মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব ৩৫

0
116

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_৩৫
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

মধ্য রাতে সবাই ড্রয়িংরুম জুড়ে বসে আছে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।

দুইতলা থেকে মেঘলা,মহুয়া, ছোঁয়া দাঁড়িয়ে নিচে কি হচ্ছে বুঝার চেষ্টা করছে।

আনোয়ার চৌধুরী সবার দিকে তাকিয়ে আফজাল সাহেবের দিকে তাকালো।

আফজাল মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে উঠলো, ‘ আব্বা কেমন আছেন!..??’
আনোয়ার চৌধুরী গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো, ‘ এতোগুলো বছর পর তুমি..? আমরা তো ভেবে ছিলাম তুমি মরে গেছ।’
আফজালঃ এতো বছর পর আমার স্মৃতি ফিরে পেয়ে ছুটে আসলাম আব্বা।
আনোয়ার চৌধুরীঃ এতোদিন কোথায় ছিলে..? নিশ্চয়ই নতুন বউ বাচ্চা আছে এখন এখানে কেন এসেছো.?
আফজালঃ কি বলছেন আব্বা!! আমার বউ বাচ্চা বলতেই নিরু আর আমার আদরের মেয়ে ছোঁয়া আর কেউ নেই আমার জীবনে।

নিরুপমা নড়েচড়ে বসলেন, অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালেন আফজালের দিকে। কতো বড় মিথ্যাবাদী!

ছোঁয়া ফিসফিস করে বলে উঠলো , ‘ এই লোকের নাম আফজাল..? আমি বড় মামা আর আম্মুকে উনার সাথে কলে কথা বলতে শুনেছি তাও ভীষণ রেগে ছিল।’
মেঘলাঃ কি কথা হচ্ছিল..?
ছোঁয়া সব বললো মেঘলাকে সাথে মহুয়াও শুনলো।

আনোয়ার চৌধুরী আমেনা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো,’ ওর জন্য খাবারের ব্যাবস্থা কর বউমা যা হবার কাজ সকালে হবে। এখন বাকিরা গিয়ে ঘুমাও।’

আফজালের মুখে শয়তানি হাসি ফুটে উঠলো।

নিরুপমা রাগে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে হনহন করে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল।

আমেনা বেগম রান্না ঘরে গেলেন।

আহনাফ উপরে নিজের রুমে যাওয়ার সময় ওদের সামনে পড়লো। মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ এক কাপ কফি নিয়ে আসেন’
মহুয়া ছোঁয়ার দিকে তাকালো ছোঁয়া হামি তুলে রুমের দিকে চলে গেল। মেঘলা ওদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ তোমাদের মধ্যে কি কিছু চলছে..?”
আহনাফ মেঘলার কথা শুনে হেঁসে বললো, ‘ হয়তো চলছে…’

মহুয়াঃ মিথ্যা কথা কিছুই চলছে না। এ-ই লোককে তো আমি চিনিও না।

আহনাফঃ আচ্ছা কফি নিয়ে আসেন চিনিয়ে দিব আ…মি কে..?
মহুয়াঃ আমি এখন পারবো না ঘুমাব।
আহনাফঃ আমি অপেক্ষা করছি।

মহুয়া ভেংচি কেটে নিচে নেমে গেল।

মেঘলা নিজের রুমে চলে গেল। শ্রাবণ ল্যাপটপ নিয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে।

মেঘলাঃ অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়েন কাজ সকালেও করা যাবে।
শ্রাবণ মেঘলার দিকে তাকিয়ে হাসলো।
মেঘলাঃ হাসছেন কেন..? হাসার মতো কি বললাম..??
শ্রাবণঃ শাড়িতে তোমাকে একটু বেশিই সুন্দর আর বউ বউ লাগে।
মেঘলাঃ আপনার অফিসে ঝামেলা চলছে..?
শ্রাবণঃ একটু..
মেঘলাঃ সব ঠিক হয়ে যাবে এভাবে দিন রাত কাজ করলে আপনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন।
শ্রাবণঃ কি ব্যাপার আজ বউয়ের মতো কথা বলছো।
মেঘলাঃ এতোদিন কি বোনের মতো কথা বলতাম.?
শ্রাবণঃ নাহ্ মনে হতো শালিকার সাথে এক ঘরে আছি। যদিও শালিকাও এর থেকে ভালো জিজুর খেয়াল রাখে।

