#ক্যানভাস_
লেখনীতে : তামান্না আক্তার তানু
পর্ব : (১১)
মেঘ ফোন হাতে নিয়ে শ্রাবণের নাম্বার দেখে চট করেই ‘এয়ার-প্লেন’ মুড করে ফোন বিছানায় ফেলে রেখে নিচে নামে। সবার সাথে বসে স্বাভাবিক ভাবেই নাশতা শেষ করে নিলো মেঘ। নাশতা শেষ করে ইরা আর মেঘ মেঘের রুমে বসে গল্প করছে। মেঘ আজকে আর ক্লাসে যাবেনা। মনটাও ভালো নেই, শরীরটাও সম্পূর্ণ সুস্থ না। একেই নিজের রাগ মিটাতে এমনভাবে কষ্ট দিল নিজেকে।
সকাল ১১ টা। মেঘ হাতের কিছু #ক্যানভাস রেডি করতে ব্যস্ত। ইরা ফোনে কথা বলতে বলতে মেঘের রুমে আসে। মেঘকে স্কেচ করতে দেখে ইরা চুপিচুপি মেঘের কানে ফিসফিস করে বলল,
_ভাইয়া ফোন করেছে, কথা বল। তোর ফোন নাকি বন্ধ?
_সরে যা ইরা, মাথা খারাপ করাবি না।
_একটু কথা বলে নে প্লিজ।
_তোর এতো দরদ লাগলে তুই নিজে কথা বল, আমাকে টানবি না বলে দিলাম।
_এমন করিস না, ভাইয়া কষ্ট পাবে।
_তোর ভাইয়া কষ্ট পাবে এতে তোর কষ্ট হচ্ছে, আর আমি কষ্ট পেলে কেউ ফিরেও তাকায় না। যা এখান থেকে প্লিজ। একা থাকতে দে আমায়।
_এমন ভাবে কেন বলছিস তুই?
_জাস্ট লিভ ইরা।
মেঘ ধমক দিয়ে ইরাকে চলে যেতে বলে। ইরা মেঘের ধমক শুনে ভয় পেয়ে যায়। ফোন নিয়ে বাইরে চলে আসে। শ্রাবণের সাথে কথা বলে ফোন কেটে তারপর আবার রুমে আসে। রুমে এসে দেখে মেঘ হাটুতে মুখ গুজে কাঁদছে। মেঘের কান্না, মেঘের কষ্ট সবটাই ইরা বুঝতে পারছে। কিন্তু শ্রাবণ যতদিন না নিজে থেকে এসব ফিল করছে ততদিন কারো কিছু করার থাকবেনা। ইরা মেঘের পাশে গিয়ে বসে মেঘের কাঁধে হাত রাখলো। মেঘ চোখ তুলে ইরার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে ডানে-বামে ঘুরালো। তারপর ইরাকে বলল,
_আ’ম সরি ইরা।
_আমি জানি কেন এমন করেছিস? আমার মন বলছে ভাইয়া তোকে কোনো ব্যাপারে সরি বলতেই ফোন করেছে। কিন্তু তোর রাগ, তোর জেদের কাছে সে হেরে গেছে। এতো রাগ দেখাস না মেঘ, না হলে একসময় এই রাগ দেখানোর মানুষটাকে হারাতে হবে।
_এইসব বলিস না বোন, আমি শ্রাবণকে হারাতে পারবো না।
_তাহলে প্লিজ একবার কথা বলে নে। কী হয়েছে কাল আমি জানিনা? কিন্তু একটা কথা কালকের কথা ভেবে তুই প্লিজ আজকের অনুভূতিটা মিস করিস না।
_ঠিক আছে। তুই যা আমি কথা বলে নিব।
_যাচ্ছি, তাড়াতাড়ি ফোনটা অন কর।
_ওকে।
ইরা চলে গেলে মেঘ নিজের ফোনটা অন করে। ডাটা অন করে ফেইসবুকে ঢুকে। শ্রাবণের আইডির পাশে সবুজ বাতি জ্বলতে দেখে মেঘ শ্রাবণের প্রোফাইলে নক করে।
_হাই,
_
_হ্যালো মি.
