#আমি_আপনিতে_আসক্ত (১১+১২)
#ফারহানা_জান্নাত
–আয়ুশ আর কিছু না বলে মেয়েকে নিয়ে বাসায় আসে। ২দিন ভার্সিটিতে যায় নি আরুহি। তার ফেন্ডরা এসে দেখে গেছে তাকে। শরীর যতোটা না খারাপ, তার থেকে বেশি খারাপ তার মন। সেটা কি কেও বুঝতে পারছে? তার মন যে পুরে যাচ্ছে। একদিকে ভালোবাসা, একদিকে আপুনির মৃত্যু, আর একদিকে সে-যাকে ভালোবাসে সে তার আপুনির হাসবেন্ড।
“আরুহি তোমার সাথে কিছু কথা আছে আমার।”
–আরুহি শুয়ে শুয়ে ফেসবুকে গল্প পড়ছিলো। তখন মেসেজ এর টুং শব্দে তার গল্প পড়ার বেঘাত ঘটে। মেসেজ চেক করে দেখে রাহুল মেসেজ করছে। তার থেকে আরুহি বেশি অবাক হয় তাকে তুমি বলতিছে দেখে। রাহুল সব স্টুডেন্ট কেই আপনি করে বলে।
“হঠাৎ আপনি থেকে তুমিতে যে!”
“তুমি আমার ১০ বছরের ছোট, তাছাড়া এখন আর একটা সম্পর্ক আছে আমাদের মাঝে। আমি তোমার আপুনির অভাগা স্বামী।”
“হঠাৎ নক করলেন যে।”
“ভার্সিটিতে আসো নাই কেনো দু’দিন?”
“এটা বলার জন্য নক করছেন?”
“তুমি বাবার থেকে আমার আর মাইশার ব্যাপার টা লুকিয়ে রাখতিছো কেনো?”
“বাহ আজ আমি জানছি দেখে এখন আমার বাসায় বলার জন্য উঠে পড়ে লাগছেন তাই না!? কই এতোদিন থেকে বাবা-মায়ের কাছ থেকে সন্তান এর মৃত্যু লুকিয়ে রাখছেন তখন এটা মনে হয় নি?”
“আমি ভয়ে তোমাদের সামনে যেতে পারি নাই।”
“ভয় তাই না? আর আমরা যে আপুনির জন্য ধুকে ধুকে মরছি সেটা?”
“সরি আরুহি আমাকে মাফ করে দেও।”
“আপনি আগে থেকেই আমাকে চিনতেন? মানে আমি যে মাইশা আপুনির ছোট বোন সেটা।”
“হ্যা, তোমার আপুনির বিয়ের পর তোমার ছবি দেখছি। আর তাছাড়া বিয়ের পর তোমার আপুনি তোমার আইডি ঘুরতো সব সময়। তাই তোমাকে যেদিন ভার্সিটিতে প্রথম দেখি সেই দিন থেকেই চিনতে পারি।”
“ওহ”
“আরুহি।”
“বলেন”
“আমি তোমার বাবা-মাকে সব টা বলতে চাই নিজ থেকে। প্লিজ একটা ব্যাবস্হা করে দেও। এই কষ্ট আর পোহাতে পারতেছি না।”
–রাহুল নিজের চোখের কোনে জুমে থাকা পানিটা মুছে মেসেজটা আরুহিকে সেন্ড করে। পাশেই মাহি বাবাই কে দেখছে। বাবাই কি কান্না করতিছে? ছোট মেয়েটার মাথায় সেটা খেলছে না।
“কালকে মা-বাবা দু’জনেই বাসায় থাকবে আপনি চাইলে আসতে পারেন। সাথে অবশ্যই মাহি কে নিয়ে আসবেন। আর আমার মতে আপনার একা না আসা ভালো। বাবা প্রচুর রাগি, হয়তো খারাপ কিছু হতে পারে। ওহ হ্যা আপনি চাইলে জয় ভাইয়া আর তিথি আপুকে আনতে পারেন। তিথি আপুর জন্য তো সবটা জানতে পারলাম আমি। উনাকে ধন্যবাদ দেওয়া বাকি আমার।”
–আরুহি আর নেটে না থেকে ডাটা অফ করে বালিছে মুখ গুঁজে কান্না করতে থাকে। তার কেনো কষ্ট হচ্ছে সেটা নিজে ও জানে না। রাহুল পড়ে কয়টা মেসেজ করে কিন্তু আরুহির রিপ্লে পায় না।
“বাবাই তোমাল মন খারাপ।”
–মাহি’র কথা শুনে রাহুল মাহিকে বুকের উপর শুয়ে দেয়। মেয়েটার আর কয় মাস পর ৩ বছর পূর্ণ হবে। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে নিরবে কান্না করে দেয়। মাম্মাম ছাড়া মেয়েটা বড় হচ্ছে। ইশ কতো কষ্ট সে কি মেয়েকে সুখি রাখতে পারতিছে? মাইশা থাকলে হয়তো মেয়েটা অনেক সুখে থাকতো। মায়ের ভালোবাসা যে সন্তান এর জন্য বড্ড প্রয়োজন।
“না মামুনি আমার মন খারাপ না তো। কালকে তোমাকে তোমার নানুর বাসায় নিয়ে যাবো যাবে?”