মেঘলা বিছানা করে মোবাইল রেখে শুয়ে পড়লো। কাল অনেক কাজ আছে কথা পেঁচালে রাত এভাবে শেষ হয়ে যাবে।
মেঘলাঃ লাইট বন্ধ করুন আলোতে ঘুম আসে না।
শ্রাবণ ল্যাপটপ বন্ধ করে লাইট বন্ধ করে দিল।

মহুয়া আমেনা বেগমের সাথে আফজাল সাহেব কে সব কিছু এগিয়ে দিলো।
আফজাল আমেনা বেগম কে বলে উঠলো, ‘ এটা কে ভাবি..!??
আমেনা বেগম কিছু সময় মহুয়ার দিকে তাকিয়ে হেঁসে বললো,’ আমার বোনের মেয়ে।”
আফজালের মুখে শয়তানি হাসি ফুটে আছে।
আফজালঃ ওহ্ আচ্ছা। বাড়িটা আগের মতোই আছে।
আমেনা বেগম টুকটাক কথা বলছেন আফজালের সাথে।
আজাদ চৌধুরী এখনো সোফায় বসে আছেন। কিভাবে কি করবেন..? আফজালের সত্য নিরুপমা, মিরাজ চৌধুরী, আর উনি ছাড়া বাসার কেউ জানে না। এতোদিন দূর থেকে ক্ষতি করে শান্ত হয়নি এখন ঘরে ঢুকে গেছে!!…ছেলেদের কি সত্যিটা বলে দেওয়া উচিত!..????

বাবা এসেছে শুনেও ছোঁয়ার মধ্যে কোনো পরিবর্তন নেই৷ এটা কেমন বাবা!.? এসেও একবার মেয়েকে দেখতে চাইলো না!!.? অভিমান জেনো ভেড়ে গেল। অভিমান! উঁহু আমরা অভিমান করি প্রিয় মানুষের প্রতি এইলোক তো প্রিয় নয়।

বাড়িতে এতোকিছু হয়ে গেল নির্জন একবারও নিচে নেমে আসলো না। বাড়িতে কে আসছে.? কি হচ্ছে.? এতে জেনো কিছুই যায় আশে না নির্জনের সে এখন নতুন পুলিশের জব নিয়েছে বাবার কেইস নিয়ে ভীষণ ব্যাস্ত।

মহুয়া কফি নিয়ে চুপিচুপি আহনাফের রুমে রেখে চলে আসতে নিলেই খপ করে হাত ধরে ফেললো আহনাফ।

মহুয়া চোখ বন্ধ করে নিজেকেই কয়েকটা বকা দিল। নিজে না এসে আমেনা বেগম কে পাঠালেই হতো।

