#আমি_আপনিতে_আসক্ত (১৩)
#ফারহানা_জান্নাত
“আপনি!! উফ ভয় পাইয়ে দিলেন তো মা। আপনি এতো রাতে এখানে কি করছেন?”
–আরুহি পিছনে তাকিয়ে দেখে তার শাশুড়ী মা দাঁড়িয়ে আছে। আরুহি মাটি থেকে উঠে শাশুড়ী মার হাত ধরে বাড়ির পথে হাঁটতে থাকে।
“তুই এখন ও এখানে বসে আছিস। মেয়েটাকে এই কয় মিনিট এ কি বুঝ দিলি বল তো! রাহুল ওর কান্না থামাতে পারতিছে না। আর ও নিজে ও তোকে নিতে আসবে না আমি সেটা জানি। ভয় ডর কিছু নাই নাকি? এই রাতে এখানে একা একা বসে ছিলিস।”
“মা বাদ দেন তো, মাহি মামুনির কি হয়ছে কান্না করছে কেনো?”
“তোকে নাকি রাহুল চড় মারছে সে জন্য।”
–আরুহি থতমত খেয়ে যায়, রাহুল তাকে চড় মারছে সেটা তার শাশুড়ী মা কিভাবে জানলো? আরুহি এই সময়ের মধ্যে বাড়িতে চলে আসছে। আরুহি কে রাহুলের রুম দেখিয়ে দিয়ে তিনি নিজের রুমে যান। আরুহি গুটিগুটি পায়ে রুমে যায়। দেখে রাহুল মাহি’কে কোলে নিয়ে এদিক ওদিক যাচ্ছে। মেয়েটা কান্না করতিছে, আরুহি কে দেখে রাহুল বিরক্ত হয়। কিন্তু মাহি মামুনি মামুনি বলে চিল্লায়।
“মামুনি মামুনি তোমাল কাতে যাবো। আমাকে কোলে নেও।”
“কান্না করে না সোনা, এই তো মামুনি চলে আসছে।”
–আরুহি মাহি”কে কোলে নেয়। রাহুল কিছু না বলে বিছানায় গিয়ে গাঁ এলিয়ে দেয়। আরুহি মাহি”র কান্না থামিয়ে ঘুম পারায় দেয়। তারপর রাহুল এর পাশে শুয়ে দিয়ে সে মেঝেতেই দাড়িয়ে থাকে। সে কই শুবে? রাহুল কি তাকে বিছানায় ঘুমাতে দিবে? আরুহি এসব ভাবতে ভাবতে রুমটা ভালোভাবে দেখে। দেওয়ালে বড় করে দুইটা ছবি টাঙ্গানো, একটা বিয়ের আর একটা মাইশার একা ছবি। আরুহি মাইশার ছবিটাতে হাত বুলিয়ে সোফায় বসে ফোন চালায়। এখন ঘুম ও আসবে না সে জানে, তাই বসে বসে ফোন চালানো টাই শ্রেয়ো। নেট এ গিয়ে মেরিড স্টাটাস দিয়ে সোফায় চোখ বন্ধ করে হেলান দেয়।
“ভাবি তুমি ঘুমাও নি নাকি সারারাত! আমি রুমে ঢুমে লক্ষ করছি সেই কখন থেকে। তুমি ফোনে গল্প পড়ছো। মানে সারারাত না ঘুমিয়ে কি গল্প পড়ছো নাকি!?”
–আরুহি চমকে উঠে ফোনটা সোফায় রাখে। সামনে তাকিয়ে দেখে ফিহা দাড়িয়ে আছে।
“এই সকালে তুমি এখানে কি করছো ফিহা?”
“আসলে ভাবি দরজা খোলা দেখলাম সে জন্য আসছি। সরি আমার নক করে আসা উচিত ছিলো। আসলে ভাইয়ার তো ভার্সিটিতে ক্লাস আছে আর সকাল ৮:৩০ বাজে। তাই মা তোমাদের ডাকতে পাঠালো।”
“ওহ সকাল হয়ে গেছে!? আচ্ছা যাও আমরা আসতেছি। তুমি কি আমার বড় হবে?”
