#প্রেমনদীর_মাঝি
#পর্ব_৩
#মুসফিরাত_জান্নাত
সমরেশ মজুমদার তার বিখ্যাত উপন্যাস সাতকাহনে লিখেছেন, মৃ’ত মানুষ ফিরে এলে মানুষের সুখের বদলে দুঃখ বাড়ে।কথাটা যে কতোটা যুক্তিসঙ্গত তা এই মুহুর্তে অনুভব করতে পারছি।যদিও উপস্থিত সকলের মাঝে দুঃখের চেয়ে ভয় ছড়িয়ে আছে।মানুষটা না আবার কোনো লঙ্কাকাণ্ড বাধিয়ে ফেলে।তার অবর্তমানে খালামনি এমন একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে তুলকালাম না বাঁধায়।এই ভয়ে তটস্থ সবাই।এদিকে খালুজান সবকিছু শুনে স্থির হয়ে বসে রয়েছেন কেবল।যা ঝড়ের পূর্বাভাস মনে হলো আমার নিকট।ঝড় আসার পূর্বে প্রকৃতি যেমন স্থির হয়ে যায়,উনিও তেমন স্থির হয়ে আছেন।মুখে কোনো কথা বলছেন না।ওনার ফিরে আসা নিয়ে কেও আনন্দে বাড়াবাড়িও করছে না।কেবলি চাপা উৎকণ্ঠা তৈরি হয়ে আছে সবার মাঝে।এভাবে কতোটা সময় গড়ালো ঠিক জানা নেই।অনেক ক্ষন পর উনি নিষ্প্রাণ কণ্ঠে বললেন,
“আমার একটু বিশ্রাম প্রয়োজন।অনেক পথ জার্নি করে এসেছি।ঘরে গিয়ে ঘুমাবো আমি।কেও বিরক্ত করবে না।আর হ্যাঁ, আমার একমাত্র ছেলের বিয়েতে আত্মীয় আপ্যায়নে কোথাও কোনো ত্রুটি রেখো না।”
খালামনিকে কথাগুলো বলে চলে গেলেন উনি।যাওয়ার পূর্বে আড়চোখে একবার দেখলেন আমাকে।ওনার চোখেমুখে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করলেন।এটা জানা কথাই যে, এই বিয়েতে উনি কখনো খুশি হবেন না।আর আমাকে পুত্রবধু হিসেবে সন্তষ্ট চিত্তে মেনে নিবেন না।কিন্তু এতো সহজে যে সবটা মানিয়ে নিবেন তাও ভাবিনি কেও।হয়তো খালুজান ভেবেছেন, বাড়ি ভর্তি মানুষের সামনে সিন ক্রিয়েট করাটা অনুচিত কাজ। সবার রেপুটেশনে দাগ লাগবে এমন করলে।বাড়ির সম্মান ক্ষয়ে যাবে।আত্মীয় বিদায় নিলে না হয় এর প্রতিক্রিয়া দেখানো যাবে।অথবা যা হয়ে গিয়েছে তা হাজার বলেও ঘুরিয়ে নেওয়া যাবে না বলেই চুপ করে গেলেন।ঠিক কোন কারণে উনি ঝামেলা এড়িয়ে ঘরে চলে গেলেন তা কেও বুঝতে পারলাম না।তবে এই ভরা মহলে অশান্তি না করায় স্বস্তি পেলো সবাই।
