#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৬৭
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
সন্ধ্যা হয়ে আসছে।সব মানুষের ঘরে ফেরার তাড়া।বিরাট জ্যাম লেগেছে রাস্তায়।একঘেয়ে নিশ্চলতাকে মুখ বের করে দেখছে তোশা।কবীর আদেশ করার ভঙিমাতে বলল,
“মাথা ভেতরে ঢুকাও বেলাডোনা।ব্যাথা পাবে।”
“জ্যাম কখন ছাড়বে?ভালো লাগছেনা।”
পিছন ফিরে তাঁকিয়ে দেখলো আহনাফ একমনে ফোনে কিছু একটা করছে।তোশা একবার ছেলের দিকে আরেকবার দিকে কবীরের দিকে তাঁকালো।দুজনের চেহারাতে কতো মিল।কিন্তু গায়ের রঙে তফাৎ।
“কী দেখছো এভাবে?”
“আপনাদের।”
“মায়ের সাথে কথা হয়েছে তোমার?আমার মা।তোমার শ্বাশুড়ী।”
তোশা ধীর কণ্ঠে বলল,
“বুঝেছি তো।বলিনি রাতে গিয়ে বলে নিবো।”
“এখন তোমার অনেক দায়িত্ব।সেগুলো নিয়ে টেনশন করবে না।খাবে ঠিকমতো।ঘুমাবে ও পড়াশোনা।নিজেকে বড় ভাবার কোনো দরকার নেই।”
“আপনি ও আম্মু আমাকে বড় হতে দিলেন না কখনো।”
“তুমি থাকো না ছোট্ট চেরী হয়ে।এটা ভালো লাগে।আমি তোমার পাগলামি তে মজেছিলাম।”
তোশা লাজুক হাসলো।পিছন ফিরে আহনাফকে দেখলো।যে কানে হেডফোন লাগিয়েছে।আশ্চর্য এই ছোট ছেলেটা কীভাবে বুঝলো বড়রা কথা বলছে সেটা না শুনলে ভালো হয়।কারণ ক্ষণপূর্বেও কানে হেডফোন ছিলনা।তোশার মনটি ফুলে ফুলে ভরে গেলো।দুটো অসাধারণ মানুষের সঙ্গে তার জীবন শুরু হতে চলেছে।দীর্ঘ ক্ষণ পর গাড়ীগুলো আপন গতিতে চলতে লাগলো।এসি বন্ধ করে কবীর জানালা গুলো খুলে দিলো।শীতল সমীরণ তোশার সামনের চুলগুলো উড়িয়ে দিচ্ছে।কী সুন্দর দিন।কে বলবে কয়েক দিন পূর্বে অসহনীয় আশংকায় মনটা শেষ হয়ে গিয়েছিলো।তোশাকে বাড়ীর সামনে নামিয়ে দিলো কবীর।মেয়েটা চলে যেতে নিলে তার শাড়ীর আঁচল টেনে শুধালো,
“কালকে ভার্সিটি থেকে আমি নিয়ে আসবো তোমাকে।গাড়ী ফেরত পাঠিয়ে দিও।”
“বাবা তুমি সদ্য প্রেমে পড়া টিনেজারের মতোন বিহেভ করছো কেন আইসক্রিমকে দেখে?”
আহনাফের দিকে ভ্রুঁ কুঁচকে তাঁকিয়ে বলল,
“তোমার বয়স কম।তাহলে কীভাবে জানলে টিনেজাররা প্রেমে পড়লে কেমন করে?”
তোশার দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলল,
“আইসক্রিম দেখিয়েছে।তুমি জানো একদিন আমাকে জড়িয়ে কী কান্না।তোমার মতোন দেখতে এই কারণে।”
তোশা ভ্রুঁ জোড়া কুঞ্চিত করে বিদায় বলল।কবীর হাসছে।শক্ত বলিষ্ঠ কণ্ঠে বলল,
“বিদায় বেলাডোনা।সবিনয়ভাবে কবীর শাহ এর ভালোবাসা মনে রাখবেন।”
“ভুললাম কবে?”
তোশা গেটের ভেতর চলে গেলো।হঠাৎ পিছন দারোয়ান ডেকে বলল,
“তোশামণি তোমার জন্য একজন ফুল পাঠিয়েছে।নিয়ে যাও।”
“ফুল?কোথায় দেখি।”
দারোয়ান লোকটি সাদা তিনটা গোলাপ তোশার হাতে রাখলো।সঙ্গে একটি কাগজ।তোশা খুলে দেখলো সেখানে বিয়ের জন্য শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে।আশ্চর্য কারো নাম নেই।সে ততোটা না ভেবে ভেতরে ঢুকলো।কিন্তু ড্রয়িং রুমে টিনাকে বসে থাকতে দেখে চমকে উঠলো।
“আপনি?”
তোশার দিকে তাঁকালো টিনা।মেয়েটাকে পরখ করে বুঝতে পারলো চেহারাতে প্রাণবন্ত ভাব ফুঁটে উঠেছে।
“তোমার বাবার সাথে এসেছি।”
“বাবা এসেছে?কোথায়?”
