বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ #পর্ব_১৬

0
1116

#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_১৬
#নবনী_নীলা

“তুমি যতোই পালানোর চেষ্টা করো না কেনো, কোনো লাভ নেই এতো সহজে আমি তোমায় ছাড়ছি না যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি সবটা জানছি।”, অফিসে যাবার আগে আবার রুহিকে সাবধান করে গেলো আহান। রুহি সকাল থেকে নানা ভাবে পালিয়ে গেছে কখনো আবার পেট ব্যাথার নাটকও করেছে কিন্তু মনে হচ্ছে আজ আহান কিছুতেই তাকে ছাড়বে না। রুহি ঘরে পায়চারি শুরু করেছে। তাকে যে করেই হোক একটা বুদ্ধি বের করতে হবে। হাঁটতে হাঁটতে হটাৎ নানুর ফোন এলো। ফোন স্ক্রিনে নানু লেখাটা দেখে রুহির মাথায় দারুন এক বুদ্ধি এলো।
রুহি নানুর সাথে কথা বলা শেষ করে, দিদার কাছে এলো। দিদা ঘরেই ছিলেন। তারপর দরজায় নক করে রুহি ভিতরে চলে গেলো।

রুহিকে দেখে দিদা হাশি মুখে নিজের পাশে এসে বসতে বললেন। রুহি সেটাই করলো। দিদার সাথে কিছুক্ষণ গল্প করে মুল কথায় এলো রুহি।
” দিদা, আমি একটু নানুকে গিয়ে দেখে আসি।”, কোমল কন্ঠে বললো রুহি।

” আহান কি রাজি হয়েছে যেতে।”, আগ্রহী হয়ে বললেন দিদা।

” নাহ্ ওনাকে তো অনেকবার বলেছি কখনোই রাজি হয় না। আজ এই কাজ তো কাল সে কাজ। বলছিলাম আমি একাই যাই। কতদিন যাই না খুব মনে পরছে।”, মন খারাপ করে বললো রুহি।

” আহ এই ছেলেটা বড্ড জেদী। ঠিক আছে তুমি মন খারাপ করো না আমি ড্রাইভারকে বলে দিচ্ছি কালকে তোমাকে দিয়ে আসবে।”, রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন দিদা।
কিন্তু কালকে গেলে হবে না আজকেই তাকে যেতে হবে।
না হলে রাতে এসেই হাজারটা প্রশ্ন করবে আহান।

” দিদা কালকে না আজ বিকেলে যাই। প্লীজ”, রুহির অনুরোধ দিদা ফেলতে পারেনি তাই অনুমতি দিয়ে দিলেন। এবার রুহির প্রথম কাজ তাড়াতাড়ি ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পরে। এ কয়েকদিন নিশ্চই কুম্ভকর্ণটা ভুলে যাবে এসব। ভুলে গেলেই বাঁচি।

রুহি বিকেলের দিকে রওনা হয়ে গেল। ড্রাইভার তাকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিলো। রুহির নানা এই বাড়িটা বানিয়েছে। চারতলা বাড়ির চারপাশে বড়ো বড়ো গাছ। শুধু এই বাড়িটার চারপাশ গাছে ভরা। বাউন্ডারির ভীতরে বলতে গেলে সব ধরনেরই গাছ লাগিয়েছে রুহির নানা। ছোটো বেলা হতে এই বাড়িতেই তার বেড়ে ওঠা। এ বাড়ির ছাদ, উঠান সব জুড়ে আছে রুহির ছেলেবেলা। আজ কতদিন পর সে এই বাড়িতে এসেছে। বাড়িতে কোনো দারোয়ান নেই, তবে নানুর কিছু পোষা কুকুর আছে এরা দারায়ান থেকেও বেশি ভয়ানক। তবে চেনা জানা মানুষদের ওরা কিছু বলে না। দুটোই ছেলে কুকুর একটার নাম মিলো আরেকটা রেম্বো। দুটো নামই নানার রাখা।

রুহি বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই নানাকে গাছে পানি দিতে দেখলো। তারপর নানার পিছনে গিয়ে নানা বলে উঠতেই আসাদুজ্জামান সাহেব চমকে উঠলেন কারণ ফোন করে রুহি কাউকে বলেনি সে আসবে।

_____

আহান রাতে ফেরার পর কোথাও রুহিকে দেখছে না। মেয়েটা হটাৎ করে উধাও হয়ে গেলো কোথায়। সব দেখা শেষে একবার কিচেনে এসেও দেখে গেলো নেই কোথাও নেই। কয়েকবার রূমে গিয়ে ডাকলো রুহিকে কোনো সাড়া শব্দ নেই। বাধ্য হয়ে নিচে নেমে ভাবিকে জিজ্ঞেস করলো,” ভাবি রুহি কোথায়?”