আহনাফ মহুয়ার হাত ধরে বলে উঠলো, ‘ কি চুরি করতে এসেছো..?’
মহুয়া রেগে বলে উঠলো, ‘ আপনার রুমে আছে কি চুরি করার!.?
আহনাফ অবাক হওয়ার মতো মুখ করে পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে বললো,’ আমার রুমে নেইটা কি!.??’
মহুয়াঃ আপনার রুমের কোনো কিছুই আমার প্রয়োজন নেই। আর আমি চোর নই কফি দিতে এসে ছিলাম।
আহনাফঃ সত্যি তুমি চোর না.??
মহুয়াঃ আপনি দেখতে পারেন আমি কিছুই নেইনি।
আহনাফ মহুয়ার দিকে ভালো করে তাকাতেই মহুয়া একটু সরে গিয়ে বলে উঠলো, ‘ আমি আপনার রুম দেখতে বলেছি আমাকে না।’
আহনাফঃ আমার মন, শরীর এই আমি টাকেই চুরি করে নিয়েছো মহুয়া সুন্দরী।
মহুয়ার বুক ধুকপুক করছে এই লোকের সামনে আসলেই এমনটা হয়।
আহনাফঃ এই চুরির শাস্তি হিসেবে এখন তুমি আমাকে একবার জড়িয়ে ধরবে।
মহুয়া সাথে সাথে দুই পা পিছিয়ে গেল।
আহনাফঃ থুর কি কপাল আমার!! বিয়ের পরও একবার জড়িয়ে ধরার জন্য হাজার বাহানা খুঁজতে হয়। সারাদিন হসপিটালে তোমার স্বামী এত্তো কাজ করে বাসায় আসলে তো একবার জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করতে পারো, কেমন আছি.?
মহুয়াঃ আমাদের বিয়েটা আর পাঁচটা বিয়ের মতো নয়।
আহনাফঃ তাহলে বলছো আর পাঁচটা বিয়ের মতো জলদি করে নিতে..?।
মহুয়াঃ আমি ঘুমাবো যাই।
আহনাফঃ পালাচ্ছ কেন..? আর পাঁচটা বিয়ের মতো হওয়ার আগে জমিয়ে প্রেম তো করা যায়।
মহুয়া চোখ বড় বড় করে তাকালো৷ এই লোকের কি আজ মাথার তার নড়ে গেছে!!??
আহনাফঃ আইডিয়া কিন্তু খারাপ না। সখ ছিল প্রেম করে বিয়ে করবো কিন্তু তুমি তো দিলে না। এখন আপাতত যতদিন পাই সখ পূরণ করে নেই৷ আজ থেকে তুমি আমার বউ না প্রেমিকা।
মহুয়াঃ হসপিটালে রোগী দেখে আপনি নিজেও রোগী হয়ে গেছেন। ভালো ডাক্তার দেখান।
আহনাফঃ এই রোগের ডাক্তার তুমি মেডিসিনও তুমি।
মহুয়ার লজ্জায় মুখ লাল হয়ে গেছে।
আহনাফঃ তুমি লজ্জা পাচ্ছ.?
মহুয়াঃ নাহ্ আমার এলার্জি সমস্যা।
আহনাফ হেঁসে পকেট থেকে বেলীফুলের মালা বের করে মহুয়ার হাতে দিয়ে বলে উঠলো, ‘ যাওও..’
মহুয়াঃ প্রতিদিন বেলীফুলের মালা নিয়ে আশার কি দরকার!!
আহনাফঃ তোমার পছন্দ তাই।
আহনাফ মহুয়ার হাত থেকে বেলীফুলের মালা নিয়ে ওকে ঘুরিয়ে চুলের খোঁপায় পড়িয়ে দিল।
আহনাফঃ ফুলের খোঁপায় ফুল।
মহুয়া একহাতে খোঁপায় বেলীফুল স্পর্শ করে লজ্জায় রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

___________________

সকাল থেকেই ছোঁয়া উঁকি মারছে নির্জনের রুমে।

নির্জন রুমে নেই।
সাহস করে নির্জনের রুমে প্রবেশ করলো ছোঁয়া।

নির্জনের পুলিশের ড্রেস বিছানার উপর ছিল।
ছোঁয়া দরজা বন্ধ করে উল্টিয়ে পাল্টিয়ে ড্রেস গুলো দেখে নিল। ইচ্ছে করলো একবার পড়ে দেখতে।

আয়নার সামনে নির্জনের সুন্দর করে বাজ করা ড্রেস পড়ে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে ছোঁয়া।

” বাহ্ তোকে তো একদম পুলিশ পুলিশ লাগছেড়ে ছোঁয়া, যদিও ড্রেস গুলো একটু বেশি লম্বা।”
নিজের প্রসংশা নিজেই করছে, মোবাইল বের করে ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে নিল। সাথে কয়েকটা টিকটক করে নিল।

চুলগুলো ছাড়া ছিল সুন্দর করে বেঁধে পেছন ফিরতেই ভয়ে চিৎকার দিয়ে পড়ে যেতে নেয়। নির্জন সাথে সাথে ওর কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।

ছোঁয়া ভয়ে চুপসে গেছে। নির্জন রুমে কিভাবে আসলো!.? ভেতর দিয়ে তো দরজা লাগানো ছিল!!

