছর আগে তো তার সাথে দেখা হয়েছিলো। সাচী হিসেব করে দেখলো,গতবছরের আজকের দিনটাতেই তার সাথে দেখা হয়েছিলো। পুরো নস্টালজিক হয়ে গেলো সে। সবকিছু চোখের সামনে ভাসছে।
তুহিন!
সাচীর জীবনে ভালোবাসার রঙ ছোঁয়ানো ব্যক্তি। তুহিনের মুখটা কতদিন দেখে না সাচী। তুহিন কি সাচীকে একটুও মিস করেনি?
চাপা কষ্ট বুকে নিয়ে,দীর্ঘ একটা বছর কাটিয়ে দিয়েছে সে। আর তুহিন?
একটা ফোনও করলোনা। একটা মেসেজও করলোনা। এতো নিষ্ঠুর কি করে কেউ হয়?
পুরুষ মানুষ মানেই কি তার স্বভাব কঠিন হতে হবে?
তার কোন আবেগ থাকতে পারবেনা?
নাকি আমিই ভুল।
তুহিন হয়তো আমাকে ভুলেই গেছে। আমিই হয়তো বেশি বেশি ভাবছি। দোষটা তো প্রথমত আমারই ছিলো। কিন্তু তারও তো দোষ আছে। একটা সম্পর্ক এগিয়ে নিতে গেলে যেমন,দুজনের অবদান জরুরি। ঠিক ভাঙনের ক্ষেত্রেও একই। একজনের দোষে ভাঙে না কখনো।
তবে কি বাবার কথায় ঠিক?
আমিই মনে বৃথা আশা নিয়ে তার জন্য অপেক্ষা করেছি?
সে দেশে আছে,অথচ আমি জানিনা। সে তার কাজে যোগদান করেছে,তার মানে সে দেশে এসেছে বেশ দিন হয়েছে। অথচ আমার সাথে একটাবার যোগাযোগ করার প্রয়োজন মনে করলোনা। তাহলে সাচী কেন গলা কাঁটা মুরগির ন্যায় তড়পাচ্ছে, তুহিনকে একপলক দেখার জন্য?
ভুল যদি দুজন করে থাকে, তাহলে সে ভুল দুজনে মিলেই শোধরানো উচিত।
ভালোবাসা তো নদীর পাড়ের গাছ নয়,যে সামান্য ঝড় আসলেই ভেঙে পড়বে। সহসা নিজের উপর ক্ষোভ কাজ করতে লাগলো সাচীর। সেই হয়তো বেশি বেশি ভেবে ফেলেছে। তুহিন হয়তো ব্রেকআপ মানেই,সব শেষ সেটা ধরে নিয়েছে। সত্যিই কি ব্রেকআপ হলেই, সব শেষ হয়ে যায়? সাচীর তা জানা নেই।
অনুভূতি গুলোকে মুহুর্তের মধ্যেই মাটিচাপা দিয়ে দিলো সাচী। মনটাকে শক্ত করে নিলো।
তুহিন যদি ওদের সম্পর্ক ভুলে এগিয়ে যেতে পারে,তাহলে সাচীও তুহিনের সামনে যাবে না আর। ভেবেছিলো তুহিনের মুখোমুখি হওয়াটা জরুরি। কিন্তু না। সাচী তুহিনের খোঁজ করবেনা আর। যে মানুষ নিজেকে গুটিয়ে রাখে,তাকে তার মতই থাকতে দেওয়া উচিত। সাচীও তুহিনের জীবনে আর দখলদারিত্ব দেখাতে যাবে না। একটা ভুল না হয়,হয়েই গিয়েছিলো। তার জন্য এভাবে শাস্তি দেয়ার কোন মানে হয় না। একটা বছর ধরে যার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুণেছে,আজ যখন সে এসেছে,তখন সামনে যাওয়ার ইচ্ছেটাই মরে গেছে। জীবন কত অদ্ভুত মোড়ে দাঁড় করায় আমাদের। কিছুক্ষণ আগের আবেগটাও মুহুর্তেই ছাঁইচাপা পড়ে যায় জীবন নামক অন্তর্দন্দে। সাচীর চোখ দুটো মরুভূমির উত্তপ্ত বালুর ন্যায় জ্বলছে। তবে আশ্চর্যজনকভাবে মরুভূমিতে যেমন জল থাকেনা,সাচীর চোখেও কোন জলের অস্তিত্ব নেই। সাচী আবেগী,তবে আত্নসম্মানহীন নয়। যদি কারো জন্য বেহিসেবি আবেগ খরচ করেও থাকে,তবে সময়ে সে আবেগ উঠিয়ে নিতেও জানে। নিচে গাড়ির হর্ণের আওয়াজে সাচীর হুঁশ আসলো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সাড়ে নয়টা বেজে গেছে। ফোনটা অন করলো সাচী। রাগে বন্ধ করে ফেলেছিলো কিছুক্ষণ আগে। পড়ে গ্লাস ফাটলেও,ফোন বন্ধ হয়নি। উন্নত প্রযুক্তি বলে কথা।
ফোন অন করার সাথে সাথেই কল বাজতে শুরু করলো। স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে কতক্ষণ নাম্বারটা দেখলো সাচী। ভাবতে লাগলো, আচ্ছা, সব সমস্যার শুরু কি এর কারণেই হয়েছিলো?
নাহ,তার উপর পুরোপুরি দোষ দেয়া যাবেনা। সে হয়তো আমাদের সম্পর্ক ভাঙার একটা উপলক্ষ্য মাত্র। হয়তো আমাদের সম্পর্কের ভিতটাই ঠিকঠাক গড়ে উঠেনি। তাই মৃদু আঘাতেই ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেলো।
আরাদের ফোন কেটে দিলো সাচী। দ্রুত নিজেকে ঠিক করে নিয়ে নিচে নামলো। সিঁড়িতে বাবার সাথে দেখা হলেও,সাচী দাঁড়ালো না। দেরি হয়ে যাচ্ছে বলে,চলে গেলো। মেয়ের মুখটা দেখে শফিকুরের কেমন যেন লাগলো। চোখদুটো লাল হয়ে আছে। কিন্তু মেয়েটা তাকে কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগও দিলো না। বাসায় ফেরার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