_
_আপনি কী বোবা হয়ে গেলেন?
_
_এই যে হ্যালো কিছু বলছি আমি আপনাকে?
_
_ছেলেদের যে এতো ভাব থাকতে পারে আমার জানা ছিল না।
মেঘ রাগ চেপে রাখতে না পারে এইকথা বলে। সারাদিন শ্রাবণের সাথে কথা হয়নি, তাই দুষ্টামি চাপায় আইডিতে থেকে নক করলো। আর শ্রাবণ কি’না সেটা চেক করাও প্রয়োজন মনে করছেনা। ব্যাপারটা মেঘকে একটু ভাবায়। আজকালকার ছেলেরা মেয়েদের টেক্সট পাওয়া মাত্রই রিপ্লে করে অথচ শ্রাবণ কি না এটা বরাবরের মতো ইগনোর করে আসছে। শ্রাবণের এই ব্যাপারটা মেঘের খুব ভালো লাগলো। ম্যাসেঞ্জারের টিউনে মেঘ নজর দেয় শ্রাবণের আইডির দিকে। শ্রাবণ রিপ্লে পাঠিয়েছে।
_কী সমস্যা আপনার? এইভাবে অসভ্যের মতো টেক্সট পাঠাচ্ছেন কেন?
_কী আমি অসভ্য!
_তা নয়তো কী।
_এই যে মি. একটু বেশি বেশি হচ্ছে।
_আরে কী বেশি হবে? বেশি বেশি তো আপনি করছেন।
_আমি!
_হ্যাঁ আপনি, দেখছেন যখন আমি রিপ্লে দিচ্ছি না তারপরেও বেহায়ার মতো টেক্সট পাঠিয়েই যাচ্ছেন। অনেক পাগল দেখেছি তবে আপনার মতো ঘোর পাগল দেখিনি।
_অসভ্য, ইতর, শয়তান আমি কী পাগলামি করেছি?
_আপনার নামে ছেলেধরার মামলা দায়ের করবো। এইভাবে একটা ছেলেকে বিরক্ত করার জন্য।
_তাহলে মামলাটা আমিই করি, কারণ আপনি প্রথম দিন আমাকে নক করেছেন।
_সেটা আপনার গুণ দেখে করেছিলাম, কিন্তু এখন সেটা নিতান্তই হাস্যকর মনে হচ্ছে।
_হাস্যকর কেন?
_আপনি আমাকে দেখেননি, অথচ স্কেচ এঁকে ফেললেন। সেদিন আপনাকে দেখতে আপনার কলেজে গেলাম, আমি পৌঁছার আগেই আপনি চলে আসলেন। আমার তো সব কিছু কেমন যেন সন্দেহ লাগছে।
_এতে সন্দেহের কী আছে?
_আমার সাথে দেখা করতে আপনার কী আপত্তি?
_আমাকে দেখে আপনি কী করবেন?
_এই যে শুনুন, একেবারে আহ্লাদী হবেন না। আমি অলরেডি এনগেজড, আমি শুধু এটা দেখতে চাইলাম যে আমাকে না দেখে আঁকতে পারলো তাকে এটলিস্ট চোখের দেখাটা একদিন দেখা উচিৎ। দেখা করার প্রয়োজন নেই, শুধু একটা পিক দিলেই হবে।
_ওহ, দেখার বাহানা। আজকালকার ছেলেরা এমনই। দুদিন কথা হলেই পিক চেয়ে বসে।
_তাই নাকি, তাহলে আপনাকে দেখার কোনো আগ্রহ আমার নেই।
_রাগিয়ে দিলাম নাকি?
