#ক্যানভাস_
লেখনীতে : তামান্না আক্তার তানু
পর্ব : (১৩)
মেঘের মাথায় টেনশন ঢুকে যায়। না পারছে একটু রেস্ট নিতে না পারছে কারো সাথে শেয়ার করতে। এই মুহূর্তে শ্রাবণকে এসব বলা যাবে না। শ্রাবণ জানলেই রেগে যাবে। রুমে বসে মেঘ চিন্তা করছিল এর থেকে বাঁচার উপায় কী? ঠিক সেই সময় ইরা ভেতরে ঢুকে। ইরা মেঘকে দেখেই বুঝতে পারে মেঘ কিছু একটা নিয়ে বেশ চিন্তিত। চিন্তার ভাবটা মেঘের চেহারায় স্পষ্ট ভেসে আছে। ইরা মেঘের পাশে বসে জিজ্ঞেস করল,
_কী হয়েছে মেঘ, বসে বসে কী ভাবিস?
_কই কিছু না। তুই কখন এলি?
_এইতো ধরা খেয়ে গেলি, আমি কখন আসলাম সেটা যদি বলতে নাই পারিস তাহলে লুকাচ্ছিস কেন তুই কি চিন্তা করছিস? বল আমায়, সল্যুশন দেওয়ার চেষ্টা করবো।
_কী করবো ইরা? বাসা থেকে তো মনে হচ্ছে আর আমি বের হতেই পারবো না।
_কেন?
_আজও কেউ আমার ওয়ার্নিং দিয়েছে। মনে হচ্ছে আমি তাঁর খুব বড় শত্রু। আমাকে মেরে ফেলাই একমাত্র কাজ।
_শ্রাবণ ভাইয়া জানে।
_না, প্লিজ ওকে কিছু জানাস না বোন। জানতে পারলে আমাকে বকবে।
_আচ্ছা বলব না। কিন্তু, এখন তুই রোজ ভার্সিটি যাবি কীভাবে?
_আমি জানি না ইরা। সামনে কমপিটিশন, এরপর ফাইনাল এক্সাম। আমি কী করবো কিছুই মাথায় আসছে না।
_চিন্তা করিস না। দেখি আমি কিছু করতে পারি কি না।
_তুই কী করবি?
_দেখি চেষ্টা করে তোকে বাঁচাতে পারি কি না। তুই শ্রাবণ ভাইয়ার আমানত। তোকে রক্ষা করার দায়িত্ব এখন আমাদের। বিয়ের পর শ্রাবণ ভাইয়ার। বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত আমরাই তোর খেয়াল রাখবো৷ তোকে প্রটেক্ট করবো।
_হুম।
_একটু রেস্ট নে, আমি আসছি।
ইরা মেঘের রুম থেকে বেরিয়ে মেঘের বাবা-মায়ের সাথে কথা বলতে যায়। মেঘের বিপদের আশঙ্কার কথা আর চেপে রাখতে পারে না ইরা। সব বলে দেয় মেঘের বাবা-মাকে। সব শুনে ওনারা একটা সিদ্ধান্ত নেন। যেভাবে হোক মেঘকে সেইফ রাখতেই হবে।
৩০!!
নওরিন রুমে বসে কফি খেতে খেতে ফেইস বুকিং করছিল। ফোন আসতেই নওরিনের হাত কেঁপে উঠে। নওরিন ফোন রিসিভ করে বলল,
_কী ব্যাপার, কী মনে করে আজ আমাকে কল করলেন?
_আমি কি তোমার খোঁজ নিতে পারি না?
_পারো, আমার খোঁজ দিচ্ছি। আমি কফি খাচ্ছি, টিভি দেখছি, আদনান কবিরের সাথে কথা বলছি, সব মিলিয়ে আমি ভালো আছি। আর কিছু…?
_আমি কেমন আছি জিজ্ঞেস করলে না?
