#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_১৫ ( প্রথম অংশ)
#নবনী_নীলা
” আমার তৃষ্ণা পেয়েছে।”, এলোমেলো দৃষ্টিতে বললো রুহি।
” আমারও।”,আহান রুহির আরো কাছে এসে বললো। রুহির বুকের ভিতরটা ধুক ধুক করছে। আহানের দৃষ্টি একদম রুহির দিকে স্থির। রুহির অস্থিরতা দেখতে মজাই লাগছে আহানের। আহান আরো কাছে আসতেই দূরত্ব একেবারেই
কমে গেলো।
আহানের আচরণ রুহির কাছে বেশ অন্যরকম লাগছে। রুহি একটা ঢোক গিলতেই আহান রুহির ঘাড়ে হাত ডুবিয়ে দিলো। কেপে উঠে চোখ বন্ধ করে ফেললো রুহি। আহান একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেলো।
রুহির আরো কাছে আসতেই হটাৎ আরাফের কণ্ঠ পেয়ে আহান শক্ত চোখে ঘাড় ঘুরিয়ে বামদিকে তাকালো। আরাফ আহানকে খুজতে এসেছিলো কিন্তু এদিকে এসে এমন অপ্রস্তুত হতে হবে তাকে সে সেটা ভাবেনি।
আহানের শক্ত চোখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে ভুল টাইমে চলে এসেছে আরাফ।
” অ্যাম রিয়েলি সরি ফর ইস্পইলিং ইউর মোমেন্ট! ব্রো আমি জেনে শুনে কিছু করিনি।”, তারপর দুই হাত তুলে উল্টো ঘুরে চলে গেলো।
আরাফের কণ্ঠ শুনে চোখ বড় বড় করে তাকালো রুহি। তারপর ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখলো আরাফ চলে যাচ্ছে। তারপর সামনে তাকাতেই আহানকে এতো কাছে দেখে নিঃশ্বাস ভারী হয়ে গেলো রুহির। রুহি নিজের ঘাড় থেকে আহানের হাত নামিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে বলল,” আপনি সরুন।”
” কেনো?”, কথার পিঠে কথা বললো আহান। তারপর বাতাসে উড়ে আসা চুল গুলো রুহির কানের পাশে গুঁজে দিলো। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আহান। রুহির মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। কি করে এবার সে বের হবে। এতো কাছে দাড়িয়ে আছে যে তাকালেই চোখে চোখ পড়ে তখন বুকের ভিতরটা আরো অস্থির হয়ে উঠে।
রুহি চুপ করে আছে। রুহিকে আর অপ্রস্তুত করা ঠিক হবে না। তাই আহান রুহির দুপাশ থেকে হাত সরিয়ে সোজা হয়ে দাড়াল। রুহি যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো। তারপর দৌড়ে যেতে নিলো কিন্তু আহান হাত ধরে টেনে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বললো,” এতো সহজ না আহান রহমানের কাছ থেকে পালিয়ে যাওয়া। ”
রুহি মাথা তুলে ভ্রু কুঁচকে আহানের দিকে তাকালো। আহান ঝুকে এসে বললো,” এতো সাহস ভালো না পস্তাতে হতে পারে।”
