বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ #পর্ব_১৫ ( শেষ অংশ)

0
1132

#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_১৫ ( শেষ অংশ)
#নবনী_নীলা

আহান রুহিকে বিছানায় শুইয়ে দিলো। রুহি আহানের গলা থেকে হাত নামিয়ে নিয়ে বিছানায় গড়াগড়ি শুরু করেছে। আহান নীল রঙের ব্লেজারটা একপাশে রাখলো। তারপর হাতের ঘড়ি খুলছিলো। রুহি গড়াগড়ি বন্ধ করে চিৎ হয়ে শুয়ে আহানের দিকে তাকিয়ে আছে। কালো শার্ট আর নীল রঙের প্যান্টে তাকে অনেক সুন্দর লাগছে। আহান ঘড়িটা খুলে রেখে, রিমোট দিয়ে এসি বাড়িয়ে দিলো।
তারপর রুহির দিকে তাকালো, আপাদত সে চুপ চাপ হয়ে আছে। আহান শার্টের হাতা ভাজ করে কিছুটা উপরে তুলতে তুলতে রুহিকে দেখছে। রুহির গাল দুটো লাল হয়ে আছে। হটাৎ এমন শান্ত হয়ে আছে কেনো কে জানে।
শার্টের হাতা উপরে তুলে আহান রুহিকে ধরে বসালো। রুহি আহানের বুকে হেলান দিয়ে বসলো। রুহির গায়ের জ্যাকেটটা খুলে একপাশে রেখে দিলো আহান। এটা পরে ঘুমিয়ে গেলে, তখন অসস্তি হতে পারে। জ্যাকেটের ভিতরে ক্রপ টপ থাকায় আহান এসি আরো বাড়িয়ে দিয়ে রুহির কোমরে পাশটায় পাতলা একটা কম্বল দিয়ে রাখল। রুহি আহানের বুকে হেলান দিয়ে আছে। আহান রুহিকে বালিশে শুইয়ে দিতে চাইলো কিন্ত রুহি সেখানে যাবে না। আহানের বুকে মাথা রেখে বসে আছে।

” তুমি কি সারারাত এইভাবে বসে থাকবে?”, রুহির দিকে তাকিয়ে বললো আহান। রুহি আহানের কোলের ভিতরে ঢুকে বসে পড়লো তারপর সামনে থাকা বাল্বটার দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বললো,” দেখুন কি সুন্দর চাঁদ!”
যেহেতু ঘোরের সব জানালা বন্ধ তাই ভ্রু কুঁচকে সামনে তাকালো। পুরো মাথা গেছে, আগে যাও একটু ছিলো এসব খেলে অতটুকুও কাজ করে না।
” রুহি ওটা বাল্ব।”, শান্ত গলায় বললো আহান।
” নাহ্ ওটা চাঁদ আপনি ভালো করে দেখুন।”, বাল্ববের দিকে আবার আঙ্গুল দেখিয়ে বলল রুহি। বোঝাই যাচ্ছে ওটাকে চাঁদ না বলা পর্যন্ত এ মেয়ে শান্ত হচ্ছে না। আহান একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো,” হুম্ ওটাই চাঁদ।”

” দেখলেন তো আমি বলেছিলাম ওইটা চাঁদ, আপনিই বিশ্বাস করেন নি। এবার বিশ্বাস হলো তো।”, মুখে জড়তা নিয়ে কথাটা শেষ করলো রুহি। রুহির চুলগুলো মুখের সামনে এসে পড়েছে। আহান সেগুলো পিছনে নিতে ব্যাস্ত। রুহি এবার আঙ্গুল দিয়ে টেবিল ল্যাম্পটাকে দেখিয়ে বলল,” ওই..টা ও..ইটা সূর্য।”
আহান আড় চোখে টেবিল ল্যাম্পটার দিকে তাকালো। রুহির নিজের মতো কথা বলে যাচ্ছে।

