#যখন_তুমি_এলে
লেখা: জাহান লিমু।
পর্ব : ৩২
_______________
রোহানীর সাথে দেখা করার উদ্দেশ্য, ওর শ্বশুর বাড়ি গেল আরাদ। ঐদিনের পর, আর যাওয়া হয়নি। নতুন সংসার,তাই আরাদ যেতে চাচ্ছিলো না। মানুষের মনে কখন কি চলে বলা যায় না। ওদের বন্ধুত্বটা এমন যে,দূর থেকে দেখলে যে কেউ সন্দেহ করতেই পারে। আর তার জন্য একটা কথা তো আছেই। ছেলেমেয়ে কখনো বন্ধু হতে পারে না। কথাটা হয়তো সত্য, তবে পুরোপুরি নয়। এই পৃথিবীতে কিছু কিছু ব্যতিক্রম উদাহরণ থাকেই। আরাদ,রোহানীর বন্ধুত্বটাও না হয় সে ব্যতিক্রমের একটা। সকাল বেলা গেলো,তাই তানিমকে বাসায় পেলো না। তবে রোহানীর শ্বশুর শ্বাশুড়ীর সাথে কুশল বিনিময় করলো সে। সবকিছু ঠিক হওয়ার ব্যাপারে উনাদের আশ্বস্থ করলো। ছেলে এভাবে বিয়ে করলে,মা বাবার চিন্তা থাকাটা খুব স্বাভাবিক। তারপরও উনারা যে ছেলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন,সেটাই অনেক বেশি। আর ছেলের বউয়ের সাথেও কোনরুপ খারাপ আচরণ করছেন না। অন্তত রোহানীকে দেখে মনে হচ্ছে, সুখেই আছে। যদিও অল্প সময়ে মানুষের বিষয়ে কিছু বলা যায় না। তবুও আংশিক বুঝা যায়।
রোহানী কফি, আর নাস্তা নিয়ে এলো। শাড়ি পরেছে সে। দেখতে একদম গিন্নি গিন্নি লাগছে। বিয়ের সাথে সাথেই একটা মেয়ে সহসা কেমন সংসারী হয়ে উঠে। হয়তো এটাই প্রকৃতির নিয়ম।
তবে রোহানীর মুখটা ভীষণ বিষন্ন লাগছে। চোখেমুখে একটা সূক্ষ্ম চিন্তার ছাপ। আরাদ ভেবেছিলো হয়তো এভাবে বিয়েটা হয়েছে,সেজন্য। কিন্তু কথা বলে বুঝতে পারলো,কাহিনী অন্য জায়গায়।
রিতি চৌধুরী নাকি ঐদিনের পর থেকে নিজেকে রুমবন্দী করে রেখেছেন। কারো সাথে কথা বলেন না,ঘর থেকে বের হোন না। খাওয়া-দাওয়াও ঠিকমত করেন না। বুয়া রুমে খাবার দিয়ে আসে। সোহানী বা শফিকুর গেলে উনি দরজা খুলেন না। সবাই বড্ড আতঙ্কে আছে। যদি উল্টাপাল্টা কিছু করে বসে!
সেসব শুনেই রোহানী চিন্তায় অস্থির হয়ে গেছে। শত হলেও মা তো। কিন্তু সে তো চাইলেও,এ মুহুর্তে যেতে পারছেনা।
সবটা শুনে আরাদ নিজেও চিন্তায় পড়ে গেলো। রিতি চৌধুরী মহিলাকে বুঝা দুষ্কর। এখন যে কি করতে চাইছে,কে জানে।
আরাদ কি একবার যাবে সেখানে?
গিয়ে উনাকে সবটা বলে দিবে?
নাকি,এতে আরো ঝামেলা বাড়বে!
কিন্তু না বলাতেও যদি ঝামেলা তৈরি হয়,তখন কি হবে?