নির্জন ছোঁয়াকে ছেড়ে দুই পা পিছিয়ে দাড়ালো। পকেটে হাত রেখে ভালো করে দেখে নিল।

ছোঁয়া নিজের দিকে তাকিয়ে নির্জনের দিকে তাকালো। বোকা হেঁসে বললো,’ রুমে কিভাবে আসলে..?’
নির্জন চাবি দেখালো।
ছোঁয়াঃ আমি আসলে.. দেখছিলাম তোমার ড্রেসটা সুন্দর হয়েছে কিনা।
নির্জনঃ এখন তো মনে হচ্ছে ড্রেসটা আমার না তোর।
ছোঁয়াঃ না,না এটা তোমার ড্রেস।
নির্জনঃ খুলে রুম থেকে বের হ আমার সময় নেই।
ছোঁয়া নির্জনের আচরণ স্বাভাবিক দেখে বলে উঠলো, ‘ আমাকে কেমন লাগছে..?’
নির্জনঃ আয়নায় তাকা…
ছোঁয়া ঠোঁট উল্টে বলে উঠলো, ‘ এতোক্ষন তো আয়নায় দেখলাম..
নির্জন আবার ছোঁয়াকে আয়নার দিকে ঘুরিয়ে দিলো। ছোঁয়ার মাথা নির্জনের বুকে।
নির্জন ছোঁয়ার কানের পাশে মুখ নিয়ে বলে উঠলো, ‘ এমন বেশরম বেশে একজন ছেলের সামনে দাঁড়িয়ে বলছিস আমাকে কেমন লাগছে!!.?? এখন তুই বল তোকে কেমন লাগছে..?

ছোঁয়া লজ্জায় মাথা নিচু করে আশেপাশে ওড়না খুঁজছে।
বিছানার পাশে ওড়না পড়ে আছে ছোঁয়া সরতে গেলে নির্জন আঁটকে বলে উঠলো, ‘ আয়নার দিকে তাকা৷ ‘
ছোঁয়া নিচের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ উঁহু ‘
নির্জনঃ তাকাতে বলেছি ছোঁয়া…
ছোঁয়া চোখ পিটপিট করে আয়নায় তাকালো।
নির্জনঃ সুন্দর লাগছে। এই সৌন্দর্যের বর্ননা কিভাবে দিতে হয় আমার জানা নেই, কিভাবে প্রকাশ করতে হয় জানা নেই।তবে আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী নারী আমার সামনে।

ছোঁয়া লজ্জায় বার বার চোখের পলক ফেলছে।
নির্জন ছোঁয়াকে ছেড়ে বলে উঠলো, ‘ যা ড্রেস রেখে নিজের রুমে যা। প্রয়োজন ছাড়া যখনতখন আমার রুমে আসবি না।’

ছোঁয়া কথা না বাড়িয়ে ড্রেস রেখে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

ছোঁয়া বেরিয়ে যেতেই নির্জন বলে উঠলো, ‘ আমার বোকা ফুল”

_______________

আফজাল সাহেব গেস্ট রুম থেকে বের হয়ে সোফায় বসে ছোঁয়ার দিকে তাকালো।
ছোঁয়া নিরুপমার সাথে ভার্সিটিতে যেতে হবে বলছে।

আফজাল সাহেবঃ তুমি ছোঁয়া..? আমার মেয়ে..??
উপস্থিত সবাই আফজাল সাহেবের দিকে তাকালো।
ছোঁয়া মুচকি হেঁসে বলে উঠলো, ‘ আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে আমি আমার মায়ের মেয়ে আর কারো নই।’
আফজালঃ অভিমান….

আজাদ চৌধুরী সবাইকে ডাকলেন ড্রয়িং রুমে।

আজ নির্জন, আহনাফ, শ্রাবণ, আনোয়ার চৌধুরী সবাই ড্রয়িং রুমে আছে।

মেঘলার মুখে হাসি ফুটে আছে।
আজাদ চৌধুরী একবার মেঘলার দিকে তাকালো।
মেঘলা চোখের ইশারায় কিছু বুঝাতেই আজাদ চৌধুরী গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো, ‘ আজ তোমাদের সবাই কে একটা গল্প শুনাতে চাই।’

নির্জনঃ অন্য দিন শুনি বড় আব্বু আজ অফিসে….
আজাদ চৌধুরীঃ চুপচাপ বসে থাক নির্জন।
নির্জন চুপ হয়ে গেল।

আফজাল রাগী চোখে আজাদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে আছে।

আজাদ চৌধুরী হেঁসে বলে উঠলো, ‘ গল্প শুরু করি..? বেশি বড় না ছোট। ‘

চলবে…..
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here