যখন তুমি এলে।
লেখা- জাহান লিমু।
পর্ব – ২৭
আমরা ছোট থেকে যেসব কথার সাথে পরিচিত,তার বাইরে কোনকিছু ঘটলে, সেটা আমাদের সহজে বিশ্বাস হতে চায় না। এটাই স্বাভাবিক অবশ্য।
আমরা জানি, মা মানেই মমতাময়ী। বাবা মানেই নির্ভরতার স্থান। কিন্তু কালের পরিক্রমায় সবকিছু যেমন বদলে যাচ্ছে, তেমনি সম্পর্কের চিরাচরিত সমীকরণ গুলোও কেমন বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। দিন দিন সম্পর্ক গুলো ফিকে হয়ে যাচ্ছে। ভালোবাসা,মায়া,সম্পর্কের টানগুলো কেমন নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে। পার্থিব মোহে পড়ে,আমরা সব ভুলে যাচ্ছি। আমাদের কাছে এখন বাহ্যিক শো-অফটাই প্রধান বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
সোহানীকে বউ সাজানো হচ্ছে। হ্যাঁ,রিতি এবার সবচেয়ে জঘন্য কাজটা করতে চলেছেন। সোহানীকে আর কোন সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। ওকে বাসাতেই সাজানো হচ্ছে। রায়হান সাহেব নিজের রুমে শয্যাশায়ী। ড্রাইভার উনাকে বাসায় নিয়ে এসেছে। মেহমান যারা এসেছিলো,সবাই চলে গেছে। বর, আর বরের মা সোহানীদের বাসায়ই অপেক্ষারত। বড় বোন মারা গেছে,সেখানেই আবার ছোট বোনের বিয়ে। বিষয়টা কোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের পক্ষে করা সম্ভব না বোধহয়। আর রিতি একজন অসুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ। সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।
অসুস্থ শরীর নিয়ে রায়হান সাহেব উদভ্রান্তের মত উঠে আসলেন। কোনকিছু না বলেই আচমকা মেয়ের হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে গেলেন।
রিতি চৌধুরী রাগে সাপের মতন হিস হিস করছেন। কারন রায়হান সাহেব মেয়েকে নিয়ে রুমের দরজা আঁটকে দিয়েছেন। স্বামীর কাজে তিনি চরম আশ্চর্য, একইসাথে ক্ষুদ্ধ। দরজা ধাক্কাতে লাগলেন একনাগাড়ে। তখন শুনতে পেলেন,রায়হান সাহেব তেজী গলায় বলছেন,
” তুমি যদি তোমার এই নোংড়ামি না থামাও,তবে আজ বাবা মেয়ে এখানে এইমুহুর্তে একসাথে মরবো।”
কথাটা শুনে রিতি পুরো ভড়কে গেলেন মনে হয়। বাইরে থেকে পাত্রও কথাগুলো শুনতে পেলো বলে মনে হয়। পরিস্থিতি খারাপ বুঝতে পেরে,তারা সেখান থেকে সরে গেলো তৎক্ষনাৎ।
সম্পত্তির চেয়ে,জীবন বড়।
সে জানতো,রোহানীকে বিয়ে করলে,এদের পুরো সম্পত্তি ওরই হতো। সোহানীর একটা ব্যবস্থা করা যেতো। কিন্তু বড়টা মরে গিয়ে,অবশ্য সুবিধায় করে দিয়েছিলো। রাস্তা পুরো পরিষ্কার। কিন্তু এখন এই বুড়ো লোক তো কি ঝামেলা লাগিয়ে দিলো। সত্যি সত্যিই যদি কিছু করে বসে?
তাহলে সারাজীবন জেলের ঘানি টানতে হবে। সম্পত্তি ওর নিজেরও অঢেল আছে।
কিন্তু কি একটা কথা আছে না,টাকার নেশা,বড় নেশা। একবার যে পায়,সে আরো চায়,আরো চায়। কোন কারন ছাড়াই চায়।
রিতি কি করবেন,কিছু বুঝতে পারছেন না। রায়হান চৌধুরী কি উনাকে ভয় দেখাচ্ছে? কি যেন ভেবে, উনি উনার রুমের দিকে গেলেন। কিন্তু রুম পুরো ফাঁকা৷ রিতি রাগে কাঁপতে কাঁপতে দপ করে বিছানায় বসে পড়লেন। দিকবিদ্বিক শূণ্য লাগছে উনার। সবকিছু ঠিকভাবেই হচ্ছিলো। হঠাৎ করে, কি থেকে কি হয়ে গেল!
