#ক্যানভাস_
লেখনীতে : তামান্না আক্তার তানু
পর্ব : (৯)
_এই মুহুর্তে আমার মনের রাজ্যে রঙধনুর সাতরঙের হাজারো ছড়াছড়ি, যার প্রতিটা রঙ আমাকে বলছে, হ্যাঁ তুমি পারবে কারো জীবন সাজাতে। তোমাকে পারতে হবে, কারণ; তোমাকে নিয়ে তাঁর জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হবে। সে বুঝতে পারবে তুমিই সেই ব্যক্তি যার জন্য সে এতদিন অপেক্ষা করে থেকেছে। আমি শুধু এইটুকু আজ বলতে চাই, এই কথাগুলো শুধু তোমাকে ঘিরে শ্রাবণ, শুধু তোমাকে ঘিরে। হয়তো আমি পারবো না তোমার অতীতের দাগ মুছিয়ে দিতে, তবে আমি চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখবো না। কারণ আমি জানি, চেষ্টা মানুষের সকল কামিয়াবির পিছনে সবচাইতে বড় হাতিয়ার। আর আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টাকে কাজে লাগিয়ে মুছে দিব তোমার সমস্ত অতীত, রাঙাবো তোমার বর্তমান আর সেই বর্তমানের কিছু রঙমাখানো তুলি দিয়ে আঁকবো ভবিষ্যতের নতুন ক্যানভাস। যে ক্যানভাসে আঁকা থাকবে শ্রাবণ মেঘের সুখের ছবি। যেখানে থাকবে রঙের হাজারও মাখামাখি আর কিছু সুখের ছোঁয়া। জানি তোমার অতীত আমি বদলাতে পারবো না, কিন্তু; আমি এটা জানি তোমার বর্তমানটা আমি আমার মতো করে সাজাতে পারবো। যদি তুমি আমার পাশে থাকো। সবার সামনে আজকে আমি এইটুকু বলতে চাই, একবার বিশ্বাস করে দেখো, কখনও ঠকবে না তুমি।
মেঘ একটু থেমে নিজের ডানহাতটা বাড়িয়ে দেয় শ্রাবণের দিকে। আদনান, সামি, সাকিব, সবাই শ্রাবণকে ইশারায় বলল, মেঘের হাতে হাতটা রাখতে। শ্রাবণ কাঁপা কাঁপা হাতে মেঘের ডানহাতটা স্পর্শ করে। দু’জনে দু’জনের হাতটা শক্ত করে ধরে। মেঘ শ্রাবণকে বলল,
_বিশ্বাস করো তো আমায়?
_খুব।
মেঘ মুচকি হেসে উঠে। রাত ২ টা পর্যন্ত সবাই শুধু আড্ডাই দিতে থাকে। হুট করে শ্রাবণ খেয়াল করে রাত দু’টো বাজে। আদনান, আর সাকিবকে নিয়ে উঠে দাঁড়ায় শ্রাবণ। মেঘের থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় যেতে চায়। মেঘ অনেক বুঝায়, আজকের রাতটা অন্তত থেকে যাক সবাই তাহলে একটু আনন্দ উল্লাস করতে পারবে। কিন্তু; শ্রাবণের আজ বাসায় যাওয়া লাগবেই। সারারাত আড্ডা দিলে চলবে না, সকালে অফিস আছে। মেঘকে অনেক বুঝানোর পর মেঘ মানতে রাজি হয়। শ্রাবণ, আদনান, সাকিব তিনজনে মেঘদের বাসার সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় যাওয়ার পথে রওয়ানা দেয়। সামি চলে যেতে চাইলে মেঘ জোর করে সামিকে আটকে রাখে। শুধু আজকের রাতটা থেকে যেতে বলে। নওরিন, সামি, ইরা, মেঘ চারজনে মিলে ছাদে আবারও গল্প জমায়। সামি কথায় কথায় মেঘকে বলল,
_আচ্ছা মেঘ তুমি একটা সত্যি কথা বলবে?
_বলো না কি জানতে চাইছো?