_____
নিষুপ্ত রজনী।কয়েকদিন হলো প্রকৃতিতে হুটহাট বর্ষণ নামলেও রাতের অন্তরীক্ষ পরিষ্কার হতেই চন্দ্রিমার আবির্ভাব হয়।আজও হয়েছে।কিন্তু সেই চন্দ্রিমার আলো ম্রিয়মাণ লাগছে আমার নিকট।বেলা দ্বি প্রহরে খালুজানের আবির্ভাবের পর থেকে সারাটা দিন কেমন গুমোট হয়ে ছিলো সব।ঝিমিয়ে ওঠা বিষন্ন পরিবেশে কে’টে গেলো বউভাতের আয়োজন।একেকজনের বিধ্বস্ত চেহারা দেখে মনে হচ্ছিল এ বাড়ি বিয়ের আয়োজন নয়,নির্ঘাত কোনো গণ্যমান্য মৃ’ত ব্যক্তির চল্লিশা খাওয়ানো হচ্ছে।সবার চোখেমুখে কেমন বিষাদ লেপ্টে ছিলো।সেই বিষাদটা দ্বিগুন হলো যখন অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফাঁকা হলো।খালুজানের তখন চুপ হয়ে যাওয়ার কারণটাও শনাক্ত হলো সেই সময়।নিয়মানুযায়ী শেষ সময়ে যখন নিভৃত ভাই আমাকে নিয়ে আমাদের বাড়ি যাত্রার উদ্দেশ্যে পদক্ষেপ নিলেন তখনই বিপত্তিটা বাঁধলো।বাবার কাছে বিদায় নেওয়ার উদ্দেশ্যে অনুমতি চাইতেই গম্ভীর স্বরে খালুজান বললেন,
“সেখানে যাবে কি না যাবে সেটা তোমাদের মা ছেলের ব্যাপার।আমাকে বলছো কেনো?আমার কোনো সিদ্ধান্তের মূল্যায়ন যখন এই বাড়িতে হয়নি, তখন অনুমতি চাওয়ারও কিছু নেই।”
ওনার গম্ভীর অথচ শীতল কণ্ঠে ভারী হয়ে উঠলো পরিবেশ।কথাটা শুনে থমকে গেলেন খালামনি।লজ্জা ও অনুতাপে মাথা নুইয়ে ফেললেন তিনি।সেই কষ্টের ছাপ সমানতালে ভাগ করে নিলেন নিভৃত ভাই।অসহায়ত্বের ছাপ স্পষ্ট হলো ওনার মুখোভঙ্গিতে।খালামনি সহ সবাই স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন।মুখে কেও কিছু বলার সাহস পেলো না।সবাইকে নিরব দেখে খালুজান আবারও ওভাবেই বললেন,
“আমি আমার জীবন ভর বাড়ি ছাড়া বাহিরে থেকে তোমাদের জন্য এফোর্ট দিয়েছি।যখন যা চেয়েছো তা পূরণ করেছি।পরিবার ছাড়া অন্যত্র থাকার যে কতটা কষ্ট তা প্রতিটা মুহুর্তে সহ্য করেছি।বাবা মা তোমাদের নিয়ে থাকার ইচ্ছা আমারও ছিলো।অথচ নিজের এসব অনুভুতির কথা কখনো ভাবিনি।শুধু তোমরা ভালো থাকবে বলে।বিনিময়ে তোমাদের থেকে কি পেলাম বলো?আমার অবর্তমানে নিছক মৃ’ ত ভেবে এমন একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলে? যা আমি কখনো চাইই নি।আমার মৃ” ত্যুতে আমার চাওয়া পাওয়া যে এভাবে গলা টিপে হ’ ত্যা করবে তোমরা বুঝতে পারিনি কখনো।বুঝলে হয়তো আমি আর ফিরে আসতাম না।আমার ইচ্ছাগুলো সব এতো ঠুনকো তোমাদের নিকট?আফসোস,এই ঠুনকো ভালোবাসার জন্য আস্ত একটা জীবন কাটালাম।তোমাদের ভালো থাকার জন্য এতোদিন সব করেছি আমি।তাই আজও তোমরা নিজেদের ভালোটা বুঝে নিলে।আমাকে বুঝলে না!তবে নতুন করে অনুমতি নামক বাহানার কি প্রয়োজন বলো?যার যা ইচ্ছে করে বেড়াও,আমি বাঁধা দেওয়ার কে?আমি শুধানোরই বা কে?”