এতো কড়া নজরে রাখা স্বত্বেও, রোহানী কি করে যে এমন কাজটা করলো। মরে গিয়েও,শান্তি দিলো না। একটা থার্ডক্লাস ছেলের জন্য, নিজের এমন ঐশ্বর্যপূর্ণ জীবন ত্যাগ করে দিলো। ভালোবাসা একেবারে উতলে উঠছিলো। দু’দিন পরে যখন ঠিকমত ভরণপোষণ করতে পারতনা,তখন ভালোবাসা পালাতো।
টাকার কাছে ভালোবাসার অস্তিত্ব না থাকলেও,ভালোবাসার কাছে টাকার অস্তিত্ব অবশ্যই আছে। এবং সেটা তখনি বুঝা যায়, যখন সংসারে অভাব আসে। জীবনে টাকা থাকলে,ভালোবাসার অভাব হয় না।
আজ অনেক বছর পর বোধহয় অজানা কারনে রিতির চোখে অশ্রু জমেছে। যে অশ্রু আরো কয়েক দশক আগে, শক্ত বরফে পরিণত হয়েছিলো। যে বরফ,কেউ গলাতে পারেনি আজ অবধি। কেন যেন আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন রিতি।
এইযে উনার দামী শাড়ি,হীরার গয়না,এতো এতো কাজের লোক,তবুও কি উনি সুখে আছেন?
মানুষ বাইরে যেটা দেখায়,সবসময় সেটায় ঠিক না। কিছু কিছু মানুষ বাহিরে রোদ ঝলমলে মুখের আড়ালে,ঘোর মেঘ চেপে রাখতে পারে। আসলে পরিস্থিতিতে এমন হতে শিখে যায়। অনুভূতি মাটি চাপা দিয়ে দেয়।
ঠিক তেমনি, রিতিও নিজের মানবিক স্বত্বা,অনুভূতি সব দাফন করে দিয়েছিলো,যেদিন ওর বাবা ওর প্রথম স্বামীকে মেরে ফেলেছিলো। হ্যাঁ,রায়হান রিতির দ্বিতীয় স্বামী।
পালিয়ে বিয়ে করেছিলো রিতি। ছেলে পড়াশোনার পাশাপাশি, পার্টটাইম জব করতো।
কিন্তু কেবল একমাস লুকিয়ে সংসার করেছিলো। তখন রিতির বয়স কেবল ঊনিশ। আর সায়ীমের চব্বিশ। ঐ বয়সেই রিতির বিয়ে ঠিক করলে,রিতি পালিয়ে যায়। কিন্তু এর একমাস পরেই সায়ীম এক্সিডেন্টে মারা যায়। রিতি তখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বাড়িতে ফেরারও কোন উপায় ছিলো না,শ্বশুর বাড়িতেও না। কারন কেউ বিয়ের কথা জানতোনা। এক বান্ধবীর বাসায় ছিলো তখন। যখন লুকিয়ে ওর মায়ের সাথে কথা বলে,তখন ওর বাবা দেখে ফেলে। তিনি মেয়েকে ফিরে আসার কথা বলেন। রিতিও বাধ্য মেয়ের মত ফিরে আসে। ভেবে নেয়,সায়ীম ওর জীবনের একটা বেদনার অংশ। যে অনেকটা ভালোবাসা দিয়ে,অনুভূতি শূন্য করে চলে গেছে।
আবার পড়াশোনা শুরু করে সে। কিছুদিন যেতেই ওর বাবা আবার বিয়ে দিতে চায়। এবার আর না করার কোন মুখ নেই। সেও রাজি হয়ে যায় এবার। যদিও সে মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলো না। সে জানতো,বাবাকে এখন কিছু বলা যাবেনা আর।
কিন্তু ঘটনা ঘটে বিয়ের কয়েকদিন আগে রাতে। ওর বাবাকে কারো সাথে কথা বলতে শুনে। আর সেটা শুনে রিতির পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়। নিজের বাবা এমন কাজ করতে পারে?