_তা নয়তো কী? এমনিতেই আজ মন-মেজাজ ভালো নেই তার উপর আপনার এই উল্টো পাল্টা কথাবার্তা?
_সরি! মন ভালো নেই কেন?
_কারণ আছে, সেটা আপনাকে বলার প্রয়োজন মনে করছি না। গুড বাই, আর আমাকে নক দিবেন না।
মেঘ কিছু বুঝে উঠার আগেই শ্রাবণ ধুম করে মেঘকে ব্লক করে দিলো। “ইউ ক্যান-নট রিপ্লে টু দিস কনভারসেশন ” লেখাটা দেখে মেঘ নিজের অজান্তেই হেসে উঠে। কিছুক্ষণ একাই বিড়বিড় করে শ্রাবণের নাম্বারে ডায়াল করে মেঘ। শ্রাবণের কোনো রেসপন্স না পেয়ে মেঘ ফোন বিছানায় রেখে রুমের বাইরে চলে আসে।
২৬!!
সামি আর নওরিন একসাথেই আর্ট ক্লাস করছে। আজ মেঘ আসেনি দেখে দু’জনেরই খুব রাগ জমেছে মেঘের উপর। ক্লাস শেষে দু’জনে জমিয়ে আড্ডা দেয় ক্যান্টিনে। সামি আর নওরিন বসে গল্প করছে এমন সময় মেঘ, ইরাকে নিয়ে নওরিনের কাছে আসে। নওরিন মেঘকে এইটাইমে দেখে ভীষণ অবাক হয়। মেঘের চোখমুখ দেখে মনে হচ্ছে মেঘ ভীষণ চিন্তায় আছে। মেঘের এমন চেহারা দেখে সামি চুপ করে থাকতে পারেনা। সামি মেঘকে বলল,
_কী হয়েছে তোমার?
_আম আমি ইরাকে নিয়ে_
_ইরাকে নিয়ে কী মেঘ?
_ইরাকে নিয়ে শপিংমলে গিয়েছিলাম। আমি যেদিকেই যাচ্ছিলাম সেদিনেই চার-পাঁচজন ছেলে ঘুরাঘুরি করছে। বেশ কয়েকবার এমনটা হওয়ার পরে আমার মনে হলো, ওরা আমাকে ফলো করছে। কোনো রাস্তা পাচ্ছিলাম না দেখে এইদিকে এসেছি। যেদিকেই যাই ওরা গাড়ি নিয় সেদিকেই ফলো করে।
_তুমি চিনতে পেরেছো তাঁদের।
_না, তবে স্কেচ আঁকতে পারব।
_নওরিন আর্ট পেপার।
নওরিন তাড়াতাড়ি কয়েকটা পেপার মেঘের সামনে দেয়। মেঘ ধপ করে একটা চেয়ারে বসে। ঘেমে একাকার মেঘের সারা শরীর। এ যেন ভয়ে গলা শুকানোর অবস্থা। মেঘ কাঁপা কাঁপা হাতে পেপারে কাঠ পেন্সিল স্পর্শ করায়। মেঘ বারবার চেষ্টা করেও স্কেচ আঁকতে ব্যর্থ হচ্ছে। এমনটা আগে কখনও হয়নি মেঘের সাথে। মেঘ যা একবার দেখে তাই মুহুর্তেই নিজের কল্পনা দিয়ে এঁকে নিতে পারে। অথচ আজকের এই স্কেচটা কোনো ভাবেই কমপ্লিট করতে পারছেনা মেঘ। মেঘের এমন অবস্থা দেখে সামি মেঘকে স্কেচ আঁকতে বাড়ন করে। মেঘকে অনেক বুঝায়। তারপর মেঘকে বলে চেহারার বর্ণনা দিতে। মেঘের কাঁপা-কাঁপি অবস্থা দেখে সামি ইরাকে প্রশ্ন করে। ইরা নিজের দেখা অনুযায়ী কিছু ডিটেইলস দেয় সামিকে। সামি আর নওরিন দু’জনে মিলে চেষ্টা করছে এই মানুষ গুলোর স্কেচ আঁকার৷ প্রথমে একজনের স্কেচ আঁকবে আর একজনের ক্লু পেলে সবাইকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব। সামি আর নওরিন স্কেচটা কমপ্লিট করে মেঘের চোখের