“না ভাবি তোমার ছোট আমি। এবার এইচএসসি দিলাম। তোমাকে তুমি করে বলতে ছি তার জন্য সরি। আসলে মা বললো বড় আপুর মতো ভাবতে।”
“সমস্যা নেই যাও আমি রাহুল স্যার কে ডেকে দিচ্ছি।”
–ফিহা রুম থেকে গেলে আরুহি বিছানায় তাকায়। মাঝ রাতে মাহি একবার ঘুম থেকে উঠছিলো। তখন রাহুল ঘুমে ছিলো তাই বিছানায় গিয়ে আবার ঘুম পারিয়ে দিয়ে সোফায় এসে বসে। গল্প পড়তে পড়তে কোন দুনিয়ার চলে যায় সে নিজে ও জানে না। সকাল হয়ে গেছে তার যেনো খেয়াল নেই। ঘরির দিকে তাকিয়ে রাহুল কে ডেকে উঠায়।
“রেডি থেকো তোমাকে নিয়ে আজকে কোডে যাবো।”
–রাহুল রেডি হয়ে ভার্সিটিতে যাওয়ার সময় কথাটা আরুহি কে বলে। আরুহি ভ্রু নাচিয়ে তাকায়, কোডে যাবে কেনো?
“কোডে কি করতে যাবো?”
“কেনো জানো না! ডিভোর্স দিবো তোমাকে। আচ্ছা তোমার লজ্জা বলতে কিছু নাই? বড় বোনের জামাইকে বিয়ে করছো।”
–আরুহি কিছু বলে না। মাথা নিচু করে নেয়, তার চোখে পানি টলমল করতিছে। রাহুল মাহিকে কোলে নিয়ে আদর করে ভার্সিটিতে চলে যায়। মাহি তখন মামুনির কাছে এসে জামা ধরে টানতে থাকে।
“মামুনি কোলে নেও।”
–আরুহি মাহি কে কোলে উঠায় নেয়। মাহি ছোট ছোট চোখ দিয়ে আরুহি কে ভালো ভাবে দেখে। তারপর গলা জরায় নেয়।
“মাহি মামুনি কি হয়ছে তোমার সোনা? তোমার কি মন খারাপ?”
“বাবাই তোমাকে মারচে মামুনি।”
“না তো মামুনি কেনো?”
“তোমাল গালে এটা কিচের দাগ।”
–আরুহি অবাক হয়। এই টুকু বাচ্চা কথা বলতে পারছে না ঠিক মতো, সে আবার দাগ দেখে মারার দাগ ভাবতিছে। আচ্ছা বাচ্চাটা বুঝলো কিভাবে এটা মারার দাগ? কালকে তার সামনে মারছিলে সে জন্য? আরুহি আয়নার সামনে গিয়ে দেখে আসলেই দাগ স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। কালকে বিয়ের জিনিস কেনার সময় মেকাপ কিনছিলো। আরুহি মাহি কে বিছানায় বসে দিয়ে গালে মেকাপ দিয়ে দাগটা লুকিয়ে দেয়। কারণ এখন বাবার বাসায় যাবে। দাগ দেখলে তো মা-বাবা কষ্ট পাবে।
“ভাবি তুমি নাকি বাবার বাসায় যাবে? মা বললো, তবে বিকালের আগে বাসায় আসতে বলছে। কারণ রাহুল ভাইয়া ৪টার আগেই বাসায় আসে। বাসায় এসে মাহি”কে না দেখলে আবার রাগ করবে।”
“উফ এই মাহি’র বাবাই দেখি আচ্ছা বেয়াদব। আচ্ছা তুমি রেডি হওনি কেনো!! মা কে তো বললাম তোমাকে ও নিয়ে যাবো।”
“আসলে ভাবি ডাক্তার এর কাছে যাবে। কয়দিন থেকে শরীর ভালো যাচ্ছে না। মাথা ঘুরতিছে খুব।”
–আরুহি ভ্রু কুঁচকে ফিহাকে ভালোভাবে পরখ করে। সে ডাক্তার না হলে ও বাবা-মায়ের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখছে। আরুহির যা বুঝায় সে বুঝে গেছে। ফিহাকে রেডি হতে বলে নিজে ও রেডি হয়ে মাহি কে রেডি করাতে থাকে।
“মামুমি আমি ও ঐটা দিবো।”
“কোনটা মা?”