প্রচন্ড ঘৃণা হচ্ছিলো নিজের বাবার প্রতি। যেমনটা হয়তো আজ সবার রিতির প্রতি হচ্ছে।
নিজের মেয়েকে কেউ নিজে বিধবা করে?
রিতির বাবা করেছিলেন।
রিতি চুপ স্বভাবের মেয়ে নয়। সে তার বাবাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিলো সরাসরি। কিন্তু তাতে কোন লাভই হয়নি। আর রিতি দুর্বল স্বভাবের নয় যে,সুইসাইড করবে। সে ওর বাবার কথায় বিয়েতে ঠিকই রাজি হলো। কিন্তু বিয়ের পরের রিতিকে কেউ চিনতে পারতনা। একটা মানুষ এতো অল্প সময়ের ব্যবধানে,কি করে আকাশ- পাতাল বদলে যেতে পারে? বিয়ের পর, রিতি কোনদিনও ওর বাবার বাড়িতে যায় নি। কারো সাথে কথা বলতোনা। আবার সংসার ঠিকমতই করতো। রায়হানকে কোনদিন ভালোবাসি বলেনি,আবার ছেড়েও যায় নি। বাবার উপর জেদ দেখিয়ে,নিজেকে পাথরে পরিণত করেছিলো। বাবার মৃত্যুতে একফোঁটা চোখের জলও ফেলেননি। সবাই বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলো।
সদা হাসি,চঞ্চল মেয়েটা জেদে একসময় অনুভূতিহীন রোবটে পরিণত হলো। কারো প্রতি কোন ভালোবাসা নেই। স্বামী, সন্তান কারো প্রতিই না। একটা অদ্ভুত কষ্ট বুকে চেপে,নিজেকে অনুভূতিহীন করে তুলেছিলো। কেউ রিতিকে কোনদিন কাঁদতে দেখেনি। একটা মানুষ এতোটা শক্ত কি করে হয়,কে জানে। এতকিছুর পরও তবু দিব্যি সংসার করছে। বাহিরের মানুষকে দেখাচ্ছে, সে চরম সুখী।
টাকা-পয়সা, ক্লাস,স্ট্যাটাস এগুলোই একসময় তার কাছে প্রধান হয়ে দাঁড়ালো। রায়হান যদি কিছু বলতো এসব নিয়ে,তখন রিতি স্পষ্ট গলায় বলতো,
টাকার জন্যই তো এতো বড় ব্যবসায়ীকে বিয়ে করলাম। এখন সেই টাকার যদি সদ্ব্যবহার না করি,তাহলে কি লাভ?
রায়হান এটা জানতো যে,রিতি পালিয়ে বিয়ে করেছিলো আগে। তারপর ছেলেটা রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়। এটা জানেনা যে,মেরেছিলো রিতির বাবাই।
ভেবেছিলেন হয়তো একসময় শোকটা কেঁটে যাবে। কিন্তু রিতি একবিন্দুও বদলায়নি। বরং দিনকে দিন কেমন অদ্ভুত আচরণ করে চলেছে।
রিতিকে এক দেখায় ভালো লেগে গিয়েছিলো উনার। তাই বিয়ের কথা শুনেও,সেসবে পাত্তা দেননি। ভেবেছিলেন,সময়ে সব ঠিক হয়ে যাবে। ঐটা হয়তো অল্প বয়সের আবেগ ছিলো। ঐরকম ভুলচুক সবাই করে কমবেশ। কিন্তু কাহিনীর পেছনে যে আরো কাহিনী থাকে,সেটা বোধহয় তিনি বুঝতে পারেননি।
রিতি একসময় ধনসম্পত্তির প্রতি এতো আসক্ত হলো যে,নিজে রায়হানকে কাজের প্রেসারে রাখতো। বারবার বলতো,আরে আরো টাকা লাগবে। দেশের টপ বিজনেসম্যান হতে হবে। সবাই আমাকে এক নামে চিনবে। রায়হান চৌধুরীর বউ,রিতি চৌধুরী। কেমন যেন মানসিক রোগীর মত আচরণ করতো রিতি। এভাবেই বিবাহিত জীবনের পঁচিশটা বছর কাটিয়ে দিলো। আজও রিতি বদলালো না।
মানুষ তো সময়ে সব ভুলে যায়। কিন্তু রিতি কেন এমন অদ্ভুত হয়ে রইলো,সেটার উত্তর আজও জানেন না রায়হান সাহেব।
মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে,অশ্রু বিসর্জন করছিলেন রায়হান সাহেব। এখনও রুম থেকে বের হননি। তবে অনেকক্ষণ যাবত,রিতির কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে একটু চিন্তিত বোধ করলেন।
মেয়েকে সাথে নিয়েই বের হলেন তিনি। আজকে সবকিছুর একটা চূড়ান্ত বোঝাপড়া হবে। এতোদিন কিছু বলেন নি। কিন্তু আজকে একদম না।
রিতির রুমের দরজা খোলা। রুম থেকে চাপা কান্নার আওয়াজ আসছে। কিন্তু এখানে কে কান্না করবে?
