#অবশেষে_তোমায়_হলো_পাওয়া
#পর্ব:৩
#তামান্না_ইসলাম_কথা
রাত বারোটা বেজে পঞ্চাশ মিনিট। মীমের বাসার নিচে অপেক্ষারত কথা এবং রিয়াদ। মীমের এখনও আসার খবর নেই।
” এই রিয়াদ মীমকে ফোন দে তো। সবসময় দেরী করবে সব কাজেই। বলেছি বাসার নিচে এসে অপেক্ষা করতে আর এখন আমাকেই অপেক্ষা করতে হচ্ছে।”
মীমের আসতে দেরি দেখে বিরক্ত হয়ে রিয়াদকে কথা গুলো বলছিলো কথা।
“আর ফোন করতে হবে না, আমি চলে এসেছি। আরে এই হিডেন ক্যামেরা খুঁজে পাচ্ছিলাম না।”
ছোট হিডেন ক্যামেরা কুর্তার বোতামে সেট করতে করতে বললো মীম।
“ঠিক আছে এবার তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠ।”
কথা আর মীমকে তাড়া দিয়ে রিয়াদ ড্রাইবিং সিটে বসে পড়ল।
—–
রাত দেড়টা। এতো রাতে সবাই নিজ নিজ ঘরে আমার করে ঘুম আসছে। রাস্তায় থাকা কুকুর গুলোও ঘুমিয়ে আছে। আকাশে থালার মতো মতো চাঁদ। পাশে মেঘরা ছুটে চলেছে। দূরপাল্লার ট্রাক দুই একটা যাচ্ছে রাস্তা দিয়ে। এমনি সময় কেউ একজন একটি একতলা বাড়ির সামনে গাড়ি থামাতেই রাস্তায় শুয়ে থাকা কুকুর গুলো উঠে যায়। গাড়ি থেকে নামা ব্যক্তির ছায়ামূর্তি দেখে কুকুর গুলো ঘেউ ঘেউ করতে শুরু করলো। লোকটা একবার কুকুর গুলোর দিকে তাকিয়ে সামনে থাকা বাড়ির দিকে পা বাড়ায়।
” আপনি এখানে? তাও আবার এতো রাতে? আসুন ভেতরে আসুন।”
লোকটি কলিং বেল বাজাতেই একজন বৃদ্ধ বয়স্ক লোক এসে দরজা খুলে দিলো। বৃদ্ধ লোকটির কথা শুনে মনে হলো দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা পরিচিত কেউ। কিন্তু এতো রাতে তাকে এখানে আশা করেননি তিনি। তবুও পরিচিত কেউ বলে সৌজন্যের খাতিরে কথা গুলো বললেন।
লোকটাও আর কিছু না বলে বৃদ্ধ লোকটির আগেই ঘরের ভেতর প্রবেশ করলো। আর বৃদ্ধ লোকটি একবার বাহিরে উঁকি দিয়ে চারপাশ ভালো করে দেখে ঘরের দরজা দিয়ে চলে গেলো।
“জ্বী আপনি এতো রাতে আমার বাড়িতে?”
“অনেক ভালো আছো দেখছি। তা তোমার স্ত্রী, সন্তান তারা কোথায়?”
” আমার স্ত্রী বাপের বাড়িতে গিয়েছে। আমার বড় শালকের মেয়ের বিয়ে সেখানে গেছে তারা। আগামীকাল চলে আসবে।”
” ওহ্ আচ্ছা! এখান দিয়ে যাচ্ছিলাম তাই ভাবলাম একটু দেখা করে যায়।”
লোকটার কথা শুনে বৃদ্ধ লোকটি মুখ “হাঁ” করে তাকিয়ে রইল। এইটা কোনো সময় কারো সাথে দেখা করতে আসার? আর এই লোকটি পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ লোকের মাঝে একজন। নিজ স্বার্থে কিছু করেন না তিনি। আর সেই কি-না আসছে দেখা করতে? তাও আবার এতো রাতে?
“রফিক তোমার ২৫ বছর আগের সেই রাতের কথা মনে আছে?”
“মানে?”
নিজ ভাবনার মাঝেই এমন কথা শুনে চমকে উঠলেন রফিক সাহেব।
” কি হলো চমকে গেলে কেন রফিক?”
ঠোঁটে বাঁকা হাসি নিয়ে কথাটা বললেন লোকটি। কিন্তু রফিক সাহেব বিষ্ময় হয়ে তাকিয়ে বসে আছে এখনো। এতো গুলো বছর পর এসে এই কথা কেন বলছেন? নিজ হাতেই তো উনি..
” আপনি এতো গুলো বছর পর এসে এইসব কথা বলছেন কেন? আর সেই রাতের কথা আমার সব মনে আছে কিছু ভুলিনি আমি। আপনারা কি ভাবে এডভোকেট রুহুল কবিরকে…”
” হ্যাঁ! তোমার স্মৃতিশক্তি প্রখর দেখছি। এক দুই বছর নয়। পঁচিশটা বছর হয়ে গেলো আর তুমি এখনো মনে রেখেছো? বেশ ভালোই তো। এসো একটু বুকে এসো তুমি। সেইদিনের প্রতক্ষ্য সাক্ষী তুমি ছিলে। চাইলে সব কিছু বলতে কিন্তু,,”
কথা গুলো বলতে বলতে লোকটা রফিক সাহেবকে জড়িয়ে ধরলেন।
” আশাকরি ওপারে ভালো থাকবে।”
কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে রফিক সাহেবকে কথা গুলো বললেন লোকটি।
——-
” রিয়াদ তুই আর মীম পরে আসবি আমার পিছনে। আর ক্যামেরা চালু করে দে।”
কথা’র কথা শুনে মীম ও রিয়াদ মাথা নেড়ে সম্মতি দিতেই কথা আগে আগে চলে যায়।
” একি এতো রাতে দরজা এভাবে খোলা রেখেছে কেন কথা? কোনো সমস্যা হয়নি তো?”