“হা আমি নানু যাবো নানু যাবো।”
–মেয়ের খুশি দেখে রাহুল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তারপর মাহি’কে ঠিক করে ঘুমিয়ে দেয়।
“বাবা আজকে আপনার বাসায় এক স্পেশাল গেস্ট আসবে। সাথে আপনাদের ধ্যান ধারণা পাল্টে যাবে। আপনারা রেডি থাকেন আর মানসিক ভাবে প্রস্তুতি থাকেন।”
–মেয়ের ঘুম জরানো কন্ঠে কথাটা শুনে মিতু ও আয়ুশ দু’জনেই অবাক হয়। কে আসবে আর অবাক হওয়ার কি আছে। সেটাই তারা বুঝতে পারছে না। সময় এখন সকাল ৮টা, আরুহি মাত্র ঘুম থেকে উঠে ড্রইংরুমে এসে মা-বাবাকে কথাটা বলে।
“কেনো আম্মু কে আসবে আজকে?”
“আপনি তো বাসায় থাকবেন, নিজের চোখেই দেখেন কে আসবে।”
“আচ্ছা তুমি এক কাজ করো খাওয়া দাওয়া করে আমার কাছে এসে বসো তো। তোমার মাথার চুল গুলো উসখুস করতিছে। আজকে বাবা তোমার মাথায় তেল দিয়ে দিবে।”
“বাবা আমি যদি মানসিক ভাবে বিদ্ধস্ত না হতাম তাহলে কি আপনি আমাকে এতো যত্ন করতেন?”
–মেয়ের কথায় আয়ুশ মাথা নিচু করে। আসলেই তো মাইশার বেলায় উনি এতোটা মাইশার সাথে মিশে নাই। সে জন্য হয়তো মেয়েটা তার ভালোবাসার কথা মুখ ফুটে বলার সাহস পায় নি। মেয়েটা কই আছে উনি বুঝতে পারতিছেন না। কেস ফাইল করতে চাইছে কিন্তু আরুহি বাঁধা দেওয়ার জন্য সেটা ও হয় না।
“বাবা আপনি আমাকে এই ভাবে আগলিয়ে রাখবেন সারাজীবন প্লিজ। নয়তো আমি নিষ্শ হয়ে যাবো। আপনাদের এই ভালোবাসা সাপোর্ট এর জন্য আজ ও আমি সুস্থ আছি। নয়তো আমি হয়তো সুইসাইড করতাম। আমার প্রথম ভালোবাসা ভুল মানুষকে বেসেছি। আপনি তো জানেন আমি দূর্বল মনের তাই অল্পতেই কষ্ট পাই।”
–আয়ুশ মেয়ের মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছিলো তখন আরুহি কথাটা বাবাকে বলে। আয়ুশ মেয়ের মাথায় আদর করে হাত বুলিয়ে দেয়।
“তুমি ভুল করতে বসছিলে আম্মু। আর নিজেকে শান্ত করো আমি, তোমার মা আছি কোনো সমস্যা হলে আমাদের বলবে। আমরা তোমাকে সব সময় সাপোর্ট করবো। মিতু আমার আম্মুটার চুল গুলো বেনি করে দেও তো।”
“আপনি ওখান থেকে উঠেন আমি বেনি করে দিচ্ছি। আপনাদের বাবা-মেয়ের কান্ড দেখতেছি এতোক্ষণ থেকে। তেল দিয়ে দিচ্ছেন এমন ভাবে যে, চুলে হাত দিলে মনে হয় আপনার মেয়ে ব্যাথা পাবে। ইশ কতো সময় নিয়ে তেল দিয়ে দিলেন বলেন তো!?”