মানুষ অতি শোকে পাথর হয়ে যায়,কাঁদতে ভুলে যায়,অশান্তি করতে ভুলে যায়,প্রতিবাদ করতেও ভুলে যায়।কেবল শান্ত হয়ে দেখে যায় সবটা।খালুজানও এমনই করছেন।তিনি যে এমন অবস্থান দেখে কতোটা কষ্ট পেয়েছেন তা ওনার কথার ধরনেই স্পষ্ট হলো।কতোটা কষ্ট চেপে রয়েছেন উনি ভাবতেই কেমন বুক ভে ঙে এলো আমার।ওনার সম্রাজ্যে যা উনি তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন সেখানে তারই কোনো মূল্যায়ন নেই একটা ব্যক্তির জন্য যে এটা কতোটা অসহায়ত্ব বহন করে তা হয়তো কেও বুঝবে না।জাহাজ ডুবিতে সৌভাগ্যক্রমে তিনি হয়তো বেঁচে ফিরেছেন, কিন্তু নিজের সম্রাজ্যে নিজের দাফন শেষে নতুন আইন জারি হওয়া দেখার পরও কি আর বাঁচতে পেরেছেন?তাঁর তো ভে’ঙে খান খান হয়ে যাওয়ার কথা।খালুজানের সেই হৃদয় ভাঙার গান আমরা কেও শুনতে পেলাম না।কিন্তু সেই সুর পরিবেশটাকে ভার চাপিয়ে দিলো।নিরবতার পাহাড় গড়ে তুললো ইট সিমেন্ট ভেদ করে।সবাই নিশ্চুপ হয়ে নিজ কর্মের জন্য অনুতাপ করতে লাগলো।কথাটা খালুজান নিভৃত ভাইকে বললেও সবটা যে খালামনিকে শোনালেন তা কেই বা না বুঝবে?তাই তো খালামনির কষ্ট বেশি হলো।সেই কষ্টের ভার সইতে না পেরে তিনি আচমকাই কেঁদে ওঠলেন।হটাৎই নিজের আত্মসম্মান ভুলে আমাদের সবার সামনেই খালুজানের পা জাপ্টে ধরলেন।কাঁদতে কাঁদতে বললেন,
“ওগো তুমি এমন করে নিজেকে কষ্ট দিও না।আমাদের মা’ রো – কা’ টো, অশান্তি করো,প্রতিবাদ করো।তাও এমন চুপচাপ থেকে নিজের কষ্ট বাড়িও না।”
“নাহ সালমা,আমার কোনো কষ্ট নেই।কষ্ট তো এতোদিনে তোমরা পেয়ে এসেছো।সেই কষ্ট না হয় এবার নির্মূল হলো।”
“দেখো আমি ভুল করেছি।এতে নিভৃত বা কারো কোনো দোষ ছিলো না।ও তোমার কথা ভেবে রাজী হতে চায় নি।কিন্তু আমি ইমোশনাল ব্লাকমেইল করে রাজী করিয়েছি।তুমি আমাকে শাস্তি দাও।যা খুশি শাস্তি দাও।আমি মাথা পেতে নিবো।আমার এক ভুলের প্রায়শ্চিত্ত আমি জনম জনম সইবো।তাও এমন করো না প্লিজ।”
খালামনির আকুতি মিনতি শুনে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলেন খালুজান।তারপর নিষ্পৃহ কণ্ঠে বললেন,
“যে ভুল করেছি আমি মনেরও খেয়ালে,নিয়তি সে ভুলের প্রায়শ্চিত্ত ফিরিয়ে দিয়েছে সুদে আসলে।প্রায়শ্চিত্ত তুমি কি করবে সালমা,প্রায়শ্চিত্ত তো আমি পেয়েছি।মুখ বুঁজে না হয় তাই সহ্য করি।”
কথাটা বলে তিনি হেয়ালি করে হাসলেন।তারপর নিভৃত ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“যাও বাবা, যাও।শশুর বাড়ির জামাই আদর ভোগ করো,যাও।এই অসহায় পিতার কথা চিন্তা করে কিই বা হবে!”
কথাটা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলেন তিনি।ছুটি বাতিল করে জবে জয়েন করতে গেলেন।হাজার বুঝিয়েও কোনো লাভ হলো না।যে স্ত্রী তার জন্য চার মাস তেরো দিন অবধিও শোক পালন করতে পারেননি,ছেলের বিয়ের আসর বসিয়েছেন, তেমন স্ত্রীর সান্নিধ্যে থাকবেন না বলে চলে গেলেন।খালুজান চলে গেলেন এক ভরা আসরের আনন্দ বাতি নিভিয়ে বিধ্বস্ত সন্ধ্যা উপহার দিয়ে।দিনের কোনো এক প্রহরে এসে কয়েক ঘন্টা নিজ নীরে থেকে আবার আরেক প্রহরেই বিদায় হলেন অনুভুতির ঝুলিতে গাঢ় যন্ত্রণা ভরে।অথচ কথা ছিলো যথারীতি তিনটি মাস তিনি নিজ বাড়িতে ছুটি কাটাবেন।জীবন বাঁচানোতে শরীরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ধকলটা তিনি পুষিয়ে উঠবেন।কিন্তু একটা ঘটনায় সব লণ্ডভণ্ড করে বিদায় নিলেন।সাথে সবাইকে দিয়ে গেলেন এক আকাশ সম দীর্ঘশ্বাস।