_আমি তো আজকেই হাসপাতালে দেখলাম আপনি দিব্যি সুস্থ আছেন। তাহলে আর অজানা রইলো কোথায়?
_বাহ্! এত লজিক!
_হুম।
_একটা কথা বলব।
_বলেন,
_আমাকে কি খুব দূরের মনে হয়?
_কেন?
_আপনি করে সম্বোধন করো। এতদিনে কি আমাদের মধ্যে দূরত্বের দেয়াল কাটেনি?
_কী বলতে চান? আমাদের মধ্যে দূরত্ব মানে। আমরা কাছের ছিলাম কখন?
_ছিলাম না, তবে হতে তো পারি।
_মানে!
_মানে কাল দেখা করতে আসলে সব বলব।
_আমার জানার দরকার নেই।
_তোমার নেই, তবে আমার দরকার আছে। তাই তোমাকে আসতেই হবে। না আসলে আর কোনোদিন আমি তোমার মুখোমুখি হবো না।
_কী!
_হ্যাঁ, বাই ভালো থেকো।
_শুনুন…
আদনান কিছু না শুনেই ফোন কেটে নেয়। নওরিন ফোনের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাসতে থাকে। মনেমনে নিজেকে একটু বকা দিলো আদনানকে এইভাবে রাগিয়ে দেওয়ার জন্য। আদনানকে রাগাতে নওরিনের বেশ ভালো লাগে। তাই ইচ্ছে করেই আদনানকে রাগিয়ে দিল।
রাতে মেঘ বাবা মায়ের সাথে ডিনার করছে। ঠিক তখনই মেঘের বাবা-মা দুজনই মেঘকে বিয়ের ব্যাপারে তাগিদ দিলেন। এমনকি এটাও বললেন সবরকম প্রিপারেশন নিয়ে রাখতে, পরের সপ্তাহেই বিয়ে। মেঘ বাবা-মায়ের মুখে এমন কথা শুনে ফ্যালফ্যাল করে ইরার দিকে তাকায়। ইরা মেঘের দিকে দৃষ্টি না দিয়ে নিজের খাবারের দিকে মনোযোগ দিলো। ইরার এমন কান্ড মেঘ ঠিকই বুঝে নিল। গণ্ডগোলটা যে ইরাই পাকিয়েছে সেটা মেঘ মুহূর্তেই বুঝে নিল। মেঘ বাবা-মাকে বলল,
_বাবা আর কিছুদিন পর কম্পিটিশন। এক্ষুণি বিয়ে ঠিক না করলেই কি নয়?
_এই বিয়ের তারিখটা আমাদের সিদ্ধান্ত নয়, এটা শ্রাবণের সিদ্ধান্ত।
_কী? শ্রাবণ!
_হ্যাঁ শ্রাবণ, আমি চাই তুই এই ক’দিন বিয়ের শপিং নিয়ে ব্যস্ত থাকবি, আর সবসময় তোর সিকিউরিটি হিসেবে দুজনে তোর সাথে থাকবে।
_মানে কী!
_সামি সুস্থ হলে বিয়েতে এটেন্ড করবে, ইরা আর শ্রাবণ এই ক’দিন তোকে দেখেশুনে বাইরে নিয়ে যাবে।
_তোমরা কি টর্চার শুরু করলে?
_তোকে সেইফ রাখার আর কোনো উপায় নেই মেঘ। বাঁচতে হলে এই উপায়টা মেনে নিতেই হবে তোকে।
_শ্রাবণের তো ব্যস্ততা থাকবে বাবা।
_ওর সব ব্যস্ততা এখন শুধু তোকে ঘীরে।
_কেন এমন করছো তোমরা?
