#টক_ঝাল_মিষ্টি
#তামান্না_আঁখি
#পর্ব-১৪
আজ কুহুর বিয়ে। সকালে উঠে পুরো বাড়িতে সরগরম অবস্থা। শিরিনা বেগম সহ কুহুর খালা ফুফুরাও রান্না ঘরের কাজ সামলাতে ব্যস্ত।একের পর এক রান্না চাপানো হচ্ছে। সবার জন্য ব্রেকফাস্ট এর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। চা বানানোয় যেন ফুরসত নেই। চায়ের কাপে চামচের নড়াচড়ার টুংটাং শব্দ যেন থামছেই না। শিরিনা বেগম ঘড়ি দেখলেন। সকাল আটটার উপরে বাজে। উনি রান্নাঘর থেকে বের হয়ে আশেপাশে যিয়াদকে খুঁজলেন। যিয়াদ কয়েকটা পিচ্চি কাজিনকে নিয়ে খেলছিলো। শিরিনা বেগম ডেকে বললেন কুহুকে ঘুম থেকে তুলতে৷ যিয়াদ ধুপধাপ সিড়ি পেরিয়ে কুহুর দরজার সামনে উপস্থিত হলো। দরজায় জোরে শব্দ করে বললো-
“ভোর হলো দোর খোলো,হুকুমনি উঠোরে
আজ তুমি বিয়ে করে তাড়াতাড়ি বিদায় হও রে!”
কুহু দরজায় আওয়াজ শুনে চোখ পিটপিট করে তাকালো। কানে আসলো যিয়াদের বলা ছড়াটা।যিয়াদ লাগাতার আওয়াজ করছে আর ছড়া কাটছে। কুহু বিরক্ত মুখে উঠে বসলো। একবার মাথা চুলকে চুল থেকে ক্লিপ টা খুলে দরজার দিকে ছুড়ে দিলো,ঠাস করে শব্দ হলো।যিয়াদ কান পেতে শব্দটা শুনে নিশ্চিত হলো কুহু উঠেছে।সে যেভাবে এসেছিলো সেভাবেই চলে গেলো। কুহু কিছুক্ষন ঘুম ঘুম চোখে বসে রইলো। চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলো তনয়া বিছনার কিনারায় শুয়ে হা করে ঘুমিয়ে আছে। গত রাতে তনয়াসহ কুহুর তিন কাজিন তার বিছানা দখল করেছে। বাধ্য হয়ে কুহু তার আরেক কাজিনকে নিয়ে নিচে বিছানা করে শুয়েছে। কুহু উঠে হেলে দুলে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলো। গত রাতে শাড়ি পালটে গেঞ্জি আর প্লাজো পড়ে শুয়েছিলো। এখন আবারো গত রাতের শাড়িটা কোনোমতে প্যাঁচিয়ে পড়ে নিয়ে নিচে নামলো। কুহুর ফুফু কুহুকে দেখে চমকে গিয়ে বললো-
“এই বেক্কল এরকম কুচকানো শাড়ি পড়ে নিচে এসেছিস কেন? নিচে কত বাইরের পুরুষ এসেছে দেখছিস না।যা উপরে যা।”
কুহু তার ফুফুর কথা কানে নিলো না,চেয়ার টেনে ডায়নিং টেবিলে বসে বললো-
“ক্ষুধা লেগেছে ফুফু, চা আর পরোটা দাও।”
“চা খাবি না, চা খেলে ঠোঁট কালো দেখাবে। ফলের রস দিচ্ছি খা।”
