না_চাওয়া_পূর্ণতা পর্ব : ১২

0
1406

#না_চাওয়া_পূর্ণতা ?
লেখক : সানজিতা আক্তার মীম
পর্ব : ১২

তাহা চলে যাওয়ার পর তনুও উঠে চলে যায়। সায়ন তা দেখে মন খারাপ করে ফেললো৷ অন্তুর কাছে তাহার ব্যাপারটা ভালো লাগে নি তাই তাহা ভেবে নিয়েছে ও কি করবে।

অন্তু : (তুমি আমার মাম্মাম আর বাবাই এর সাথে সমস্যা করাতে চাও কিন্তু তা আমি হতে দিব না। তোমাকে আমি দেখে নেব। হুহ) মনে মনে
সবাই কলেজের উদ্দেশ্যে বের হতে নিলে তাহা বললো যে ও কলেজের সামনেই যাবে। তাই সায়নের গাড়িতে করে ওদের সাথে যাবে। তাহা এবারও ওই দিন এর মতো আগের সিটে বসার জন্য যাচ্ছিলো,,

অন্তু : আন্টি, আপনার চুল এলোমেলো হয়ে গেছে রুম থেকে ঠিক করে আসো আমরা এখানেই দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি।
তাহা : কি বলো, সত্যি!! ইস্ আমি এক্ষনি ঠিক করে আসছি। ( বলে রুমে চলে গেলো)
অন্তু সায়নকে কানেকানে বললো,,
অন্তু : বাবাই ঝামেলা শেষ চলো যাই।( দাঁত কেলিয়ে)
সায়ন : এইনা আমার মেয়ে। ( বলে কোলে নিয়ে হাঁটা শুরু করলো।)

তনু ওদের পিছনে পিছনে এসে পেছনের সিটে বসতে নিলে সায়ন জোর করে সামনে বসিয়ে নিজেও বসে পরলো৷ তাহা বাসা থেকে বের হয়ে এসে দেখে গাড়ি নেই। সায়ন ওকে রেখে চলে গেছে । তা দেখে তাহা হাত মুষ্টিবদ্ধ করে,,,
তাহা : আমি এর সোধ তুলবোই। শুধু আজ বিকেলের অপেক্ষা।

এদিকে ওরা কলেজে এসে যে যার মতো কাজ করছে। আজ কলেজে একটা প্রোগ্রাম আছে। তাই সবাই বিজি। তাহাও কলেজে এসেছে। সায়ন তাহাকে দেখে কিছুটা ঘাপলা মনে হলো। কারণ তাহা কলেজের কিছুই না। ও কেন আসবে। তাও কিছু বলে নি। ভাবলো তাহা নারায়নগঞ্জে নিউ। এখানে কিছু চিনে না তার চেয়ে কলেজে থাকুক। তাহলে কোনো প্রবলেম হবে না।
কিন্তু তাহা যে কি নিয়তে আসছে তা তো সায়নের ধারনার বাইরে।

সায়ন ওর রুমে বসে কাজ করছিলো। হঠাৎ তাহা রুমে আসে।
সায়ন : তাহা তুমি এখানে কেন? ( বিরক্ত হয়ে)
তাহা : তুমি যেখানে আমার তো সেখানেই থাকার কথা সায়ন বেবি (বলে সায়নের কোলে বসে পরলো।)

সায়ন ওর রুমে থাকা সোফায় বসে কাজ করছিলো। তাহা সায়ন এর কোলে বসায় সায়ন অবাক হয়ে যায়।
সায়ন : এসব কি তাহা!
তাহা : সায়ন তুমি কেন বুঝতে পারছো না আমি তোমাকে কতোটা ভালোবাসি। চলো না আমরা বিয়ে করে ফেলি।
সায়ন কিছু বলার আগেই জানালার পাশে দাড়িয়ে থাকা তনুর দিকে চোখ পরে।তনু এখান দিয়ে যাচ্ছিলো তখনই তাহা সায়নকে ভালোবাসি বলছিলো। তা দেখে তনুর চোখে আপনাআপনি পানি চলে এলো। তনু দৌড়ে ওইখান থেকে চলে গেলো।
সায়ন ধাক্কা দিয়ে তাহাকে ফেলে দিয়ে তনুর কাছে যেতে লাগলো। তনু দৌড়ে হলে চলে এসেছে যেখানে সবাই ছিল।সায়ন তনুর পেছনে এসে তনুর হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরালো।
সায়ন : তনু প্লিজ ভুল বুঝো না। ও আমাকে ভালোবাসে আমি না। আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি।
সায়ন তনুর হাত ধরাতে সবাই এখন ফোকাস মেরে ওদের দেখছে। কয়েকজন তো বাজে বাজে কথাও বলছে,,

১ম : দেখেন, দেখেন, কলেজের মধ্যে কি হাত ধরাধরি করছে। লজ্জা বলতে কিছু নেই।
২য় : এই মেয়েও তো ওর হাত ধরে আছে তাও কিছু বলছে না।
১ম : এই মেয়ে কি আর বলবে। দেখেন না, জামাইর কোনো ঠিক নাই। মেয়ে হওয়ার পর থেকা আজ অবদি মেয়ের জামাই কে দেখাতে পারলো না। এখন এই বড়লোক ছেলেটা কে ও ফাসিয়ে নিসে।
২য় : ছি কি নোংরা মেয়ে।