“তুমি তকন গালে দিচো সেটা।”
“মেকাপ?”
–আরুহি হেঁসে ফেলে। পিচ্চি নাকি মেকাপ দিবে, তবে আরুহি ছোট থেকেই সাজতে পছন্দ করতো। নিজে ও আপুনির কাছে ছোট থেকেই সাজিয়ে নিতো। আপুনির কথা মনে হতেই আরুহির মন খারাপ হয়ে যায়। সে সুন্দর করে মাহিকে সাজিয়ে দিয়ে কয়েকটা পিক উঠায়। তারপর নিজের সাথে একটা সেলছি তুলে প্রোফাইল পিক করে। মেয়েদের স্বভাব নতুন নতুন ছবি তুললে ফেসবুকে আপলোড দেওয়া। আরুহি নিজের ভাবনা মনে এঁকে রাহুল কে মেসেঞ্জার এ ভিডিও কল দেয়। রাহুল এক্টিভ আসে দেখেই ফোন করে সে। রাহুল বারবার ফোন কেটে দেয় দেখে আরুহি বিরক্ত হয়।
“এই আপনার সমস্যা কি বলুন তো? মাহি আপনার সাথে কথা বলবে সে জন্য ফোন দিচ্ছি। তাছাড়া আপনার মতো হাবাগোবা মানুষের সামনে আমার কথা বলার ইচ্ছে নাই।”
–আরুহির মেসেজ দেখে রাহুলের রাগ উঠে। সে কোন দিক দিয়ে হাবাগোবা? ভিডিও কল দেয় কিছুটা রাগ নিয়ে, ভাবে একদফা বকাবকি করবে। কিন্তু কলে আরুহিকে দেখে অবাক হয়। কি সুন্দর লাগতিছে, হয়তো সেজেছে। রাহুল পরক্ষণেই মাথা নিচু করে। আরুহি মুচকি হেসে মাহি’র দিকে কেমেরা করে।
“দেখেন আপনার রাজকন্যাকে কেমন লাগতিছে? বলেন তো আমার সাজিয়ে দেওয়া সুন্দর হয়ছে না?”
“মাহি মামুনি!”
–রাহুল অবাক হয়ে তার রাজকন্যা কে দেখে। একদম কোনো পিন্সেস এর থেকে কম লাগছে না। অবাক নয়নে মেয়েকে দেখে, ইশ মাহি’র মা থাকলে বুঝি এই ভাবে সাজিয়ে দিতো মাহি কে। মাহি”র পড়নে একটা ছোট্ট ফ্রোগ, ছোট ছোট চুলে ছোট ক্লিপ লাগিয়ে দেওয়া। মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে।
“আরুহি”
–হঠাৎ রাহুলের ডাকে আরুহির ধ্যার ফিরে। সে ও মাহি”কে পরখ করছিলো এতোক্ষণ থেকে। মাহি একদম মাইশার মতো হয়ছে।
“হুম বলেন।”
“মাহির কয়টা পিক তুলে আমাকে দেও তো। আর ধন্যবাদ সুন্দর লাগছে আমার মেয়েকে। সাজাতে পারতাম না কিন্তু সব কিছু কিনে রাখছি আমি। ওর শাড়ি ও আছে চাইলে সে গুলো পড়িয়ে দিও ওকে। আর আমাকে পিক দিও।”
“আচ্ছা, আপনাকে একটা কথা বলি? আমি মাহিকে নিয়ে বাবার বাসায় যাচ্ছি।”
–রাহুল কিছু বলে না। ফোনটা কেটে দেয়, আরুহি মন খারাপ করে বেরিয়ে পড়ে।
“ভাবি তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে জানো না। ইশ কি সুন্দর তুমি, আমি তো মাইশা ভাবিকে সরাসরি দেখি নাই। যা দেখার ছবিতেই দেখছি।”
“তোমাদের বিয়ে হয়ছে কবে?”
