#হৃৎপিণ্ড_২
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_৫
#জান্নাতুল নাঈমা
_____________________
“তোমার মনের ঘরে যে তালা তুমি ঝুলিয়েছো সে তালার চাবিকাঠি কেবল আমার বক্ষঃস্থলেই লুকায়িত রয়েছে। ”
ইমন ভেবেছিলো মুসকান বেঘোরে ঘুমাচ্ছে তাই সে যাই বলুক বা যাই করুক না কেন সবটা মুসকানের অগোচরেই থেকে যাবে। কিন্তু তাকে সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত করে রয়েসয়ে চোখ মেললো মুসকান। অত্যন্ত নির্লিপ্ত ভঙ্গিতেই তাকালো সে। হকচকিয়ে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলো ইমন। মুসকানের দিকে ঝুঁকে থাকা অবস্থায়ই এক হাতে আলতোভাবে মাথায় বুলিয়ে দিতে দিতে প্রশ্ন করলো,
“ঘুমাওনি?”
“চোখ বুজে থাকা মানেই কি ঘুমিয়ে যাওয়া? ”
কথাটি বলেই এক ঝটকায় ইমনের হাতটা নিজের মাথা থেকে সরিয়ে দিলো। কপাল কুঁচকে গেলো ইমনের। মুসকান ওঠতে চেষ্টা করতেই তার থেকে সরেও গেলো। বিছানার এক পাশে প্রচন্ড উদবেগ হয়ে বসে নির্নিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মুসকানের দিকে। মুসকান নিজেকে পরিপাটি করে নিয়ে ইমনের দৃষ্টির দিকে নিজের দ্বিধান্বিত দৃষ্টিজোড়া একবার মিলিয়েই দৃষ্টি নত করে ফেললো। বুকের ভিতরে চলা তীব্র উত্তেজনাকে সংযত করারও তীব্র চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সন্তর্পণে। ইমন একইভাবে তাকিয়ে আছে বোঝার চেষ্টা করছে মুসকানের মতিগতি। কিন্তু অদ্ভুত বিষয় টা হলো যে মুসকানকে সে বইয়ের পাতার মতো করে পড়তে পারতো সে মুসকানকে আজ সেভাবে পড়তে পারছেনা৷ যার ফলে নিজেকে কিছুটা অসহায় অনুভব করছে সে। তার অসহায়ত্ব দূর করার জন্য অবশ্যই মুসকানের সাথে খোলাখুলি কথা বলা প্রয়োজন। ইমন মনস্থির করে যেই কিছু একটা বলতে উদ্যত হবে তৎক্ষনাৎ মুসকান বললো,
“আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দেবে তুমি নানাভাই? ”
সংযত হলো ইমন ওষ্ঠকোণে মৃদু হাসি ফুটিয়ে তুলে বললো,
“সব প্রশ্নের উত্তর দেবো। ”
বক্ষঃস্থলে মৃদু কম্পন অনুভব করলো মুসকান। এক ঢোক গিলে দু’হাতে বিছানার চাদর খামচে ধরে বললো,
“আমি সবটা জানি তবুও তোমার কাছে জানতে চাই কেন চলে গিয়েছিলে? কেন যাওয়ার আগে একটা বার দেখা করোনি? আমি অবুঝ ছিলাম তুমি তো ছিলে না কেন করলে এমনটা? ”
কেন করলে এমনটা? শেষ প্রশ্নটি করতে গিয়ে গলা কেঁপে ওঠলো মুসকানের৷ ইমন হতভম্ব হয়ে মৃদু কন্ঠে বললো,
“তুমি কাঁদবে না মুসকান আমার দিকে তাকাও। ”
“আমার প্রশ্নের উত্তর চাই ব্যস তার জন্য তোমার দিকে তাকানোর প্রয়োজন পড়বে না।”
“তুমি অনেক ছোট ছিলে এখন যতোটা বোঝো তখন ততোটাও হয়তো বুঝতে না। আমার প্রতি তোমার তখনকার অনুভূতি আবেগই ধরা যায়। সে আবেগকে মুখ্য করে আমি যদি তখন তোমায় বিয়ে করে নিতাম সেটা ভুল হতো। তাই আমি সময় নিতে চেয়েছি। আর এ সময়টাকে অযথা ব্যয় করতে চাইনি৷ আমি যদি এদেশে থাকতাম তাহলে হয়তো তোমার থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখাটা কষ্টসাধ্য হয়ে যেতো। তাই দেশের বাইরে চলে গিয়েছি পড়াশোনায় নিজেকে ব্যস্ত রেখেছি। দূর থেকে অপেক্ষা করেছি সঠিক একটা সময়ের জন্য আর সবশেষে সে সময়টা পেয়েও গেছি। ”