সামনে তুলে ধরে। মেঘ মাথা তুলে তাকিয়ে টাস্কি খায়। তারপর মাথা উপর থেকে নিচে ঝাঁকিয়ে উত্তর দেয় এই সেই চেহারা। সামি মেঘের থেকে কনফার্ম হয়ে একজনের কয়েকটা স্কেচটা আঁকে। আর সেই আঁকা স্কেচ গুলোর ছবি নিজের ফোনে তুলে ভাইরাল করে দেয় সব ওয়েবপেইজে। নিজের আইডিতে শেয়ার করে সমস্ত ফ্রেন্ড সার্কেলকে বলে এই চেহারায় মানুষটার খোঁজ এনে দিতে।
কাজ কমপ্লিট হলে ইরা আর মেঘকে বাসায় চলে যেতে বলে। মেঘকে বলে সাবধানে যেতে, যাতে রাস্তায় কোনো প্রকার বিপদ না হয়। মেঘ, ইরাকে একদিকে বিদায় দিয়ে অন্যদিকে নওরিনকে বিদায় দিয়ে নিজের বাসায় যাওয়ার জন্য বাইকে উঠে। সামি ড্রাইভ করছে ফুল স্পীডে যাতে তাড়াতাড়ি বাসায় পৌঁছাতে পারে। বাসায় গিয়ে আরো অনেক কাজ সামলাতে হবে। আরো অনেকের কাছে এই পোস্টটি শেয়ার দিতে হবে। সামি এসব ভাবতে ভাবতেই ড্রাইভ করছে। আশেপাশে কিছু আছে কি’না সেদিকে সামির খেয়াল না থাকায়, হুট করেই সামির বাইকের চাকার সাথে ধাক্কা লাগে লাগের গুড়ির। মুলত ধাক্কা লাগেনি, কেউ সামিকে ফলো করে ইচ্ছে করেই গাছের গুড়ি ফেলে দিয়েছে রাস্তায় মাঝে। সামি খেয়াল করেনি দেখে বাইক সহ রাস্তায় অপরপাশে উল্টিয়ে পড়ে। মাথাটা সড়কের সাথে লাগার আগেই সামি মাথা ঠিক করে নেয়। নিজের মাথাকে আঘাতের হাত থেকে বাঁচাতে শরীর বাঁচাতে পারেনি সামি। সম্পূর্ণ বাইকের ভর পড়ে যায় সামির হাত আর পায়ে। কোমরে অনেকটা ব্যথা পায় সামি, মাথায় হেলমেট থাকায় ব্যথা খুব একটা লাগেনি। শরীরের উপর বাইক পড়ে যাওয়ায় সামি সেন্স হারিয়ে পড়ে থাকে রাস্তার পাশে।
সেই রাস্তা দিয়েই শ্রাবণ বাসায় ফিরছিল। রাস্তার পাশে মানুষজন দেখে গাড়ি পার্ক করে দৌঁড়ে আসে। সবাইকে ঠেলে সামির কাছে এগিয়ে যায় শ্রাবণ। রক্তাক্ত সামিকে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকতে দেখে শ্রাবণ দৌঁড়ে সামির পাশে বসে সামির মাথা হাটুর উপর রাখে। সামির শরীর থেকে রক্ত ঝড়ে পড়ছে। হাত-পা অনেকটা কেটে গেছে। হেলমেট খুলার পর কপালেও অনেকখানি ফাটল দেখা যায়। মূলত হেলমেটের চাপে মাথা খানিকটা ফাটে। শ্রাবণ সবাইকে সরিয়ে সামিকে নিজের গাড়িতে তুলে। ইচ্ছেমতো সবাইকে বকা দিতে শুরু করে। এতক্ষণ ধরে এক্সিডেন্ট হয়েছে অথচ সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলো, কেউ আসেনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে। রাগে শ্রাবণ একাই সামিকে নিজের গাড়িতে তুলে। সামির মাথা নিজের কাঁধে নিয়ে ড্রাইভ শুরু করে।
২৭!!