মীমের কথা গুলো বলার আগেই কথা দৌড়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকে যায়। ভিতরে ঢুকতেই রফিক সাহেবকে সোফার উপর পড়ে থাকতে দেখে বিচলিত হয়ে গেলো কথা।
” উনি এমন হয়ে আছে? আর বাড়ির আর সবাই কোথায় গিয়েছে?”
” স্টুপিড! তুই ও যেখানে আমিও সেখানে। তাহলে জানবো কী করে?”
মীমের বোকা কথায় রিয়াদ হালকা ধমকের স্বরে কথা গুলো বললো।
” রিয়াদ টেবিলের দিকে দেখ। দুটো পানির গ্লাস। অথচ উনি ছাড়া দ্বিতীয় কারো কোনো চিহ্ন এই বাড়িতে দেখছি না। তুই গ্লাস দুটো তুলে নে আর হুঁ কিছু ছবি তুলে নিবি সবার আগে। আর মীম তুই প্রতিটা রুম চেক করবি। সন্দেহ প্রবণ জিনিস গুলো নিয়ে নিবি। আর হ্যাঁ কোথাও যেনো হাতের ছাপ না পড়ে। আমি দেখছি এই দিকটা।”
কথার ডিরেকশন মতো মীম ও রিয়াদ নিজ নিজ কাজে লেগে পড়ে। কথা এগিয়ে গিয়ে রফিক সাহেবকে সোজা করে বসিয়ে দিতেই দেখে রফিক সাহেবের মুখ দিয়ে ফ্যানা জাতীয় সাদা কিছু শিরা বের হচ্ছে।
” এখন আমি কি করবো? কি করে খুঁজে বের করবে আমার বাবার খুনিদের। এই একজন ছিলো প্রতক্ষ্য সাক্ষী। শেষ আশাও এভাবে শেষ হয়ে যাবে।”
কথা গুলো বলতে বলতে পায়চারি করে করছিল কথা। আর কিছু একটা ভেবে যাচ্ছিলো।
” কথা আর যায় বল! খুনি কিন্তু আমাদের থেকে এক ধাপ এগিয়ে আছে। আর খুনি আমাদের প্রতিটা পদক্ষেপ আগে থেকেই জেনে যাচ্ছে।”
“এক্সেক্টলি! খুনি আমাদের প্রত্যেকটা স্টেপ আগে থেকেই জানে কিন্তু কি করে? কেউ তো একজন আছে যে তাদের হেল্প…”
” এই কথা উনার পাল্স চলছে। কিন্তু খুব ধীরগতিতে। উনাকে আমাদের এখনই হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।”
নিজ কথার মাঝে রিয়াদের কথা শুনে দ্রুত কদমে রিয়াদের কাছে ছুটে আসে কথা।
” তাহলে আর দেরি না করে ইমিডিয়েটলি হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে। আর হ্যাঁ কেউ জেনো কিছু জানতে না পারে। খুনি যদি জানতে পারে রফিক সাহেব বেঁচে আছে তাহলে আবার খুন করতে আসবে।”
” এই কথা একটা পুরনো ডায়েরি পেয়েছি। আর দুটো পেনড্রাইভ পেয়েছি। এই বইয়ের ভিতর যা বইয়ের ভিতর কিছু পৃষ্ঠা কেটে রাখা হয়েছিল। এখান থেকে কিছু পাওয়া যেতে পারে।”
কথা আর রিয়াদের কথার মাঝে ভিতরের রুম থেকে একটা কালো মলাটের ডায়েরি আর প্নেনড্রাইভ সহ বই হাতে নিয়ে কথা গুলো বললো মীম।
” ওকে দ্যাটস্ গ্ৰেট! এখন সময় নষ্ট না করে উনাকে নিয়ে তোরা দুজন হসপিটালে চলে যা। আর উনাকে তোর বাবার হসপিটালে নিয়ে যাবি। আর আংকেলকে বলবি এই বিষয়ে কাউকে কিছু না জানাতে। আমি এইদিকের কাজ গুলো শেষ করে আসছি।”
মীম আর রিয়াদকে কথা গুলো বলে দিয়ে তাদের তাড়াতাড়ি গাড়িতে তুলে দিলো কথা। মীম আর রিয়াদকে পাঠিয়ে দিয়ে কথা কিছু একটা ভেবে আবারো রফিক সাহেবের বাড়িতে যায়।
—–
” ভাইজান আপামনি আসছে।”
“হ্যাঁ! কে এসেছে?”
রুমে বসে বসে অফিসের কিছু ফাইল দেখছিলো মোয়াজ। এমন সময় চুমকি দরজার সামনে এসে কথা গুলো বলতেই ফাইলে নজর রেখে উত্তর করলো মোয়াজ।
” ওই যে ছবির আপামনি।”
“কথা?”
চুমকির কথা কানে পৌঁছতেই তড়িৎ গতিতে চুমকির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো মোয়াজ। চুমকি উত্তরে শুধু মাথা নাড়িয়ে “হ্যাঁ” বলতেই মোয়াজ ঠোঁটে বাঁকা হাসি নিয়ে উঠে ওয়াশরুম চলে যায়। আর বলে যায় কথাকে তার লাইব্রেরী রুমে যেতে বলতে।
” আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি। কিন্তু আমার কিছু শর্ত আছে।”
#চলবে