আরাদ আর সোহানী গাড়িতে বসে আছে। সোহানীর গাড়ি করেই যাচ্ছে ওরা। যদিও আজকে ড্রাইভার নেই। তাই ড্রাইভিং সিটে আরাদ বসে আছে। আর সোহানী আরাদের পাশে। সাচী হালকা হেসে গাড়ির পেছনের সিটে বসলো। সব জিনিসপত্র সাবধানে তুললো গাড়িতে।
যদিও সাচী স্বাভাবিক আচরণ করছে,তবুও কেন জানি আরাদের কেমন একটা লাগছে। মনে হচ্ছে, কোথাও মেঘ জমেছে। তবে বর্ষণ হবে না। গাড়িতে বসেও সাচী তেমন একটা কথা বলছেনা। আরাদ বিষয়টা নিয়ে বেশ চিন্তিত। গতকালও তো ভালো ছিলো, সব ঠিক ছিলো। তাহলে আজ সকাল সকাল কি হলো?
সোহানী সাথে, তাই আরাদ কিছু জিজ্ঞেসও করতে পারছেনা। সারা রাস্তা গাড়ির মিররে সাচীর মুখের দিকে বারবার আঁড়চোখে দেখছিলো সে। সাচী ওর ফোনের দিকেই তাকিয়েছিলো সারাটা পথ। আরাদ সূক্ষ্মভাবে পুরো রাস্তা সাচীকে পর্যবেক্ষণ করলো। এতো অন্যমনস্ক সাচীকে কোনদিন দেখেনি সে।
নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে গেল ওরা। সাচীকে দেখে আরাদ আরেক দফা বিস্মিত হলো। সাচীকে দেখেই বুঝা যাচ্ছিলো সে ভেতরে ভেতরে দুমড়ে যাচ্ছে। অথচ কাজের সময় একদম স্বাভাবিকভাবে কাজ করে গেলো। তখন বুঝার কোন উপায় ছিলোনা যে,একটু আগ পর্যন্তও সেই বদনে বিষন্নতার কালো মেঘ জমে ছিলো।
আসার সময় সোহানী একটু শপিংয়ে যেতে চাইলো। অগত্যা ওদের দুজনকেও যেতে হলো। যদিও সাচী যেতে চাইছিলোনা। কিন্তু সোহানীর কথাও ফেলতে পারলনা সে। মেয়েটা ভীষণ মিশুক। এ কয়দিন কাজ করেই,সাচীকে আপু ডেকে ডেকে মাথায় তুলে। কোথাও কোন ভুল করে ফেললে,একশোবার সরি বলতে থাকে। অবশ্য সে যথেষ্ট পারদর্শী অভিনয়ে। সেটার প্রমাণতো সাচী আরাদের কাছ থেকেই পেয়েছিলো। বোনের বিয়ে ভাঙার জন্য যে সূক্ষ্ম অভিনয় করলো,লা জবাব। নিজের মাকে বোকা বানিয়ে দিলো পুরো। একেবারে পাক্কা অভিনেত্রী।
সাচী গাড়িতেই বসে থাকতে চাইলো। সোহানী এবার আর জোর করলোনা। কারন আরাদ আঁড়চোখে মানা করলো।
অতঃপর সোহানী একাই ভেতরে গেলো। আরাদ, সাচী গাড়িতেই বসে রইলো। আসার সময় সাচী আরাদের পাশেই বসেছিলো। সোহানীই আগে আগে পিছনে বসে গেলো। সাচীও আর কিছু বললোনা। সোহানী চলে যাওয়ার পর সাচী সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে রইলো।
আরাদ একদৃষ্টিতে সাচীর দিকে তাকিয়ে রইলো। মনে মনে ভাবছে,এখন কি জিজ্ঞেস করবে কি হয়েছে?
নাকি বিরক্ত হয়,কে জানে। একসময় আরাদ জিজ্ঞেস করেই ফেললো,

