গল্পের নামঃ #প্রণয় #পর্বসংখ্যা_২৩ সমাপ্ত

0
1089

গল্পের নামঃ #প্রণয়
#পর্বসংখ্যা_২৩
লেখনীতেঃ #ফারিহা_জান্নাত

শুক্লপক্ষের চাঁদটা আকাশে মেঘের আড়ালে উঁকি দিচ্ছে।রাতের পরিবেশে সবকিছু নিস্তব্ধতায় ছেয়ে আছে।গাছেগুলো তুমুল বাতাসে একটি আরেকটির উপর লুটিয়ে পড়ছে।বাতাসের বেগ দেখে মনে হচ্ছে ঝড় আসতে চলেছে,তুমুল ঝড়!সিলেটে এই রাতের বেলা হালকা ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়া। বাংলো থেকে বাহিরের পরিবেশটা বেশ সুন্দরই লাগছে দেখতে।
বারান্দায় রেলিং ধরে খোলা চুলে দাঁড়িয়ে আছে পৃথিশা।নিজের অতীত-বর্তমানের হিসাব মিলানোর চেষ্টা করছে।এইযে তার পথচলা, প্রথম থেকে একা একা সবার সাথে যুদ্ধ করে সেই যুদ্ধে সঙ্গী পেলো মারুফকে।আবারো কিছুদিন পর তাকে জীবনযুদ্ধে একা করে রেখে হারিয়ে গেলো। কিন্তু একেবারে ছেড়ে যায়নি,আবারো এসে হাল ধরেছে তার সাথে।

পৃথিশার পাশে এসে দাঁড়ালো মারুফ।চাঁদের আলোয় পৃথিশার মুখটা ঝলমলে লাগছে। পৃথিশার বেরিয়ে আসা চুলগুলো কানের পাশে গুঁজে দিয়ে বলল, ” ঘুমাবে না?এত রাত ভরে পিচ্চি মাথায় কি এত চিন্তা-ভাবনা করছো?”
পৃথিশা তার কাঁধে মাথা রেখে বলল, “আমাদের কথাই ভাবছিলাম।এই যে আমরা এক হবো সেটা কখনো ভাবিনি।চারপাশে যখন শুনতাম একেকটা বিচ্ছেদের গল্প বারবার মনে সন্দেহ হতো।আপনার উপর করা বিশ্বাসে ভাঙ্গন ধরতে চাইতো।পরে আবার নতুন করে বাঁচার প্রেরণা খুঁজতাম।আপনার বলা প্রতিটি কথায় আশা পেতাম।বিশ্বাস করতাম একদিন সবটা সত্যি হবে।আমার কল্পনায় বুঁনা স্বপ্নগুলো বাস্তবে প্রতিফলিত হবে।এই যে দেখুন হয়েছে।আমাদের একটা “প্রণয়” ঘটেছে।সেই প্রণয়ে আমি আর আপনি বাঁধা,সারাজীবনের মতো!

মারুফ মৃদু হাসলো পৃথিশার কথা শুনেছে।তার ললাটে ওষ্ঠদ্বয় ছুঁয়িয়ে বললো, “অনেক কষ্ট দিয়েছি তাই না?”
পৃথিশা মাথা নেড়ে হেসে বললো, “এসব আমাদের ভাগ্যে ছিলো।যা হয় ভালোর জন্যই হয়।হয়তো বা এসব হওয়ার পেছনে কোন না কোন কারন ছিলো।আর একটা কথা শুনেছেন নিশ্চয়,মানুষ আঘাত পেতে পেতে শক্ত হয়।আমার এসব আঘাত পাওয়া জরুরি ছিলো।এসব আমাকে শক্ত করেছে,এখন আমি সহজে ভেঙে পড়ি না।”
মারুফ আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, “আমি না থাকলেও তোমার কোন অসুবিধা হবে না তাইনা পৃথিরানী!”

মূহুর্তেই পৃথিশার মুখশ্রীর পরিবর্তন হয়ে গেলো।ছলছল চোখে মারুফের দিকে তাকিয়ে বললো, “আপনি আমার ভালো থাকাটা বুঝলেন না। আপনি এখনো আগের মতোই রইলেন।”
মারুফ পৃথিশার চোখ থেকে খসে পড়া পানির ফোঁটাটা মুছে সযত্নে মুছিয়ে দিলো।
তার গালে হাত দিয়ে কপালে কপাল ঠিকিয়ে বলল, “ভালোবাসি পৃথিরানী!খুব বেশি ভালোবাসি।আমি হয়তো সবার মতো আমার ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারি না।তবে একটা কথাই বলল, ‘আমার সবকিছু তোমায় ঘিরে,শুধু তোমায়।’

আবেশে,সুখে চোখ বেয়ে অশ্রুকণা ঝড়ে পড়লো পৃথিশার।প্রথমবারের মতো মারুফের মুখে ভালোবাসার কথা শুনে নিজের অনুভূতি আটকে রাখতে পারলো না।
ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে মারুফের বুকে মুখ গুঁজে বলল, ” আমিও বাসি।খুব ভালোবাসি!”