“কেনো তোমার মতো নাকি!? তুমি যখন তেল দিয়ে দেও তখন আমার আম্মু টা চিল্লায় কেনো?”
–মা-বাবার এই ঝগরা আরুহির খুব ভালো লাগে। ইশ কতো সুন্দর তাদের ভালোবাসা।
“বাবা আপনি আজকে বেনি করে দিবেন দয়া করে?”
“উফ আম্মু এই ভাবে কেও আবদার করে! আচ্ছা বসো আমি বেনি করে দিচ্ছি।”
“হ্যা হ্যা দেখবো কতো পারেব হুহ্”
“এই তুমি এখান থেকে যাবা? ঢং করবা না। মেয়ের সামনে মুখ খুলতে বলতিছো! তোমাকে যে প্রতি রাতে আমি বেনি করে দেই সেটা?”
–আরুহি আর মাহির হুহু করে হেঁসে দেয় বাবার কথায়। মিতু লজ্জা পায়, ছেলে-মেয়ের সামনে এই ভাবে কেও বলে? আরুহির বেনি শেষ হলে বাবার পাশে সোফায় বসে পরে। তখন মাহির স্কুলে যাওয়ার জন্য উঠে।
“মাহির আজ স্কুলে যেতে হবে না এখানেই বসে থাক। আজকের আলোচনা তোর ও শোনা উচিত। তুই এখন বড় হয়ছিস তোর ও আপুনির ব্যাপার এ জানা উচিত।”
“মা-মা-মানে? আরুহি মা মাইশা আসবে নাকি আজ?”
“উফ মা কলিং বেল বাজতিছে দরজাটা খুলে দেন। তাদের কে আর কতক্ষণ অপেক্ষা করাবেন?”
–মিতু গিয়ে দরজা খুলে কিছুটা অবাক হয়। এই সময় তার ভাসুর দেবর এখানে কেনো বুঝতে পারতিছে না।
“ভাই আপনারা, আর ভাবি দেখি আপনারা ও এই সময়। তাও সবাই এক সাথে কি ব্যাপার?”
“জানিনা ছোট আম্মু তোমার মেয়ে তো আমাদের সবাই কে আসতে বললো।”
“আরুহি?”
“হ্যা”
“আচ্ছা ভিতরে আয়।”
“কিরে আরু তুই আমাদের সবাইকে এখানে আসতে বললি কেনো? আজকে কি তোকে কেও দেখতে আসবে?”
“আশুর বাচ্চা চুপ কর, আর বড় আব্বু-আম্মু সবাই থাকেন আপনারা না আসলে ও হতো। কিন্তু আমি ভাবলাম সবাই থাকেন সবটা আপনারা শুনে নিয়েন।”
“কি হয়ছে বল তো মা।”
“তেমন কিছু না বড় আব্বু”
–তখন আবার ও কলিং বেল বেজে উঠে। এবার আশা গিয়ে দরজা খুলে কিছুটা না অনেকটাই চমকে উঠে। তার সামনে রাহুল স্যার দাঁড়িয়ে আছে? তার সাথে আরো দুইটা ছেলে-মেয়ে। আশা চোখ বড় করে করে রাহুল স্যারকে বলে-
“স্যার আপনি!?”
“আপনি এখানে?”
“আরে এটা আমার ছোট চাচ্চুর বাড়ি আমি থাকবো না তো কে থাকবে?”
“ভিতরে আসবো?”