” আপনি কি ঠিক আছেন?”

সাচী চোখ না খুলেই বললো,”হ্যাঁ,আই অ্যাম ওকে। একটু মাথা ধরেছে কেবল।”

আরাদ সাথে সাথে বললো,” আমি কপালে ম্যাসাজ করে দিবো? ম্যাসাজ করলে আরাম পাবেন।”

সাচী এবার চোখ খুলে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালো। আরাদ মুহুর্তেই একদম চুপ। আর একটা কথাও বললোনা। গাড়ির গ্লাস খুলে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো। মনে মনে দোয়া দরূদ পড়তে লাগলো। মুখ ফঁসকে কথাটা বলে ফেলেছিলো সে। কাকে বলছে,সেটা মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলো। একটুপর ভয়ে ভয়ে সাচীকে জিজ্ঞেস করলো,ওর দিকের গ্লাসটাও খুলে দিবে কিনা। সাচী হালকা মাথা নাড়ালো। যেটার মানে হ্যাঁ, নাকি না সেটা না বুঝেই সে গ্লাস খুলে দিলো। খোলা বাতাসে ভালো লাগবে।
সাচী উদাস চোখে গাড়ির বাইরে তাকিয়ে রইলো। মানুষজনের ছুটোছুটি দেখছিলো। বিরামহীন ছুটে চলেছে মানুষ। আচমকা এক কৃষ্ণকলি গাড়ির পাশে এসে দাঁড়ালো।
হেসে বললো, “ফুল নিবেন ম্যাডাম?”
সেই কৃষ্ণকলির হাসিটা মনে হচ্ছিলো, এক আকাশ ঘনকালো মেঘের ভেতর এক টুকরো শুভ্র মেঘ।
যদিও সাচীর এখন ফুল কেনার কোন ইচ্ছাই নেই। তাই মানা করে দিলো। মেয়েটা তখন অনুনয় করতে লাগলো। আফা ফুল কিনে ভাইজানরে উপহার দেন,ভালোবাসা বাড়বে।
মেয়েটার কথা শুনে ওরা দুজনই চোখ বড় বড় করে তাকালো। সাচীই চোখ মুখ কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,

” এখানে তুই ভাইজান কোথায় দেখতে পেলি?”

