#অবশেষে_তোমায়_হলো_পাওয়া
#পর্ব ৭
#তামান্না_ইসলাম_কথা
রনীর বুকে অন্ধকার নেমে এসেছে। পাখিরাও নিজ গৃহে ফিরে গেছে আরও ঘন্টা খানেক আগে। সন্ধ্যা হতেই সোডিয়ামের আলো জ্বলে উঠে রাস্তায় থাকা ল্যাম্পপোস্টে। কথাকে নিয়ে বাড়ি যাচ্ছে মোয়াজ। কবর জিয়ারত করার পর মোয়াজ কথাকে নিয়ে সেই আশ্রমের যায় যেখান থেকে তার মা-বাবার প্রণয়ন শুরু হয়েছিল। এরই মাঝে মোয়াজের ফুপি ফোন করায় তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়, মোয়াজ আর কথার বাড়িতে ফিরতে দেরী হবে। নাজিয়া চৌধুরী ও মোয়াজকে আর কোনো প্রশ্ন না করে কথার নয়নতারাকে সাথে করে রান্না করতে চলে যায়।
রাস্তার দুই পাশ দিয়ে সাঁই সাঁই করে ছুটে চলেছে গাড়ি তাদের গন্তব্যের দিকে। সোডিয়ামের আলো সাথে আকাশে মস্ত বড় চাঁদের আলো শহরকে আরও আলোকিত করে তুলেছে। গাড়ির দরজায় হাতের উপর থুতনি ঠেকিয়ে বিষন্ন মনে চারিদিক দেখছে কথা। আর কথার এমন বিষন্ন হয়ে বসে থাকাকে আড়চোখে কয়েক বার লক্ষ্য করেছে মোয়াজ।
” তোমার কি মন খারাপ?”
ড্রাইভিং করতে করতে কথাকে প্রশ্ন করলো মোয়াজ। কিন্তু কথার সেদিকে খেয়াল নেই। সে নিজের ভাবনায় ডুবে আছে।
” কথা?”
তবুও নিরুত্তর কথা। কথাকে আবারও কিছু বলতে না দেখে জোরে করে গাড়ি ব্রেক করে। এতে করে কথার হাত সামনের দিকে এগিয়ে যায় এবং থুতনি গিয়ে লাগে দরজায়।
” এভাবে কেউ গাড়ি ব্রেক করে? কি ভাবে গাড়ি চালাতে হয় জানেন না?”
রাগী গলায় মোয়াজকে কথা গুলো বললো কথা।
” স্যরি! কিন্তু তুমি এমন বিষন্ন হয়ে আছো কেন?”
কথা গুলো বলে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল মোয়াজ। কিন্তু কথার থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারো গাড়ি স্টার্ট দিলো।
——-
” তোমার খুনির বাড়িতে চলে এসেছি বাবা। জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে ঠিক কী হতে পারে সেটা তো বুঝতে পারছো? তবে সেখানে আমাকে দেখে রাখার, আগলে রাখার জন্য একজন মানুষ আছে বাবা।”
নিজের বাবার ছবি বুকে মাঝে নিয়ে কথা গুলো বলছিলো কথা।
” কথা তোমার ফোন রেখে এসেছিলে নিচে। অনেক সময় ধরে কেউ একজন তোমাকে ফোন করে যাচ্ছে।”
কারো গলার স্বর শুনে তড়িগড়ি করে ছবিটা বালিশের নিচে লুকিয়ে ফেলে কথা।
” ভাবীমনি! আসলে আমিও অনেক সময় ধরে ফোন খুঁজে চলেছিলাম। কিন্তু কোথায় রেখেছি মনে করতে পারছিলাম না। থ্যাংকস্ ভাবীমনি।”
নয়নতারার চোখে কিছু পড়েছে কি-না সেটা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করে কথা গুলো বললো।
” আমার দেবরকে কি করে যাদু করলে গো মেয়ে? আমার যেই দেবররে মুখে কখনো বিয়ের নাম শুনা যায়নি! আমার সেই দেবর বিয়ের জন্য পাগলপারা। ভাবা যায়!”