–রাহুল স্যার এর কথায় আশা দরজা থেকে সরে দাঁড়ায়। আরুহির বাবা সেদিন রাহুল কে দেখছে সে জন্য চিনতে পারে। কিন্তু বাসায় রাহুল কে দেখে অনেক অবাক হয়। আরুহি কি এদের স্পেশাল গেস্ট বলছিলো? আরুহি সবার মাঝখান থেকে উঠে এসে মাহি’কে রাহুল এর কোল থেকে নিয়ে নিজের রুমে যায়। আর যাওয়ার আগে বাবার উদ্দেশ্যে বলে।
“বাবা রাহুল স্যার যা বলবে তা মন দিয়ে শুনবেন। উনি যা বলবে সব সত্যি তাই মেনে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। আশা করবো উনাকে এই নিয়ে কথা শুনাবেন না।”
–মেয়ের কথা শুনে আয়ুশ এর মাথায় কিছু ঢোকে না। কিন্তু ড্রইংরুমে এতো মানুষ দেখে রাহুল ভড়কে যায়। এতো মানুষ আজ তার কপালে কি আছে কে জানে?
“রাহুল বাবা আসো এই দিকে, আর তোমরা?”
“আঙ্কেল ওরা আমার ফেন্ড, আর ওরা হাসবেন্ড ওয়াইফ সমস্যা নেই।”
“বসো আজ কি হবে বুঝতে পারতেছি না আমি। আরুহি বললো কেও আসবে আর স্পেশাল কেও, তুমি কি স্পেশাল?”
–রাহুল জয় আর তিথির দিকে তাকিয়ে একটা জায়গায় বসে পরে। তারপর মাথা নিচু করে ধির কন্ঠে বলে।
“আমি আপনার বড় মেয়ে মাইশার হাসবেন্ড।”
–আশা পানি খাচ্ছিলো কথাটা শুনে হাত থেকে পানির গ্লাস পড়ে যায়। রাহুল স্যার মাইশা আপুর হাসবেন্ড!? ছি ছি ভাবতে ও লজ্জা লাগে। আরুহি তার দুলাভাই এর উপর ক্রাশ খাইছে!! আশা দৌড়ে আরুহির রুমে যায়। রুমে গিয়ে দেখে মাহির সাথে আরুহি বিরবির করতিছে।
“তুমি অনেক তুন্দল”
–ছোট্ট মাহি’র কথা শুনে আরুহি হালকা হাসে। সুন্দর কে তুন্দল বলতিছে।
“আমার থেকে তুমি বেশি সুন্দর মামুনি। তুমি একদম আমার আপুনির মতো।”
“তুমি আমাল কে হও?”
–পিচ্চি মাহির’ কথার উওর আরুহি দেয় না। হুট করে আশা তার রুমে ঢুকে হা হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। আরুহি সেটা দেখে আশাকে বলে-
“বাহিরে এর পর যা বলবে সেটা তোর শোনা দরকার তুই বাহিরে যা। মাইশা আপুর বিষয়ে তুই তো জানতে চাস।”
–আশা ও বোকার মতো বাহিরে যায়।
–রাহুল সবটা সবাইকে খুলে বলে। সবাই কান্না করতে থাকে। মাইশা আর বেঁচে নেই সেটা যেনো তাদের মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। মাইশার মা সেন্স লেস হয়ে পড়ে। ৫টা বছর পর মেয়ের খোঁজ পেলো তাও মৃত্যু মেয়ের। প্রায় ১ ঘন্টা সময় কেটে যায়। আরুহি রুমে আপুনির কথা মনে করে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ছে। ছোট্ট মাহি ও আরুহির বুকে গুটিসুটি মেরে ঘুমাচ্ছে। রাহুল উঠে মাইশার বাবার পা ধরে।
“বাবা আপনি আমাকে ক্ষমা করে দেন। আপনাকে তখন জানানো উচিত ছিলো কিন্তু ভয়ে জানাতে পারি নাই। আর মাইশা চাইতো যে মাহি জন্মের পর একদম আপনাদের কাছে আসবে। কিন্তু আমি জানতাম না আমি আমার মাইশা কে একেবারে সারাজীবন এর জন্য হারিয়ে ফেলবো।”