তাচ্ছিল্য হেসে মুসকান বললো,
“এটুকুই? আমিতো সবটা শুনতে চাই। ”
“সবটা বলতে কোন কথা নেই কথা একটাই আমি আমার ভালোবাসাকে সময় দিতে চেয়েছি। আমি আমার ভালোবাসার মানুষ’টিকে নিজের অনুভূতিকে সঠিকভাবে বোঝার জন্য সময় দিয়েছি।”
“হ্যাঁ সময় দিয়েছো। এই সময় দেওয়ার পেছনের সব কারণ টা বলো নানাভাই। না থাক তোমার বলতে হবে না আমিই বলছি। ”
অতিরিক্ত লম্বা হওয়ার সুবাদে মুসকানের দিকে তাকাতে ঘাড় কিছুটা কাত করতে হয়েছে ইমনকে৷
মুসকান তার বাম পাশে বসেছে। তাই ডান হাতটি বিছানায় ঠেশ দিয়ে বাম হাতের কনুই উরুতে ঠেশ দিয়ে আঙুল গুলো নিজের খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে বিচরণ করছে। চোখে মুখে স্পষ্ট দুশ্চিন্তার ছাপ। মুসকান তার দৃষ্টিজোড়া নত রেখেই কাঁপা গলায় বললো,
“তোমার বাবার সঙ্গে তো তোমার ঠিক এই কথাটাই হয়েছিলো যে আমি ছোট ভালোবাসার মানেটা আমি বুঝিনা…।”
মুসকানের কথার মাঝে ফোঁড়ন কেটে ইমন দৃঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে দৃঢ় কন্ঠে বললো,
“তোমার বাবা কি ধরনের বাক্য মুসু? হয় আংকেল বলবে নয়তো ডিরেক্ট বাবা বলবে। ”
মাথা নিচু করেই ঢোক গিলে সরি বললো মুসকান। ছোট্ট একটি শ্বাস ছেড়ে বলতে শুরু করলো,
” আংকেল তোমায় যা বলেছে সবটাই আমি শুনেছি। তুমি আংকেলের কথায় নিজের সিদ্ধান্ত নিয়েছো। ”
“ভুল আমি কারো কথায় সিদ্ধান্ত নেইনি। আমার জীবন কেবল আমার সিদ্ধান্তের ওপরই চলে আর কারো না। ভবিষ্যতেও তাই হবে তুমি চাইলেও তোমার সিদ্ধান্ত আমার ওপর চাপিয়ে দিতে পারবে না। ভালোবাসি নিজের চেয়েও অনেক বেশী তাই বলে এই নয় তোমার সিদ্ধান্তের ওপর আমি চলবো। যেখানে তোমার সিদ্ধান্তই আমি মানবো না সেখানে বাবা! মা হলে খানিকটা ভেবে দেখা যেতো বিকজ পৃথিবীতে আমি দু’জন মানুষ এবং দু’জন নারীর প্রতি ভীষণ ভাবে দূর্বল একজন আমার পাশে এ মূহুর্তে উপস্থিত রয়েছে অপরজন আমার জন্মদাত্রী। ”
বুকের ভিতর টা চিনচিন করে ওঠলো মুসকানের। না চাইতেও অকস্মাৎ ভাবে ইমনের দৃষ্টিতে নিজের ঝাপসা দৃষ্টিগুলো মেলালো। রুদ্ধশ্বাস ছেড়ে কাঁপা কন্ঠে কাঠিন্যতা মিশিয়ে বললো,
“ভালোবাসা! আংকেল তোমায় বোঝালো আমি আবেগের বশীভূত হয়ে তোমার প্রতি টান অনুভব করছি দূরে গেলেই সেই টান টা বিলীন হয়ে যাবে। আর তুমিও সেই পরীক্ষা নেওয়ার জন্য দূরে চলে গেলে। এটাকে কি ভালোবাসা বলে? ”
মুসকানের কান্নামিশ্রিত কন্ঠস্বর, ঝাপসা দৃষ্টিজোড়া দেখেই এলোমেলো হয়ে গেলো ইমন। গাল থেকে হাত সরিয়ে ঘাড় সোজা করে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“ভুল বোঝা হচ্ছে আমাকে। ”
“নাহ ভুল নয় একদম ঠিক বোঝা হচ্ছে। তুমি ঠিক যে কারণে আমায় ছেড়ে চলে গেছো ঠিক সে কারণটাই ঘটেছে। ”
“মানে!”