আরাদের মাথা কাজ করছেনা। একটার পর,একটা ঝামেলা ওর সামনে আসছে।
সংসার জীবনে এতো সমস্যার জন্যই,সে একা জীবনের পথ বেঁছে নিয়েছিলো। কাউকে নিজের জীবনের সাথে জড়াতে চায় না সে। সংসার মানেই একগুচ্ছ রাগ,অভিমান,সন্দেহ,ঘৃণা,ঝগড়ার সম্ভার। আরাদ একা বাঁচতে চায়। ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরপরই,সে একটা পার্টটাইম জব নেয়। এতোদিন তার বাবা প্রতি মাসে তার একাউন্টে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পাঠাতো। তবে বাবা,ছেলের মধ্যে কোন কথা হতোনা সরাসরি৷ আরাদের বাবা,মা কেউই দেশে নেই। তবে দুজন দু’দেশে।
মায়ের সাথে হঠাৎ হঠাৎ কথা হয়। আরাদ কখনো অভিমানে কাঁদে,কখনো ফোন তুলে না। মা,বাবা নামক দুটো মানুষের উপর তার রাজ্যের অভিমান জমে আছে। সেই অভিমান এতোদিনে শক্ত বরফে পরিণত হয়েছে। এখন তাই আর কোন অনুভূতিই কাজ করে না।
তারা তাদের অভিমান নিয়ে বসে আছে, সন্তানের কথা একবারও ভাবছেনা। সেই ষোল বছর বয়স থেকে মাতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত। একুশ বছর বয়সের পর পিতৃস্নেহও কপালে জুটেনি। অবশ্য জুটেনি বললে, ভুল হবে। আরাদ চায় নি!
আরাদের বাবা,ওর দাদীর মাধ্যমে ওর একাউন্টে টাকা পাঠায়। তারা ভাবে যে,আরাদ বুঝতে পারবেনা এভাবে দিলে। অথচ আরাদ সবই জানে।
কার প্রতি ঘৃণা পোষণ করবে,আরাদ ভেবে পাই না। মনে হয় সবাই অপরাধী, আবার কেউই না। হয়তো একটা জঘন্য পরিস্থিতির স্বীকার দুইজন। কিন্তু তাদের ইগো টা এতোটাই বেশি কাজ করেছে যে,কেউ কাউকে কোন সুযোগ দিতে চায় নি। না বাবা মাকে সুযোগ দিয়েছে,না মা বাবাকে। দুজনের অভিমানের রোষানলে পিষ্ঠ হয়ে গেল আরাদের অনুভূতিগুলো। সে কাউকে ভালোবাসার সাহস করতে পারে না। কোনদিন পারবে কিনা,তাও জানেনা।
অনুভূতিরা ভোতা হয়ে গেছে। হৃদয় তপ্ত, শূণ্য হয়ে গেছে।
সেই গহীন মরুচরে কোন ভালোবাসা জাগানোর চেষ্টাও করেনা সে। এভাবেই বেশ আছে। কেটে যাক না ভালোবাসাহীন জীবন। যেখানে অভিমানেরও অস্তিত্ব নেই।
রোহানীর সাথে দেখা করে কাজে চলে গেলো সে। তবে সাচীর সাথে ঘটা ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে, আরাদ ফেঁসে গেলো। যদিও রোহানীকে সবটা বলেনি। কারন তাহলে আজীবন ননস্টপ আরাদকে খুঁচাবে। তাই সে শর্টকাটে বিবরণ দিলো। যদিও এতেও রোহানী সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে আরাদকে পর্যবেক্ষণ করলো। রোহানী আরাদকে খোঁচা মেরে বললো,” বিপদ থেকে উদ্ধার করতে গিয়ে,আবার নিজে বিপদে পড়ে যাস না যেন। ভালোবাসা চূড়াবালির মত। কখন পা ফঁসকে,সেখানে ফেঁসে যাবি,টেরও পাবিনা। আরাদ সেসবে পাত্তা দিলো না অবশ্য । সে শুধু নিজের কাঁধ থেকে বোঝাটা নামাতে চাইছে। এর বেশি কিছুই না। এখন সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেতো,যদি তুহিন দেশে ফিরতো। অনেকদিন ধরে আরাদ তুহিনের বাসার ঐদিকটায় যাচ্ছে না। ঐখানে একটা দোকানদারকে বলে রেখেছিলো,তুহিন আসলে ওকে জানানোর জন্য। আজ নয়তো কাল,একবার গিয়ে খোঁজ নিতে হবে। গত একমাস সে কোন খোঁজ নেয় নি। নেয়নি বললে অবশ্য ভুল হবে। নিতে পারেনি। বিভিন্ন ঝামেলা লেগেই ছিলো।
.