” তোমার বউ কোথায় সেটা আমাকে জিজ্ঞেস করছো কেনো?”, রসিকতা করে বললো ভাবি।

“ভাবি রসিকতা করো না। বলো।”, সিরিয়াস হয়ে বললো আহান।

” বাহ্ ভালোই প্রেম চলছে দেখছি বউকে না দেখে থাকতেই পারো না।”, ভাবির কথায় আহান নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

” আরে রাগ কোরলা নাকি? আচ্ছা বলছি রুহি নানা বাড়িতে গেছে ওর মন খারাপ করছিলো তাই দিদা ঘুরে আসতে বলেছে।” ভাবির কথা শুনে আহানের মুখ থমথমে হয়ে গেলো।

কিছু না বলে রুহিকে কল করতে করতে আহান উপরে উঠে গেলো। আহান বার বার কল করছে কিন্তু রুহি ফোন ধরছে না। আহানের মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছে। আহান আবারো কল করতে লাগলো। এতো বার কল করার পরও রুহি ফোন ধরছে না। আহান বিছানায় গা হেলিয়ে শুয়ে পড়লো। চারপাশটা কেমন ফাকা ফাকা হয়ে আছে। কোনো এক শুন্যতায় আহানের বুকে ভার হয়ে আছে। প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে বলে পালিয়েছে। ভেবেই আহানের রাগ লাগছে। এই মুহুর্তে সেখানে গিয়ে তুলে নিয়ে আসলে একটা উচিৎ শিক্ষা দেওয়া যেতো।
সবাইকে অবাক করে দিয়ে এই বৃষ্টির মধ্যে দিয়ে আহান গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে গেলো। আহান রহমান কি করতে পারে সেটা তোমার ধারণার বাহিরে মিস রুহি।

রুহি ছাদে গিয়েছিলো রুমির সাথে। নুড়ি ওদের ভাড়াটিয়ার মেয়ে কিন্তু দুজনের মাঝে খুবই মিল। অনেকদিন পর দেখা হওয়ায় দুজনেই গল্প করতে ছাদে উঠেছে।

” তুই দেখি বিয়ে করে উধাও হয়ে গেছিস। সুন্দর জামাই পাইয়া সবাইরে ভুইল্লা গেলা।”, বাঁকা হাসি দিয়ে বললো নুড়ি।

” আমি এতো দিন পর আসছি কেউ আমার কথা জানতে চায় না সবাই খালি জামাই জামাই করতেছিস।”, বিরক্তি প্রকাশ করে বললো রুহি।

” আচ্ছা ঠিক আছে আর করবো না। কিন্তু একা এলি কেনো? বরকে নিয়ে এলি না যে।”,

” আমার বর মহা ব্যাস্ত মানুষ তার সময় নেই। শুনে নিয়েছিস শান্তি হয়েছে এবার?”

” আচ্ছা রাগ করিস না। শুন এসেছিস ভালো কথা বাহিরে বেশি ঘোরাঘুরি করিস না। নিবিড় কিন্তু পাগলের মতো তোকে খুঁজছে পেলেই তুলে নিয়ে যাবে।”,

” ওকে আমি মেরে সিধে করে দিবো। সেদিনের মারের কথা ভুলে গেছে নাকি। এতোদিন দিন তো মাথা তুলে আমার দিকে তাকাতো না। ঐ বেয়াদবটার জন্য নানী জোর করে আমাকে বিয়ে দিয়ে দিলো। হাতের কাছে আসুক একবার।”

” তোর বিয়ের পর থেকেই পাগলামি শুরু করেছে। তোর রাজপুত্রর হাতের মাইর খেয়ে তো সোজা হয়ে গেছিলো। ভালো কথা তুই কি এখনও মনে রাখছিস তাকে?”

” এতো সহজ না সবটা ভোলা। সেদিন রাতে যদি সেই লোকটা আমাকে না বাচাতো, আজ হয়তো এই রুহির অস্তিত্ব থাকতো না। “, বলে নিরবে একটা নিশ্বাস ফেললো রুহি।

” কিন্তু চোখ দেখেই প্রেমে পড়ে গেলি। আচ্ছা তখন না হয় ব্যাপারটা অন্য ছিলো। এখন তোর বিয়ে হয়েগেছে এখনো তুই ভুলতে পারলি না।”

” কিছু মানুষ চোখের পলকেই মনের মধ্যে ছাপ ফেলে দিতে পারে। আর কেউ সারা জীবনেও পারে না।”

” তা রুহি তোর বর জানলে কি হবে বলতো?”, নুড়ির কথায় রুহির আহানের কথা মাথায় এলো। এ কয়দিন না হয় এখানে কাটিয়ে দিবে কিন্তু এরপর। ভাবতেই ভয় লাগছে। যে বদমেজাজি লোক এতো সহজে তাকে ছাড়বে না।