হালকা একটু উঁকি দিতেই,রায়হান সাহেব স্তব্দ হয়ে গেলেন পুরো।
রিতি কাঁদছে!
উনি কি ঠিক দেখছেন?
গত দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে যার চোখে একবিন্দু অশ্রু দেখেননি,সে কাঁদছে।
কিন্তু কেন কাঁদছে?
মেয়ের জন্য, নাকি অন্যকিছু?
সোহানী পেছনে দাঁড়িয়েছিলো। ওর বাবাকে থেমে যেতে দেখে,সেও সামনে এগুলো। সেও যথারীতি স্তম্ভিত। মা নামক মানুষটাকে কোনদিন কাঁদতে দেখিনি যে সেও। সবসময় একটা অদ্ভুত শক্ত আবরণ দিয়ে,নিজের বাহিরটা ঢেকে রাখতো সে। সেই মা আজ কাঁদছে।
কারো কান্না দেখে খুশি হতে নেই। কিন্তু আজকের এই কান্না দেখে বাবা,মেয়ের খুশিই অনুভূত হচ্ছে। যে মানুষ কাঁদতে ভুলে যায়, সে অনুভূতিহীন হয়ে যায়। কান্না বোধহয় সকল অনুভূতিকে সচল রাখে।
কেউই রিতির কাছে গেলো না আর।
কেউ কাঁদলে, তাকে কাঁদতে দিতে হয়। কান্নায় বুকের জমাট বাঁধা পাথরটা গলে যায়। দীর্ঘ পঁচিশ বছরের জমানো কান্না, আজকে রিতি কাঁদুক। হাউমাউ করে কাঁদুক। কেঁদে নিজেকে স্বাভাবিক করুক। কাল না হয়,একটা নতুন ভোরের সূচনা হবে।
.
এই আপনার বিষয়টা কি হলো বলুন তো? হুঁট করে আমাকে রিকুয়েষ্ট করে বিয়েতে ফটোগ্রাফি করার জন্য নিয়ে গেলেন। তারপর সেখান থেকে নিজেই উধাও হয়ে গেলেন। পেশাদারিত্বের খাতিরে,আপনাকে নিষেধ করিনি। তার মানে এই নয়,এমন অদ্ভুত আচরণ করবেন। আর কি সব মানুষ জন বলাবলি করছিলো যে,বিয়ের কনে নাকি সুইসাইড করেছে? মানেটা কি এসবের? আপনি কি আমাকে জেনে বুঝে বিপদে ফেলতে গিয়েছিলেন?
রাস্তায় একটা টঙ দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে, চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে আরাদ বললো,
” ঐ মুহুর্তে কোন পরিচিত ফটোগ্রাফার খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তাই আপনার কথা মনে হলো। আপনিও তো দেখলাম বেশ ভালো ফটোগ্রাফার।”
আরাদ এটা আর বললোনা যে,অন্য ফটোগ্রাফার আনলে শুধু শুধু টাকাগুলো গচ্চা যেতো। অবশ্য ঐ মহিলার যে টাকা,তাতে আরো কিছু নষ্ট করাই উচিত ছিলো। কেমন সিআইডির মত প্রশ্ন শুরু করেছিলো। ভাগ্যিস লাশ নিতে চায়নি,নয়তো বিপদে পড়তে হতো। আরাদ একটা নাম্বারে ফোন দিলো। সাচী শুধু এতোটুকু শুনতে পেলো,আরাদ বলছে যে, বিয়ে কি করে ফেলেছিস? নাকি আমি আসা অবধি অপেক্ষা করেছিস?