বিরুনিকার মা বিরুনিকার জন্য, আরাদকে পছন্দ করেছেন। কিন্তু সমস্যা হলো,ছেলেটার কেউ নেই, এক দাদী ছাড়া। নেই বললে আবার ভুল হবে। উনি খোঁজ নিয়ে জেনেছেন,ওর মা বাবার ব্যাপারে। কোন ঝামেলার কারনে দুজন আলাদা আছেন। ডিভোর্সও হয়নি অবশ্য। আর চাচারা তো আর সবসময় সাথে থাকবেনা। দাদীরও বয়স হয়েছে। শুনেছে অসুস্থও নাকি। তবে কোমল এর মনে অন্য চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু সেটা আরাদকে কি করে বলবে, ভেবে পাচ্ছে না। ছেলেটাকে উনার বেশ ভদ্র,শান্ত স্বভাবের মনে হয়েছে। এরকম ছেলে লাখে একটা পাওয়া কষ্টসাধ্য। কিন্তু উনি বিষয়টা কিভাবে বলবেন,সেটা বুঝতে পারছেন না। হঠাৎ উনার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেলো।
ঐদিন রাতে আরাদ যখন সাচীকে বাসায় পৌঁছে দিয়েছিলো,তখন তিনি ছাদে ছিলেন। ঘুম আসছিলোনা,তাই একা একা হাঁটছিলেন। ল্যামপোস্টের আলোতে ছেলেটাকে চিনতে উনার খুব বেশি কষ্ট হয় নি। তবে এতো রাতে সাচী আরাদের সাথে কোথায় গিয়েছিলো,সেটা উনার মনে প্রশ্নের উদয় ঘটিয়েছিলো।নিজের মনকে সংবরণ করতে না পারায়,সাচীকে জিজ্ঞেসও করে ফেলেন পরেরদিন। সাচী প্রথমে একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেলেও,পরে স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দেয়। সবটা শুনে কোমলের মন থেকে চিন্তার রেখাটা দূর হয়ে গেলো। তার মানে ওদের মধ্যে কিছু নেই। একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন তিনি।
সাচীর কথা মনে হতেই, কোমল ভাবলেন তাহলে কি সাচীকে দিয়ে আরাদকে প্রস্তাবটা দেয়া যেতে পারে?
নাকি উনিই আরাদকে ডেকে সরাসরি সবটা বলবেন?
নাহ,সাচীকে দিয়ে আগে কথাটা খোলাসা করবেন। তারপর দেখা যাক।
এরকম একটা ছেলেকে মেয়ের জামাই হিসেবে পেলে সবদিক দিয়েই ভালো হয়। যেহেতু একা থাকে,তাই উনাদের সাথেই থাকতে পারবেন। মেয়ে,মেয়ের জামাই একসাথেই থাকতে পারবেন। অবশ্য এ প্রস্তাবে আরাদের রাজি হওয়ার চান্স খুবই কম।
তবুও কোমল চেষ্টা করতে চান।
যেই কথা,সেই কাজ। উনি সাচীর সাথে আলাপ করতে চলে গেলেন। কিন্তু সবটা শুনে সাচীর চক্ষু চড়কগাছ অবস্থা!
এ কারনে কি তবে বিরুপু ঐদিন ঐ কথাটা বলেছিলো,তোমার ভাবী হওয়া আমার ভাগ্যে নেই!
সাচীর অস্থির লাগছে। কিন্তু সে কি করতে পারে?
বিরুপু ভাইয়ুকে অনেক ভালোবাসে,সেটা সে জানে। কিন্তু তার ভাইয়ুর মনে কি চলে,সেটা কি করে জানবে সে? সেটা না জেনে তো, কোন কিছু করতে পারবেনা। কারন বাবাকে বলে,হয়তো প্রস্তাব পাঠানো যাবে। কিন্তু যে সংসার করবে,তার মনের কথাটা তো আগে জানা জরুরী। কোমলের কথায় সাচীর পুরো দিশেহারা লাগছে। আর আরাদ কি রাজি হবে এ প্রস্তাবে?