দুষ্টুমি করে নিজ বাহু দিয়ে কথাকে ধাক্কা দিয়ে কথা গুলো বললো নয়নতারা। কথাও নয়নতারার কথায় লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলল।
” ইশ্! আজকে আমার দেবর এই লজ্জা কোথায় নিয়ে যাবে!”
” ছিঃ ভাবীমনি!”
কথাকে লজ্জা পেতে দেখে নয়নতারা দুগাল ভরে হেসে দিলো। নয়নতারাকে এভাবে হাসতে দেখে কথা আরো লজ্জা পেয়ে যায়।
” কি নিয়ে এতো হাসাহাসি হচ্ছে শুনি? আমিও
প্রায় মিনিট চল্লিশ মিনিট আগে কথাকে মোয়াজের রুমে দিয়ে গেছে নয়নতারা। কিন্তু মোয়াজের একটা জরুরী কল আসায় সে নিচে বসে কথা বলছে ফোনে। মাত্রয় রুমে এসে নয়নতারাকে হাসতে দেখে কথা গুলো বললো মোয়াজ।
” নাও এতো সময় পর এসেছেন তোমার স্বামী। এতো সময় তোমার কথা ভুলে ফোনের প্রেমে মগ্ন ছিলেন তিনি। এবার দেরি করে আসার শাস্তি দিও তুমি। আবার শাস্তি দিতে গিয়ে আজকের রাত কিন্তু মাটি করো না? তাহলে কিন্তু আমার দেবরের একুল অকুল দুইকুল যাবে।”
মোয়াজের কথার উত্তর না দিয়ে বরং মোয়াজের বিরুদ্ধে কথার কাছে অভিযোগ করলো দেরি করে আসার জন্য।
” কে বলেছে আমি ফোন প্রেম আলাপে মগ্ন ছিলাম? আমি তো তোমার আর বড় ভাইয়ের জন্য আবার বাসর সাজিয়ে আসলাম গো।”
দেবর ভাবীর এমন লাগাম ছাড়া কথা শুনে লজ্জায় কান দিয়ে ধোয়া বের হওয়ার উপক্রম।
” বেস্ট অফ লাক নতুন বউ।”
কথার কানে কানে কথা গুলো বলে রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো নয়নতারা।
নয়নতারা চলে যেতেই দরজার পাশে থেকে রুমের ভিতর প্রবেশ করে মোয়াজ।
” হ্যাঁ বল!”
মোয়াজ রুমে প্রবেশ করতে না করতেই কথার ফোনে আবারো কল আসে।
” তুই ঠিক বলছিস? ওকে! এইটা আমাদের জন্য ভালো খবর। আমি পরে জানিয়ে দিবো সব কিছু। আর বি কেয়ার ফুল।”
ফোনের ওপাশে কে আছে সেটা মোয়াজ বুঝতে না পারলেও আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলার ভঙ্গি লক্ষ্য করছিল মোয়াজ।
সবার সাথে কি সুন্দর করে কথা বলে। আর মোয়াজের সাথে কথা বলার সময় মুখে বিরক্তিকর ভাব নিয়ে আসে। তবে মোয়াজের কাছে সেটাই ভালো লাগে। যখন বিরক্ত হয়ে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে? তখন ইচ্ছে করে আরো একটু বিরক্ত করে দিতে।
” এভাবে এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? সরোন আয়নার সামনে থেকে।”
কথার চিন্তায় এতোই মগ্ন ছিলো যে কথা কখন মোয়াজের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে খেয়াল করেনি।
” কথা!”
” বলুন শুনছি!”
” সামনে তাকিয়ে দেখুন তো আয়নায় কত সুন্দর প্রতিছবি দেখা যাচ্ছে।”
কানের দুল খুলছিলো কথা। কিন্তু মোয়াজের কথা শুনে হাত থেমে যায়। একবার আয়নার দিকে তাকিয়ে আবারও কানের দুল খুলতে মনোনিবেশ করলো সে।
” কোথায় সুন্দর? আমি তো আয়নায়….”