–রাহুলের কথায় আয়ুশ এর যেনো কোনো ভাবান্তর হয় না। এবার জয় রাহুলের পাশে বসে মাইশার বাবার উদ্দেশ্য বলে-
“আঙ্কেল আপনি তো ডাক্তার সবটা বোঝেন। মৃত্যু আল্লাহর হাতে, এখানে রাহুল এর কোনো দোষ নাই। আপনি রাহুল কে মাফ করে দেন প্লিজ।”
“আমার একটা শর্ত মানতে পারলেই আমি মাফ করবো।”
–আয়ুশ বেশ কিছুক্ষণ পর মুখ থেকে কথা বের করে। এতোক্ষণে সবাই নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয়। রাহুল মাথা নেড়ে বুঝায় সে সব শর্তে রাজি। আয়ুশ এবার আরুহির রুমের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। তারপর তার ওয়াইফ এর দিকে তাকায়। কিছুক্ষণ আগে তার জ্ঞান ফিরছে। এবার রাহুলকে পায়ের কাছ থেকে উঠিয়ে নিজের পাশে বসায়। তারপর ধির কন্ঠে বলে –
“আমার ছোট মেয়ে আরুহি কে বিয়ে করে নেও রাহুল।”
–ড্রইং রুমে বসে থাকা সবার টনক নড়ে যায়। সবাই ভেবেছিলো আয়ুশ হয়তো রাহুল এর সাথে সম্পর্ক বিচ্ছেদ করবে। কিন্তু না সবার ধারনা পাল্টে দেয়। জয় আর তিথি একে অপরের দিকে তাকিয়ে দেখে কি হচ্ছে সব যেনো মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
“আপনি কি বলতিছে বাবা একবার ও ভেবেছেন?”
“রাহুল তুমি কথা দিয়েছো আমার শর্তে রাজি হবা।”
“ভাই কি বলো তুমি? যতোই হোক আমাদের মাইশা মামুনির জামাই রাহুল বাবা। তুমি আবার তাকে আমাদের আরুহির জন্য পছন্দ করতিছো?”
–আরুহির ছোট চাচা কথাটা বলে। আয়ুশ সবার উদ্দেশ্য বলে-
“তোমরা তো সবাই জানো আরুহি সুইসাইড করার চেষ্টা করছিলো। তার কারণ হলো আরুহি রাহুল কে ভালোবাসে। মেয়েটা এক তরফা ভাবে এতোটাই ভালোবেসে ফেলছে যে, যখন জানতে পারছে রাহুল বিবাহিত তখন নিজেকে শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। আর আমি চাইনা মেয়েটা আর কষ্ট পাক।”
“তাই বলে তুই এমন একটা সিদ্ধান্ত নিবি আয়ুশ?”
–এবার বড় ভাইয়ের কথায় আয়ুশ মিতুর দিকে তাকায়। আশা রাখে সে কিছু বলবে। কারণ ছোট মেয়েটার কষ্ট আর দেখতে পারবেন না তিনি।
“ভাই উনি যা চাচ্ছে মেনে নেন আমাদের আরুহির কষ্ট আর দেখতে পাচ্ছি না। তাছাড়া মাহি ওর একটা মা দরকার। রাহুল বাবা তো একদিন না একদিন বিয়ে করবেই। তখন সৎ মা ছোট বাচ্চাটাকে কতোটা ভালোবাসবে? তার থেকে আরুহি যদি মাহি’র মা হয়ে থাকতে পারে তাহলে মাহি একটা ভালো মা পাবে। আর আমাদের আরুহি তার ভালোবাসা।”
–মিতুর কথায় উপস্থিত সবাই হ্যা বলে। আসলেই তো রাহুল তো একদিন না একদিন শূন্যতা অনুভব করবেই। তখন? এবার রাহুল বলে উঠে –
“বাবা আমি মাইশা কে আবেগ দিয়ে ভালোবাসি নাই। ওকে এখন ও ভালোবাসি, আর বিবাহ? চিন্তা করবেন না। আমি মাহির গায়ে সৎ মায়ের অত্যাচার পড়তে দিবো না। আমি সারাজীবন বিবাহ ছাড়া কেটে দিবো।”