কুহুর ফুফু ফলের রস বানাতে অন্যদিক গেলো। ট্রে হাতে কাজের মহিলাকে চা পরোটা নিয়ে ড্রয়িং রুমে যেতে দেখে কুহু উঠে দাঁড়ালো।ট্রে থেকে এক কাপ চা আর পরোটা নিয়ে চুমুক দিতে দিতে সিড়ির দিকে হাঁটা দিলো। কাজের মেয়েটা চিৎকার করে কুহুর কর্মকাণ্ড ফুফুকে জানালো। ফুফু ছুটে এসে হায় হায় করে উঠলো কুহুকে চা খেতে দেখে। কুহু সিড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে চায়ে পরোটা ডুবিয়ে কামড় দিয়ে চাবাতে চাবাতে তার ফুফুকে বললো-
“ঠোঁটে লিপ্সটিক দিয়ে দিব,কালো দেখাবে না।”
ঘরে এসে কুহু ফ্লোরে পাতা বিছানায় বসে আরাম করে চা পরোটা খেলো। খাওয়া দাওয়া শেষ করে শাহাদের আইডিতে ঢুকলো। হলুদের প্রোগ্রামের ছবি আপ্লোড হয়েছে। কুহু প্রতিটা ছবি জুম করে দেখলো। হেসে হেসে মেয়েদের সাথে ছবি তুলতে দেখে কুহু মুখ ভেঙালো। নির্লজ্জ মেয়েগুলোকে মনে মনে গালি দিলো। শাহাদের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে তারপরও বেহায়া মেয়েগুলো তাকে ছাড় দিচ্ছে না। শাহাদের আরো কয়েকটা ছবি জুম করে দেখলো। কি হ্যান্ডসাম ই না লাগছে শাহাদকে। সবসময় কেমন জানি মি.কুল হয়ে থাকে। কোন উত্তেজনা নেই অস্থিরতা নেই, সব কাজেই একদম শান্ত।চোখের দৃষ্টি যেন আরো শান্ত একবার তাকালে মনে হয় গভীর সমুদ্রে ডুবে যাবে। কুহু আরো জুম করলো। লাজুক হেসে নুইয়ে পড়লো। এইতো আর কয়েক ঘন্টা,এরপরেই অপছন্দের পেশা রাজনীতি করা এই ছেলেটার সাথে ওর বিয়ে।
বরযাত্রী এলো সন্ধ্যার পর। কুহুদের ছোট দুতলা বাড়িটার সামনের রাস্তায় ১০-১২ টা গাড়ি লাইন করে থামলো। গাড়িগুলোর মাঝখানে তাজা ফুল দিয়ে সাজানো একটা সাদা প্রাইভেট কার।কারটা এসে গেট বরাবর থামালো।সামনের গাড়ি থেকে কয়েকজন গার্ড নেমে এসে কারটা ঘিরে দাঁড়ালো। কুহুর সাথে থাকা তনয়া আর তার কাজিনরা দৌড়ে গেলো বারান্দায়, উঁকি ঝুঁকি মেরে দেখে সবাই আস্তে আস্তে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলো গেট ধরতে।কুহু তনয়াকে ডেকে বললো ওর সাথে থাকতে কিন্তু তনয়া এক দৌড়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলো। কুহু থম মেরে বিছানায় কিছুক্ষন বসে রইলো। বারান্দার দরজা টা খোলা, সেই দরজা দিয়ে নিচের কোলাহল ভেসে আসছে।