“১ বছর হয়ছে কিছুদিন আগে।”
“ওহ”
“মামুনি কই যাবো”
“নানু বাসায় মামুনি”
“নানু কি আমাকে খেলনা দিবে?”
“হিহি হা মা দিবে না কেনো? আমার যে গুলো আছে সেই গুলো দিয়েই খেলো।”
–আরুহির কথায় ফিহা চোখ বড় বড় করে তাকায়।
“ভাবি তুমি এখন ও খেলা করো নাকি!?”
“আরে না মানে ঐ আরকি। মাহিরের সাথে খেলতাম। আমার ছোট ভাই আছে ওর সাথে আর কি।”
“ওহ তাই বলো।”
–আরুহি বাসায় আসার আগে আশাকে ফোন করে জানিয়ে দেয়। তাই আশা আগেই ওদের বাসায় এসে বসে আছে। আরুহি এসে কলিং বেল বাজায়। মাহি’র এসে দরজা খুলে দিয়ে আপু কে জড়িয়ে কান্না করতে থাকে।
“আপু”
“কি হয়ছে ‘মাহির’ কান্না করছিস কেনো! তোকে কেও কিছু বলছে নাকি? আর স্কুলে যাস নাই কেনো?”
“আপু তোমাকে আর কোথাও যেতে দিবো না। রাহুল ভাইয়া পঁচা আমি তোমাকে কোথাও যেতে দিবো না। তোমাকে ছাড়া ভালো লাগে না আপু।”
“মামুনি এই পঁচা টা কে!”
–মাহি’র কথা শুনে ফিহা আর আরুহি ফিক করে হেসে দেয়। ‘মাহির’ রাগি চোখে মাহি’র দিকে তাকিয়ে বলে-
“আমি পঁচা না, আমি তোমার মামু হই হুহ্”
“বাবাই বলচে, যারা কান্না করে তালা পঁচা। তাহলে আমার মামু ও পঁচা।”
“হুহ্ তোমার বাবাই পঁচা, যাও মামু তোমাকে কোলে নিবে না।”
“কোলে নেও”
–মাহি’ মাহির এর দিকে হাত বাড়িয়ে কথাটা বলে। ‘মাহির’ মুখ ভেঙ্গচি দিয়ে কোলে নিয়ে রুমে ঢুকে। ভিতর থেকে আয়ুশ আর মিতু মেয়ের কণ্ঠ পেয়ে বেরিয়ে আসে। সাথে আশা ও আছে।
“আম্মু তুমি আজকে আসলা যে!?”
“হা বাবা আপনার জামাই আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিসে।”
“কিহ!!”
–আরুহির কথা শুনে সবাই অবাক হয়। ছেলেটা তাহলে সত্যি সত্যি বের করে দিসে? কিন্তু আয়ুশ তো এটা চায় নি। পরক্ষণেই ফিহা’কে দেখে আয়ুশ মেয়ের দিকে রাগি সুরে তাকিয়ে বলে-
“মিথ্যা বলো কেনো আম্মু? তাহলে তুমি সাথে মাহি আর ফিহা’কে আনতে পারতে না। যাই হোক ভিতরে আসো, জামাই কোথায়?”
“আপনার জামাই ভার্সিটিতে গেছে।”
“আচ্ছা বসো”
–বাবার বাসায় এসে আরুহি সবার সাথে বেশ কিছুক্ষণ গল্প করে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে। বেচারির রাতে ঘুম হয়নি। ঘুম ভেঙ্গে যায় প্রায় দুপুর ৪টার সময়। টানা ৫ ঘন্টা সে ঘুমাইছে!! ঘুম থেকে উঠেই গোসল করে নেয়। তার খুধায় পেট চোঁ চোঁ করছে। পাশে মাহি নাই তার মানে নানা-নানির সঙ্গে হয়তো আছে। আরুহি বাহিরে এসে মাকে ডেকে ভাত দেওয়ার কথা বলে, যখন রুম থেকে বাহিরে বের হয়। তখন বাবার সাথে বসে থাকা ব্যাক্তিটাকে দেখে বড় ধরনের একটা সক্ট হয় আরুহি।
“আ-আ-আপনি!?”
চলবে?……………..