“তোমার ব্যাপার তুমি ভেবে দেখো। ক্ষমা চাও ক্ষমা পেতে হলে আরুহি কে বিয়ে করতে হবে। আর না মানতে পারলে এখন আসতে পারো তুমি। তবে একটা কথা, আমার বাসায় আর কখন ও পা রাখবে না। ভূলে যাবে মাইশার কোনো মা-বাবা নেই।”
“আপনি কঠিন ব্যাবহার করতিছেন আঙ্কেল।”
–তিথি কথাটা বলে, আয়ুশ সেই দিকে তাকিয়ে কিছু রাগি মুখে বলে-
“শোনো মেয়ে একটা মেয়েকে হারিয়ে ফেলছি আর একটা কে হারাতে চাই না। আরুহির জন্য আমি পাষান হতে ও প্রস্তুত আছি। তুমি হয়তো জানো না আরুহি সুইসাইড করার চেষ্টা করছিলো। আমার আম্মুটা তো আর জানতো না রাহুল তার আপুনির জামাই। তাছাড়া এটা ও জানতো না যে রাহুল বিবাহিত। এখন তোমরা আসতে পারো।”
–রাহুল থ মেরে বসে আছে। তিথি আর জয় একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে রাহুলে বলে-
“রাহুল রাজি হয়ে যা। মেয়েটা তোকে ভালোবাসে, তুই না হয় আরুহির থেকে সময় নেস। বিয়ে কর দেখবি আপনা আপনি একটা ভালা লাগা কাজ করবে। মাহি তার মাম্মাম কে পাবে। জানি তোর ভয় কোথায়, আমি আশা করি মাহিকে আরুহি নিজের মেয়ে হিসাবে মানতে পারবে।”
“কিন্তু”
“মেয়েটা তোকে ভালোবাসে রাহুল”
–রাহুল আর কিছু বলার ভাষা খুঁজে পায় না। কি বলবে সে? এখন মনে হচ্ছে এখানে আসাটাই তার ভুল। এতো কিছু করার পর এখন ক্ষমা না পেলে কেমন লাগবে? সেটা যে কারো কাছে দোষী তাই ভালো বুঝতে পারবে।
“রাহুল বাবা তোমরা আসতে পারো।”
–আয়ুশ গম্ভীর কন্ঠে কথাটা বলে। এতে যেনো রাহুল কেঁপে ওঠে। সে তার ভালোবাসা মাইশার মা-বাবার কাছে দোষী হয়ে রবে? কিন্তু তাই বলে এমন পাগলের মতো শর্তে সে রাজি হবে?
“বাবা আপনার মেয়েকে বিয়ে করে যদি কয়দিন পর ডিভোর্স দেই তখন?
–হঠাৎ রাহুলকে এমন কথায় সবাই রাহুলের দিকে তাকায়। এতে রাহুলের যেনে কোনো ভাবান্তর নেই। আয়ুশ কষ্টের মাঝে ও মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলে। তারপর বলে-
“তাহলে তাই হোক, বিয়ের আয়োজন করো। রাহুল তুমি বিয়ের পরের দিন না হয় আমার মেয়েকে ডিভোর্স দিও এতে আমি কিছু বলবো না। ক্ষমা করে দিলাম আমি তোমাকে। জানি আমার মেয়ের মৃত্যুর জন্য তোমার কোনো দোষ নেই। তবে তোমার দোষ আমার মেয়ের মৃত্যুর খবর আমাদের না দেওয়া টা।”
“আপনার মেয়ের জীবন আমার হাতে নষ্ট হতে পারে বাবা”
“তাতে ও আমি রাজি রাহুল। আমার মেয়ে যাকে ভালোবাসে তাকে স্বামী হিসাবে পাবে একদিনের জন্য হলে ও। আমি এতেই খুশি।”
“তাহলে বিয়ের আয়োজন করুন, আর আপনার মেয়েকে ডিভোর্সি হওয়ার জন্য তৈরি হতে বলুন।”
–রাহুলের এমন কথার মানে কেও বুঝতে পারে না। কিন্তু আয়ুশ এতে মাথা ঘামায় না।
[দুপুর ২টা]
–আরুহির ঘুম ভেঙ্গে যায় আশার ডাকে। চোখ খুলে পাশে অপরিচিত দু’জন কে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। তারপর তার পাশে তাকিয়ে দেখে মাহি নাই। মনে মনে ভাবে রাহুল ওরা কি তাহলে চলে গেছে।
“উনারা কে আশু?”