_তুমি কি আমার আইডির লিংকটা কাউকে দিয়েছো?
_কই না তো, আমি কেন তোমার আইডির লিংক অন্য কাউকে দিতে যাব?
_বেশ ক’দিন ধরে আমার মনে হচ্ছে, কেউ আমাকে ফলো করছে। আমি এতদিন সেটা বুঝতে না পারলেও আজকে তার কিছু ইঙ্গিত পেয়েছি, তাই আমার মনে হচ্ছে কেউ আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে ফলো করতে করতে আমার সম্পর্কে অনেক তথ্য সংগ্রহ করছে।
_তাই নাকি, কে সে?
_কে সে জানি না। তবে সে যে একটা মেয়ে সেটা বেশ বুঝতে পারছি।
_ওরে বাবা! শেষমেশ কোনো মেয়ে তাহলে এই বনমানুষটার প্রেমে পড়লো?
_ইহ! মেয়ে মানুষ পড়বে তাও আবার আমার প্রেমে!
_পড়বে সামি পড়বে, আমার তো মন বলছে সে তোমার প্রেমে আজ লাইলি হয়ে গেছে।
_রক্ষা করো আমায়, তবুও এই মজনুর ক্যারেক্টার দিও না।
_কেন কেন? মজনু কি খুব খারাপ ছিল?
_ভালো খারাপ যাই হোক, আমি এই মজনুর মতো প্রেমে একেবারে মজে থাকতে পারবো না। আমার দ্বারা এই প্রেম ট্রেম হবে না।
_শিওর তুমি!
_হ্যাঁ, শিওর।
বেশ কিছুসময় সবাই মিলে আড্ডা দেয়। আড্ডার ছলে ইরা বারবার সামিকে দেখছে। সামি, ইরার চোখাচোখি হলে ইরা নিজের চোখ ঘুরিয়ে নেয়। আবার সামি ইরার দিকে তাকালে ইরা মুখ দিয়ে ভেঙচি কাটে, এইভাবে নানারকম দুষ্টামি করে দু’জনে। সামি ইরার সাথে এসব ফাজলামি করে বেশ রিলাক্স ফিল করছে। মনের ভেতরে একটা ভারি বোঝা সরে যাচ্ছে। আড্ডা দেওয়া শেষ হলে সবাই ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয়। মেঘ, ইরা, নওরিন তিনজনেই একই রুমে। আর সামিকে গেস্ট রুমে থাকার ব্যবস্থা করে দেয় মেঘ। তিনজনে মিলে বেশ জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। ইরা আড্ডার মাঝখানে মেঘকে বলল,
_মেঘ তোর ফ্রেন্ডটা এমন গম্ভীর কেন রে?
_আমি জানি না রে। মনে হয় ওর কিছু হয়েছে, আমার থেকে লুকানোর চেষ্টা করছে।
_আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে তোর ফ্রেন্ড প্রেমে ছ্যাকা খাইছে।
_ইম্পসিবল! সামি এরকম ছেলে না।
_তাহলে ওর আইডিতে এত সেড পোস্ট কেন?
_মানুষ কি শুধু ছ্যাকা খেলেই সেড পোস্ট দেয়?
_না ঠিক তা নয়, তবে ওর প্রত্যেকটা পোস্টের ছ্যাকার অনুভূতি মিশে থাকে। বড় ধরনের ধাক্কা না খেলে কেউ এমন পোস্টটা করে না।
_তোর কোন পোস্ট দেখে এমন মনে হয়েছে?
_দাঁড়া দেখাচ্ছি।
ইরা তাড়াতাড়ি নিজের ফোন বের করে ফেইসবুকে ঢুকে সামির প্রোফাইলে ডু মারে। রিসেন্ট একটা পোস্ট দেখা যায় সামির টাইমলাইনে। ফিলিং সেড…
“প্রথম দেখা যখন কারো মনে প্রেমের ভার্তা নিয়ে আসে, সে প্রেম শুধু যদি একজনের মনকেই রাঙিয়ে যায় তাহলে একটা রঙমাখানো ক্যানভাস কখনও পরিপূর্ণ হয়না। ধূসর রঙের সেই রঙ শুধু অজানাতেই তলিয়ে যায়, যার গভীরতা আছে কিন্তু কোনো সীমানা নেই।”
২২!!