হাসপাতালে এডমিট করার পর থানায় জি. ডি. করে। কীভাবে কার গাড়ির সাথে ধাক্কা লাগলো সেসব কিছুই শ্রাবণ জানেনা। সামির জ্ঞান না ফিরা পর্যন্ত কিছুই জানা যাবেনা। সামির ট্রিটমেন্ট শুরু হওয়ার পর শ্রাবণ মেঘকে ফোন করে আসতে বলে। কারণ শ্রাবণ ভালো করেই জানে মেঘ সামির কাছের বন্ধু। মেঘের কাছে সামির পরিবারের কোনো খোঁজ থাকতে পারে।
শ্রাবণ হাসপাতালের করিডরে পায়চারি করছে। দু’হাত মুষ্টি বদ্ধ করে আল্লাহর দরবারে সামির প্রাণভিক্ষা চাইছে। আধাঘন্টা পর মেঘ আর ইরা একসাথে হাসপাতালে আসে। প্রায় সন্ধ্যে হয়ে গেছে ওদের হাসপাতালে আসতে। মেঘ দৌঁড়ে যায় শ্রাবণের কাছে। শ্রাবণকে অপারেশন থিয়েটারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মেঘ ভয় পেয়ে যায়। কাঁপা কাঁপা গলায় মেঘ জানতে চাইলো,
_শ্রাবণ, সামির কী অবস্থা?
_জানি না রাত্রি, অপারেশন হচ্ছে। বড় ধরনের বিপদ হওয়ার আগেই আমি ওখানে পৌঁছে ছিলাম নয়তো আজ সামিকে,
_কীভাবে হলো এটা?
_আমি কিছু জানি না। অফিস থেকে ফিরার পথে রাস্তায় মানুষের ভীড় দেখে পাশে গিয়ে দেখি সামি ওখানে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।
_এটা কী নরমাল এক্সিডেন্ট না কি অন্যকিছু?
_অন্যকিছু বলতে!
_আমার মন বলছে এই এক্সিডেন্টের পিছনে কারো হাত আছে।
_কী বলতে চাইছো?
_পরে বলবো, এখন এসব আলোচনা করার সময় নেই।
_কে আছে এই পৃথিবীতে যে সামির ক্ষতি করতে চায়?
_কেউ তো আছেই, যে সামনে আসছে না। আড়ালে থেকে প্রতিশোধের খেলায় মেতে উঠেছে।
_কার এতো জেদ সামির উপর?