_দেখ মেঘ, কে তোকে ফলো করে আমরা জানি না? কে তোকে মারতে চায় তাও জানি না? কিন্তু আমরা বাবা-মা হয়ে তোর বিপদ কীভাবে চোখের সামনে দেখবো বলতে পারিস? তোকে বাঁচাতে আমরা যেকোনো পথ অবলম্বন করতে রাজী। আমরা তো বাবা-মা, তোকে এইভাবে হয়রানিতে দেখতে আর ভালো লাগে না রে মা! শুধু তুই বেঁচে থাক, ভালো থাক, এইটাই আমরা দোয়া করি।
_বাবা!
মেঘ চেয়ার থেকে উঠে বাবাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়। মেঘের কান্না দেখে মেঘের বাবা মেঘকে মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত্বনা দেন। মেঘ খাবার শেষ করে রুমে আসে। ইরা মেঘের পাশে বিছানা গুছিয়ে শুয়ে পড়তে যায়।
৩১!!
তখন মেঘ ইরাকে বলল,
_তুই বাবা-মাকে সব বলে দিয়েছিস।
_আমার কোনো উপায় ছিলো মা মেঘ।
_কিন্তু ইরা এতে সবাই চিন্তায় পড়ে যাবে। আমি চাইনি কারো চিন্তার কারণ হতে।
_কী ভাবিস তুই? তুই চিন্তা না দিলে বাবা-মায়ের চিন্তা হয়না তাই তো! মেঘ এরা বাবা-মা, এই বাবা-মায়ের জন্য তুই আজ পৃথিবীতে এসেছিস। এদের জন্য তুই আজ পৃথিবীর বুকে সুখের নিঃশ্বাস ফেলছিস, তুই কি ভাবিস তুই না বললে তোর বাবা-মা তোর জন্য চিন্তা করবেনা! মেঘ বাবা-মা এমনই মানুষ, যারা সন্তানের বিপদ আগে থেকে টের পেয়ে যায়। যারা বুঝে নেয়, তাদের সন্তানের কোনো বিপদ আসতে চলেছে! সন্তানের মুখের হাসি-কান্নার প্রত্যেকটা কারণ তারা বুঝে নেয় অতি তাড়াতাড়ি। যে বাবা-মা সন্তানের সুখের জন্য নিজের সুখ বিসর্জন দিতে দু’বার ভাবেন না, তারা তাদের মেয়ের এত বড় বিপদের কথা জেনে কীভাবে চুপ করে থাকবে মেঘ? বলতে পারিস তুই…
_আমি বুঝতে পারছি ইরা। কিন্তু আমার জন্য সবাই এত টেনশন কেন করবে? আমি চাই না কারো টেনশনের কারণ হতে।
_তুই কি মানুষ মেঘ? তোর জন্য কারা ভাববে এটা বুঝিস না তুই? মেঘ যারা তোদের আপনজন তারাই তোকে নিয়ে ভাববে। বাকি রইলো শ্রাবণ ভাইয়ার কথা। মেঘ শ্রাবণ ভাইয়া তোকে ভালোবাসে না সত্যি, কিন্তু তুই কি এটা জানিস তুই ভাইয়ার বেঁচে থাকার অবলম্বন! তুই কি এটা জানিস, তোকে নিয়ে বাঁচার জন্য ভাইয়া আনিকার দেওয়া কষ্ট ভুলার আপ্রাণ চেষ্টা করছে! ভাইয়ার ভেতরের চাপা কষ্টটা তুই কি কোনোদিনও বুঝবি না মেঘ? এইভাবে সুখী থাকা যায় না মেঘ। কাউকে সুখী রাখতে না পারলে নিজেকে সুখী রেখে সেই সুখের স্বাদ অনুভব করা কঠিন হয়ে পড়ে। একবার ভাইয়াকে বুঝার চেষ্টা কর, হয়তো পারবে এই মানুষটা তাঁর ভেতরের যন্ত্রণাকে ভুলে যেতে!