” ওটা হ হলো চাঁদ, এইটা কি জানি? হ্যা সূর্য। আর আম….রা আছি মঙ্গলগ্রহে।”, বোলেই খিল খিল করে হেসে উঠলো রুহি।

” হুম আর তুমি আমি এলিয়েন।”, বিরক্তি নিয়ে বললো আহান। আহানের কথা শুনে রুহি হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে।
হটাৎ হাসি থামিয়ে রুহি বিছানায় উঠে দাড়ালো। আহান বুঝতেই পারছেনা এ মেয়ে কি করতে চাইছে।

” রুহি উঠে দাঁড়িয়েছ কেনো?”,

” আচ্ছা আমরা যেহেতু স্পেসে আছি তার মানে আমি হাওয়ায় ভাসতে পারবো।”, উৎসক চোখে আহানের দিকে তাকিয়ে বললো রুহি। আহান ভেবেই পাচ্ছে না সে কি বলবে।

” রুহি শুনো আমরা না কোনো মগলগ্রহে আছি না স্পেসে, আমরা পৃথিবীতে আছি।”, রুহির হাত ধরে বসানোর চেষ্টা করে বললো আহান।

” আপনি আবারও আমায় অবিশ্বাস করছেন। আমি এক্ষুনি এখান থেকে লাফ দিবো দেখবেন আমার কিছু হবে না।”, বলে সত্যি সত্যি রুহি লাফ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আহান উপায় না পেয়ে রুহির কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের কোলে এনে বসিয়ে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে রাখলো।

” সমস্যা কি তোমার? চুপ করে বসে থাকো। এটা নাকি স্পেস, এইখান থেকে একবার পড়লে বুঝতে মজা।”, রুহিকে একটু বকা দিলো আহান। রুহি রেগে গেলো, গাল ফুলিয়ে আছে। তারপর ঘাড় ঘুরিয়ে আহানের গলায় কামড় বসিয়ে দিলো। আহান ব্যাথায় চোখ বন্ধ করে ফেললো। বেশ জোরেই কামড় বসিয়ে দিয়েছে রুহি। কামড় দিয়ে রাগ কমিয়ে সরে এলো রুহি। আহান ব্যাথা আস্তে করে উফফ শব্দ করলো। তারপর কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইলো আহান। আহানের গলার দিকে তাঁকিয়ে রুহির খারাপ লাগছে এখন। আহান চুপ করে আছে দেখে আরো খারাপ লাগছে তার, রুহি বাচ্চাদের মত কাদো কাদো গলায় বললো,” সরি।”
আহান রুহির দিকে তাকালো। রুহির কর্মকাণ্ডে সে বাকরুদ্ধ। কি বলবে সে নিজেও জানে না। আহান বিস্ময় নিয়ে রুহির দিকে তাকিয়ে আছে। রুহি উঠে আহানের গলা জড়িয়ে ধরলো। আহানের বিস্ময়ের মাত্রা বেড়েই চলেছে। তারপর রুহিকে জড়িয়ে ধরে হেসে ফেললো আহান। রুহি আহানের সামনে এসে আবারো বললো,” সরি”। আহান ঠোঁটে এক চিলতে হাসি দিয়ে রুহির দিকে তাকিয়ে আছে। তারপর আহান একটু বাকা হেসে বললো,” ব্যাথা দিলে শুধু সরি বললে হয় না।”

রুহি মুখটা কালো হয়ে গেলো তারপর আহানের দিকে তাকিয়ে বললো,” কি করতে হয়?”

