#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৬৬
#লেখা:সামিয়া খান প্রিয়া
“দিনটি কতো সুন্দর।”
তোশা লম্বা একটি শ্বাস টানলো।নাকের ভেতর তরতাজা গোলাপের সুবাস ঢুকে গেলো।কী সুন্দর দিন।মনোরম পরিবেশ।তার নানা নেয়ামত তখন বাগানে দাঁড়িয়ে বেলা বারোটায় গাছে পানি দিচ্ছিলো।নাতনির মুখে থেকে বের হওয়া বাক্যটি কর্ণকুহর হতে সে মেয়েটির দিকে তাঁকালো।হালকা গোলাপি রঙের শাড়ী পরেছে।তার মনে পড়ে গেলো ষাটের দশকের এক নায়িকার কথা।নামটা যদিও এখন মনে পড়ছেনা।
“তোশামণি দিনটি আসলেও সুন্দর।তুমি কোথায় যাচ্ছো?”
“আহনাফের সঙ্গে ঘুরতে নানা।আপনাকে অনেক সুন্দর লাগছে দেখতে।”
নেয়ামত হাসলো।তাহিয়ার মেয়েটিকে তার নির্বোধ মনে হয়।দিনে দুপুরে বুড়ো মানুষটিকে সুন্দর বলে দিচ্ছে।বিয়ের পর মাথাটা গেলো নাকী?
“তোমাকেও সুন্দর লাগছে।সময় মতো চলে এসো।”
মায়ের গাড়ীটা নিয়ে বের হয়ে পড়লো তোশা।একবার ভাবলো রিক্সায় যাবে।কিন্তু গেটের বাহিরে মানুষের চাহনি দেখে সে ইচ্ছাটাকে পাশে সরিয়ে রাখলো।আজকে দিনটা তোশার নিকট অন্যরকম লাগছে।সে বিবাহিত।যতোবার নিজের ফোলা ফোলা মুখটা দেখছে আয়নায় ততোবার শিহরিত হচ্ছে শরীর।মিনিট বিশেক বাদে শপিং মলে পৌঁছে গেলো সে।
“একা কেন এসেছো?”
স্বামী হওয়া কবীর শাহ কে দেখেও তোশার অন্যরকম লাগছে।তামাটে মুখশ্রীটার বয়স যেন আরো কমে গেছে।তোশা মুখ গোমড়া করে বলল,
“আপনি কেন? আমার ও আহনাফের একা ঘুরার কথা ছিল।”
“আহনাফের নিজস্ব ক্রেডিট কার্ড নেই বেলাডোনা।তো আপনাদের নিজস্ব ব্যাংক হয়ে এসেছি।”
“এই কথা বললে হবেনা।”
“অবশ্যই হবে।চলো এখন।”
তোশা মিষ্টি হেসে কবীরের হাতখানা জড়িয়ে ধরলো।এই মানুষটা তার।একমাত্র নিজস্ব বলা হোক কিংবা ব্যক্তিগত পুরুষ।কবীরের ফোনে কল আসায় সে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।তোশা খেয়াল করলো সকল মানুষ তাদের দেখে কৌতুহল হয়ে তাঁকাচ্ছে।সেটা পুরোপুরি অগ্রাহ্য করে একটি শপের ভেতর ঢুকলো তারা।
“আহনাফ।”
“আইসক্রিম।তুমি লেট করেছো দশ মিনিট।”
“আহনাফ তুমি তোশাকে এখনও আইসক্রিম বলে ডাকবে?”
“সবসময়।”
কবীর ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।আহনাফ তোশাকে অনেক আগেই নিজের মায়ের আসনে বসিয়েছিলো।যে ছেলেটা সহজে কারো সাথে ঠিকঠাক মিশতো না কিংবা মা শব্দটাকে ভয় পেতো।সেই ছোট বাচ্চাটা আজ কতো সহজে মিশে গেলো আরেক লিটল চেরীর সাথে।তোশার দিকে তাঁকালো কবীর।নিজস্ব বেলাডোনার মধ্যে তফাৎ খুঁজলো বিয়ের পরের।কিন্তু এখনও তো সেই দস্যু ভাব রয়ে গেছে চোখেমুখে।অথচ গতকাল রাতে তাকে অনেকটা গভীরভাবে ছুঁয়েছে কবীর।সেজন্য কোনো ক্লান্তি ভাব নেই।উল্টো প্রদীপের ন্যয় দ্বীপশিখা ছড়িয়ে যাচ্ছে।কবীর নিজের ভাগ্যকে ধন্যবাদ দিলো এমন একটা সুন্দর ফুল তার জীবনে এসেছে তাই।
“চলো তোমরা এখন।শপিং শুরু করা যাক।”
তোশা ও আহনাফের উচ্ছাস ছোট ছোট হাসি এই অভিজাত শপে থাকা প্রত্যেকটি মানুষকে একবার হলেও তাদের দিকে আকর্ষণ করছে।কেউ মুগ্ধতা ভরে দেখছে।তো কেউ চোখেমুখে ঘোলাটে ভাব বজায় রেখেছে।এরমধ্যে ত্রিশ অতিক্রম করা সফেদ ত্বকের এক নারী তোশাকে খোঁচা মেরে আস্তে করে বলল,
“কম শপিং করো।তুমি যেভাবে জিনিসপত্র কিনে চলেছো তাতে মনে হচ্ছে এসব জিনিস কেনার সাধ্য কখনো ছিলনা।কিন্তু তোমার মা কে দেখেছিলাম একবার আমার কাজিনের বিয়েতে।ভদ্রমহিলাকে দেখে তো যথেষ্ট ডিসেন্ট লেগেছিলো।তুমি এমন যে কেন?”