মেঘ, ইরা, নওরিন তিনজনেই পোস্টটা দেখে হাসতে হাসতে পাগলপারা। ইরা পোস্টে একটা কমেন্ট লিখলো,
“সবসময় শুধু নিজের চাওয়া পাওয়ার হিসাব রাখবেন! কখনও কি আশেপাশে চোখ ঘুরিয়ে দেখবেন না, কোনটা প্রেম আর আর কোনটা অনুভূতি?”
ইরা কমেন্ট সেন্ড করে রিপ্লাইয়ের অপেক্ষা করে, কিন্তু সামি অফলাইনে চলে যাওয়ায় আর রিপ্লে আসে না সামির আইডি থেকে। ইরা মন খারাপ করে অনলাইন থেকে অফলাইনে চলে আসে। ইরার মুড অফ দেখে মেঘ ইরাকে জিজ্ঞেস করল,
_কী রে তোর মুখটা অমন দেখাচ্ছে কেন?
_কত সুন্দর একটা কমেন্ট করলাম? সিন না করেই অফলাইনে চলে গেল!
_সামি কি জানে এতদিন তুই তাকে ফলো করেছিস?
_নাহ।
_তাহলে সত্যিটা বলছিস না কেন?
_তখনই বলবো যখন ওর মনে আমার জন্য অনুভূতির একপশলা বৃষ্টির সৃষ্টি হবে, তার আগে নয়।
_বাহ্বা, কী প্রেম!
_আর তোরটা বুঝি প্রেম না।
_না! আমাদেরটা হবে বিশ্বাস, ভরসা, আর ভালোবাসার একটা মিষ্টি সম্পর্ক।
_মিথ্যে পরিচয়ে ওর জীবনে প্রবেশ করছিস, তুই কি ভাবছিস এতে ভাইয়া কষ্ট পাবে না?
_হ্যাঁ কষ্ট পাবে, কষ্ট আমিও পেয়েছি, কিন্তু আনিকার দেওয়া কষ্টের কাছে এই কষ্ট কিছুই না। আনিকার দেওয়া কষ্ট হজম করতে হলে আপাতত আমার মিথ্যেটাকে মেনে নিয়ে চলতে হবে ওর। যদি শ্রাবণ সেটা না পারে তাহলে হয়তো ওর জীবন থেকে হারিয়ে যাবো। আমি জানি, ওকে কষ্ট দেওয়া ঠিক হচ্ছে না, কিন্তু; এই মুহূর্তে যদি আমি শ্রাবণকে সত্যিটা হলে দেই তাহলে শ্রাবণ এই বিয়ে ভেঙে দিবে, আর একবার এই বিয়ে ভেঙে গেলে আমি শ্রাবণকে সারাজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলবো, তাই আমি চাই না আজ সত্যিটা বলে শ্রাবণকে হারাতে। যদি কখনও এমন হয়, এই সত্যিটা কারণে শ্রাবণ আমার থেকে দূরে যেতে চায়, সেদিনই হবে আমার এই পৃথিবীতে শেষ দিন।
_মেঘ তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এমনটা নাও হতে পারে।
_তাহলে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবো, শ্রাবণকে জীবনে পাওয়ার জন্য।
_এতো ভাবিস না মেঘ, সব ঠিক হয়ে যাবে। শ্রাবণ তোকে একদিন ভালোবাসবেই।