” ধুর আমাকে টেনশন দিস না তো।”, বলে দুজনে ছাদ থেকে নামতে গেলো। নামতে গিয়ে রুহি পা পিছলে পড়লো। জামা পুরোটা গেলো নষ্ট হয়ে তার ওপর হাতের কনুই ছিলে গেছে।
পরে গিয়ে রুহি আহহ করে আতনাদ করে উঠলো। নুড়ি রুহিকে তুলে দার করলো তারপর ঘরে নিয়ে এলো।
” তুই একটু দেখে শুনে হাটবি না?”, রুহি কে নিয়ে যেতে যেতে বলল নুড়ি।

” চুপ কর, এতো জ্ঞান দিবি না। নিজে কোনোদিন পড়ে যাসনি মনে হয়।”, বলতে বলতে ঘরে ঢুকলো দুজনে।

ইজি চেয়ারে ছোট মামা চোখ বন্ধ করে একটা কবিতার বই বুকের উপর রেখে শুয়ে আছেন। সন্ধ্যা বেলায় তার কবিতা পড়তে পড়তে ইজি চেয়ারে শুয়ে থাকার অভ্যাস। রুহির গলা শুনে তিনি চোখ খুললেন, মাথায় তুলে রাখা চশমাটা চোখে দিয়ে ভালো করে তাকালেন। রুহির অবস্থা দেখে তিনি ভ্রু কুঁচকে বললেন,” কিরে সন্ধ্যা বেলায় কোথায় এমন নাকানি চুবানি খেয়ে এলি?” সব সময় রসিকতা করা এনার অভ্যাস বটে।

রুহি আড় চোখে মামার দিকে তাকালো, এসব তার কাছে নতুন কিছু না। তিনি হসপিটালে গিয়ে রোগীদের সাথেও রসিকতা করেন।

” যা যা, বস্ত্র লইয়া শৌচাগারে যা। যা যা তোর নানি আসার আগে শৌচাগারে যা…..”, এটা মামার ইনস্ট্যান্ট বানানো কবিতা। যদিও মামা যে কবিতা বলছে সেটা আগে থেকে না বললে কেউ বুঝে না। এটাই তার প্রতিভা। এইজন্যই এতো চেষ্টার পরও কবি হতে না পারায় কুমার রয়ে গেলেন।

রুহি নানীকে জন্মের মতন ভয় পায় তাই দেরী না করে জামা নিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকে গেলো। নানী সবটাই দেখেছে তবে আজ উনি বকবেন না কারণ অনেক দিন পর মেয়েটা এসেছে। আজ বকাবকি করে মেয়েটার মন খারাপ করে দেওয়ার দরকার নেই।

রুহি গোসল সেরে বেড়িয়ে দেখে কারেন্ট চলে গেছে। তোয়ালেটা চুলে রেখে, ঘরে সে মোমবাতি জ্বালিয়ে দিলো। চার্জার লাইট ছিলো তবে মোমের আলো রুহির পছন্দ। নানা নানির ঘরে লাইটটা রেখে সারা ঘরে মোমবাতি জ্বালিয়ে দিলো রুহি। আকাশ মেঘলা বৃষ্টি হবে মনে হচ্ছে। বাতাস বইছে আর মাঝে হটাৎ দরজায় টোকা পড়লো। রুহি সবে মাত্র মাথার তোয়ালেটা খুলে রাখলো এমন সময়ে দরজায় টোকা পড়ায় রুহি একটা মোম নিয়ে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে। প্রচন্ড বাতাসে দরজা খোলার সাথে সাথে মোমবাতি নিভে যায়। কাকতালীয় ভাবে ঠিক সেই সময়ে কারেন্ট চলে আসে। হটাৎ তীব্র আলোয় আহান চোখ বন্ধ করে ফেলে তারপর চোখ খুলতেই কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে দেখে বুকটা হালকা হয়ে গেছে আহানের। রুহি দুই হাত দিয়ে চোখ ধরে আছে। বাতাসে ভেজা চুলগুলো উরছে। এমন অপরূপ দৃশ্য আহান এর আগে কখনো দেখেনি। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে আহান। শেষে এগিয়ে গিয়ে রুহির কানের কাছে বললো,” আমায় দেখে বুঝি লজ্জা পেয়েছো?”
চেনা কন্ঠে রুহির বুক কেপে উঠলো। চোখ খুলে আহানকে দেখে দু পা পিছিয়ে যেতেই পরে যেতে নিলো রুহি। আহান কোমর জড়িয়ে ধরে বললো,” বলেছিলাম না পালিয়ে কোথাও যেতে পারবে না। সেই আমার বাহুতে এসেই পড়তে হলো।”

[ চলবে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here