“রাহুল স্যারের মা আর ছোট ভাইয়ের বউ।”
“আসসালামু আলাইকুম আন্টি।”
“ওয়া আলাইকুমুস সালাম।”
“আপানা হঠাৎ এই সময় আমাদের বাসায়।”
–আরুহির উওর না দিয়ে আশা তাড়া দেয় আরুহি কে উঠতে। আরুহি উঠলে রাহুলের ছোট ভাইয়ের বউ (ফিহা) আরুহি কে গোসল করে আসতে বলে। আরুহির ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখে অনেক সময় হয়ে গেছে তাই কিছু না ভেবেই গোসল করতে চলে যায়। গোসল করে এসে দেখে আরুহির সব ফেন্ড তার রুমে হাজির। আরুহি হা হয়ে দেখে সবাইকে।
“আজকে তোর বিয়ে আরু পাখি।”
–আশার কথায় আরুহি কিহ বলে থমকে যায়। পরে তার বিয়ে ভেবে চিল্লিয়ে উঠে। আরুহির বাবা মেয়ের রুমে এসে মেয়ের সামনে দাঁড়ায়। আরুহি আজ বাবাকে ও পরোয়া করে না। বরং কন্ঠে আরো জোর এনে বলে উঠে –
“বাবা এসব কি হচ্ছে? আপনি আমাকে বিয়ে দিচ্ছেন! আমি বিয়ে করবো না মানে করবো না। রাহুল স্যার আপনাকে সত্যি টা বলছে তারপার আপনি এই সিদ্ধান্ত নিলেন? মানে যখন দেখলেন রাহুল স্যার আর কখন ও আমার হবে না। তখন আমাকে অন্য কোথাও বিয়ে দিবেন?”
“যদি বলি রাহুলের সাথে তোমার বিয়ে তখন?”
–আরুহি অবাক হয়ে বাবাকে দেখে। আচ্ছা ওনার কি মাথা খারাপ? কি সব বলতিছে! আয়ুশ আর কিছু না বলে রেডি হতে বলে রুম থেকে বের হয়ে যায়। ফিহা আরুহির হাতে ব্লাউজ আর পেডিকোট ধরিয়ে দেয় পড়ার জন্য। আরুহি নড়ছে না দেখে আশা বলে-
“ছোট বাবা ঠিকি বলছে, রাহুল স্যারের সাথে আজকে তোর বিয়ে। তুই এসব পড়ে আয় তারপর বাকিটা বলতেছি।”
–আরুহি আর কিছু না বলে ওয়াশরুমে যায়। ৫মিনিট পর বেরিয়ে আসলে ফিহা আর আশা মিলে আরুহি কে শাড়ি পরিয়ে দেয়। এর ফাঁকেই আশা বিয়ের বিষয়টা আরুহি কে খুলে বলে। আরুহি হালকা হাসে তার বাবা যে কতো বুদ্ধিমান সে জানে। এমনি এমনি একদিনের বিয়েতে রাজি হয়নি। তার উপর কোড মেরেজ করাচ্ছে। ডিভোর্স দিতে হলে ৬ মাস সংসার করতে হবে। রাহুল হয়তো ভাবে নি সেসব। রাত লেগে আসছে। আরুহি আর রাহুলের বিয়েটা হলে যায় ছোট খাটো ভাবে। ৮টার সময় রাহুল এই বাড়ি থেকে চলে গেছে রাগ করে। তার এখন এসব অসহ্য লাগতিছে। মাহি তখন আরুহির কোলে বসে ছিলো। এখন সময় রাত ১০ টা। আরুহিকে নিয়ে রাহুলের মা-বাবা চলে যায়। বাসায় এসে দেখে রাহুল বাসায় ও নাই। তিথি আর জয় বাসায় চলে গেছে। আজ অক্টোবর এর ৯ তারিখ। এই তারিখ এ কেও ভালোবাসা পেলো, কেও বিরক্ত রাগ।
“আন্টি না মা বলবো আপনাকে?”