_সবই ঠিক আছে ইরা, কিন্তু;
_কোনো কিন্তু নয়। যে আড়ালে তোর ক্ষতি করতে চাইছে সে একদিন সবার সামনে আসবেই।
_হুম।
মেঘ মাথা নাড়িয়ে চুপ করে বালিশে মাথা রাখে। ঘুম আসছেনা মেঘের চোখে বারবার মন বলছে খারাপ কিছু একটা ঘটবেই। আর তা খুব শীঘ্রই। কেন যেন বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠে মেঘের। একেই তো মিথ্যে পরিচয়ে শ্রাবণের জীবনে প্রবেশ করছে। মেঘ জানেনা এই মিথ্যে পরিচয় কতদিন মেঘের কাছে শ্রাবণকে রাখবে। কেন যেন মেঘের মনে সন্দেহ হচ্ছে, এমন মনে হচ্ছে যেন শ্রাবণ সব জেনে গেছে! যদি শ্রাবণ সব জেনে যায় তাহলে তো দূরে সরে যাবে। মেঘ এসব ভাবতে ভাবতেই চোখ বন্ধ করে।
৩২!!
পরেরদিন বিকেলবেলা…
আদনান কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে রাখা ব্রেঞ্চটাতে বসে অপেক্ষা করছে নওরিনের জন্য। নওরিন আর্ট শেষ করে বাসায় যাওয়ার পথে রওয়ানা দেয়। রিকশায় উঠে ফোন বের করে। আদনানের নাম্বার থেকে একটা ম্যাসেজ লেখা দেখে নওরিনের চোখ চড়কগাছ। তাড়াতাড়ি রিকশা ঘুরিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসের পিছনের সেই কৃষ্ণচূড়া গাছটার কাছে যায়। নওরিন সেখানে গিয়ে বেশ অবাক হয়, আশেপাশে কেউ-ই নেই। তাহলে আদনান যে বলল আজ দেখা করতে। আদনানের ম্যাসেজটাও কি মিথ্যে? কোথায় আদনান? নওরিন চারিদিকে তাকিয়ে হতাশ হয়। আদনানের কোন চিহ্ন কোথাও নেই। চোখের কোণে জল জমে যায় নওরিনের। চোখের জল মুছে অভিমান নিয়ে নওরিন ফিরে আসতে যায় ব্রেঞ্চের সামনে থেকে। পিছু ঘুরতেই থমকে দাঁড়ায় নওরিন। অজান্তেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে নওরিনের। আদনানকে এইভাবে বসে থাকতে দেখে। নওরিন চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। আদনান এক হাটু নিচে গেড়ে ডানহাত বুকে রাখে। চোখ বন্ধ করে নওরিনকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগল,
_আমি সারাজীবন তোমার ভালোবাসায় মায়ায় নিজেকে ডুবাতে চাই। অনুভব করতে চাই তোমাকে। তোমার প্রতিটা স্পর্শের নতুন নতুন অনুভূতি দিয়ে জাগাতে চাই আমার মনের রাজ্য। একবিন্দুও মিথ্যে নয় নওরিন সবটাই সত্যি বলছি। তুমি চাইলে আমি হতে পারি তোমার মায়ের সেই ঘরজামাই, যাকে পেলে তুমি সারাজীবন তোমার বাবা-মায়ের কাছে নিজের খুশিমতো কাটাতে পারো। সাথে আমাকেও রাখতে পারো যদি তোমার মন আমার ডাক সায় দেয়। আর যদি আমাকে গ্রহণ করতে তোমার অনিচ্ছা থাকে তাহলে আমি কথা দিচ্ছি, আজ, এইখানে, এইমুহূর্তে হচ্ছে তোমার আর আমার শেষ দেখা।