রুহি আহানের কথা শুনে মুখ বাকালো। আহান রুহির হাত ধরে আবার ভিড়ের মাঝে এলো। এবার আর সে হাত ছাড়েনি। রুহির আস্তে আস্তে করে কেনো জানি এই কুম্ভকর্ণটাকে ভালোলাগতে শুরু হয়েছে। যতোটা খারাপ ভেবেছিলো এতোটা খারাপও না। তবে বদমেজাজি একটা। রুহি আহানের দিকে তাকিয়ে ছিলো অজান্তেই মুখে হাসি ফুটলো রুহির। আহান একটা গ্লাস রুহির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,” নাও।”সঙ্গে সঙ্গে রুহি চোখ সরিয়ে নিলো।
” কি এটা? “, ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো রুহি। তারপর গ্লাসটা হাতে ধরে নেড়ে দেখতে লাগলো।
” কি করছো এসব? এটা অরগ্যানিক জুস।”, আহানের কথা শুনে রুহি ও শব্দ করলো। তারপর এক চুমুক দিয়েই চোখ মুখ কুচকে ফেললো। ” এটা কী? এটা মানুষ খায়?”, ঠোট ভিজিয়ে বললো রুহি।
” নাহ্। এটা হাস মুরগি খায়।”, আড় চোখে তাকিয়ে বললো আহান।
” একদম ফালতু কথা বলবেন না। আপনি এটা খেয়ে দেখুন কেমন খেতে? না মিষ্টি না টক যেনো মনে হচ্ছে গরুর ভুষি খাচ্ছি।”,
আহান আড় চোখে তাকিয়ে রইল তারপর একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো,” এখানে থাকো আমি আসছি।” বলে আহান পানি আনতে গেলো। রুহি ঘুর ঘুর করছে মিষ্টি কিছু খাওয়া গেলে ভালো লাগতো। রুহি বারের লোকটাকে জিজ্ঞেস করলো,” এইখানে মিষ্টি জাতীয় কিছু পাওয়া যাবে?”
” ম্যাডাম ড্রিংকস হবে।”, লোকটা একটা গ্লাস সামনে এগিয়ে দিলো।
” এইটা কি ভালো? নাকি উল্টা পাল্টা কিছু আছে?”, আস্তে করে বললো রুহি।
” সরি ম্যাডাম বুঝলাম না।”,
রুহি একটু কেশে গলা পরিষ্কার করে বললো,” এটা কী দিয়ে বানিয়েছেন?”
” ম্যাডাম এইটা গ্রেপ জুস।”
” ও আচ্ছা, তাহলে তো ঠিক আছে।”, বলে এক ঢোক পুরোটা শেষ করলো রুহি। কেমন যানি টেস্ট ছিলো তাও ঐ আগের টা থেকে বেটার। এবার শান্তি লাগছে। আহান একটা পানির বোতল হাতে রুহির কাছে এলো তারপর বোতলটা খুলে রুহির দিকে এগিয়ে দিলো। রুহি হেসে বলল,” আপনাকে ধন্যবাদ।”
আহান কিছু বললো না রুহির খাওয়া শেষে পানির বোতলটা লাগিয়ে একপাশে রাখলো। রুহি আড় চোখে তাকিয়ে বললো,” কেউ ধন্যবাদ দিলে কি বলতে হয় আপনি জানেন না?”
আহান একটা ভ্রু তুলে বললো,” ওয়েলকাম।”
” না না, আমি তো থাংকস বলিনি আমি ধন্যবাদ জানিয়েছি।”,
” আচ্ছা, তো? দুটোর মধ্যে পার্থক্য কি?”
