#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_৩৪
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
একটা গলি থেকে বের হয়ে দৌড়তে গিয়ে হুঁচট খেয়ে রাস্তায় পড়লো মেঘলা। পেছনের দিকে ফিরে দিকে সবগুলো এই দিকেই আসছে।
মেঘলা পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো পা দিয়ে রক্ত পড়ছে। হাতে ছু*রির আঘাত খেয়ে অনেকটা কেঁটে গেছে।
মেঘলা আশেপাশে তাকালো কেউ নেই এখনি তো পেছনে ছেলেগুলো ছিল কোথায় গেল…???
” আর কতো বসে থাকবেন উঠেন”
মেঘলার ভয়ে বুক কেঁপে উঠল। পরিচিত কারো কন্ঠ শুনে চুপসে গেলো।
~ এই কি অবস্থা হয়েছে আপনার পায়ের..??
মেঘলা তাকিয়ে দেখলো সাজ্জাদ আর নির্জন দাঁড়িয়ে আছে।
মেঘলা আস্তে করে উঠে দাঁড়ালো।
নির্জনঃ হাটতে তো কষ্ট হবে।ভাইকে বলবো আসতে..?
সাজ্জাদঃ ভাই কে কেন বলতে হবে..? আমি কোলে নিব মেঘলা..?
মেঘলাঃ নাহ্ ধন্যবাদ।
নির্জনঃ গাড়িতে উঠে বসুন হসপিটাল যেতে হবে।
মেঘলা নির্জনের হাত শক্ত করে ধরে বলল,’ আচ্ছা তবে…’
নির্জনঃ এখন কোনো কথা নয় ভাবি আগে বাসায় যেয়ে নেই।
মেঘলা ভয়ে মাথা নাড়লো।
______________
হসপিটাল থেকে বাসায় আসতেই সবাই ঘিরে ধরল মেঘলার হাত পায়ে ব্যান্ডিজ কেন..?
নির্জনঃ তেমন কিছু না ছোট একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে।
শ্রাবণ তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে মেঘলার দিকে।
মেঘলা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে সিঁড়ির কাছে যেতেই শ্রাবণ কোলে তুলে নেয় মেঘলাকে৷
সবাই তাতে একটুও অবাক হয়নি শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সাজ্জাদ। সে নিতে চাইলো মেঘলা নিষেধ করলো আর শ্রাবণের কোলে কি সুন্দর উঠে গেল!!
শ্রাবণ চলে যেতেই আমেনা বেগম বলে উঠলো, ‘ এক এক করে আমাদের পরিবারের সাথে কি হচ্ছে আল্লাহ..? এমন কেন হচ্ছে..? দিন দিন সব খারাপ হচ্ছে!!
নিরুপমা চুপচাপ বসে আছে। তিনি কিছু ভাবতে ব্যাস্ত।
মোবাইলের রিংটোনে সবাই নিরুপমার দিকে তাকায় নিরুপমা মোবাইল হাতে নিয়ে দ্রুত নিজের রুমে চলে যায়।
আমেনা বেগমঃ আজ কাল নিরুর আবার কি হয়েছে..? কেমন অদ্ভুত আচরণ করছে।
আনোয়ার চৌধুরী কিছু না বলে মেয়ের ভীতু দৃষ্টিতে সবার দিয়ে তাকিয়ে রুমে ছুটে যাওয়া দেখলেন।
মেঘলা বাড়ির পেছনে একটা গাছ বেয়ে নিজের বারান্দায় নামলো। গ্রামে অনেক এমন গাছ বেয়ে ছিল বিধায় তেমন একটা কষ্ট হয়নি।
নিজের রুমে আস্তে করে প্রবেশ করে ছোঁয়াকে খুঁজলো। ছোঁয়াকে না পেয়ে একটা শান্তির নিশ্বাস নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। হাতের ছোট একটা পেনড্রাইভের দিকে তাকিয়ে হাসলো।
শ্রাবণ সেই কখন থেকে মেঘলা কে একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে কিন্তু মেঘলা কিছুর ঠিক ভাবে উত্তর দিচ্ছে না।
শ্রাবণঃ আমি কিছু বলছি মেঘলা।