কুহুর পড়নে আটপৌরে করে পড়ানো লাল বেনারসি,গা ভর্তি গহনা,চুলে খোপা করে টকটকে গোলাপ দেয়া, মাথায় দিয়ে দেয়া হয়েছে ভারী কাজের ওড়না৷ কুহু দুহাতে শাড়ি ধরে উঠে দাঁড়ালো।আস্তে আস্তে হেঁটে বারান্দার দরজায় আসলো,দরজার কিনারে দাঁড়িয়ে উঁকি মেরে গেটের কাছে দেখার চেষ্টা করলো। গেটের কাছে অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল।কুহু বারান্দার লাইটটা অফ করে দিলো।বারান্দায় এসে বারান্দার দরজাটা চাপিয়ে দিলো যেন ঘরের ভেতরের আলো বারান্দায় এসে তাকে দেখা না যায়। বারান্দায় এসে পিলারের আড়ালে দাঁড়িয়ে উঁকি দিলো।শাহাদকে দেখতে পেলো। গেটের ভেতরে একটা লাল ফিতার সামনে দাঁড়ানো।ফিতার অপর পাশে দাঁড়ানো ছেলেমেয়েদের দিকে মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে।তার পড়নে ক্রিম কালার শেরওয়ানি তাতে গোল্ডেন সুতার কাজ। কপালের এক পাশে একটা সাদা ব্যান্ডেজ,আর চোখেমুখে সেই চিরচেনা শান্ত ভাব।বর বেশে শাহাদকে যেতে যতটা খুশি হয়েছিলো সাদা ব্যান্ডেজ দেখে মন টা তার চেয়ে বেশি বিষাদে ছেয়ে গেলো।
কুহু নিচ থেকে বরপক্ষ আর কনেপক্ষের তর্কাতর্কি শুনতে পেলো তবে ভালো করে কিছু বুঝা যাচ্ছে না।কুহু আরেকটু ভালো করে দেখার জন্য পিলার থেকে সরে বারান্দার গ্রিল ধরে আগ্রহী চোখে তাকালো।
তনয়া জোর গলায় বলল-
“ঠিক আছে ত্রিশ হাজার দিলে গেট ছাড়ব। এর থেকে কম দিলে হবে না।”
যিয়াদ হাতে কিল দিয়ে বলল-
“ইয়েস! এটা না মানলে বউ দিব না।”
রাফা অপর পাশ থেকে মুখ বাঁকিয়ে বললো-
“এ্যাহ,মামার বাড়ির আবদার৷ আমরা এত কষ্ট করে গাড়ির তেল পুড়িয়ে বউ নিতে এসেছি আমরা কেন টাকা দেব? টাকা তো দিবেন আপনারা৷ আর না মানলে অসুবিধা নেই নিজেরা বউ নিয়ে দিয়ে আসুন আমাদের বাড়িতে। ”
কনেপক্ষ আর বরপক্ষের বাকবিতন্ডা চলতে লাগলো।শাহাদ পাশ ফিরে পাশে দাঁড়ানো রাহাতের দিকে তাকালো। রাহাত ঠোঁট কামড়াচ্ছে,সে চাইলেও এখানে কিছু বলতে পারবে না।সাথে আনিশা আসে নি কিন্তু আনিশার কানে খবর তোলার মানুষের অভাব নেই।এই মেয়েদের দলের সাথে কথা বলে কোনো গড়বড় করে ফেললে আনিশা জানতে পারবে। পরে শাস্তি হিসেবে তাকে জামাকাপড় পড়তে দিবে না।শ্বশুর বাড়িতে জামাকাপড় ছাড়া ঘোরা সম্ভব না। শাহাদের তাকানো দেখে রাহাত চোখের ইশারায় বুঝালো “খুব বিয়ে করার শখ,এবার বুঝো ঠ্যালা।” শাহাদ রাহাতের কাছ থেকে সাহায্য না পেয়ে হতাশ চোখে সামনে তাকালো, এচাবে চলতে থাকলে তো রাত পোহাবে তারপরও বউ নিয়ে আর যেতে পারবে না। সে তো পঞ্চাশ হাজার দিতেই রাজি ছিলো কিন্তু রাফা আর অন্যরা এমনভাবে তর্ক শুরু করলো যে ওর আর কিছু বলার মুখ থাকলো না।