” অনেক বড় পার্থক্য আছে। কেউ ধন্যবাদ বললে বদলে বলতে হয় তোমাকেও ধন্যবাদ।”
আহান বিরক্তি নিয়ে রুহির দিকে একবার তাকাল কিন্তু কিছু বললো না। রুহি আহানের হাত ধরে টেনে বললো,” দিন দিন আমাকে ধন্যবাদ দিন।”
” এইসব আমি বলতে পারবো না। আর তুমি এভাবে হাত ধরে টানছ কেনো?”, রুহির দিকে রাগী চোখে তাকালো আহান।
” কেনো বলতে পারবেন না কেনো? আপনি কি মহাকাশ থেকে এসেছেন? বলুন বলুন আপনার মুখ থেকে ধন্যবাদ বের করেই ছাড়বো।”
” তুমি পারবে না। এসব বন্ধ করো।”,
” নাহ্ করবো না।”, বলেই আহানের হাত শক্ত করে ধরে দাড়িয়ে আছে রুহির। আহান একবার রুহির দিকে তাকালো তারপর একটু হাসলো।
এদিকে সামিরা প্রচন্ড রেগে নিচে আহানের রূমে আসলো। বড়ো একটা প্ল্যান নিয়ে এসেছে সে। প্রথমেই আহানের কাবাড খুলে আহানের কিছু জামা বের করলো তারপর আরো কিছু খুজতে লাগলো খুজতে খুজতে খাটের পাশের ড্রয়ার খুলতেই কিছু পেপার সামিরার হাতে পড়লো। সামিরা ভালো করে দেখলো সেগুলো। আহান আর রুহির এগ্রিমেন্টের কিছু কপি ছিলো সেখানে। সবটা পরে সামিরা বাকা হাসি দিয়ে বললো,” বাহ্, আমাকে তো দেখছি কিছুই করতে হলো না। সামিরা কি জিনিস এবার তুমি বুঝবে, শুধু সাত মাস শেষ হতেই দেও রুহি।
আহান তো আমারই থাকবে।” তারপর চটজলদি জামা কাপড় গুলো ঠিক জায়গায় রেখে। একটা এগ্রিমেন্ট কপি নিজের সাথে নিয়ে গেলো। সবাই এতো ব্যাস্ত তাই কাজটা করতে সামিরার খুব বেশি কোনো অসুবিধে হয় নি।
রুহির আচরণ কেমন জানি হচ্ছে। আহান বিষয়টা অনেক্ষন ধরে খেয়াল করছে। পরে যাচ্ছে কিছুক্ষণ পর পর, বার বার আহান ধরছে।
” কি হয়েছে রুহি? এমন করছো কেনো। সোজা হয়ে দাড়াও।”, আহান রুহির দুই বাহু ধরে বললো। ঘুম ঘুম কন্ঠে বললো,” কেমন জানি সবটা ঘুরছে।”
” ঘুরছে মানে।”, রুহির দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে দেখে বুঝতে বাকি রইলো না আহানের যে রুহি ওয়াইন বা ড্রিংকস জাতীয় কিছু খেয়েছে।
” কি খেয়েছ তুমি? রুহি আমার দিকে তাকাও।”, রুহি সোজা হয়ে দাড়াতে পর্যন্ত পারছে না। তাও চোখ একটু একটু খুলে বললো,” গ্রেপ জুস, আঙ্গুরের জুস। বুঝলেন?”
আহান চোখ বন্ধ করে মাথা ঠান্ডা করলো। হয়েছে আজ রাত জ্বালিয়ে মারবে রুহি। রুহির এইখানে থাকাটা ঠিক না তাই আহান আস্তে করে রুহির দুইহাত ধরে সেখান থেকে বেরিয়ে এলো। বেরিয়ে এসে রুহি থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো, সে আর হাঁটবে না।
” আপনি এমন এমন কেনো? কেনো! মুভিতে দেখেন না হিরোরা কিভাবে কোলে তুলে নিয়ে যায়। আমি আমি ওভাবে যাবো।”, বাচ্চাদের মতন জিদ করে বললো রুহি।
” হ্যা এইসব খেলেই তোমার আমায় জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে আমার কোলে উঠতে ইচ্ছে করে। আর অন্যসময় আমি কাছে এলেই সরুন। আমি অভদ্র অসভ্য হয়ে যাই।”, রুহির দিকে ঝুকে এসে প্রশ্ন করলো আহান।
রুহি ঘন ঘন চোখের পাতা ফেলে বাচ্চাদের মতো হাত মেলে দাড়ালো যাতে তাকে কোলে নেওয়া হয়। আহান একটা নিঃশ্বাস ফেলে রুহির কোমড় জড়িয়ে কোলে তুলে নিলো। তারপর রুহির দিকে তাকিয়ে বললো,” ভালোই টর্চার শুরু করেছো তুমি আমায়।” রুহি বাচ্চাদের মতন হাসলো। তারপর আহানের গলা জড়িয়ে ধরলো।
[ চলবে ]
❄️ কালকে বড়ো পার্ট দিবো।??