_এই বিশ্বাস নিয়েই এতদূর এগিয়েছি আমি, সত্যিটা বলে মাঝপথে সব শেষ করে দিতে চাই না। ওর কষ্ট ভুলার কারণ হতে চাই, যেভাবে হোক আমাকে পারতেই হবে। ওর মন থেকে আনিকাকে চিরদিনের জন্য মুছিয়ে ফেলতে হবে।
_যদি কখনও আনিকা ফিরে আসে। আর যদি ভাইয়া সব জেনে আনিকার কাছে ফিরে যায়।
_বললাম তো, এমনটা হলে সেদিনই মেঘ এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করবে।
_কঠিন কোনো সিদ্ধান্ত নিস না, আর এতো অধৈর্য হস না, আল্লাহ কোনো না কোনো উপায় ঠিকই বের করে দিবেন।
_হ্যাঁ, তারই অপেক্ষায় আছি। চল ঘুমাই খুব ক্লান্ত লাগছে।
নওরিন মেঘের কথাগুলো শুনে নিরব হয়ে যায়। মনেমনে ভাবতে লাগলো,
_ভালোবাসার মানুষটার জন্য, তাকে সুখী করার জন্য, তাঁর চোখের কষ্টের অশ্রু মুছে দেওয়ার জন্য নিজের সব তথ্য গোপন রাখলি তুই। তোর উদ্দেশ্যটা সফল হোক এইটাই দোয়া করি। ভয় হয় তোর এতো কষ্ট তাঁর সঠিক মর্যাদা পাবে কি না এইভেবে! আল্লাহ তোর ইচ্ছে পূরণ করুক যাতে তুই শ্রাবণের মনে ঠাঁই করে নিতে পারিস।
নওরিন অনেক ভাবলো মেঘকে নিয়ে, একসময় ঘুম চলে আসে নওরিনের চোখে। নওরিন ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয়। তিনজনেই ঘুমিয়ে পড়ে। খুব ভোরে তিনজনেই একসাথে ঘুম থেকে উঠে। নামাজ পড়ে বাইরে বের হয় হাঁটতে। মেঘদের বাসার কাছেই একটা ছোট পার্ক, সেই পার্কেই তিনজনে মিলে হাঁটাহাঁটি করছে গল্প করছে। মেঘের বিয়ে নিয়ে নওরিন আর ইরার যে কত প্লেন! সেইসব কথা নিয়ে আলোচনা করছে। মেঘ ওদের প্লেন শুনছে আর হাসছে। ওদের একেকজনের একেকরকম প্লেন যা মেঘকে হাসাতে বাধ্য করছে।
ঘন্টাখানেক হাঁটাহাঁটি করে আবারও বাসায় চলে আসে সবাই। ছাদে গিয়ে দেখে সামি ছাদে বসে বসে কফি খাচ্ছে। সামিকে একা দেখে তিনজনেই সামির কাছে যায়। ইরা সামিকে বলল,
_আমাদেরকে রেখেই সকালের নাশতা খেয়ে নিলেন।
_জ্বী না ম্যাম, আমি এতো পেটুক নই, আপনাদের কাউকে পাইনি দেখে শুধু কফিটাই গিলছিলাম। ভাবলাম সবাই মিলে একটু ঘুরাঘুরি করবো তা না আমাকে একা রেখে ওনারা বাইরের হাওয়া খেয়ে এলেন।
_ইশ কী আফসোস! আমরা আগে জানলে অবশ্য আপনাকে সাথে নিতাম।
_আমার বেশি মিষ্টি হজম হয় না।
_কী বলতে চাইছো?
_অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ।
_এতো বড় সাহস তোমার!