কথাটা সম্পূর্ণ শেষ করার আগেই কথা আরেক বার আয়নার দিকে তাকায়। বার কয়েক চোখের পলক ফেলে আবারো একই জিনিস দেখে এবার পিছনে ঘুরে দাঁড়ায়। না এইটা তো সত্যি। কিন্তু এইটা কবে কখন তোলা হয়েছে?
কথাকে এক ধ্যানে পিছনে টানিয়ে রাখা ছবির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মুচকি হেসে ওয়াশরুমের দিকে চলে যায় মোয়াজ।
” আমি এতো সময় নিজের কাজে মগ্ন থাকায় রুমটা ঠিক করে খেয়ালই করিনি। আমি এই বুদ্ধি নিয়ে কি করে সব কিছু করবো? হে আল্লাহ!”
সম্পূর্ণ রুমে নজর বুলিয়ে দেখে নিয়ে বিরবির করে কথা গুলো বললো।
” এখনও চিন্তায় বসে আছেন? ফ্রেশ হয়ে ওজু করে আসেন নামাজ পড়তে হবে। শর্ত দিয়ে বিয়ে হলেও, বিয়ে তো বিয়েই হয়। আশা করি আপনি এইটা বিশ্বাস করেন যে, আল্লাহ নিজে সম্পর্ক গড়ে তুলেন। কার সাথে কার জীবন যুক্ত করেছে, বা কখন কিভাবে কি হবে সেই সব একমাত্র তিনিই নির্ধারণ করে রেখেছেন। তাই আপনিও এই শর্ত যুক্ত বিয়েকেও সম্মান করবেন?”
ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে কথাকে ডিভাইনের উপর বসে থাকতে দেখে কথাকে উদ্দেশ্য করে কথা গুলো বললো মোয়াজ। যদিও মোয়াজ শুধু মাত্র কথাকে নিজের করে পাওয়ার জন্য আর কিছু সত্যির জন্য শর্তের বিয়েতে রাজি হয়েছে। তবে সে মধ থেকেই বিয়েকে মেনে নিয়েছে। মোয়াজের কথা শুনে কথাও বিনাবাক্যে ওয়াশরুমে চলে যায়।
——-
“কি হয়েছে? এমন করে বসে আছেন কেন?”
মোয়াজকে মুখ গুমড়ো করে বসে থাকতে দেখে মোয়াজকে প্রশ্ন করলো কথা।
” বুঝতে পারছেন না আমার কি হয়েছে?”
মোয়াজের প্রশ্নের জবাবে মাথা নেড়ে না জানায় কথা। এবার মুখের মাঝে অসহায় ভাব নিয়ে এসে বলে,
” ভাবীমনি তখন কি বলে গেছে মনে নেই? আজকে সত্যি আমার একুল অকুল দুইকুল গেলো।”
মোয়াজের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে থেকে কোমড় থেকে সেই বিয়ের শর্তের কাগজ বের করে কথা। কথাকে পেপার গুলো বের করতে দেখে মোয়াজের মুখ ছোট বাচ্চাদের মতো করে বসে রইল কিছু সময়।
” আমার একটা কথা রাখবেন কথা?”
হঠাৎ করে কথার অনুরোধ ঘেরা কন্ঠ শুনে তড়িত গতিতে কথার দিকে তাকায় মোয়াজ।
” বলো।”
মোয়াজের কথা শুনে কিছু সময় চুপ করে থাকে।
” ব্যালকনিতে বসে চন্দ্র বিলাস করবেন আমার সাথে?”
কথাটা মোয়াজের কর্ণগুছর হতেই কথাকে কোলে তুলে নিয়ে ব্যালকনিতে চলে যায়।
—–
” আপনার বিরুদ্ধে এরেস্ট ওয়ারেন্ট আছে মিস্টার মোয়াজ। আপনাকে আমাদের সাথে যেতে হবে।”
#চলবে