“ভেতরে গেলো এখন।”
তোশা পা বাড়িয়ে মায়ের রুমের দিকে এগুতে লাগলো।মায়ান যদিও আর কিছু করতে পারবেনা।কিন্তু তবুও তোশা নিজ মা কে আর কথা শোনাতে দিবে না।রুমের কাছাকাছি গিয়ে শুনতে পেলো তাহিয়া বলছে,
“আপনার কথা মানতে আমি বাধ্য নই।তোশার বিয়ে আমার বাসা থেকেই হবে।”
“এটা তোর বাবার বাসা।বুঝতে কেন পারিস না যে তোশার বাবা, দাদা বেঁচে আছেন।তারা কেন বিয়েটা এখানে হতে দিবে।”
“আপনি কালকে কবীরকে আ” ঘা”ত করেছেন।এরপরও মায়ান?”
“সেটা আমার ও আমার বন্ধুর ব্যাপার।তোর কথা বলতে হবেনা।”
“লজ্জাহীন।” বলল তাহিয়া।কণ্ঠে কেমন বিরক্ত হওয়ার ভাব।মায়ান অবশ্য তোয়াক্কা করলো না।বিছানাতে বসে বলল,
“তোর মুখ বেশী চলে।মেয়ের বিয়ের পর নিজে যখন বিয়ে করবি তখন না হয় এই বাড়ী থেকে অনুষ্ঠান করবি।”
“বাবা!”
তোশার কণ্ঠে তাহিয়া কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো।মায়ান মেয়েকে দেখলো।এখনও তার মস্তিস্ক স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছেনা নিজের মেয়ের বিয়ে বাল্যকালের বন্ধুর সাথে হয়েছে। ভাবতে গিয়ে দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এলো।
“ভেতরে এসো তোশা।বসো এখানে।”
“আমার বিয়ে এই বাড়ী থেকেই হবে।জেদ করো না।এখন বাদ দাও আমার মা কে কথায় কথায় খোঁ’চা দেওয়া।দুজন প্রাক্তনকে এভাবে ল’ড়’তে দেখলে আমার মটেও ভালো লাগেনা।”
“তোমার নিজস্ব বাবার বাড়ী ওটা।”
“যে বাড়ীর রাস্তা আমার মায়ের জন্য বন্ধ সেটা আমার বাড়ী নয়।”
মায়ান তর্ক করতে গিয়েও থেমে গেলো।পকেট থেকে একট বক্স বের করলো।যেখানে সুন্দর দেখতে একটি লকেট।
“আমার মেয়ের বিয়ের উপহার।এটা নিবে?”
মায়ানকে অবাক করে দিয়ে তোশা নিজ হাতে পড়িয়ে দিতে বলল।তাহিয়া একপাশে নির্বিকার হয়ে তাঁকিয়ে আছে মেয়ের গলায় ঝুলতে থাকা দামী লকেটটিকে দেখছে।
“আমি ভেবেছিলাম নিবেনা তোশামণি।ভালো থাকবে সবসময়।যদি জীবনের এক পর্যায়ে মনে হয় কোনোভাবে তোমার আরো পাওনা আছে।তাহলে মনে রাখবে বাবা সবসময় তোমার সাথে আছে।”
“আমার বিশ্বাস কবীর শাহ ও আম্মু সবকিছু এনে দিবে আমাকে।বাবা বিশ্বাস করো তোমরা দুজন আমার বাবা-মা হয়ে ল’ড়া’ই করো ভালো লাগেনা।এটা বন্ধ করতে পারবে?আমি হয়তো একটু কম বেশী।কিন্তু দুজনকেই ভালোবাসি।”
“তোমার মা কে বেশী ভালোবাসো?”
“হ্যাঁ।”
“তুমি অনেক সেন্সিবলভাবে কথা বললে।”
“আম্মু শিখিয়েছে এভাবে বলতে।জীবনের সেরা শিক্ষক।দুনিয়ার বেস্ট মা।”
তাহিয়ার চোখেমুখে উজ্জ্বলতা ফু্টে উঠলো।যা মায়ানের চক্ষু আড়াল হলো না।সেদিনের কথার কী সুন্দর জবাব আজ তোশা দিলো।মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বাহিরে চলে এলো মায়ান।টিনা উৎসুক হয়ে জিজ্ঞাস করলো,
“কী হলো?”
“বিয়ে এখান থেকে হবে।”
“কিন্তু তুমি তো।”
“টিনা একটা কথা কী জানো আমি বোধহয় আমার প্রথম সন্তানের জীবনে কোথাও নেই।তারা মা-মেয়ে আলাদা জগত তৈরী করে নিয়েছে।সেখানে আমার প্রবেশ নি’ষে’ধ।”
“দুঃখ পেওনা।”
মায়ান স্মিত হেসে বলল,
“হচ্ছে না।বরং কয়েকটা লাইনে আমার মেয়ে বুঝিয়ে দিলো পুরো জীবনটাকে আমি যেভাবে দেখেছি সেটি বোধহয় পুরোপুরি সঠিক বা উচিত নয়।আমার অনুমানও সর্বদা সঠিক নয়।চলো আমরা ফিরে যাই।ওদের একা থাকতে দাও।”
টিনার হাত ধরে মায়ান বের হয়ে গেলো।তাহিয়াকে ছেড়ে দেওয়ার অল্প সময়ের মধ্যে সে এই রমণীর হাতখানা ধরেছিলো।কখনো খারাপ লাগেনি।কিন্তু আজ জিতে যাওয়া তাহিয়া নামক নারীটির মুখখানা দেখে বেশ শূন্য অনুভব হচ্ছে।
চলবে।