মেঘলাঃ এতো কিছু জেনে আপনার কাজ কি..? নিজের কাজ করুন আমার বিষয় এতো ভাবতে হবে না আর দশদিন পর আপনার আপনাদের সবার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক থাকবে না।
শ্রাবণঃ খাবার খেয়ে মেডিসিন খেয়ে নাও।
মেঘলাঃ আপনি তো খুশি তাই না..? আমার মতো একটা খারাপ মেয়ের সাথে থাকতে হবে না।
শ্রাবণঃ মেঘলা এখন কিন্তু বেশি বেশি বলছো। আমি তোমাকে খারাপ মেয়ে বলিনি আমি শুধু বলেছি বখাটে, বাজে মেয়েদের মতো এতো রাত অব্দি বাহিরে কেন থাকো..? তুমি বুঝতে হবে তুমি একটা মেয়ে।
মেঘলাঃ মেয়ে বলে কি ঘরকুনো হয়ে থাকবো..? কেন মেয়েরা ছেলেদের থেকে এখন কম কিসে..? সব দিকে মেয়েরা ছেলেদের থেকে এগিয়ে।
শ্রাবনঃ হ্যাঁ ঠিক বলেছো এখন আর ছেলে ছিনতাইকারী দেখা যায় না, ঘরে বাইরে সব জায়গায় মেয়ে। জিনিসপত্র লুটপাট করার সাথে সাথে মনও ছিনতাই, লুটপাট করে নিচ্ছে।
মেঘলাঃ মন ছিনতাই করা যায়..?
শ্রাবণঃ হয়তো যায়, তোমার এখন বুঝতে হবে তুমি এখন একা নও।তোমার নামের সাথে এখন আমার নাম যুক্ত এই বাড়ির প্রতিটি সদস্য জড়িয়ে আছে। তুমি এখন কারো বউ,কারো জীবন যা হয়তো তুমি নিজেও জানো না। তোমার কিছু হলে কারো পৃথিবী থমকে যাবে, বেঁচে থেকে কেউ মরে যাবে। তোমার জীবনের মূল্য তোমার কাছে না থাকতে পারে অন্য কারো কাছে তোমার থাকাটা ভীষণ প্রয়োজন। এক দিন, দুই দিনের জন্য নয় একটা আস্ত জীবন কাটাতে হবে মেঘলা।
মেঘলা খুশিতে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। মুখ আড়াল করে নিলো শ্রাবণ জেনো এই খুশি দেখতে না পায়।
শ্রাবণঃ জলদি খেয়ে মেডিসিন খেয়ে শুয়ে পড়।
মেঘলা হাতের দিকে তাকালো ছুরিটা ধরতে গিয়ে হাতে লেগে গেছে অনেকটা কেঁটেছে। এই হাত দিয়ে কিভাবে খাবে।
শ্রাবণ মেঘলার কিছু বলার অপেক্ষায় ছিলো কিন্তু না এই মেয়ে ভাঙবে কিন্তু মচকাবে না।
শ্রাবণ খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে মেঘলাকে খাইয়ে দিলো।
শ্রাবণ আচমকা বলে উঠলো ” দিন দিন কেমন বউ পাগল ছেলেদের মতো হয়ে যাচ্ছি, দুই দিন পর দেখা যাবে মানুষ আমাকে দেখলেই বলবে ওই যে বউ পাগল লোক রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে।”
মেঘলা হুঁ হুঁ করে হেঁসে উঠলো। মেঘলার হাসি দেখে শ্রাবণ গাল ফুলিয়ে বলে উঠলো ” মজা নিচ্ছ! নাও এখনি সময়। আমারও সময় আসবে।”
ফোনের রিংটোন বেজেই চলছে কিন্তু মহুয়ার একদম ইচ্ছে করছে না উঠে ফোনটা হাতে নিতে।
সে আজ অনেক ক্লান্ত। অনেক কষ্ট চোখ মেলে মোবাইল হাতে নিয়ে আহনাফের এতো এতো কল দেখে অবাক হলো। সাথে ভয় ও পেলো আহনাফের কিছু হয়নি তো..? দ্রুত মোবাইল হাতে নিয়ে কল দিলো। আহনাফ কল কেটে আবার ভিডিও কল দিলো।
আহনাফঃ অন্ধকার কেন সামনে আসো।
মহুয়া এক হাতে চুলগুলো ঠিক করে সামনে আসতেই আহনাফ বললো,’ শান্তি। ‘
মহুয়াঃ এতো কল, মেসেজ কিছু হয়েছে..?