তোশা জবাব দিলো না।বরং সব কথাগুলো শুনে নরমভাবে হাসলো।একটু দূূরে বাবা -ছেলে মিলে কী যেন আলাপ করছে।তাদের মন খারাপ হবে দেখে আস্তে করে বলল,
“আমি যার টাকায় এসব কিনছি সে নিজেও আমার আপন।এবং আমার মা তিনিও আমার সবথেকে আপন।দুজনের অর্থের উপর অধিকার আছে।বরং আপনার অধিকার নেই আমার ব্যাপারে মন্তব্য করার।
” তোমার সবকিছু এখন লোকের মুখে মুখে।অধিকার কেন থাকবেনা?”
“আমার কথা টক অফ দ্য টাউন হতে পারে।কিন্তু আমি সহজলভ্য কেউ নেই।”
“কথা দারুণ বলতে পারো।আমাকে চিনো আমি কে?”
“কে?”
ভদ্রমহিলা নিজের স্বামীর ছায়াতলে নিজস্ব পরিচয় বর্ণনা করতে লাগলো।বরং বাড়াবাড়ি পর্যায়ে ব্যাখা করতে লাগলো সব।তোশা শুধালো,
“আপনি কি করেন?”
“আমার হাজবেন্ডের সব আছে।কিছু করতে হবে কেন?”
“আমার হাজবেন্ডেরও সব আছে।তাও আমি অনেককিছু করতে চাই।কী সুন্দর দেখুন আমার ভাগ্য।যা চাই তা পেয়ে যাই।”
ভদ্র মহিলার হাত থেকে পার্সটা টান দিয়ে নিয়ে তোশা পাশের সেলসম্যানকে দিলো।এটা তার পছন্দ হয়নি।কারণ দামটা বেশী।তবে দেখানোর জন্য হলেও সে বিল করার জন্য দিয়ে দিলো।ভদ্রমহিলার মুখটা বেজায় মলিন দেখা গেলো।কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো।কারণটা হলো শুরু সে করেছিলো।
“পরিবেশটাকে ন’ষ্ট করে দিচ্ছো তোমরা।এখানে যে কেন এসেছো।একজন বিশ বছরের ছোট মেয়েকে বিয়ে করেছে আরেকজন..।”
“আমার থেকে বিশ বছরের ছোট একটি মেয়েকে আমি বিয়ে করেছি।এতে চোখ নামানোর কিছু আছে বলে মনে করিনা।এবং মিস খেয়াল করে দেখুন এই শপটি সকলের জন্য।এখানে কে আসবে বা যাবে সেটি দেখার বিষয় বোধহয় আপনার নয়।এবং আমাকে রাগাবেন না।যেহেতু অপরিচিত তাই পরিচিত হতে চাচ্ছিনা।সেটা হতে গেলে বোধহয় আপনার জন্য ভালো হবেনা।
তোশার হাতটা নিজের মধ্যে নিয়ে নিলো কবীর।মহিলার দিকে তর্জনি উঁচু করে বলল,
“ভালো থাকতে চান নিশ্চয়?”
মহিলা জবাব দিলো না।মুখ গোমড়া করে অন্যদিকে চলে গেলো।তোশা ভ্রু কু্ঁচকে শুধালো,
“আপনাকে যতোটা ভালো দেখায় আসলে আপনি ততোটা নন।”
“তো কেমন বেলাডোনা?”
“অন্ধকারের মতোন।জরুরি কিন্তু ভয়া’বহ।”
“দারুণ কথা তোমার সুন্দর নারী।”
“ধন্যবাদ তামাটে পুরুষ।”
দুজনে হেসে উঠলো।তারা জানে এমন ঘটনা প্রায় রোজ আসবে।মাঝেমধ্যে এমন মানুষের সঙ্গে দেখা হবে ।তাদের কাওকে থামাতে হবে কথা দিয়ে।আবার কাওকে অবহেলা করে চলে যেতে হবে।চড়ুই ও বাজপাখির সম্পর্ক অনন্য তখুনি তো হবে।
চলবে।