_এটা তো কম, আরো বেশি দেখাতে পারি।
_হ্যাঁ তো, দিনে দিনে বিরহ আড়াল করে ওনি সাহস দেখাবেন। যাকে ভালোবাসি তাকে সত্যিটা না বলে লুকিয়ে লুকিয়ে মনের কষ্ট লুকিয়ে ফেইসবুকে আপলোড দেওয়া মানুষের আবার সাহস। জানা আছে আমার তোমার বাহাদুরি।
_বার বার ফেইসবুক স্ট্যাটাস কেন টানো তুমি? কে তুমি? কনো বারবার একই টপিক নিয়ে আমার সামনে আসছো? কী বুঝাতে চাও আমায়? আমার সব কষ্ট তুমি জানো? কিছু জানো না তুমি, আর জানতেও পারবে না।
সামি রাগ দেখিয়ে হাতের মগটা নিয়ে ছাদ থেকে নেমে আসে। রুম ঢুকে ফোন আর মানিব্যাগ নিয়েই বেরিয়ে পড়ে মেঘদের বাসা থেকে। মেঘ পিছন থেকে অনেক ডাকলেও সামি পিছু ফিরে তাকায় না। মেঘের বাবা-মা সামিকে আটকাতে চাইলে সামি কাজের অজুহাত দেখিয়ে চলে আসে। ইরা শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সামির রেগে দেখছে কিন্তু কিছু বুঝে উঠতে পারলো না। ইরার এমন বোকামির জন্য ইরা নিজেই নিজেকে গালি দিতে থাকে। মেঘ, নওরিন দু’জনে ইরার পাশে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। মেঘ ইরাকে বলল,
_দিলি তো সামিকে কষ্ট। আরে বাবা একজন মানুষ যখন সত্যি লুকিয়ে সুখ খুঁজে পায়, বেঁচে থাকার আনন্দ খুঁজে পায়, তাহলে তাকে কেন বারবার এসব বলে কষ্ট দিচ্ছিস তুই? মানলাম তোর জানার আগ্রহ আছে, আগ্রহ থাকতেই পারে। একটা ছেলেকে পছন্দ হলে তাঁর ব্যাপারে জানার কৌতূহল জাগে, এটাও জানার আগ্রহ থাকে কাউকে ভালোবাসে কি না? যদি কাউকে ভালোবাসে তাহলে সে কে? কিন্তু ইরা এসব এইভাবে জানতে পারবি না তুই। ধীরেধীরে তোকে সামির মনের ভেতরে প্রবেশ করতে হবে। যেখানে প্রবেশ করলে তুই জানার আগেই সামি তোকে বিশ্বাস করে সব জানিয়ে দিবে, শুধু শুধু সামিকে কষ্ট দেওয়ার কোনক মানেই হয় না।
_কী করবো আমি? ওর স্ট্যাটাস দেখলে মাথা কাজ করে না।
_তোর এই মোটামাথা কোনোদিনও কাজ করবে না। ওর রাগ না কমলে আজকে ক্লাসেও যাবে না।
_তুই একটু ওকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা কর না মেঘ।
_ছাড় তো, নাশতা করবো এখন। তারপর ক্লাসে যাব। তোর যা মন চায় তুই তাই কর। আমাকে এসবে টানিস না।
_হুহ্,
মেঘ ইরাকে বকা দিয়ে নাশতার টেবিলে গেল। সবাই মিলে নাশতা শেষ করে মেঘ আর নওরিন ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে রওয়ানা দেয়।
২৩!!
ক্যাম্পাসের গেইটের কাছে যেতেই মেঘ পিছু ফিরে একবার তাকায়। কেমন যেন অদ্ভুত একটা অনুভূতি কাজ করতে শুরু করে মেঘের ভেতরে। মেঘ পিছু ঘুরে তাকালে আশেপাশে শুধু কলেজ স্টুডেন্টদের দেখতে পায়। আবার হাঁটতে শুরু করলে আবারও এমন অনুভব হয়। মেঘ মাঝপথে থমকে দাঁড়ায়। মেঘের এমন আচরণ নওরিনকে বেশ অবাক করে। নওরিন মেঘকে বলল,
_তোর কী হয়েছে মেঘ? বারবার পিছু ঘুরে কাকে খুঁজিস?
_কেউ আমাকে ফলো করছে নওরিন।
_তোকে কে ফলো করবে?