ওনার চলে যাওয়ার পর আমাদের আর কোনো আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়নি।যাওয়া হয়নি নিজ বাড়ি।খালামনি তৎক্ষনাৎ ঘরে দরজা দিয়ে শুয়ে পড়েছেন।হয়তো লুকিয়ে থেকে কষ্ট বিসর্জন দিচ্ছেন।নদী আপু ও নিশিও কেমন ঝিম মে’ রে রয়েছে।নিভৃত ভাইয়েরও মনে মেঘ জমে রয়েছে।কিন্তু ছেলে বলেই ওসব প্রকাশ করতে পারছেন না তিনি।কেবল উদাস হয়ে এতো রাত অবধি বাড়ির ছাদ পাহাড়া দিচ্ছেন।একটা ঝড়ো হাওয়া যেনো সব সর্বশান্ত করে দিয়েছে।মানুষের হাহাকারে বাড়িটা ভরিয়ে দিয়েছে।অথচ এই বাড়ির প্রতিটা ইট সিমেন্টের কোথাও কখনো কান্নার সুর শুনতে হয়নি।কখনো না পাওয়ার আফসোস সহ্য করতে হয়নি।প্রতিটা কনায় কনায় কেবল আনন্দের চিহ্ন বয়ে চলেছে তারা।অথচ আজ নিয়ম ভেঙে এক আকাশ দুঃখ এঁকে ফেললো নিজ দেওয়ালে।
এমন একটা পরিস্থিতিতে আমার ঠিক কি করা উচিৎ বুঝতে পারছি না আমি।বাড়ির আদুরে, আহ্লাদী পরিবেশে বড় হওয়া এই আমি’র ঘাড়ে যেনো পাহাড় সমান দ্বায়িত্ব এসে চাপলো।কিন্তু আমি অসহায়, আমি এসব পালন করতে আনাড়ি।তাই ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে দেখছি সব।সারাজীবন তো দুষ্টুমি করেই কেটেছে,এই জীবনটা উপভোগও করেছি।অথচ এই অবেলায় কেবলই মনে হচ্ছে সব ভুল ছিলো, সব ভুল।এরচেয়ে যদি দ্বায়িত্ব নিতে শিখতাম, তবে না হয় সবার দুঃখ না ঘোচাই কিছুটা লাঘব করতে পারতাম।এই প্রথম বারের জন্য নিজের অক্ষমতায় আফসোস হলো আমার।এই মুহুর্তে আম্মুর চেহারা খুব মনে পড়লো।আম্মু থাকলে তো সব সমস্যা কেমন এক হাতে সামলে নেয়।তবে আমি পারছি না কেনো?আমি তো ওনারই মেয়ে।হটাৎ কি একটা ভেবে উঠে দাঁড়ালাম আমি।আমার অপরিপক্ক মস্তিষ্ক বললো, এই মুহুর্তে সবাইকে খাওয়ানো দরকার।তাছাড়া সবার শরীর খারাপ করবে।এটা মনে হতেই ছুটলাম রান্নাঘরে।কিন্তু আফসোস, আজ উনুনে আগুন জ্বলেনি।হরেক রকমের পদে টেবিল সাজানো হয়নি।তার পরিবর্তে অবহেলায় পড়ে রয়েছে শূন্য টেবিল ও শূন্য হাড়ি।কাজের লোকেরাও অভুক্ত রাত কাটাচ্ছে।একটা ঘটনা কেমন সব নিয়ম চুরমার করে দিয়েছে।আমার মনে হতে লাগলে এসবের জন্য আমিই দ্বায়ী।এ পরিবারে আমি না আসলে সুন্দর এই গোছানো সংসারে ফাটল ধরতো না।
চিন্তিত, উদ্ভ্রান্ত মস্তিষ্ক নিয়ে শূন্য হাতেই ছাদে গেলাম।সেখানে পৌছাতেই আরেকটা ছাড়খার কায়া অক্ষিগত হলো।রাত যেনো দুঃখের সাগরে পাড়ি জমিয়েছে।ছাদের রেলিং ধরে দূর অন্তরীক্ষ পাণে তাকিয়ে আছে নিভৃত ভাই।গুটি গুটি পা ফেলে এগিয়ে গেলাম আমি।কিছুটা ইতস্তত করে নিজের অবস্থান জানান দিতে ওনার কাঁধে হাত রাখতেই ঘার ঘুরিয়ে তাকালেন উনি।ওনার শূন্য চোখ দু’টো দেখে বুক কেঁপে উঠলো আমার।ওই চোখ দুটোতে কতো গভীর ব্যা’থা দানা বেধে রয়েছে।উনি গম্ভীর থাকলেও এমন বিধ্বস্ত রুপে কখনো দেখিনি ওনাকে।ওনাকে এভাবে দেখে হু হু করে উঠলো আমার অন্তর।দুষ্ট এই আমিটা ওনার এমন রুপে চট করেই একটা বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম।নরম গলায় বললাম,
“কিচ্ছু হবে না দেখেন।খালুজান আবার ফিরে আসবে।রাগ তো আর সারাজীবন থাকবে না তাই না?”