“হ্যাঁ তুমি এবং তোমার পরিবারের চিন্তা তো এটাই ছিলো মুসকান বাচ্চা মেয়ে। একটা সম্পর্কের মানে বোঝার মতো বয়স ওর হয়নি। তাদের প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলের সঙ্গে এই নাবালিকা মেয়ের কোনদিনও মিলবে না৷ জীবনের একটা সময় এসে ঠিক মুসকান ইমন চৌধুরী কে ছেড়ে চলে যাবে। শুধু মাত্র বয়স এবং চাহিদাকে পুঁজি করে! ”
“তারা আমার বাবা, মা সন্তান নিয়ে তাদের এই চিন্তাটাকে স্বাভাবিক নেওয়া উচিত। আজ যদি মরিয়ম আন্টি বা মুরাদ বলে আমার সাথে তোমাকে যাবে না৷ মরিয়ম আন্টি তার মেয়েকে এতো ডিফারেন্ট এইজের ছেলের সাথে বিয়ে দেবে না। এখানে কি ভুল হবে মুসু? ”
“কথা সেটা নয়। ”
“তাহলে কথাটা ঠিক কি। ”
“রাগ দেখাবে না। ”
শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো ইমন৷ মুসকানের কাঁদো কাঁদো মুখটা দেখে হাসি পেয়ে গেলো। রাগ সে দেখায়নি শুধু সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছিলো এতেই পাগলীটা কেঁদে দেওয়ার অবস্থা হয়ে গেছে? ভাবতেই না চাইতেও ঈষৎ হেসে ফেললো। মুসকান দৃষ্টি নত করে বললো,
” তোমরা সবাই আমাকে বড়ো হওয়ার সুযোগ দিয়েছো। আমার অনুভূতিকে সঠিক ভাবে বোঝার সুযোগ দিয়েছো। তুমি চৌদ্দ বছর বয়সী এক কিশোরীর হৃদয়ে খোদাই করে বীজ বপন করে রেখে গিয়েছিলে। যত্ন করার প্রয়োজন বোধ করোনি। যত্নহীন বেড়ে ওঠেছে আমার ছোট্ট হৃদয়ে সন্তর্পণে থাকা ভালোবাসা টুকু। বৃক্ষ রোপণ করলে তার গোড়ায় অন্তত একটু পানি দিতে হয়। মানুষ সে অল্পখানি যত্ন না করলে সৃষ্টিকর্তা প্রাকৃতিক উপায়ে বৃষ্টির আগমণ ঘটিয়ে সেটুকু করে দেয়। কিন্তু তুমি যে বৃক্ষ বপণ করে গিয়েছিলে তা কি বেড়ে ওঠেছে নাকি বেড়ে ওঠার আগেই পঁচে গলে মরে গেছে সেকথা একবারের জন্যও ভেবে দেখেছো? ”
“আমার ভালোবাসা এতোটা ঠুনকো নয়। ”
“আমার ভালোবাসা খুব ঠুনকো।”
“আই ডোন্ট কেয়ার। ”
“আই কেয়ার…”
“বাচ্চাদের কেয়ারে মাথা ঘামাতে নেই। ”
“আমি বাচ্চা নই আই এম এইটিন ইয়ার্স ওল্ড।”
“দ্যাটস হোয়াই আই উইল গেট ম্যারিড কুইকলি।”
তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো মুসকান বললো,
“কিন্তু আমি তোমায় বিয়ে করতে চাই না। ”