আহনাফঃ হুম হয়েছে… এই যে মন, মস্তিষ্ক, চোখ সব কেউ দখল করে নিয়েছে। সব কিছু আমার হয়েও আমার কথা শুনছে না। এই যে এতো কাজের চাপেও তোমাকে দেখার তৃষ্ণা পেয়ে বসেছে।
মহুয়া হাসলো, হেঁসে বলে উঠলো, ‘ আপনার শহর স্নিগ্ধতার। আমার শহর বিষাদের,বিষাক্ত । আপনার শহর ফুলের রাজ্য। আমার শহর কাঁটার। আমাদের দু’জনের রাস্তা দুই দিকে।’
আহনাফ মহুয়ার কথা শুনে চোখ থেকে চশমা খুলে রাখলো, ‘ তুমি বিষাক্ত পান করলে মরে যাব,তাও একবার নয় বার বার পান করতে চাই । তুমি কাঁটা পায়ে ফুটলে ব্যাথা পাই তবুও সেই ব্যাথায় সুখ খুঁজে পাই,। তুমি এই শীতের রাতের চাঁদর জড়িয়ে রাখলে উঞ্চ পাই না রাখলে কেঁপে উঠি।’
মহুয়াঃ এটা আবেগের বয়স নয়, রাখি।
আহনাফঃ আবেগের বয়স সেই কবেই কাটিয়ে এসেছি এটা আবেগ নয় ভালোবাসা। তুমি আমার বিয়ে করা বউ তোমার প্রতি আবেগ কেন আসবে..? এই এদিকে আসো তোমাকে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে।
মহুয়াঃ খেয়েছেন..?
আহনাফঃ নাহ্।
মহুয়াঃ বাসায় আসবেন কখন..?
আহনাফঃ আরও এক ঘন্টা লাগবে।
মহুয়াঃ রাখব..?
আহনাফঃ এদিকে আসতেবলেছিলাম।
মহুয়াঃ হুম বলিন..
আহনাফঃ একটা কিস দেই.??. ছোট একটা কপালে দিব।
মহুয়া ঠাস করে কল কেটে দিলো৷ লজ্জায় নাক,গাল লাল হয়ে গেছে। লোকটা দিন দিন নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছে।
কি আজব মানুষের মন, যেই জিনিস কখনো পছন্দ ছিল না তা আজ অভ্যাস হয়ে গেছে। বড়,চোখ,চুল,ফর্সা মুখ,লম্বা মেয়ে যার কখনো পছন্দ ছিল না আজ সেই ছেলে এমন মেয়েকে এক নজর দেখার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে।
মহুয়া ফোন রেখে ভাবতে লাগলো। লোকটা কি কষ্ট পাবে আমার এমন আচরণে.?? ইসস এভাবে কলটা কেঁটে দেওয়া উচিত হয়নি। আমার কি দোষ! থুর….
মেঘলার রুমে এসে উঁকি দিতেই দেখলো মেঘলা বসে আছে আর কিছু ভাবছে।
মহুয়া মেঘলার থেকে অনুমতি নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো।
” শরীর কেমন আছে…?”
~ হুম ভালো।
~ পায়ে কি বেশি ব্যাথা..?ছুরিটা কি বেশি গভীরে গিয়েছে..?
মেঘলা অবাক দৃষ্টিতে তাকালো মহুয়ার দিকে।
মেঘলাঃ না বেশি গভীরে ক্ষত হয়নি। তুমি কিভাবে….