নওরিন কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে মায়াভরা চোখে আদনানের দিকে তাকিয়ে আছে। অনেকক্ষণ নওরিনের কোনো সাড়া পেল না আদনান। চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে নওরিনের চোখ থেকে ফোঁটা ফোঁটা অশ্রুকণা ঝরে পড়ছে। আদনান বেশ অবাক হয় নওরিনের কান্না দেখে। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে নওরিনকে বলল,
_আমার কথায় হার্ট হলে, আ’ম সরি নওরিন। তবে এটাই সত্যি যে, আমি তোমাকে…
আদনান আর কিছু বলে না, চুপচাপ নওরিনের পাশ থেকে সরে দাঁড়ায়। নওরিন আদনানের এমন অবস্থা দেখে বুঝতে পারে নওরিনের চোখের জলে আদনান উল্টো ভাবছে তাই এইভাবে বলেছে। নওরিন আদনানকে স্বাভাবিক করতে বলল,
_এসব নিয়ে মজা না করলেই হতো, আমার সুন্দর ইচ্ছেটাকে এইভাবে হাসিঠাট্টা ভেবে মজা নিলেন।
_আমি তো মজা করছি না নওরিন, আমি সত্যি বলছি। আমি জীবনে এত মেয়ে দেখেছি কিন্তু কাউকে নিয়ে এতটা ভাবিনি যতটা ভেবেছি এই ক’দিনে তোমাকে নিয়ে। আমার কথায় বিশ্বাস না হলে শ্রাবণকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারো। এই ক’দিনে সব ফিলিংস আমি শ্রাবণের সাথে শেয়ার করেছি। শ্রাবণ নিজেই আমাকে বলেছে, সময় থাকতে তোমাকে যেন সত্যিটা জানাই। যদি দেরী হয়ে যায় তাহলে কষ্ট অনিবার্য।
_ওহ,
_প্লিজ নওরিন একবার আমার অনুভূতিটাকে বুঝার চেষ্টা করো।
_পারবো না।
_সত্যি পারবে না।
_সত্যি পারবো না।
_আমার অনুভূতির কোন দাম নেই তোমার কাছে! থাকবেই বা কীভাবে আমার অনুভূতি গুলো যে শুধু আমারই ছিলো! তোমার ছিলো না। আসছি…
আদনান নিজের কথাটুকু বলে চলে যেতে লাগল। নওরিন কী করবে ভেবে পাচ্ছে না। ফাজলামি করতে গিয়ে এইভাবে আদনানকে হার্ট করে ফেলবে নওরিন সেটা বুঝতে পারে নি। নওরিন আদনানকে ডাকলে আদনান আর সাড়া দেয় না। পিছু ঘুরে তাকানোর কোনো প্রয়োজন মনে করছে না আদনান। তাই সোজা গাড়িতে উঠে বাসার দিকে এগিয়ে যায়। নওরিন বোকার মতো ওখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। নিজের বোকামির জন্য নিজেই নিজেকে দোষ দিচ্ছে। আদনান যে রাগ করেছে তা নয়, বরং খুব বেশি কষ্ট পেয়েছে। নওরিন নিজেও জানে না কেন এমন করল, অথচ নিজেই আদনানের প্রেমে প্রথমদিকে হাবুডুবু খাচ্ছিলো। আজ আদনানকে এত কাছে পেয়ে সত্যিটা না বলে মিথ্যে বলে এইভাবে কষ্ট দিল। নওরিন নিজের ফোন বের করে আদনানের নাম্বারে ডায়াল করল কিন্তু আফসোস আদনানের নাম্বার ততক্ষণে বন্ধ হয়ে যায়। বারবার ট্রাই করার পরেও নওরিন ব্যর্থ হয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা দেয়।
৩৩!!