আমার কথায় উনি আশ্বস্ত হলেন কিনা জানি না।তবুও বললাম এটা।আমার কথার প্রতিক্রিয়া স্বরুপ মাথা নাড়লেন উনি।খালুজান বিদায়ের মুহুর্তে যে কয়টা এ পক্ষের আত্মীয় ছিলো, নিভৃত ভাইয়ে ফুপু,চাচিরা সবাই ওনাকেই দোষ দিচ্ছিলো।খালামনি না হয় পরের মেয়ে,নিজ বোনের প্রতি টান থাকবে,কিন্তু নিভৃত ভাইও বা কি করে মায়ের কথায় নাচতে নাচতে বিয়ে করলো এই নিয়ে কাঁদা ছোড়াছুড়ি করার খেলায় মাতলেন তারা।ওনাকে যাচ্ছেতাই অপমান করে বিদায় হলেন ওনারা।সেসবকে ছাপিয়ে একটু স্বান্তনায় হয়তো কোনো কাজ হলো কিনা জানি না।কারণ উনি নিরব রইলেন।আমি আবারও জিজ্ঞেস করলাম,
“আপনার মন ঠিক আছে তো?”
উনি জড়ানো গলায় জবাবে বললেন,
“আমি আব্বুকে অনেক ভালোবাসি পুষ্প।আব্বু অনেক কষ্ট পেয়েছে।”
“আর আপনি?”
প্রশ্নটা শুনে ভিজে চোখে তাকালেন উনি।গভীর ক্ষতমিশ্রিত চোখ দু’টো দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন তার মনোভাব।ওনার এই দৃষ্টি দেখে আর সহ্য করতে পারলাম না।ডুকরে কেঁদে উঠলাম।উনি অসহায় হয়ে তাকিয়ে রইলেন কিছু সময়।তারপর বাচ্চাদের মতো করে বললেন,
“আমার কষ্টটা একটু কমিয়ে দিবে প্লিজ?শুধু একবারের জন্য হলেও কমাও।আমি আর সহ্য করতে পারছি না।”
কথাটা বলে নিজের চোখের বাধ ভেঙে দিলেন।এদিকে আমি দ্বিধায় পড়ে রইলাম।ওনার কষ্ট আমি কিভাবে কমাবো?উনি আমার কাছে আশ্রয় চাইছেন?তার মানে উনি আমাকে ভরসা করেন।তবে অবশ্যই ওনাকে সাহায্য করা প্রয়োজন।কিছু সময় ভেবে ভেবে ওনার কাছে গিয়ে দুইহাতে জড়িয়ে নিলাম আমি।উনিও হয়তো এটাই চাইছিলেন।নিজের শক্ত বাঁধনে আবৃত করে ফোঁপাতে নিলেন।ওনার স্পর্শ পেতেই বুঝলাম গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে ওনার শরীর।কিছু সময় এভাবে থাকার পর আমি কাঁপা গলায় আমার সিদ্ধান্তটা জানালাম,
“আমাকে বিয়ে করেছেন বলে খালুজান বাড়ি ছাড়লেন।আমাকে ডিভোর্স দিলে উনি হয়তো বাড়ি ফিরবেন।আমাদের মাঝে তো কিছু হয় নি, আপনি চাইলে ডিভোর্স দিতে পারেন।”
আমার কথাটা শুনে আচমকা এক ঝটকায় আমাকে ছেড়ে দিলেন উনি।কিছু না বলে কাঁপতে লাগলেন কেবল।চোখ দু’টো লাল হয়ে উঠলো।জ্বর বাড়ছে হয়তো।ওনাকে আবার ধরতে যাবো তার আগেই তাল হারিয়ে দেহের ভার ছেড়ে দিলেন।
চলবে