_____________

নিজের ছয়মাসের উঁচু পেটটা নিয়ে দুপুরে ছাদের এক কোণায় বসে আছে পৃথিশা।তার মূল লক্ষ্য সে এখন এই ছাদে রোদে শুঁকাতে দেওয়া আচার চুরি করা।পা টিপে টিপে জলপাইয়ের এর আচারের বোয়মটা নিয়ে ছাদে থাকা দোলনায় বসে খেতে শুরু করলো। অর্ধেক বোয়ম শেষ হয়ে যাওয়ার পর তৃপ্তিতে ঢেঁকুড় তুলে উপরে তাকাতেই দেখলো মারুফ রাগী চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
ঠোঁট উল্টিয়ে নিষ্পাপ বাচ্চাদের মতো অভিব্যক্তি করলো সে। তার মুখ দেখে হেসে দিলো মারুফ।

আচারের বোয়মটা পৃথিশার হাত থেকে নিয়ে রাগী স্বরে বলল, “তোমাকে না কতবার বলেছি এভাবে আচার খাবে না।এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না এই সময়ে।”
হাতে লেগে থাকা আচারগুলো খেয়ে বললো, “কিন্তু আমার তো এটাই ভালো লাগে।”
মারুফ দীর্ঘশ্বাস ফেললো।পৃথিশাকে ধরে সাবধানে উঠিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামিয়ে ধরে আনলো।
গরমে পৃথিশার মুখ লাল হয়ে গিয়েছে। জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছে ও।

মারুফ এসি ছেড়ে পৃথিশার দিকে তাকিয়ে রাগী স্বরে বলল, “বলেছিলাম না তোমার খারাপ লাগবে।তাও কেন কথা না শুনে ছাদে যাও বলতো?”
পৃথিশা কথা না বলে মারুফের পায়ে মাথা রাখলো।তার কোমড় জড়িয়ে ধরে বলল, “ঘুম পেয়েছে আমার।”
ক্ষণিজের জন্য মারুফ চুপ থাকলেও আবার চেঁচামেচি জুড়ে দিয়ে বললো, “এ্যাই পৃথি!এই ভরদুপুরে না খেয়ে কেউ ঘুমায়?একগাদা আচার খেয়ে পেট ভরে মহারানী এখন ঘুমাচ্ছে।আমার একটা কথাও শুনে না মেয়েটা।”

সময়ের সাথে অনেক কিছুই বদলেছে।পৃথিশার দাদী এখন বয়সের ভাড়ে বিছানায় পড়ে গিয়েছেন।পৃথিশার ছোট চাচীরা আলাদা হয়ে গিয়েছে। পৃথিশার বড় চাচী আর তার বাবাই এখন সংসার চালায়।মাঝে মাঝে তার ছোট চাচা এখানে বেড়াতে এসে ঘুরে-ফিরে যান।
পৃথিশার সাথে তার ছোট চাচী আর দাদীর সম্পর্ক এখনো ঠিক হয়নি।পৃথিশাকে এখনো তার ছোট চাচী পছন্দ করে না।সুযোগ পেলে কথা শুনাতে ছাড়ে না কিন্তু পৃথিশার সরাসরি কথার জবাবে পরে আবার ঠিকই চুপসে যান।পৃথিশার দাদী এখন আগের মতো কথা বলতে পারেন না।তবে পৃথিশা তার সাথে প্রতিদিনই দেখা করে যায়।তার যাবতীয় ঔষুধপত্র কিনা,ডাক্তার দেখানো সব পৃথিশাই করে।প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর অবশ্য এই ভারটা পৃথিশার বাবার উপর পড়েছে।

এই হলো পৃথিশা-মারুফের সোনার সংসার।তাদের প্রণয়ের ফল খুব তাড়াতাড়িই আসতে চলেছে।নিজেদের ভালোবাসায় আজ তারা সুখী।

_____সমাপ্ত________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here