ওপাশে কি বললো কে জানে। আরাদ সাচীকে উদ্দেশ্য করে বললো,” নিন চলুন।”
” এখন আবার কোথায় যাবো?”
” ফটোগ্রাফি করতে।”
” মানে? কিসের ফটোগ্রাফি আবার?”
” বিয়ের।”
” কার বিয়ের? ”
আপনার বা আমারতো অবশ্যই না। আর আমিতো বিয়েই করবোনা। একজন বিশুদ্ধ চিরকুমার হবো।
” কেন,ছ্যাকা খেয়েছিলেন নাকি? সাচী কথাটা বলে মুখ টিপে হাসতে লাগলো।”
” আরাদও হাসলো। চিরকুমার থাকা মানেই ছ্যাকা খাওয়া, জানতাম না তো। কিছু ধারণা, আমরা কখনোই বদলাতে পারিনা, তাই না?”
সাচী কি বলবে ভেবে পেলো না। প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য বললো,রাত হয়ে আসছে। এখন কোথায় যাবো,বলুন তো পরিষ্কার করে?”
” ভয় পাচ্ছেন আমাকে? আরাদ রহস্যজনক হাসি হেসে কথাটা বললো।”
জবাবে সাচীও মুচকি হেসে বললো,” একজন বিশুদ্ধ চিরকুমারকে ভয় কিসের?”
বিনিময়ে আরাদ মাথা চুলকে হাসলো। সাচীও সেই হাসির অনুকরণ করলো। তবে আরাদ কোথায় নিয়ে যেতে চাইছে,সেটা অবশ্য সাচীর বোধগম্য হলো না। আর এতোটা ভরসা করে একা সাথে যাওয়া ঠিক হচ্ছে কিনা,সেটাও সাচীকে বেশ ভাবাচ্ছে। তবে কোন এক অদ্ভুত কারনে সাচীর আরাদকে বিশ্বাস করতে মন চাইছে। তবে সেটা ঠিক কি,তা সাচীর জানা নেই।
সহসা আরাদ সাচীকে প্রশ্ন করলো, ” আপনি চা খান না?”
মুহুর্তেই সাচীর মুখটা বিষাদে ঢেকে গেলো। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠলো, ” না,খাই না। কখনো খেতামও না। কেউ একজন হুঁট করে এসে অভ্যাস পাল্টে দিয়েছিলো। সে চলে গেছে,সাথে অভ্যাসটাও নিয়ে গেছে। ”
সাচীর বিষন্ন মুখটা দেখে,আরাদের নিজেকে চরম অপরাধী মনে হচ্ছে। অবশ্য সেটা গত কয়েকমাস ধরেই মনে হয়। আর সেই যন্ত্রণা আরাদকে খুঁড়ে খুঁড়ে খাচ্ছে। সাচী অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। আরাদ সাচীকে বাইকে উঠতে বললো। পেটে বেল্ট লাগিয়েই গাড়ি চালাচ্ছে সে। সাচী উঠলো,তবে আরাদকে স্পর্শ করলোনা। সেটা বুঝতে পেরে আরাদ বললো,” গাড়ির পিছনের লোহার অংশে শক্ত করে ধরে রাখুন,তাহলে পড়বেন না। আমাকেও ধরতে হলো না। আর ক্যামেরা তো গলায়ই ঝুঁলানো।”
সাচী কিছুটা অবাক হলো। তবে সেটা প্রকাশ করলোনা। এই ছেলেটাকে বুঝা খুব মুশকিল। ভালোও মনে হয় না,মন্দও ভাবা যায় না। বিশ্বাস হতে চায় না,আবার অবিশ্বাস করতেও মন চায় না। পুরোই একটা রহস্য লাগে। যে রহস্য ভেদ করতে হলে,তার ভেতরটা জানতে হবে। সব মানুষেরই ভেতরে একান্ত কিছু রহস্য থাকে। যে রহস্য সহজে কেউ ধরতে পারেনা। তার জন্য ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। কিন্তু সাচী ওর রহস্য জেনে কি করবে? আর এতোকিছু কেনইবা ভাবছে সে?
#চলবে…