হাসলো ইমন শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“আর কিছু? ”
” হ্যাঁ। তোমরা আমাকে সময় দিয়েছিলে। তোমাদের ধারণাই সঠিক। সত্যি তখন অবুঝ ছিলাম। প্রেম,ভালোবাসা, ভালোলাগা ভিতর থেকে ফিল করতে পারতাম না৷ তোমার প্রতি উইকনেস ছিলো গত তিনবছরে সে উইকনেস কমে গেছে। আমিও ফিল করেছি লাভ নয় এট্রাকশন ছিলো তোমার প্রতি। যা তুমি দূরে যাওয়াতেই কেটে গেছে। ”
কপালে তিন ভাঁজ পড়লো ইমনের। মুসকানের দিকে কিছুটা ঝুঁকে শান্ত গলায় বললো,
“আমি শান্ত আছি বলে এই নয় যা তা বলবি। আমি তোকে না জানিয়ে চলে গেছি এটা যদি আমার ভুল হয় তাহলে আমি ভুল স্বীকার করছি। কিন্তু আমি যদি তখন চলে না যেতাম তাহলে ক্ষতি তোর হতো আমার না। ”
থমকে গেলো মুসকান। কিছু সেকেন্ড সময় পর তার দু’চোখ বেয়ে অঝরে অশ্রু ঝড়তে শুরু করলো। সে দৃশ্য দেখে চোখ বন্ধ করে শ্বাস আঁটকে সরে গেলো ইমন। ওঠে দাঁড়িয়ে দু’হাত মুঠ করে পিছন ঘুরে রইলো। মুসকান দু’হাতে নিজের হাঁটুজোড়া চেপে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
“আমি আমার জীবনের তিনটা বছর কিভাবে কাটিয়েছি তা তুমি জানো? এটুকু বয়সে আমার কেন স্লিপিং পিল খেয়ে ঘুমাতে হয় বলবে? কেন তোমাদের সমাজকে পুঁজি করে পরিবার কে পুঁজি করে বয়সকে পুঁজি করে আমাকে বলি দিলে তোমরা? এটাই যদি করবে আমার ছোট্ট মনে কেনো অনুভূতি জাগালে তুমি? একটাবারো হৃদয় কাঁপেনি? একটা বারো মনে হয়নি এই তিনবছরের মধ্যে সব কিছু বদলে যেতে পারে৷ একটা বারো হারানোর ভয় হয়নি আমাকে? ভালোবাসার মানুষের থেকে যে দূরে থাকতে পারে, যার মনে আমাকে হারানোর বিন্দু মাত্র ভয় নেই তাকে আমি চাইনা কখনোই চাই না। ”
” সামনে মাসে আমাদের এনগ্যাজমেন্ট তার পরের মাসেই বিয়ে। বিয়ে আমার বউও আমার আর সিদ্ধান্ত সেটাও আমার। এর বাইরে আর কিছু জানতে বা বুঝতে চাইনা। ”
চমকে ওঠলো মুসকান। তার অনুভূতির কোন মূল্যই নেই ইমনের কাছে? এতোগুলো বছর তাকে তীলে তীলে শেষ করে দিয়ে আজ বিয়ের সিদ্ধান্ত জানাচ্ছে? ক্রোধে সর্বাঙ্গ কাঁপতে শুরু করলো তার। চিৎকার করে বললো,
“আমি তোমার বউ হতে চাইনা। ”
“আমি তোর একটা কথাও শুনতে চেয়েছি?”