” আদর করে দিতে হয়।”, আহান মজা করে কথাটা বললেও সে মুহূর্তে মজা বোঝার ক্ষমতা রুহির নেই। আহানের কথাটা সত্যি মনে করে রুহি এগিয়ে এসে আহানের গালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। আহান বিস্ময়ের চরম মাত্রায় পৌঁছে গেলো। রুহি ঘুমে আচ্ছন্ন হওয়া চোখ গুলো নিয়ে আহানের দিকে তাকিয়ে আছে। শেষমেষ ঘুমে পরে যেতে নিলে আহান ধরে ফেলে। এর মাঝেই দরজায় নক পড়লো। আহান রুহিকে ঠিক করে শুইয়ে দিলো। বার বার খালি দরজায় টোকা পরছে। এ সময় আবার কে এলো। আহান এগিয়ে গিয়ে এক হাত দরজায় অন্যহাত দেওয়ালে ঠেকিয়ে দাড়ালো। আরাফ দাড়িয়ে আছে।
“হুট করে চলে এসেছিস যে? সব ঠিক আছে?”, বলে আহানের দিকে তাকাতেই ঠোঁট চেপে হাসলো আরাফ।
” হোয়াট সো ফানি?”, একটা ভ্রু তুলে বললো আহান।

” না না কিছু না, এখণ আমি সবটা বুঝেছি। অ্যাম সরি অ্যাগেইন। হুম্ সো মাচ লাভ ইন দা এয়ার।”

আরাফের কথায় আহান বিরক্ত হয়ে বলল,” কি সমস্যা?”

” নাহ্ কোনো সমস্যা নেই আমি চলে যাচ্ছি। বাই দা ওয়ে গলার দাগ জানি না কি করবি তবে গালেরটা মুছে বের হোস।”, বোলে মূচকি হেসে চলে গেলো।

আহান বিরক্তি নিয়ে দরজাটা বন্ধ করলো তারপর আয়নার দিকে তাকাতেই তার ডান গালে লিপস্টিকের দাগ স্পষ্ট। আচ্ছা এই জন্য আরাফ এমন করছিলো। আহান রুহির দিকে তাকালো শান্তিতে ঘুমাচ্ছে সে। নড়াচড়ায় রুহির টপ টা উপরে উঠে গেছে। আহান এগিয়ে এসে দ্বিধা ছাড়াই টপটা নামিয়ে দিয়ে রুহির গায়ে কম্বল জড়িয়ে দিলো। তারপর ফ্রেশ হয়ে এসে রুহির পাশে শুয়ে পড়লো।

সকালে ঘুম থেকে উঠে বরাবরের মতই রুহির চোখ ছানাবড়া হয়ে গেছে। কিন্তু এবারের দৃশ্যটা আলাদা। আহান রুহিকে জড়িয়ে রুহির ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে ঘুমিয়ে আছে। বিষয়টা বুঝে উঠতে রুহির কিছুক্ষণ সময় লাগলো। তারপর আহানের দিকে ফিরতে গেলেই আহান নড়ে চড়ে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আহানের নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে রুহির গলায় আর ঘাড়ে। বুকের ভিতরটা ধুক ধুক করছে রুহির। মাথার ঝিম ঝিম থেকেই অনেকটা আন্দাজ করতে পারছে রুহি।

একটু সাহস করে আহানের দিকে তাকালো রুহি। আহানের গলায় চোখ পড়তেই দুইহাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলো রুহি। এর মাঝেই আহানের চোখ খুললো। আহান রুহির বিস্মিত চেহারার দিকে তাকালো। তারপর সবটা বুঝলো। দুজনেই চুপ করে আছে কিছুক্ষণ।আহান জানে রুহির কিছুই মনে নেই তাও মজা করে বললো,” তুমি কি জানো ওটা কি?” বাল্বটা দেখিয়ে বললো আহান।
রুহি ভ্রু কুঁচকে আহানের দিকে তাকালো। এমনেই তার গলা শুকিয়ে গেছে তার উপর সকাল সকাল রসিকতা শুরু করেছে এই লোকটা। তার সাথেই কেনো এসব হয়। রুহি কাদো কাদো চেহারায় বাল্বের দিকে তাকিয়ে আছে।
আহান রুহির নিরবতা দেখে নিজে থেকেই বললো,” চিনতে পারছো না ওটা চাঁদ।”
রুহির আহানের উপর প্রচুর বিরক্ত লাগছে। রসিকতা করার জায়গা পায় না। রাগে ফুলে যাচ্ছে রুহি।
” ওটা দেখছো না ওটা ল্যাম্প না ওটা সূর্য।”, আহানের কথা শুনে রুহির মেজাজ পুরো বিগড়ে গেলো। রুহি উঠে বসে রেগে বলল,” আপনি আমার সাথে রসিকতা করছেন? এমনেই চিন্তায় মরে যাচ্ছি।”