–রাহুলের মা চিন্তিত মুখে রুমে বসে ছিলো। তখন আরুহি মাহি কে কোলে করে নিয়ে ওনার সামনে এসে কথাটা বলে-
“তুমি এখন আমার রাহুলের বউ তাই মা বলেই ডাকতে পারো। তোমাকে মেনে নিতে আমার আপত্তি নেই মা। তোমাকে দেখলে আমার মাইশার কথা মনে পড়তিছে।”
“মা আপুনির কবর কোথায় বলতে পারবেন?”
“এখন রাত মা এটা শুনে কি করবা? কালকে দেখে দিবো মাহি দিদুন এর হয়তো ঘুম পাইছে তুমি ওকে ঘুমিয়ে দেও।”
“মা বলেন না প্লিজ।”
“আমাদের বাড়ি থেকে ৫ মিনিট দূরে একটা কবর স্হান আছে সেখানে।”
–আরুহি আর কোনো কথা না বলে মাহি কে কোলে নিয়েই বেরিয়ে যায়। রাহুলের মা ও কিছু বলার সুযোগ পায় না। আরুহি আয়তাল কুরসি পড়ে মাহির গা বন্ধ করে দেয়। তারপর ভালোভাবে জড়িয়ে নেয় নিজের বুকের সাথে।
“মামুনি তুমি তখন বলছিলে না! আমি তেমার কে হই?”
“হ্যা তুমি আমাল কে হও?”
“তোমার মামুনি হয় আমি মা। আজ থেকে আমাকে মামুনি বলে ডাকবে কেমন?”
“তুমি আমাল মামুনি? এতেদিন উত্তে তারা হয়ে ছিলে?”
“হুম মামুনি। আমি তোমার সেই মামুনি।”
–মাহি খুশি হয়ে আরুহির গলা জরিয়ে ধরে। আরুহি গোরস্থানে এসে থামে। সে ঠিকি ভেবেছিলো, একটা গোরস্থান এর পাশে একজন বসে কান্না করতিছে। সেটা কে আরুহির বুঝতে সমস্যা হয়না। আরুহি গিয়ে রাহুলের কাঁধে হাত রাখে। রাহুল চমকে উঠে পিছনে তাকায়। আরুহি কে দেখে চোখের পানি মুছে জোরে একটা থাপ্পড় বসে দে আরুহির গালে। আচমকা আরুহি থাপ্পড় খেয়ে হা হয়ে যায়। মাহি কান্না করে উঠে।
“বাবাই বাবাই তুমি মামুনি কে মারচো কেনো।”
–মাহি আঁদো আঁদো সুরে কথাটা বলে। রাহুল মেয়ের সামনে আর কিছু বলতে পারে না। মাহি কে আরুহির থেকে ছিনিয়ে নিয়ে বড় বড় পা ফেলে কবরস্থান থেকে চলে যায়। রাহুল যাওয়া মাত্র আরুহি মাইশার কবের কাছে বসে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে।
“আপুনি তুমি আমাকে কেনো ছেড়ে গেলে আপুনি কেনো। আমার কষ্ট হচ্ছে আপুনি, তুমি ফিরে আসো প্লিজ। আমার মরে যেতে ইচ্ছে করতিছে আপুনি প্লিজ তুমি এসে আমাকে বাঁচিয়ে নেও।”
–আরুহি মাইশার কবর জড়িয়ে কান্না করতে থাকে। তখন ঘারে কারো স্পর্শ পেয়ে ভয়ে জরো সরো হয়ে পড়ে। তার মনেই ছিলো না এতোক্ষণ কবরস্থান এ আছে সে। জ্বীন-ভূতে তার ভয় খুব। ভয়ে ভয়ে পিছনে তাকায়।
চলবে…………………….