_বুঝতে পারছি না, কেন জানিনা মনে হচ্ছে কেউ আমাকে অনেকটা সময় ধরে ফলো করছে।
_মেঘ ছাড় তো, এটা তোর ভুল ধারণা। ক্লাসে দেরী হচ্ছে ইয়ার, তাড়াতাড়ি আয়।
মেঘ অস্পষ্ট জবাব দিয়ে ক্লাসে দিকে এগোতে থাকে। যত এগোও ততই মনে হয়, কেউ মেঘকে খুব করে ফলো করছে। ভয়ে মেঘ আর পিছু ফিরে তাকায় না। মেঘের মনে শ্রাবণকে নিয়ে চিন্তা ঢুকে যায়। যদি শ্রাবণ মেঘকে ফলো করে এখানে আসে তাহলে শ্রাবণ সব জেনে যাবে। মেঘ সন্দেহ কাটাতে পারছে না, ঠিকমতো ক্লাসও করতে পারছে না। মনের মধ্যে অশান্তি শুরু হয়েছে মেঘের। কোনমতে ক্লাস শেষে করে ক্যান্টিনে আসলো মেঘ। ফোন বের করে শ্রাবণের নাম্বারে ডায়াল করলো। শ্রাবণ তখন অফিসের কাজে একটু ব্যস্ত ছিলো তাই মেঘের কলটা রিসিভ করতে পারছিল না। কয়েকবার রিং হওয়ার পর শ্রাবণ কল রিসিভ করে। শ্রাবণ কল রিসিভ করতেই মেঘ রাগ দেখাতে থাকে। রাগের মুডে শ্রাবণকে বলল,
_কখন থেকে কল দিয়ে যাচ্ছি, কোথায় তুমি? কল রিসিভ করতে এতো সময় লাগে?
শ্রাবণ ঝাড়িটা হজম করে একটু হাসে। তারপর মেঘকে বলল,
_আমি অফিসে ম্যাডাম, কিছু জরুরি ফাইল চেক করছিলাম তাই ফোন তোলার সময় পাইনি।
_ওহ সরি!
_কী হয়েছে তোমার?
_না কিছু না, অফিস শেষ হবে ক’টায়?
_তিনটের দিকে বাসায় যাবো। আসতে হবে?
_না প্রয়োজন নেই।
_রাখতে পারি।
_হুম।
মেঘের ভেতরে সন্দেহ বাড়তে থাকে। শ্রাবণের কথাবার্তা শুনে মেঘ আরো ভয় পেয়ে যায়। তাহলে কি শ্রাবণ মেঘকে ফলো করছে? যার জন্য এতো তাড়াতাড়ি কল কেটে দিল। কোনো প্রকার গুরুত্ব দিলো না মেঘের ফোন। এমনকি এতো দেরীতে ফোন রিসিভ করলো। শ্রাবণের সব হাবভাব মেঘের মনে নানান চিন্তা ঢুকিয়ে দিল।
টেনশন ভর্তি চেহারা নিয়ে মেঘ আর্ট ক্লাসে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়। ক্লাসে যেতেই সামির সাথে দেখা। গল্প করতে করতে অনেক গুলো আর্ট কমপ্লিট করলো তিনজনে। মেঘ মনের সব সন্দেহের কথা সামির সাথে শেয়ার করলো। সামি সব শুনে মেঘকে ভরসার হাত দিয়ে বলল,
_চিন্তা করো না, আমি দেখছি ব্যাপারটা।
_আমার খুব টেনশন হচ্ছে সামি, যদি শ্রাবণ সব জেনে এই বিয়েটা ভেঙে দেয়।
_দূর পাগলি, এরকম কিছুই হবে না। টেনশন ফ্রি থাকো সব ঠিক হয়ে যাবে।
মেঘ সামিকে বিভিন্ন ক্লু দিল যাতে সামি সেই মানুষটাকে খুঁজে বের করতে পারে, যে মেঘকে ফলো করছে। আলোচনা শেষ হলে ওরা আর্ট কলেজ থেকে বেরিয়ে কলেজের গেইটের কাছে আসে। গেইটে আসতেই মেঘ বড়সড় একটা ধাক্কা খায় শ্রাবণকে দেখে। এই টাইমে শ্রাবণ এখানে, তাও মেঘের সামনে। শ্রাবণের তো তিনটের দিকে বাসায় যাওয়ার কথা। বিকাল চারটা বাজে। পরনের পোশাক দেখে মনে হচ্ছে মাত্র অফিস থেকে বেরিয়েছে। তাহলে আগের কথা কি মিথ্যে ছিলো? শ্রাবণ কেন মেঘকে মিথ্যে বলল।
চলবে
ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।