#হৃদয়ের এপিঠ ওপিঠ
পর্ব ঃ- ০৬(শেষ পর্ব)
~আঁখি দেব তৃপ্তি
ইরা,
সকাল সকাল এতো বড় সুসংবাদ পাব ভাবি নি। চাকরিটা আমার হয়ে গেছে। খুব প্রয়োজন ছিল চাকরিটার কিন্তু ইতুর কথা ভেবে খারাপ লাগছে। মেয়েটাকে ছাড়া সারাদিন থাকতে হবে, কার কাছেই বা রেখে যাব ওকে। ওই বাসার ম্যাডামকে দেখে ভালো মনে হয়েছিলো। উনাকে যদি বলি ইতুকে নিয়ে কাজ করবো উনি নি রাজি হবেন। অনুরোধ করে দেখবো নাহয়।
রান্না এখনো বাকি। তাড়াতাড়ি রান্না শেষ করে ইতুকে খায়িয়ে ওকে সুজয়ের কাছে রেখে রওয়ানা দিলাম। সুজয় ঠিক খুশি হলো বলে মনে হয় না। চাকরির খবর দেওয়ার পর বললো –
“চাকরিটা কী করতেই হবে? ইতু এতো ছোট কীভাবে থাকবে ও।”
কষ্ট করে হলেও ওর ভালোর জন্যই ওকে থাকতে হবে। আমাদের এখন কী অবস্থা তা তো দেখছোই। আমি ম্যাডামকে বলে দেখবো ওকে নিয়ে কাজে যাওয়া যায় কিনা।
আর কোনো কথা বলে নি সুজয়।
বাসার ভিতর ঢুকতেই ম্যাডামের সাথে দেখা। উনাকে ম্যাডাম সম্মোধন করেই বললাম –
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ম্যাডাম, আমাকে চাকরিটা দেবার জন্য। আমাকে কী কাজ করতে হবে বলুন।
“তোমাকে কিছুই করতে হবে না। তোমার কাজ শুধু আমার সাথে গল্প করা।”
ঠিক বুঝলাম না ম্যডাম।
“বসো, বুঝিয়ে বলছি, ”
জ্বি
“আমার স্বামী আমাকে সময় দিতে পারছেন না তাই উনি আমাকে সময় দেওয়ার জন্য একজন লোক রাখতে বলেছেন। ”
খুব অবাক হলাম আমি, সময় দেওয়ার জন্য লোক রাখা। সত্যিই টাকা থাকলে মানুষ কী না করতে পারে।
“তোমাকে কতো টাকা বেতন দিতে হবে।”
আপনার ইচ্ছে ম্যাডাম।
“তোমাকে ১৫০০০ টাকা করে দিব মাসে। বাকি ৫০০০ টাকা থাকে ওটা দিয়ে ভাবছি গাছ কিনবো, একটা বারান্দা বাগান করবো মনের মতো করে। আর এতে তুমি আমাকে সাহায্য করবে।”
এতো টাকা! খুশিতে আমার চোখ ঝলঝল করছে। কিন্তু বাকি ৫০০০ মানে কী বুঝলাম না। যাই হোক এতো বুঝার দরকার নেই। যা পাচ্ছি তাই আমার জন্য অনেক।
“কী হলো কিছু বলছো না যে।”
কী বলবো বুঝতে পারছি না ম্যাডাম, আমার কাছে সবকিছু স্বপ্ন মনে হচ্ছে।
“স্বপ্ন নয় সব সত্যিই। আশা করি এ টাকায় তোমার অভাব অনেকটা দূর হবে। আচ্ছা একটা কথা বলো তো।”
কী ম্যাডাম?
“এখনতো তোমার অভাব মিটলো। তুমি কী আবার তোমার স্বামীকে ভালবাসবে, সুখে সংসার করবে?”
ভালবাসতে পারবো কিনা জানিনা ম্যাডাম। ভালবাসা বড়ই অদ্ভুত জিনিস! একবার কারো উপর থেকে উঠে গেলে সহজে আবার আসে না। তবে সংসার নিশ্চয়ই করবো। এখন মনে হয় সবটুকুই দায়িত্ববোধ। নিজের জন্য আর ভাবি না ম্যাডাম, আমার মেয়েটা একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ পাক এটাই শুধু চাওয়া। আর ওর খুশিতেই আমার সুখ।
“কতো বয়স তোমার মেয়ের?”
