হৃদয়ের এপিঠ ওপিঠ পর্ব ঃ- ০৫

0
1015

#হৃদয়ের এপিঠ ওপিঠ
পর্ব ঃ- ০৫
~আঁখি দেব তৃপ্তি

তিয়া,

ইরা নামের মেয়েকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। ও যা বললো তা আমার ভাবনাকে ভুল প্রমান করে। আমি এখন সেটা নিয়েই ভাবছি। তা কী করে সম্ভব। আমি যদি আমার ভালবাসার মানুষের সাথে পালিয়ে যেতাম তাহলে তার আর্থিক অসার্মথ্যতাতে কী আমিও এমন অনুভব করতাম? না সেটা কেন হবে! ইরা নামের মেয়েটার সাথে আরও কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে, আরও জানতে ইচ্ছে হচ্ছে ওর সম্পর্কে। ওকেই চাকরীটা দেওয়া যাক।

নেহাল,

কী তিয়া তোমার কাউকে পছন্দ হলো?

“হুম হয়েছে।”

আচ্ছা তাহলে কাল থেকেই ওকে রেখে দাও।

“এ চাকরির জন্য তুমি বেতন কতো দিবে?”

দিয়ে দিও তোমার যা ইচ্ছে। আমি তোমাকে যা দেই পরের মাস থেকে আরও ২০ হাজার বাড়িয়ে দিব।

” ২০ হাজার টাকা খুব সামান্য না তোমার কাছে?”

সেটা বলা যায়। ২০ হাজার টাকা আমার কাছে তেমন কিছু না কিন্তু তাই বলে যে একেবারে তুচ্ছ তেমন ও নয়। তুমি আমার স্ত্রী, প্রয়োজনের চেয়ে বেশি তুমি সবসময় পাবে এটাই স্বাভাবিক। আমি চাই না তোমার কখনো কিছুর অভাব ফিল হোক।

“তুমি আজও আমায় চিনলে না নেহাল। আমার অভাব ঠিক কীসে বুঝলে না।”

তোমার এসব সাহিত্যিক কথা আমার বুঝার সময় নেই।

” হুম, সময়…”

ও তোমাকে একটা কথা বলা হয়নি।

‘কী?”

আমাকে পরশু সিঙ্গাপুর যেতে হবে। কবে ফিরবো জানি না। তুমি এদিকটা সামলে নিও কেমন আর এখন তো নতুন আরেকজন লোক ও আসবে।

“তুমি না বলেছিলে আমাদের নিয়ে ঘুরতে যাবে।”

ওটা আর এখন হচ্ছে না। সিঙ্গাপুরের কাজটা বেশি জরুরি। বলেছি যখন পরে কোথাও নিয়ে যাব, আসি।

ইরা,

মেজাজটা খুব খারাপ হয়ে আছে। এতো কষ্ট করে আশা নিয়ে ইন্টারভিউ দিতে গেলাম সেটাও হলো না। পরে জানানো হবে বলে বিদায় করে দিল। তার উপর উনি মেজাজ দেখিয়ে যে বেড়িয়ে গেলেন আর ফিরার খবর নেই। আমাকে সবাই পেয়েছেটা কী? সবকিছু শুধু মুখ বুজে সয়ে যাব। কিছুই বলতে পারবো না! সন্ধে হয়ে এলো সুজয়ের কোনো খুঁজ নেই। বাসায় যে বাজার সদাই কিছু নেই সে খবর কী ওর আছে নাকি আমরা শুধু ভাত গিলবো? তা এভাবে আর সহ্য হচ্ছে না। আমাকে কিছু একটা করতেই হবে।

সুজয়,

রাত ৯ টা বাজে, বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে হচ্ছে না। কিন্তু মেয়েটার জন্য আবার মন খারাপ লাগছে। এখন বাড়ি ফিরলেই ইরা চেচামেচি করবে। কিন্তু এখন না ফিরি পরেতো ফিরতেই হবে৷ সারারাত খোলা আকাশের নিচে কাটানোর কোনো মানে হয় না।

খালি হাতে যাওয়া যাবে না৷ ৪ টে সিংগারা আর ইতুর জন্য কিছু চকলেট নিলাম।

বাসার ভেতরে পা রাখতেই ইরা বললোঃ-

“রাতে না ফিরলেও তো হতো।”
এই নাও ঠান্ডা হয়ে গেলে মজা পাবে না।

“কী?”

সিংগারা।

“তোমার সিংগারা তুমিই খাও।”

বাদ দাও না প্লিজ। আজ তোমার কী হয়েছে? এমন করছো কেন? কেউ কিছু বলেছে?

“বলার মতো আছে কী যে বলবে?”

কোথায় না ইন্টারভিউ দিতে গেলে সেটার কী হলো।

“সেটা আর না জানলেও চলবে।”

ইতু কী ঘুমিয়ে গেছে?

“হুম।”

ওর জন্য চকলেট এনেছিলাম এগুলা রেখে দাও।

“হুম, চকলেটে তো ওর সব পুষ্টি হয়ে যাবে। আর কিছু খেতে হবে না।”

এরকম বলছো কেন? আমি একটা কাজের ব্যবস্থা করছি। দেখো সব আবার ঠিক হয়ে যাবে।

“হুম দেখছিই তো শুধু। ”

তিয়া,

আমি জানতাম এরকম কিছু একটাই হবে। নেহালের আর আমাদের সময় দেওয়া হবে না। আমিই প্রতিবার বেশি আশা করে ফেলি। নিজেকে বোঝাতে হবে। একা ভালো থাকা শিখতে হবে আমায়। আমার এই ডিপ্রেশন এর ছায়া যেন আমার ছেলের জীবনে না পড়ে। ওকে ঠিক মানুষের মতো মানুষ করতে হবে আমায়। টাকা নয় মানুষকে ভালবাসতে শিখাতে হবে। আমার এখনো অনেক দায়িত্ব বাকি।

সকাল বেলা ইরা নামের মেয়েকে খবর দিতে লোক পাঠালাম। সবার নাম ঠিকানা লিখা ছিল তাই আর সমস্যা হয় নি। আমাকে আরো কিছু কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে, যাতে নেহালের অনুপস্থিতি আমাকে বেশি কষ্ট দিতে না পারে।

নেহাল,

রাতে তিয়া আমার সাথে ভালভাবে কথা বললো না। কেমন যেন ভার ভার হয়ে রইলো। ও কেন যে এসব করে কে জানে। আমার আবার নিজে থেকে বেশি ঘসামাজা করে কারণ জানতে চাওয়া এসব আসে না। বউ হলো ঘরের লক্ষী। ঘর সংসার নিয়ে থাকবে, স্বামীর ভালো মন্দর খবর রাখবে তা না শুধু এটা ওটা নিয়ে রাগ করা। এতো আধিক্যেতার কী আছে বুঝিনা। আমার মতো একজন বিত্তশালী মানুষকে বিয়ে করে কেউ যদি নিজেকে সুখী ভাবতে না পারে, সেখানে আমার কী করার আছে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here