কোমলতো একপ্রকার ঘরজামাইও করতে চাইছেন আরাদকে। সাচী আরাদকে যতটুকু চিনেছে,সে যথেষ্ট আত্নমর্যাদাবান ছেলে। সবকিছু কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে সাচীর।
নিজের সমস্যা থেকে উঠতে না উঠতেই,আবার নতুন সমস্যা উপস্থিত। বাদল মালটা বাবাকে জানিয়ে দিয়েছে,সে বিয়ে করবেনা। এটা বলে সাচী জিভ কাটলো। ঐ রোবটের মুখে শুনে শুনে, নিজেও এই বাজে কথাটা বলে ফেললো। আসলেই সঙ্গ দোষে,লোহা ভাসে। মাত্র কয়েকবার শুনেই,সেও বলছে। ভাবা যায়!
বাবাও আর এতোটা জোর দেয় নি। যেহেতু সাচীও রাজি হচ্ছিলো না। সাচী মনে মনে আরাদকে ধন্যবাদ দিলো। আর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো সে। ভীষণ চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলো সে। যদিও আরাদ একটু বেশিই করেছে। তবে ঐ বাদলা রোগও তো কম না। চলে গিয়েও,কেমন লুকিয়ে ওদের দেখছিলো। সাচী তো অতটা খেয়ালই করেনা কখনো। আরাদের নজর তীক্ষ্ণ হওয়াতে,প্ল্যান সাকসেসফুল হলো।
তবে এমুহূর্তে আরাদ,বিরুপু দুজনের সাথেই একসাথে বসে কথা বলতে হবে। তারপর যা সিদ্ধান্ত নেয়ার নিবে। সাচী একা কোন কাজ করবেনা।
.
সাচীর শর্টফিল্মের কাজ শুরু করে দিলো সে। তবে আরাদ রাজি হওয়ার সাথে সাথে,আরেকটা হেল্প করে দিলো। ফিমেল ক্যারেক্টারটা প্লে করানোর জন্য সোহানীকে সাজেস্ট করলো।
সাচী আরাদের উপর ভরসা করে কাজ শুরু করে দিলো। আপাতত সাচীদের বাসাতেই শ্যুট হচ্ছে। আরাদের সংলাপ বলার ধরন দেখে,সাচীর মনে হচ্ছে প্রফেশনাল কোন অভিনেতা। স্কুলে থাকতে অভিনয় শিখতো। সাচী রোহানীর কাছ থেকে যতটুকু জেনেছে,আরাদের মা একজন অভিনেত্রী ছিলেন। নাটক,টেলিফিল্মে কাজ করতেন। তবে উনি এখন দেশে নেই। তার মানে অভিনয়টা আরাদের রক্তে মিশে আছে।
সাচীর মনে আরাদের মা,বাবার বিষয়টা বারবার ঘোরপাক খায়। কি এমন হয়েছিলো দুজনের মধ্যে, যে এভাবে নিজেদের কষ্ট দিয়ে যাচ্ছেন। আর একমাত্র সন্তানের প্রতিও তাদের কোন দায়িত্বজ্ঞান নেই। শুধু টাকা-পয়সা দিলেই, মা বাবার দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। আরাদের জন্য সাচীর ভীষণ মায়া হয় মাঝে মাঝে। নিজেকে কেমন একাকীত্বের চাঁদরে মুড়িয়ে নিয়েছে। অথচ বাইরে থেকে দেখে, সেটা ঠাহর করার কোন উপায় নেই। তবুও কেমন স্বাভাবিক আছে, এতো কষ্ট বুকে চেপে। অনেকে মনে করে,মানুষ কেবল প্রেম ভালোবাসার কারনেই, উদাসীন হয়ে যায়। অস্বাভাবিক আচরণ করে। অথচ কিছু কিছু মানুষের জীবনে এরচেয়েও বড় সমস্যা বিদ্যমান থাকে। যেটা আমরা বুঝতে পারিনা। না বুঝে অনেকে মজা উড়ায়। পারিবারিক সমস্যা যে,প্রেম ভালোবাসার চাইতেও কতটা যন্ত্রণার,সেটা যে ভুক্তভোগী সেই বুঝে। ব্রোকেন ফ্যামিলির সন্তানদের কষ্ট,কেউ বুঝেনা।
এরা চাইলেও,আর দশটা স্বাভাবিক বাচ্চার মত বেড়ে উঠতে পারে না।