দুবছর।
“এতো ছোট বাচ্চা মা ছাড়া থাকবে কী করে? তুমি বরং ওকে এখানে নিয়ে এসো। আমার ছেলেরও একজন খেলার সাথি হয়ে যাবে।”
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে ম্যাডাম। আপনি সত্যিই অনেক ভালো। আমি এতোক্ষণ শুধু আমার মেয়ের জন্য চিন্তা করছিলাম।
“আচ্ছা, তোমায় একটা প্রশ্ন করি?”
জ্বি ম্যাডাম।
“বলতো আমি সুখী কিনা?”
আপনি কেন সুখী হবেন না ম্যাডাম। আপনার এতো টাকা। টাকা থাকলে কিনা করা যায়।
“হাহাহা….. তাই নাকি! আচ্ছা চলো আজকে কিছু গাছ কিনবো। নিজেকে ব্যস্ত রাখবো নিজের মতোন। ভালো থাকার চেষ্টা করবো। বুঝলে ইরা, শুধু টাকা থাকলেই সুখী হওয়া যায় না। টাকা দিয়ে সব কিনা যায় না। এই যেমন আমি আমার স্বামীর সময় কিনতে পারি না।
খুব অবাক হলাম ম্যাডামের কথায়, উনি সুখী নন! আসলেই দুনিয়া বড়ই আজব, ধনী গরিব কাউকেই প্রকৃত সুখী হতে দিতে যায় না।
তিয়া,
ইরা মেয়েটা অনেক সহজ সরল। কিন্তু জীবনের চড়াই-উতরাই ওর দেখা হয়ে গেছে। ওর কথাগুলোতে জোর আছে। আসলেই কী ভালবাসা এতো কঠিন কিছু! ওর কথাই হয়তো ঠিক। ইদানীং নেহালের প্রতি আমার ভালবাসাও বোধহয় কমতে শুরু করেছে। এখন আর ওর কথায় ভরসা হয় না। ওর কাছ থেকে কিছু পাওয়ার আশা আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। একসময় হয়তো শূন্য হয়ে যাবে। আমাকে নিজের মতো করে ভালো থাকতে হবে। হৃদয়ের একপিঠে যে অপ্রাপ্ত ভালবাসার ছটফটানি ছিল তা থেকে বেড়িয়ে অপরপিঠের মুক্ত, প্রত্যাশাহীন জীবনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। হৃদয়ের এপিঠ ওপিঠ কতোটাই না আলাদা! কিন্তু দুপিঠেই দুরকম শান্তি হয়তো লুকিয়ে আছে। সেই শান্তিটুকুর অপেক্ষায়। আমার কলেজের এক দিদি বলতেন তিয়া জীবনটাকে কখনো একদিক দিয়ে দেখো না, কষ্টের পরের সুখ তাহলে খুজে পাবে না। জীবনকে চারিদিক দিয়ে দেখো, কোথাও তো নিশ্চয়ই আছে একটুখানি সুখের ছায়া। আজ উনার কথাই সত্যি মনে হচ্ছে। উনি প্রচুর বই পড়তেন, নিজের মতো ঘুরে বেড়াতেন, অন্যান্য মেয়েদের নিয়ে আড্ডা দিতেন। কখনো উনার মলিন মুখ দেখিনি, সবসময় হাসিখুশি থাকতেন। তাই আমিও ভাবছি একটা বাগান করবো, কিছু উপন্যাস কিনবো, আর ইরাকে নিয়ে মাঝে মাঝে ঘুরতে যাব। ওর জীবন কাহিনি পুরোটা শুনার ইচ্ছা আমার। নিশ্চয়ই ও শোনাবে। আর কিছু ভাবতে ইচ্ছে হচ্ছে না এখন৷ যাই গাছ কিনে আনি। কাল সারারাত বাগান সম্পর্কে বিভিন্ন ভিডিও দেখেছি। আজ সেগুলো কাজে লাগানোর পালা।
-সমাপ্ত-