ইরা রুমে বসে বসে মেঘের সাথে দুষ্টামি করছিল। ঠিক সেই সময়ই নওরিন মেঘকে ফোন করে আদনানের সাথে ঘটে যাওয়া সব কাণ্ডকারখানার কথা জানায়। সব শুনে মেঘ ইরাকে ইচ্ছেমতো বকতে থাকে। নওরিনের এমন বোকামি মেঘ কিছুতেই মানতে পারল না। নওরিনের ন্যাকা কান্না মেঘের রাগ আরো বাড়িয়ে দিলো। মেঘ নওরিনকে সামলে ফোন রেখে শ্রাবণের নাম্বারে ফোন দিলো।
শ্রাবণ তখন আদনানকে বুঝাতে ব্যস্ত। আদনান কোন উপায় না পেয়ে সব কথা শ্রাবণকে জানালো। শ্রাবণের থেকে সল্যুশন নেওয়ার জন্যই মূলত আদনানের এখানে আসা। মেঘ ফোন করেছে দেখে শ্রাবণ বেশ অবাক হয়। ঘন্টাখানেক আগেই মেঘের সাথে কথা বলেছে শ্রাবণ। এক্ষুণি আবার কি দরকার পড়ল? যে মেঘ ঘন্টা পার হতে না হতে ফোন করল! শ্রাবণ ফোন তুলে মেঘকে বলল,
_কী ম্যাডাম মন খারাপ?
_সবসময়ই কি মন খারাপ থাকে?
_তোমার মন কখন কী করে তুমি নিজেও জানো না।
_একটা সাহায্য করবে।
_তুমি বললে শ্রাবণ এক্ষুণি করবে, বলো কী করতে হবে?
_আদনান ভাইয়া কোথায়?
_কেন?
মেঘ শ্রাবণকে নওরিনের করা সব বোকামির কথা বলে। সব শুনে শ্রাবণ খিলখিল করে হাসছে। শ্রাবণের হাসি দেখে আদনান রাগে ফুলে বম হয়ে যাচ্ছে। একেই তো আদনান কষ্টে মরছে আর শ্রাবণ নিজের হবু বউয়ের সাথে রোমান্স নিয়ে ব্যস্ত আছে। কোথায় এই বন্ধুটাকে হেল্প করবে তা না এখন সে বউয়ের সাথে প্রেম করতে ব্যস্ত। শ্রাবণের এমন কান্ড দেখে আদনান রাগে জ্বলছে। বেচারা পারুর শোকে দেবদাস হয়ে আছে শ্রাবণ সেদিকে লক্ষ্য না দিয়ে নিজের হবু বউয়ের সাথে মজা করতে ব্যস্ত।
শ্রাবণ মেঘের মুখ থেকে সব শুনে মেঘকে একটা শান্ত্বনা দিয়ে ফোন কেটে দেয়। ফোন কেটে আদনানের সাথে সব কথা শেয়ার করে। আদনান সব শুনে মাথার চুল টানতে থাকে। রাগে শ্রাবণকে বলল,
_এমন ফাজলামি করে কেউ। আমিও দেখাবো মজা।
_কী করবি তুই?
_দেখ না কী করি! শুধু অপেক্ষা কর।
_কী প্ল্যান তোর সেটা তো বল?
_কোনো প্লেন নেই, তবে প্লেন সাজাতে কতক্ষণ? এবার ওর জালেই আমি ওকে ফাঁসাবো।
_যা করবি ভেবে করিস, মেয়েরা একটু বেশিই দুর্বল।
_তুই মেয়েদের ব্যাপারে এতকিছু বুঝে নিস কীভাবে?
_আনিকা যাওয়ার পর যতটা কষ্ট পেয়েছি এই ক’দিন রাত্রিকে হার্ট করে তাঁর থেকে বেশি কষ্ট পাচ্ছি। আমি নিজের অজান্তেই রাত্রিকে কষ্ট দিচ্ছি আদনান!
_আপসেট হবি না। চেষ্টা কর সব অতীত মুছে ফেলার।
_চেষ্টা তো করছি, কিন্তু সফল হচ্ছি না।
_মন থেকে ট্রাই কর, পারবি।
আদনান শ্রাবণের সাথে আরো কিছুসময় আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরে যায়। শ্রাবণ ফোন নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে। একটা সময় আনিকার একটা ছবির দিকে চোখ পড়তেই থমকে যায় শ্রাবণ!
চলবে…
ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।