_এর উত্তর তো সামিই দিতে পারবে।
অপারেশন শেষে সামিকে কেবিনে শিফট করা হলে সবাই সামির কাছে যায়। সামি তখন ঘুমাচ্ছিল। সামির বাবা-মাকে মেঘ খবর দিয়ে হাসপাতালে আনিয়ে নেয়। শুধু মেঘ ভেতরে থেকে সবাইকে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে বলে। অসুস্থ রোগীর কাছে এত মানুষ থাকা সেইফ না। সামি যেহেতু মেঘকেই ভালো চিনে তাই মেঘের উচিৎ সামির পাশে থাকা। আর মেঘ সামনে থাকলে সামি ভালো করে বলতেও পারবে এক্সিডেন্টের ব্যাপারে। বাবা-মায়ের সামনে এসব আলোচনা করলে ওনারা ভয় পেয়ে যাবেন তাই ওনাদেরকে সামনে রাখা ঠিক হবেনা।
সামির বাবা-মা শ্রাবণের থেকে সব জানার চেষ্টা করছেন। ইরা আর শ্রাবণ মিলে সামির বাবা-মাকে সামলানোর চেষ্টা করছে যাতে ওনারা বেশি ভয় না পান। সামির তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি, কপালের একপাশে ব্যান্ডেজ, হাতে, আর পায়ে ব্যান্ডেজ। তল পেটে কয়েকটা সেলাই করে সেখানেও ব্যান্ডেজ। কয়েকদিন স্বাভাবিকভাবে হাটতে পারবেনা এটাই ডক্টর বলে গেছেন। মেঘ কেবিনে থাকা সোফাতে বসে সামির জ্ঞান ফিরার অপেক্ষা করছে।
সামি ধীরে ধীরে চোখ খুলে নিজেকে হাসপাতালে দেখতে পায়। সোজা হয়ে উঠতে গেলে মেঘ এগিয়ে যায় সামির কাছে। তারপর শ্রাবণকে ডেকে আনে মেঘ। শ্রাবণ এসে সামির পাশে বসে। সামির থেকে জানার চেষ্টা করে কীভাবে এক্সিডেন্ট হলো? সামি সবটা বললো কীভাবে গাছের গুড়ি গাড়ির সামনে আসে। এমনকি শুরুতে কী ঘটেছিলো? যখন মেঘকে কেউ ফলো করছিলো সে কথা সামি জানার পর পরই সামির উপর এট্যাক হয়, এটা সামি এতক্ষণে বেশ বুঝে নিয়েছে। শ্রাবণ সামিকে বলল,
_তুমি কী চিনতে পেরেছো তাঁদের?
_না, তবে আমার মন বলছে এদের কেউ আমাকে চিনে। নয়তো আমি সব স্কেচ ভাইরাল করার পরেই কেনো আমার এক্সিডেন্ট হবে? তাও এমন এক্সিডেন্ট যা হওয়ার আশঙ্কাও ছিল না।
_ভেবো না আমরা সব খুঁজে বের করবো। তোমার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ওরা রাত্রির খোঁজে করছে আই মিন ওরা রাত্রিকে ফলো করছে।
_হ্যাঁ,
_কিন্তু রাত্রির সাথে ওদের কী লিংক থাকতে পারে? যার জন্য ওরা খুঁজে খুঁজে মরিয়া হয়ে যাচ্ছে।
_আমি জানি না শ্রাবণ, আমি শুধু এটা জানি রাত্রিকে সেইফ রাখতে হবে। প্লিজ তুমি ওর খেয়াল রেখো৷ আজ ওরা আমার উপর এট্যাক করেছে কাল হয়তো রাত্রির উপর এট্যাক করবে।
_আমি তো এসব কিছু বুঝতেই পারছে না। কেন কেউ শুধু শুধু তোমাদের ক্ষতি করতে চাইছে?
_ক্ষতিটা আমার নয় রাত্রির করতে চাইছে। আজ এ্যাটাকটা আমার না রাত্রির উপর হওয়ার কথা ছিল। ক’দিন ধরে রাত্রিকে না কি কেউ ফলো করে। যেখানেই যায় সেখানেই কারো না কারো উপস্থিতি টের পায়।
_কী!
শ্রাবণ রাগে নিজের হাতটা দেয়ালের সাথে ধাক্কা দেয়। মেঘ শ্রাবণের হাত ধরে শ্রাবণকে শান্ত থাকতে বলে। শ্রাবণ মেঘের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মেঘ বলে, মেঘ কারো কোনো ক্ষতি করেনি, কে বা কারা ওকে মেরে ফেলতে চাইছে সেটা মেঘ জানেনা। তবে কেউ যে মেঘকে ফলো করে সেটা মেঘ ঠিকই এতদিন টের পেয়েছে।
চলবে…
ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।