আহান উঠে বসলো,” কাল রাতের কথা চিন্তা করছো? আরে আমি হেল্প করছি তোমায়।” রুহি ভ্রু কুঁচকে আহানের দিকে তাকিয়ে রইল।

” কাল রাতে ওটা চাঁদ ছিলো। এটা সূর্য ছিলো, আর আমার রুমটা স্পেস ছিলো। তুমি আর আমি এলিয়েন ছিলাম। মনে পরছে না তোমার?”, রুহি হতবাক হয়ে আহানের দিকে তাকিয়ে আছে। পাগল হয়ে গেছে নাকি লোকটা।

” কিছু মনে পড়ছে না? আচ্ছা আর এটা?”, বলে নিজের গলার দিকে ইশারা করলো। সঙ্গে সঙ্গে রুহির পিলে চমকে উঠলো।

” হতেই পারে না আমি এটা করতে পারি না। আপনি মিথ্যে বলছেন”, গর গর করে চেঁচিয়ে বলে ঠোঁট ভিজিয়ে নিলো রুহি।

” এটাই বিশ্বাস হচ্ছে না পরের টা কিভাবে বিশ্বাস করবে।”, রুহিকে ভয় দেখিয়ে বললো আহান।

রুহির আত্মাটা যেনো বেরিয়ে আসার উপক্রম হয়েছে। রুহি উঠে নিচে নেমে দাড়িয়ে পড়লো। তারপর বললো,” আমি কিছু শুনতে চাই না। যা হওয়ার হয়ে গেছে ভুলে যান। মনে করুণ আমাকে আপনি চিনেনই না”, কাপা কাপা গলায় বললো রুহি। আহানের প্রতি প্রথম থেকেই একটা কারণে দুর্বলতা ছিলো রুহির। কিন্তু সে কখনই সেটা প্রকাশ করেনি। একজনের সাথে মিল পেয়েছে রুহি কিন্তু ঘোরের মধ্যে কি করেছে বা কি বলেছে সেটা জানতেই ভয় লাগছে। নিশ্চই ভয়াবহ কিছু করেছে তাই রুহি শুনতে চাচ্ছে না।

” এতো সহজে কিভাবে ভুলে যাই? চাইলেও কি ভোলা যায়।”, বোলেই নেমে এলো আহান। রুহি ঘাড়ের পিছনে হাত ডলতে লাগলো। তারপর সাহস করে বললো,” আপনি কি করেছেন? আপনি যে আমায় ওভাবে ধরে ছিলেন। ” নার্ভাস হয়ে বললো রুহি।

” সো হোয়াট? এট লাস্ট আমি তোমার মতো অস্বীকার করছি না।”, রুহীর কাছে এগিয়ে এসে বলল আহান। রুহি চুপ করে আছে।

” তুমি বলেছো আমার চোখ নাকি তোমার খুব চেনা। এর আগে কি কোথাও আমাদের দেখা হয়েছে।”, শক্ত চোখে প্রশ্ন করলো আহান। আজ সব প্রশ্নের উত্তর চায় আহান।
আহানের কথা শুনে রুহি ঘামছে। ইচ্ছে করছে ছুটে পালিয়ে যায়।

” আমি আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই।”, রুহির কথায় রেগে আহান রুহির হাত ধরে টেনে নিজের সামনে দাড় করালো। আজ সবটা না জেনে আহান রুহিকে ছাড়ছে না।

[ চলবে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here