এদের কথা শুনে তনু কিছু বললো না কারণ এই ৫ বছরে তনু এমন অনেক কথা শুনেছে। একটা মেয়ে মানুষ স্বামী ছাড়া সন্তান নিয়ে সমাজে বেঁচে থাকতে হলে অনেক সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়। আমাদের সমাজ ব্যবস্থাটা এমন যে কোনো কিছু হলেই সব দোষ মেয়েদেরই দেওয়া হয়। যদি কোনো স্বামী তার স্ত্রীকে হত্যা করে তাহলে সবাই বলে মনে হয় মেয়ে খারাপ ছিলো। আবার যদি কোনো মেয়ে স্বামীকে খুন করে তাহলেও সমাজ মেয়েকেই খারাপ বলে৷ মেয়েটা কতো খারাপ স্বামীকে মেরে ফেলসে। আর যদি সন্তান নিয়ে একা থাকে কোনো মেয়ে তাহলে তো তাকে নিয়ে কথার শেষ নেই।
তনুকে তো অনেকে বাজে প্রস্তাবও দিয়েছিলো যখন তনু জব ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিল। বলেছিলো যে ,” তার সাথে রাত কাটাতে তার বিনিময়ে তনুকে অনেক টাকা দিবে।” সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে সাহায্যের বিনিময়ে খারাপ প্রস্তাব রাখে। বিপদে পরা মানুষের সুযোগ নিতে চায়। তনু এসব ফেস করতে করতে পাথর হয়ে গেছে।
কিন্তু সায়ন সহ্য করতে পারলো না তার প্রিয়তমার বিরুদ্ধে এমন বাজে কথা। তাই ও ওই মহিলা গুলোকে বলতে লাগলো,,

সায়ন : আপনারা তনুকে বাজে কথা বলছেন কেন? আপনাদের কি আল্লাহতালা চোখ দেয় নি। দেখতেই তো পাচ্ছেন যে আমি তনুর হাতটা ধরেছি, তনু না। নোংরা তনু না, নোংরা আপনাদের চিন্তা ভাবনা। নিজের চিন্তাভাবনা বদলান।

তাহা এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে বলতে শুরু করলো,,,

তাহা : তারা তো ঠিকি বলছে। তনু যেহেতু এতো ভালো তাহলে ওর মেয়ের বাবা কে তা সবাইকে বলে নি কেন? বিয়ে করেছে কি না তাতেও সন্দেহ। কোন নর্দমার পাপ নিয়ে ঘুরছে কে যানে। এখনতো তোমাকেও আমার কাছে থেকে কেড়ে নিতে এসেছে। নষ্টা মেয়ে একটা।

তাহার কথা শেষ হওয়ার আগেই ঠাস্ । তাহা গালে হাত দিয়ে সায়ন এর দিকে তাকিয়ে আছে। সায়ন এর চোখ অসম্ভব রকমের লাল হয়ে আছে। যেন চোখ দিয়েই সব ভস্ম করে দিবে।

তনু তাহার কথা শুনে নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। চলে যেতে নিচ্ছিলো তখনই সায়ন তনুর হাত ধরে সবার সামনে দাড়িয়ে বলতে লাগলো,,,

সায়ন : আপনারা সবাই জানতে চানতো অন্তুর বাবা কে? তাহলে শুনেন। আমি সায়ন রায়জাদা তনুর স্বামী + অন্তুর বাবা। আমাদের বিয়ে হয়েছে ৫ বছর আগে। আর তনুর হাত ওর হাসবেন্ড ধরেছে কোনো পরপুরুষ না। তাই আমার বউ এর নামে আর একটা বাজে কথা বললে তাকে আমি ছাড়বো না। মাইন্ড ইট। ( বলে তাহার দিকে তাকালো) আর তিমি তোমার ছেছরামো বাদ দিয়ে ভালো হয়ে যাও। আমার আর আমার ফেমিলি থেকে দূরে থাকো। ( বলে সায়ন তনুর হাত ধরে চলে এলো ওইখান থেকে)

যারা যারা তনুর নামে বাজে কথা বলছিলো তারা চুপসে গেছে সায়ন এর কথা শুনে। আর তাহা অপমানে সেখান থেকে বের হয়ে গেল।
অন্তুকে নিয়ে সায়ন আর তনু বাসায় চলে এসেছে। তনু কোনো কথা বলে নি কলেজ থেকে আসার পর থেকে৷ তনু রাতে একটুও ঘুমায়নি। তনু শুধু ভেবেছে ও কি করবে। ও কি সায়নকে মাফ করে দিবে নাকি অন্তুকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যাবে। অনেক ভাবার পর তনু সিদ্ধান্ত নিল যে ও সায়নকে মাফ করে নতুন করে সব শুরু করবে।

এসব ভাবতে ভাবতে রাত পার হয়ে গেলো।

In morning,,,,

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here