মহুয়া হেঁসে মেঘলার সামনে একটা পেনড্রাইভ রাখলো।
মেঘলার মুখ আপনাআপনি হ্যাঁ হয়ে গেলো। যেই জিনিসের জন্য এতোকিছু সেটা মহুয়ার কাছে কি করছে..?
মেঘলাঃ এটা!! তোমার কাছে কিভাবে..? তুমি কোথায় পেয়েছো..?
মহুয়াঃ আস্তে আস্তে….. তুমি বাসা থেকে বের হওয়ার সময় আমি তোমাকে ফলো করি, ফাহিম স্যারের সাথে যা বলেছিলে সব শুনে ছিলাম তখন বুঝলাম পেনড্রাইভটা খুব প্রয়োজন। তোমাকে যখন সবাই আঘাত করে ধরতে ব্যাস্ত তখনি আমি পেছনের দরজা দিয়ে অফিসে ঢুকে যাই। বাহিরে একটা গ্লাস ফেলতেই ভেতর থেকে একটা মেয়ে বেরিয়ে আসে আর বাহিরে তোমাকে দেখে ছু*রি দিয়ে আঘাত করে তখন পুরো অফিসে কেউ ছিল না আর আমি সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পেনড্রাইভ খুঁজে নেই।
মেঘলাঃ তুমি জানো এটা কতো ইম্পর্ট্যান্ট আমার জন্য।
মহুয়াঃ এতো কিছু তো জানিনা তবে তুমি কে..? তোমার আসল পরিচয় কি..? আবার এটা বলো না বস্তি থেকে আলৌকিক শক্তি দিয়ে সিআইডি অফিসার হয়ে গেছ।
মেঘলা পেনড্রাইভ হাতে নিয়ে বললো,’ আমাকে ছাঁদে নিয়ে চলো।’
_______________
ছোঁয়া হালিমা বেগমের রুম থেকে বের হলো। সারাক্ষণ হালিমা বেগমের সাথে গল্প করতে ভালো লাগে। হালিমা বেগমের কেমন অভ্যাস হয়ে যাচ্ছে ছোঁয়ার সাথে গল্প করার। এই এক মেয়ে যার কাছে শান্তি খুঁজে পায়, কথা বললে ভেতর শান্ত হয়, স্বামীর মৃত্যুর কথা কিছু সময়ের জন্য ভুলে থাকেন।
ছোঁয়া নিরুপমার রুমের সামনে এসে দরজা ধাক্কা দিবে তখন ভেতরে একটা নাম শুনে থমকে গেল।
” আফজাল” এই নামটা কালকেও বড় মামার মুখে শুনেছে। আম্মুও ফোনে কাউকে আফজাল বলছে!! ছোঁয়া দরজা ধাক্কা না দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।
______________
হসপিটালে জ্ঞান ফিরতেই আমি চারপাশে তাকিয়ে কিছুই চিনতে পারছিলাম না। আমার সারা শরীরে বেন্ডেজ করা ছিল। শুধু দূর থেকে কয়েকজনের কথা ভেসে আসছিলো ” ডাক্তার আমার মাইয়াডারে বাঁচাই দেন। এতো টাকা তো নাই আমার যা আছে তা দিয়েই চেষ্টা করতাছি ডাক্তার। ”
~ আপনার মেয়ের স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছে। গাড়ি এক্সিডেন্টে খুব কম এমন রোগীদের বাঁচানো যায়।
আমি জানিনা আমার কিভাবে এক্সিডেন্ট হয়ে ছিল। একজন মহিলা এসে বললো আমি উনার সন্তান আমিও তাই বিশ্বাস করে নেই। তারপর থেকে বস্তিতে আমার অভ্যাস হয়ে উঠে। আমি ওই মহিলাকে মা ডাকতে শুরু করি, মায়ের ইচ্ছে ছিল আমাকে পড়াশোনা করানোর কিন্তু টাকা ছিল না, বাসায় বাসায় কাজ করে যা পেত তা দিয়ে আমার মেডিসিন আর আমাদের খাওয়া খরচ হয়ে যেত।