কুহু গ্রিল ধরে আরেকটু ডানপাশে সরে এলো,লাইটের আবছা আলো পড়লো তার উপর। গেটে টাকা নিয়ে মুলামুলি চলছেই। কেউ কারো চেয়ে কম যাচ্ছে না। কুহু আগ্রহ চোখে শাহাদের দিকে তাকিয়ে আছে, শাহাদ কি করে না করে এসব দেখাই তার মূল লক্ষ্য।হঠাৎ শাহাদ মুখ তুলে সরাসরি তাকালো কুহুর দিকে। শাহাদের সাথে চোখাচোখি হতেই কুহু চমকে গেলো।বারান্দা থেকে তাড়াতাড়ি ঘুরে দরজার দিকে ছুটে গেলো। কিন্তু আবছা অন্ধকারে দ্রুত গতিতে গিয়ে বারি খেলো দেয়ালের সাথে।দেয়ালে দ্রুত বেগে ঘষা খেয়ে নাকের চামড়া ছিলে গেলো।কুহু যন্ত্রনায় “আহ” শব্দ করে পরমূহূর্তে দেয়ালের পাশে থাকা দরজাটা দেখতে পেয়ে এক টানে খুলে ঘরের ভেতর চলে গেলো।
শাহাদ উপরের বারান্দায় তাকিয়ে কুহুকে লাল বেনারসি পড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বিস্মিত হলো। পরক্ষনে কুহুর দেয়ালে আঘাত পাওয়া দেখে আচমকা “এই, এই” বলে চিৎকার করে উঠলো। বরপক্ষ কনেপক্ষ দু পক্ষেরই বাকবিতণ্ডা থেমে গেলো শাহাদের চিৎকারে।শাহাদ তার অবাক দুটো চোখ নামিয়ে আনলো নিচের দিকে। দেখলো সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। রাহাত প্রশ্ন করলো-
“কি শালা! কি সমস্যা?”
শাহাদ নিজেকে কিছুটা সামলে যিয়াদকে বললো-
“কত দিতে হবে বল দিয়ে দিচ্ছি।”
যিয়াদ দুহাতের আঙুল সামনে ধরে বলল-
“পঁচিশ ছাড়া যেতে দিচ্ছি না।”
শাহাদ তমালকে ইশারা করলো। তমাল একটা টাকার বান্ডিল যিয়াদের হাতে দিয়ে বলল-
“ত্রিশ আছে।”
কনেপক্ষ সবাই আনন্দে উল্লাস করে উঠলো।রাফা শাহাদের দিকে তাকিয়ে বিরক্ত কন্ঠে বলল-
“ভাইয়া আমরা হেরে গেলাম।”
শাহাদ প্রতিউত্তরে রাফার কাঁধে হাত দিয়ে শান্ত হতে ইশারা করলো। কনেপক্ষ টাকা পেয়ে কাঁচি দিলো শাহাদকে।শাহাদ কাঁচি দিয়ে ফিতা কেটে ঘরে ঢুকলো। দুপাশ থেকে ফুল ছিটানো হলো বরযাত্রীর উপর।
—————
কুহু নাকে হাত দিয়ে বসে আছে। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে শিরিনা বেগমসহ বেশ কয়েকজন। তনয়া কুহুর পাশে দাঁড়িয়ে আছে।শিরিনা বেগম আদেশ করলেন-
“নাক থেকে হাত সরা।”
কুহু হাত সরালো। শিরিনা বেগম ভালো করে দেখলেন। নাকের মাঝখান থেকে ডগা পর্যন্ত চামড়া উঠে গেছে।হালকা রক্ত জমাট বেঁধে আছে। কুহুর ফুফু এগিয়ে এসে বললেন-
“একটু পর বিয়ে, বরযাত্রী এসে গেছে। এখন মেয়েকে এই অবস্থায় তাদের সামনে কিভাবে নিয়ে যাবে?”