” কেন,আফনার লগেই তো। এটা বলে সে মুখ টিপে হাসতে লাগলো।”

মেয়েটার কথা শুনে, আরাদ ভয়ে মুখ কাঁচুমাচু করে সাচীর দিকে তাকালো। মেয়েটা কি সব বলছে! সাচী আরাদকে পাত্তা না দিয়ে, মেয়েটাকে বললো,

” এই বয়সেই খুব পেকে গেছিস না? একসাথে থাকলেই কি অন্যকিছু মনে করতে হবে?”

” না, আফা। ঠিক তা নয়। তয় মেলা জনরেই দেহি,রাগ করলে তহন এমন কথা কয়। মানে তহন দুইজন অছেনা হইয়া যায়। সাইয়্যা থাইক্যা,ভাইয়া বানায় ফেলে। হেই জন্য মনে করসি,আফনেরাও রাগ করসেন।
আর রাগ করলে,উপহার দেওয়া লাগে। তাইলে রাগ ভাইঙ্গা যায়। আর মাইয়্যারা রাগ করলে,হেই রাগ ভাঙানো ব্যাডাগোর লাইগ্যা ফরজ। এতে দোষ যদি মাইয়াগো থাকে,হেরপরেও।”

পিচ্চির কথা শুনে সাচী বিস্ময়ে স্তব্দ। এতটুকু মেয়ে , আর কত পাকা!
উল্টাপাল্টা কথা শুনে সাচী আর ফুল কেনার কোন আগ্রহই বোধ করলোনা। তাই মেয়েটাকে চলে যেতে বললো। এমনিতেই মন মেজাজ ঠিক নেই। মেয়েটা মন খারাপ করে চলে গেলো। সেটা দেখে সাচীর একটু খারাপ লাগলো বটে। সে এমন ব্যবহার করেনা কারো সাথে। কিন্তু এখন কিছু ভালো লাগছেনা। সাচীর বুকচিড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো। সাচী আবারো চোখ বন্ধ করে বসে রইলো। ভীষণ অশান্তি লাগছে। আরাদ চুপচাপ সব দেখছিলো। নিশ্চয়ই কোন সমস্যা হয়েছে থাপ্পড় রানীর। কিন্তু সেটা কি, সেটা বুঝতে পারছেনা আরাদ। জিজ্ঞেস করারও আর সাহস পাচ্ছে না।

মেয়েটা ঘুরে এবার আরাদের পাশে গেল। আরাদ মেয়েটাকে ইশারায় চুপ থাকতে বললো। আরাদই মেয়েটাকে ইশারায় ওর কাছে আসতে বলেছে। মেয়েটার হাতে যতগুলো ফুল ছিলো,সব কিনে নিলো।
মেয়েটা খুশি হয়ে তার ফকফকা সাদা দাঁতগুলো বের করলো আবার। তারপর আরাদকে ইশারায় মাথাটা কাছে নিতে বললো।
ফিসফিস করে বললো,
” আফামণি রাগী হইলেও,মানুষটা অতডাও খারাফ না। রাগী মাইনসের মন ভালা ওই। ভালোবাসতে জানে মেলা। খালি রাগ উঠলেই বেজাল। আফনি ফুলের মালাডা আফামণির চুলে পরাইয়্যা দেন,রাগ হাওয়ার মতন উইড়া যাইবো গা। মাইয়াগো বেলি ফুলের মালা বহুত পছন্দ। এর সুবাসে সব রাগ ফুঁস হইয়া যায়।”
এটা বলে খিলখিল করে হেসে উঠলো, তবে কোন শব্দ হলোনা। শুধু ওর শরীর দুলছিলো। অদ্ভুত খুশি নিয়ে সে গান গাইতে গাইতে চলে গেলো। আজকের জন্য আর তাকে ফুল নিয়ে ঘুরতে হবে না। আরাদ তার দামের চেয়েও বেশি টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে।
ফুলগুলো হাতে নিয়ে আরাদ আনমনে হেসে উঠলো। মেয়েটা কি পাকা পাকা কথাগুলো বলে গেলো। বয়স বড়জোর এগার-বারো হবে। এখনো হাফপ্যান্ট পরে। একটা জীর্ণশির্ণ লাল ফ্রক পরে ছিলো। হাটু অবধি লম্বা। কালো গায়ের রংয়ের সাথে,লাল ফ্রকটাতে কেমন অদ্ভুত লাগছিলো দেখতে। যদিও ওরা তো আর গায়ের রংয়ের সাথে ম্যাচ করে জামা পরার কথা বোধহয় জানেও না। আর জানলেই বা লাভ কি!
যখন পেট পূজো করাটাই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়, তখন সেসব ভাবা তো বিলাসিতা!