ক্লাস ফাইভে উঠার পর মায়ের এক মারাত্মক রোগ হয় চিকিৎসার অভাবে মার শরীর দিন দিন খারাপ হতে শুরু করে। একদিন মা আমাকে ছেড়ে চলে যায় না ফেরার দেশে। মায়ের কেউ ছিলো না বস্তিতে আমার বাবা কোথায় তাও আমি কিছুই জানতাম না ছোট ছিলাম এক্সিডেন্টের জন্য বেশি কিছু মনেও রাখতে পারতাম না খুব জলদি ভুলে যেতাম আঘাত মাথায় পেয়ে ছিলাম চিকিৎসাও ভালো করাতে পারেনি।
মায়ের মৃত্যুর পর পড়াশোনা বন্ধ নিজের খাওয়ার জন্য ঘরে কিছু না পেয়ে বাহিরে বের হলাম। বাহিরের দুনিয়া খুব কঠিন। একদিন দুইদিন তিন দিনের দিন সবার দরজা বন্ধ। পুরো একটা দিন ঘুরেও যখন খাবার পেলাম না রাস্তায় বসে কাঁদতে শুরু করলাম, কোনো কাজও জানতাম না। খাবারের জন্য পাগল প্রায় তখন একটা দোকানে রুটি চোখে পড়তেই চুরি করার কথা মাথায় আসলো। আপনি যখন মৃত্যুকে নিজের খুব নিকটে দেখবেন তখন আপনার কোনটা সঠিক কোনটা ভুল তা মাথায় আসবে না। আমি সেই দিন দোকান থেকে রুটি চুরি করে দৌড় দেই। দোকানদারের ভয়ে দৌড় দেওয়ার সময় রাস্তায় আবারও কারো গাড়ির সাথে ধাক্কা খাই। ভাগ্য ভালো তেমন কিছু হয়নি হাত, পা ছুলে গিয়ে ছিল।
সেই দিন আমি ভাবতেও পারিনি সেই চুরি আর এক্সিডেন্ট আমার ভাগ্য এভাবে পাল্টে দিবে।
গাড়িটা ছিল সিআইডি অফিসার আরমান খানের।
দোকানদার আমাকে ধরে চোর বলে মারতে শুরু করে তখন আমাকে বাঁচিয়ে নেয় আরমান স্যার।
আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে আমাকে নিয়ে আসে নিজেদের বিশাল বাড়িতে। আরমান স্যারের কোনো সন্তান নেই। আরমান স্যারের স্ত্রী নীলা ম্যাডামও অনেক ভালো মনের মানুষ আমাকে নিজের মেয়ের মতো আদর, ভালোবাসা দিয়ে বড় করলেন, ভালো ডাক্তার দেখিয়ে সুস্থ করে তুললেন। নতুন জীবন দিলেন। পড়াশোনা করাচ্ছেন, স্বাধীন জীবন দিয়েছেন। সাথে সিআইডি চাকরি নিলাম নিজের সাহসীকতায় আর বুদ্ধিতে আজ আমি সিআইডি অফিসার মেঘ চৌধুরী। যাকে এক নামে সবাই চিনে তবে আমাকে দেখেনি কেউ, অনলাইনে, গুগলে সার্চ দিলে আমার সব তথ্য আসবে সাথে মাক্স, ক্যাপ পড়া ছবি আমি কখনো মাক্স, ক্যাপ ছাড়া সাংবাদিকের ক্যামেরায় ধরা দেইনি তাই আমার ফেইস কারো চিনা নাই। আর এই জন্যই আমি আমার কেইস গুলো খুব সহজে সমাধান করতে পারি।
নিজের জীবনের গল্প বলে থামলো মেঘলা।
মহুয়া খুব মন দিয়ে শুনছিলো সেই গল্প।
” তাহলে আমাদের বাড়িতে পরিচয় গোপন করে বউ সেজে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে আছেন কেন..? ”
মেঘলা, মহুয়া পেছন ফিরে তাকালো।
নির্জন দাঁড়িয়ে আছে, নির্জনের পেছনে সাজ্জাদ।
মেঘলাঃ তোমরা..?