শিরিনা বেগম রেগে বললেন-
“একটা দিন স্থির হয়ে থাকতে পারলি না? বউ সেজে বারান্দায় গিয়েছিস বরযাত্রী দেখতে। নিজের নাক তো ফাটিয়েছিস এখন আরো কিছু করে আমাদেরও নাকটা কেটে ফেল।”
কুহুর খালা বললো-
“আহ আপা থাম।এখন আর এসব বলে কি হবে। এইভাবে থাকলে খারাপ দেখা যাবে। এর চেয়ে ক্ষতটা মুছে একটা ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দেই।”
শিরিনা বেগম হতাশ হয়ে বললেন-
“যা খুশি তা কর,আমার আর ভালো লাগে না।”
শিরিনা বেগম বেরিয়ে গেলেন। কুহুর খালা নাকের চামড়া উঠে যাওয়ার জায়গাটা স্যাভলন দিয়ে মুছে একটা ওয়ানটাইম ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। তনয়া কুহুকে বললো-
“ব্যান্ডেজ টা না করলে তোর নাকটা কিসের মতো লাগতো জানিস?”
কুহু নাকের ব্যান্ডেজে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করলো-
“কিসের মতো?”
তনয়া ভাবুক কন্ঠে বললো-
“একটা পাখি আছে,নাম বুলবুলি। ওইটার পিছনটা লাল।ওই পাখির লাল পা*ছার মতো লাগতো।”
বলেই তনয়া ঘর কাঁপিয়ে হাসলো। কুহুর মন চাইলো তনয়ার উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে কিন্তু এই ভারী সাজ নিয়ে সম্ভব না তাই সে আগুন চোখে তাকিয়ে রইলো।
——–
বিয়ে পড়ানোর জন্য কুহুকে নিচে নামানো হলো।বসানো হলো গেস্ট রুমে। বিয়ে পড়িয়ে তারপর স্টেজে শাহাদের পাশে বসানো হবে৷ গেস্ট রুমে বসানোর পর বরপক্ষের মহিলারা আসলো কুহুকে দেখতে। প্রথমে কুহুর রুপের প্রশংসা করলো। তারপর কুহুর নাকের ব্যান্ডেজ নিয়ে কথা তুললো।কুহুর ফুফু আর খালারা মিলে ইনিয়ে বিনিয়ে ব্যান্ডেজের কারন জানালো। কিভাবে বিয়ে বাড়ির একটা পাজি ছেলে বল মেরে কুহুর নাক ফাটিয়ে দিয়েছে তা সবিস্তারে বর্ণনা করলো। ঘটনা শুনে মহিলারা সবাই সমবেদনা জানালো। কেউ কেউ কুহুকে জিজ্ঞেস করলো ব্যথা কমেছে কিনা কেউ আবার বিয়ের দিন শাহাদ কুহু দুজনের একসাথে আহত হওয়ার কারনে দুঃখ প্রকাশ করলো।
যথাসময়ে বিয়ে পড়ানো হলো। প্রথমে কুহুর সম্মতি নিয়ে তারপর শাহাদের সম্মতি নেয়া হলো। দুজনের আল্লাহকে সাক্ষী রেখে কবুল বলার মাধ্যমে বিয়ে হলো। উভয়পক্ষের মুরুব্বিরা দুহাত তুলে দোয়া করলেন দুজনের জন্য। আশফাক খান আর মোয়াজ্জেম হোসেন নতুন সম্পর্ক সৃষ্টির খুশিতে কোলাকুলি করলেন। মোয়াজ্জেম সাহেব আশফাক খানের দুহাত আঁকড়ে ধরা গলায় বললেন-
“আজ থেকে মেয়েটা আমার পর হয়ে গেলো।তোর ভরসায় মেয়েটাকে আমি এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিলাম।”
আশফাক খান বন্ধুর কাঁধে হাত রেখে বললেন-
“তোর মেয়ের কোনো অযত্ন হবে না। আমার ছেলে তোর মেয়েকে রানি করে রাখবে। সেই বিশ্বাস আমার ছেলের উপর আছে।”
বিয়েতে মুরুব্বিদের কাজ শেষ। এইবার ছেলেমেয়েরা সবাই মিলে কুহুকে এনে বসালো শাহাদের পাশে।শাহাদ একবার আড়চোখে তাকালো কুহুর দিকে কিন্তু কুহুর মুখ দেখতে পেলো না,কুহুর মুখের সামনে ইয়া লম্বা ঘোমটা টানা। তনয়া কুহুর পাশে বসে বললো-
“দুলাভাই বউ এর মুখ দেখতে হলে কিছু টাকাপয়সা লস করতে হবে যে!”