ফুলগুলো কি করবে,ভেবে পাচ্ছে না আরাদ। সে ফুল দিয়ে কি করবে? কাকে দিবে?
ফুল দেওয়ার মত কোন বিশেষ মানুষ কি আছে তার জীবনে?
নেই!
কোনদিন হবেও না আর।
গাড়িতেই ফুলগুলো রেখে দিলো সে। সাচী তখনো চোখ বন্ধ করে রেখেছে। আরাদও চুপচাপ বসে আছে। সোহানী এখনো আসছেনা কেন? একবার দেখে আসবে গিয়ে?
নাহ,একটা ফোন দেই বরং। যেই ভাবা,সেই কাজ। সোহানী বললো, পাঁচমিনিটের মধ্যে আসছে সে। আরাদ তাড়া দিলো। কারন সাচীর বোধহয় অসস্থি লাগছে এভাবে বসে থাকতে। বাসায় গেলে হয়তো একটু ভালো লাগবে।
আরাদের কথা শুনে সাচী চোখ মেলে তাকালো। তবে কোন কথা বললোনা। গাড়ির বাইরে মুখ বের করে রাখলো।
আচমকা কিছু একটা দেখে সে স্তব্দ হয়ে গেলো!
চোখ দিয়ে দু’ফোটা জল না চাইতেও গড়িয়ে পড়লো।
সকালের কঠিন ভাবটা চাইলেও,সে ধরে রাখতে পারছেনা। বুক ফেটে কান্না আসতে লাগলো তার।
সোহানী ফিরে আসলো ততক্ষণে। সে অনেকগুলোও শপিং ব্যাগ নিয়ে পিছনে গিয়ে বসে পড়লো। সাচী তখনো ঐভাবেই বসে আছে। আরাদ সাচীকে মাথা ভেতরে আনার জন্য বলছে বারবার। কিন্তু সাচীর কোন রেসপন্স নেই। একসময় আরাদ সাচীর কাঁধ ধরে ঝাঁকুনি নিলো। সাচী চমকে গিয়ে আরাদের দিকে তাকালো। কিছু বললোনা। কিন্তু সাচীকে দেখে আরাদের তারচেয়েও বেশি অবাক লাগলো।
সাচী কাঁদছে!
কিন্তু কেন?
আরাদ কিছু বুঝতে পারছেনা। একসময় সাচীকে পাশ কাঁটিয়ে সে মাথা বের করে বাইরে দেখার চেষ্টা করলো। সাচী তখনো নীরবে কাঁদছে। আরাদ বাইরে তেমন কিছুই দেখতে পেলো না। সে নিজের সিটে এসে বসলো।
একসময় গাড়ি ছেড়ে দিলো।
তবে রাস্তায় তুহিনকে দেখতে পেয়ে আরাদ চকিত দৃষ্টিতে তাকালো। তার মানে তুহিন দেশে এসেছে? কিন্তু আরাদকে দোকানি কিছু বলেনি কেন? নাকি এরপর এসেছে? আরাদ কিছু বুঝতে পারছেনা।
তাহলে কি সাচী তুহিনকে দেখেছিলো একটু আগে?
তুহিন কি সাচীর সাথে যোগাযোগ করেছে?
এতো এতো প্রশ্ন যখন আরাদের মাথায় উঁকি দিচ্ছিলো,তখন নতুন একটা প্রশ্ন সেখানে যোগ হলো।
একটা মেয়ে হেসে হেসে তুহিনের গায়ের উপর ঢলে পড়ছে। তুহিনও হাসছে। সাচী যেন এটা না দেখতে পায়,আরাদ গাড়ি ঘুরিয়ে অন্যদিকে নিয়ে গেলো। কিন্তু সাচী কি ওদের দেখেই কান্না করছিলো?
তাহলে তো সাড়ে সর্বনাশ! এটা ভেবে আরাদের মাথায় বাজ ভেঙে পড়লো এবার!

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here