নির্জনঃ আমরা আগে থেকেই ছাঁদে ছিলাম আপনারা খেয়াল করেননি।
মেঘলাঃ তাহলে তোমরাও সব জেনে গেলে। এমনিতেও দশদিন পর সব সত্য সামনে চলে আসবে।
নির্জনঃ আমি আর মহুয়া সেই কবেই আপনার আসল পরিচয় জানি শুধু জীবনের গল্পরা জানা ছিল না।
মেঘলাঃ কিভাবে..?
মহুয়াঃ মনে আছে আমাকে রনি তুলে নিয়ে গিয়ে ছিলো তখন একটা মেয়ে এসে ছিলো আমাকে বাচাতে আমি তখন মেয়েটার মুখ দেখিনি তবে কার্ডে নাম দেখে ছিলাম ” সিআইডি অফিসার মেঘ”
বাসায় এসে অনেক ভেবেছি কাউকে বলিনি। হঠাৎ তোমার কথাই মনে হচ্ছিল, প্রথম থেকেই তোমার পরিচয় নিয়ে আমার সন্দেহ হতো, তুমি বাহিরে যেতেই তোমার রুমে গিয়ে সব খুঁজতে শুরু করলাম লাস্টে তোমার একটা ডাইরিতে সেই কার্ড খুঁজে পেলাম।
মেঘলাঃ বাহ্ আমার থেকেও বড় গোয়েন্দা তোমরা৷
নির্জনঃ আমি তোমাকে সিআইডি অফিসে যেতে দেখতাম প্রায়, সিআইডি অফিসের পাশেই সাজ্জাদের বাসা তারপর খুঁজ নিয়ে সবটা জানতে পারি।অনোক কষ্ট হয়ে ছিলো সত্যি কথা বের করতে। ফাহিম তো মুখ খুলতে চায়নি তুলে নিয়ে মাথায় পিস্তল ধরে সত্যি কথা বের করেছি।
সাজ্জাদ এতোক্ষনে মুখ খুললো,’ গল্প এখনো বাকি আছে মেঘলা বাকিটা শেষ করুন। ‘
মেঘলাঃ বাকিটা অন্য দিনের জন্য তুলা থাক।
নির্জনঃ আমাদের বাড়িতে কেন..? আর ভাই কেই কেন.?? ভাই কি আসামী..? না মানে সিআইডিরা তো আসামীদের পেছনে লেগে থাকে তাই বললাম।
মেঘলা আকাশের দিকে তাকিয়ে হেঁসে উঠলো ” হুম তোমার ভাই অনেক বড় আসামী আর সেই জন্যই আমি সারাজীবনের জন্য তোমার ভাইয়ের পেছনে লেগে গেলাম মৃত্যুর আগে পিছু ছাড়বো না।মৃত্যুর পড়েও আমি পিছু নিব।
__________
রাত ১টায় বাড়িতে ফিরলো আহনাফ।
মহুয়া কলিং বেলের শব্দ শুনে নিচে এসে দরজা খুললো। বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।মহুয়া দরজা খুলে আহনাফের সাথে অপরিচিত পুরুষ দেখে সালাম দিয়ে সরে দাঁড়ায়।
আহনাফের সাথে অপরিচিত পুরুষ এসেছে শুনে আমেনা বেগম উঠে আসলেন মেহমান এসেছে খাবারের ব্যাবস্থা করতে হবে।
নিচে এসে মহুয়াকে দেখে হাসলেন। মহুয়াকে বরাবর সব সময় উনি পছন্দ করেন।
সোফায় আহনাফ বসে কারো সাথে কথা বলছে।
আমেনা বেগম আগে রান্না ঘর গিয়ে চা বানিয়ে নিলেন মহুয়া ফ্রিজ থেকে খাবার নামালো গরম করতে হবে।
আমেনা বেগম চা হাতে নিয়ে লোকটার সামনে দাঁড়াতেই অবাক হয়ে হাত থেকে চায়ের কাপ নিচে পড়ে গেলো। কাপের সাথে সাথে উনার শরীর কেঁপে উঠল। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে লোকটার দিকে তাকিয়ে বললো ” আফজাল!!!!…”
চলবে….
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।