আরাদকে এখানে দেখতে পেয়ে,কোমল অবশ্য বেশ প্রসূন হয়েছেন বলে মনে হচ্ছে। উনি ভাবছেন, সাচী হয়তো বিরুর সাথে কোন কানেকশান তৈরি করানোর জন্য এখানে এনেছে আরাদকে।
মনে মনে বেশ খুশিই হলেন। বিরুনিকাকেও বারবার আরাদের খেয়াল রাখার কথা বলছেন। বিরুনিকাও উনার কথামত আরাদের সর্বোচ্চ কেয়ার করতে লাগলো। এতে অবশ্য উনি অবাক হলেও,বেশ খুশিই হয়েছেন। ওদের মধ্যে যদি একটা কানেকশন তৈরি হয়ে যায়, তবেই সুবিধা।
কোমল মনেপ্রাণে সেটাই চাচ্ছেন।
সন্ধ্যার আগে আগে শ্যুট শেষ করে, সোহানী বাসায় চলে গেলো। অবশ্য ওর বাবাই গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। আর নয়তো আরাদ দিয়ে আসতো। কিন্তু প্রতিদিনই গাড়ি পাঠিয়ে দেয় ফোন করলেই। একবার দিয়ে যায়,আরেকবার নেয়।
সোহানী এখন অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। আগের মত পাগলামী করে না। এটা দেখে আরাদের বেশ ভালো লাগছে। সত্যি কেবল বয়সের সাথে নয়,পরিস্থিতির কারনেও মানুষের বোধ শক্তির উন্নতি ঘটে।
দু’মগ কফি হাতে নিয়ে বিরুনিকা ছাদে আসলো। সাচী ওর রুমে ল্যাপটপে কি একটা কাজ করছিলো। তাই আরাদ আর বিরুনিকা ছাদে একা বসেছিলো। কারন আরাদ রাতে ওদের সাথে খেয়ে,তারপর যাবে। এটা ওর মায়ের হুকুম। আরাদও ফেলতে পারলোনা। কোমল ধমকের সুরে আরাদকে বলেছেন।
দুজন হেসে হেসে বিভিন্ন কথা বলছিলো। সহসা বিরুনিকার চোখে কি যেন পড়ে যায়।
ঝালপোকা সম্ভবত। বিরুনিকার চোখ জ্বলে যাচ্ছে পুরো। আচমকাই পোকাটা চোখের ভেতর এসে পড়ায়,বিরুনিকার কফির কাপ হাত থেকে পড়ে দু’টুকরো হয়ে যায়।
আরাদ ওর কাপটা তড়িঘড়ি করে নিচে রেখে,বিরুনিকার কাছে এগিয়ে গেলো। বিরুনিকার ওড়নার কোণাটা দিয়েই চোখের পোকাটা বের করলো। তারপর বেশ কয়েকবার ফুঁ দিলো চোখে। আরাদ জিজ্ঞেস করলো,
” আর ইউ ওকে?”
বিরুনিকা একটু সরে বসলো। ওড়না মুখে নিয়ে তার গরম ভাপ চোখে দিতে দিতে বললো,” হ্যাঁ,ঠিক আছি এখন। ধন্যবাদ আপনাকে।”
আরাদ মৃদু হেসে বললো,” স্বাগতম সবসময়। ”
আরাদের কথা বলার ধরন দেখে,বিরুনিকাও হাসলো। ছেলেটার মধ্যে কি যেন আছে। চাইলেও রাগ করা যায় না। কি অদ্ভুত সম্মোহন কাজ করে চেহারায়।
বিরুনিকা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। আরাদের দৃষ্টি তখন আকাশ পানে।
হঠাৎ সিঁড়ি রুমের কাছে কোন একটা শব্দ হলো। মনে হলো কোন কিছু পড়ে ভেঙে গেলে যেমন শব্দ হয়,ঠিক তেমন।
সাচী এসেছে কি?
বিরুনিকা উঠে দাঁড়ালো দেখার জন্য। কিন্তু ঐখানে কেউ ছিলো না তখন। সেটা দেখে বিরুনিকা বেশ অবাক হলো। যখন ফিরে আসবে, তখন পায়ে একটা কিছু লাগে। নিচে তাকিয়ে দেখে, একটা রংতুলি। সেটা ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে আছে। মনে হচ্ছে, কেউ এটার উপর নিজের ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে।
কিন্তু কে?
#চলবে…