মুসকানের দিকে ফিরে চিৎকার করে ওঠলো ইমনও। কেঁপে ওঠে হুহু করে কেঁদে দিলো মুসকান। ইমন ঠোঁট কামড়ে শক্ত চাহনীতে চেয়ে আছে তার দিকে৷ ইমনের ফর্সা মুখ রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। চোখে ফুটে ওঠেছে ক্রোধ, ওষ্ঠজোড়া লাল টকটক করছে। চোয়ালজোড়া ফুলে ওঠেছে। টান টান হয়ে দাঁড়ানোতে মনে হচ্ছে একটা সুন্দরমুখো সিংস্র দানব দাঁড়িয়ে আছে। মুসকান ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে হেঁচকি তুলতে তুলতে বললো,
“তুমি খুব খারাপ নানাভাই আমি তোমাকে একটুও ভালোবাসিনা। আমি তোমাকে একটুও বিয়ে করবো না। ”
ভয়ে ভুলভাল বকতে শুরু করলো মুসকান। ইমন তখনো হুঁশে ফেরেনি তাই দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“এক থাপ্পড়ে কান গরম করে ফেলবো। ”
“দাদাভাই…” এক চিৎকার করে ওঠলো মুসকান। প্রায় সাথে সাথে দরজায় করাঘাত শুরু করলো মুরাদ। ইমন চোখ বন্ধ করে কয়েকদফা লম্বা শ্বাস ছেড়ে দরজা খুলে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“ডাকতে দেরি আসতে দেরি হয় না?”
মুরাদ ইমনকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে দ্রুত পায়ে মুসকানের কাছে গিয়ে পাশে বসে মাথায় হাত দিতেই মুসকান মুরাদকে জাবটে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলো। আর বলতে লাগলো,
“দাদাভাই আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলো। আমি এখানে থাকবো না প্লিজ দাদাভাই আমাকে বাড়ি নিয়ে যাও। ”
প্রায় তিন বছর পর আজ প্রথম এভাবে ঠিক আগের মতো করেই মুসকান মুরাদের সঙ্গে কথা বলছে৷ কতোগুলো দিন পর তার গম্ভীর বোনটা তার নিজস্ব সত্তায় ফিরে এসেছে ভাবা যায়! হুম ভাবা যায় মোম আর আগুন পাশাপাশি থাকবে অথচ মোম গলবে না তাই কখনো হয়? কিন্তু এমন গলা গলেছে যে আশেপাশে আগুনকে সহ্যই করতে পারছেনা ভাবতেই হাহা করে হাসতে ইচ্ছে করলো মুরাদের। বোনের কান্নায় অবশ্য সেই হাসিটাকে বের করতে পারলো না৷ বোনকে স্বান্তনা দেওয়া জন্য মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
“এভাবে কাঁদিস না ইমন তোকে ধমক দিছে তাইনা? ঐ তুই কোন সাহসে আমার বোনকে ধমক দিস? তিনবছর বিদেশের হাওয়া গায়ে লাগিয়ে নিজেকে কি মনে করস হুহ আমার বোনকে ধমকাস আমার বোনকে এতো বড়ো কলিজা তোর? ”
মুসকানের কান্নাটা আর সহ্য হচ্ছে না ইমনের। সেই সাথে মুরাদের ন্যাকামো মার্কা কথা শুনে ভয়ংকর গালি দিতে মন চাচ্ছে তাই রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়াটাই মঙ্গল বলে মনে করলো এবং বেরিয়ে যাওয়ার জন্য এক পা কেবল দরজার বাইরে দিয়েছিলোও মাত্র তখনি শুনতে পেলো ক্রন্দনরত কন্ঠে মুসকানের বলা বাণীগুলো,
“আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলো দাদাভাই। ঐ লোকটার আশেপাশে থাকলে আমি মরে যাবো। ঐ লোকটা আমাকে ফেলে চলে গেছিলো কেন ফিরে এলো আবার। আমি চাইনা কিছু চাইনা৷ আমি বিয়ে করবো না, যে আমার কথা না ভেবে সবার কথায় আমাকে ছেড়ে চলে গেছে তাকে আমি চাইনা। তোমরা যদি আমাকে জোর করে বিয়ে করতে বলো আমি বিষ খেয়ে মরে যাবো, সুইসাইড করবো আমি। নিজেকে শেষ করে দেবো একদম শেষ। ”
মুসকনের কথা শুনে আঁতকে ওঠলো মুরাদ শক্ত করে বুকের ভিতর জরিয়ে নিয়ে বললো,
“মুসু কি বলছিস! এসব বলতে হয় না বোন, এসব বলিস না। তুই না চাইলে কেউ জোর করবে না তোকে কেউ না তোর ভাই তোকে কথা দিচ্ছে। ”
দেয়ালে এক হাত ভর করে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো ইমন। আচমকাই যেনো তার বক্ষঃস্থলে হাজারটা তীরের ফলা এসে বিঁধলো। এক হাতে দেয়াল ধরে অপর হাতে কপাল থেকে চিবুক অবদি ঘাম মুছে রুমের সামনে থেকে সরে গেলো। আর মনে মনে শুধু একটা বাক্যই আওড়ালো,
” নিজের বয়সের দিকে তাকিয়ে স্বার্থপরের মতো আমি কি পারতাম না তিন বছর আগেই তোকে সম্পূর্ণভাবে নিজের করে নিতে? যেখানে আমার বয়সী পুরুষ রা বিয়ে করে সংসার ধর্ম পালন করছে দু,এক সন্তানের বাপ হয়ে গেছে সেখানে ত্রিশের ঊর্ধ্বে গিয়েও আমি শুধু তোর জন্য অপেক্ষা করছি। নিজের সব চাহিদা বিসর্জন দিয়ে শুধু তোকে ঘিরে বেঁচে আছি আজ এই কথা শোনার জন্য এই পরিস্থিতি তৈরী হওয়ার জন্য!”
রাগটাকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না ইমন। সিঁড়ি দিয়ে নামার পূর্বে পাশে থাকা ফুলদানি টা এক ঝটকায় তুলে আছড়ে ফেললো। নিচ থেকে সায়রী, দিহান,আর ইরাবতী চমকে ওঠে তাকালো উপরের দিকে। ইমন সিঁড়ি দিয়ে বড়ো বড়ো পা ফেলে নিচে নেমে এলো৷ ইমনের চোখ,মুখ দেখে ভয়ে তিনজনের শরীরই শিউরে ওঠলো। ওদের তিনজনের অমন ভয়ার্ত অবস্থা দেখে ট্রি টেবিলের ওপর থাকা কাঁচের গ্লাসটা তুলে ছুঁড়ে ফেললো মেঝেতে। এক লাথি দিয়ে ট্রি টেবিলটা ছিটকে ফেলে চিৎকার করে বললো,
“এভাবে তাকিয়ে আছো কেন তোমরা? সার্কাস হচ্ছে এখানে সার্কাস! ”
চলবে…
রিচেক দেইনি৷
ব্যস্তময় জীবনে খুব কষ্টে এটুকু লিখলাম। খারাপ লাগলে দুঃখীত৷ ভর্তির কার্যক্রম শেষ করেও ফ্রি হতে পারিনি। দের বছর আরাম করার ফল এখন ভুগতে হচ্ছে । সবাই দোয়া করবেন যেনো দ্রুত ফ্রি হয়ে যাই। পড়াশোনার পাশাপাশি টুকটাক লিখালিখি যেনো চালিয়ে যেতে পারি । এতো ব্যস্ততাও মন আনচান করে লেখার জন্য। না লিখে থাকতে পারিনা থাকতে পারলে এমন ব্যস্ত সময় কখনোই লিখতাম না৷ ইনশাআল্লাহ এই গল্পটি রেগুলার করার তীব্র চেষ্টা করবো।