রাফা রেগে বললো-
“আমার ভাই বিয়ে করা বউ কে টাকা দিয়ে দেখবে কেন?”
যিয়াদ গলা উঁচিয়ে বললো-
“ম্যাম এই কেন’র উত্তর আপনি আপনার বিয়ের দিন পাবেন।এখন চুপ থাকেন।”
রাফা গর্জে উঠতে চাইলো কিন্তু শাহাদ তাড়াতাড়ি বললো-
“ওকে ফাইন তোমাদের ডিমান্ড বলো।দিয়ে দিচ্ছি।”
যিয়াদ তাদের ডিমান্ড বললো।শাহাদ তমালকে বললো দিয়ে দিতে, তমাল দিয়ে দিলো।আবারো কনেপক্ষ হই হুল্লোড় করে উঠলো। রাগে ফুসতে থাকা রাফাকে রাহাত কানে কানে বললো-
“রাগ করো না শালিকা, জিতেছি কিন্তু আমরাই।ঢাকঢোল বাজিয়ে সারাজীবনের জন্য এদের মেয়েকে তুলে নিয়ে যাচ্ছি।”
রাফা চোখ ঘুরিয়ে ভাবলো। আসলেই তো, আসল জিনিস তো বরপক্ষই সাথে করে নিয়ে যাচ্ছে। রাহাত তনয়াকে বললো-
“তোমাদের ডিমান্ড ফুলফিল হয়েছে,এবার আমার শালাকে তার বউকে দেখতে দাও।”
তনয়া কুহুর ঘোমটা তুলে একটা আয়না এনে কুহুর মুখের সামনে ধরলো। শাহাদকে ইশারা করলো আয়নায় মুখ দেখতে।আয়নায় মুখ দেখার জন্য শাহাদকে কুহুর কাছাকাছি আসতে হলো৷ কুহুর কাছাকাছি আসতেই আয়নায় চোখ পড়লো। কুহুর লজ্জারাঙা লাল টুকটুকে মুখটা দেখতে পেলো, সাথে দেখতে পেলো নাকের উপর থাকা ব্যান্ডেজটাও। পাশ থেকে জিজ্ঞেস করলো-
“দুলাভাই আয়নায় কি দেখতে পেলেন?”
শাহাদ দুষ্টু কন্ঠে বললো-
“নাকফাটা বউ।”
বরপক্ষ কনেপক্ষ দু পক্ষের সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। তারপর হাসি থামিয়ে তনয়া কুহুকে জিজ্ঞেস করলো-
“কুহু তুই আয়নায় কি দেখছিস?”
কুহু এতক্ষন তাকায় নি আয়নায়। এইবার চোখ তুলে আয়নায় তাকালো। শাহাদের হাসি হাসি মুখের শান্ত চোখের দৃষ্টিতে চোখ আটকালো। রাহাত কুহুকে শিখিয়ে দিলো-
“কুহু তুমি বলো কপালফাটা বর।”
কুহু প্রতিশোধ নিতে রাহাতের শিখিয়ে দেয়া কথা অনুযায়ী বললো-
“কপালফাটা বর।”
চারদিকে আবারো হাসির রোল পড়লো।শাহাদ আয়নায় কুহুর চোখে চোখ রেখে ঠোঁট কামড়ে হাসলো।বড় মোহনীয় সেই হাসি৷ কুহু লাজুক হেসে চোখ নামিয়ে নিলো।
চলবে