#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৫৪
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“আমি দেখতে সুন্দর? হ্যাঁ ভীষণ সুন্দর।শাড়ীটাতে মানাচ্ছে তাইনা?”
ডিভানে হেলান দিয়ে আবেশিত দৃষ্টিতে আয়নার সামনে দাঁড়ানো তোশাকে দেখছে কবীর।পুরুষটির বসার ধরণ কায়দা করে শৈল্পিক ধরণের।শরীরের গঠণকে প্রাচীন গ্রিক যোদ্ধার সঙ্গে অনায়াসে তুলনা করা যায়।এইযে বাহুর বাইসেপস গুলো মুহুর্তে শার্টের আবরণ খুলে বের হয়ে আসতে চাচ্ছে।তোশা অবশ্য সেদিকে তাঁকায় না।প্রিয় মানুষটির নিয়ে আসা শাড়ীটিকে পরে নিজেকে সৌন্দর্যের সাগরে আবিষ্কার করতে মত্ত্ব সে।
“কী হলো বলেন সুন্দর লাগছেনা?”
“লাগছে।”
“শুধু এতোটুকু প্রশংসা।”
“হুঁ।”
পিছন ফিরে তাঁকালো তোশা।চোখে বেদনার ছাঁপ।হালকা অসহিষ্ণু হয়ে কবীরের দৃষ্টির আড়ালে বসতে চাইলো।কিন্তু এতো কী সহজ সর্ব’নাশা দৃষ্টির আড়ালে যাওয়া?
“অভিমান বেলাডোনা?প্রশংসা অনেক শব্দে করা কী জরুরি?বুঝে নেওয়া যায়না?”
“যায়না।”
নাকের কাছে শাড়ীর আঁচলটা টেনে নিলো তোশা।অনেক পুরোনো দিনের সুগন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।প্রাণভরে শ্বাস টেনে নিলো সে।কবীর যুবতীর মনের কথাটি বুঝতে পারলো।তোশা খুব বেশী দূরে না বসায় হাতটা মেয়েটার চুলে ঠেকিয়ে বলল,
“শাড়ীটাকে অনেক পুরোনো মনে হচ্ছে তাইনা?”
“হ্যাঁ।আপনার মায়ের?”
“না আমার বউয়ের।”
“দিশা ম্যামের?”
“উহু আমার বউয়ের।”
“আমার?”
কবীর উষ্ণ শ্বাস ফেলে বলল,
“আমার বউয়ের।”
“তো আমি আপনার বউ না?অন্য কাওকে পছন্দ করেন?”
“একটা জিনিস দেখবে?”
পাশে অনাদরে পরে থাকা স্যুট থেকে একটা ছবি বের করলো কবীর।তোশাকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
“দেখো তো চিনো কীনা।”
কৌতুহলী হয়ে তোশা ছবিটাকে হাতে তুলে নিলো।হাসৌজ্জ্বল একজন তামাটে যুবক একপাশে তাঁকিয়ে আছে।গায়ের মলিন রঙ,রোগা পাতলা চেহারা,পরনে পাতলা শার্ট তাও ইন করা।নব্বই দশকের সবথেকে স্টাইলিশ যুবক লাগছে।কবীরের এমন রুপ তোশা প্রথমবার দেখলো।
“আপনি আগে থেকেই সুন্দর।পিছনে কোনো অনুষ্ঠান ছিল?”
“হ্যাঁ।আমার ছোট মামার বিয়ে ছিল।ছবির সাথে তোমার পরনের শাড়ীর সঙ্গে গভীর মেলবন্ধন আছে।”
“তাই?”
“যেদিন বিয়েটা ছিল মানে ছবিটা তোলা সেদিন মামীর বাবার বাড়ীর পাশে মেলা ছিল।কাজিনরা মিলে গিয়েছিলাম।সেখানে আমি একজনকে দেখি।লাভ এট ফার্স্ট সাইট বলা যাবেনা কিন্তু মেয়েটাকে পছন্দ হয়।তার গায়ে এই সেইম শাড়ীটা ছিল।পরবর্তীতে মেয়েটার খোঁজ না পেলেও শাড়ীটা খুঁজে বের করে সংগ্রহে রেখেছিলাম।কারণ এই বয়সেও মনে হয় এই শাড়ীটাতে সব মেয়েকে সুন্দর লাগবে।আমার বউয়ের জন্য কেনা ছিল।যেই হোক সেই পাবে।”
“দিশা ম্যাম পেয়েছিল?”
“হ্যাঁ।”
তোশার মুখটা মলিন হতে গিয়েও থেমে গেলো।শাড়ীটাতে কিশোর কবীর শাহ এর আবেগ জড়িয়ে আছে।নিশ্চয় দুটো মানুষ বিবাহ বন্ধনে বিচ্ছেদের আশায় জড়িয়েছিল না।কবীর অবশ্য নিজ প্রিয়তমার মনের কথা উপলব্ধি করতে পারে।মেয়েটির নরম হাতটা ধরে কাছে টেনে আনে।
“তুমি অতীত কেন মনে করো এতো?শাহ সাহেব কিন্তু সহজে কাওকে ছাড়েনা।কিন্তু কেউ ছেড়ে গেলে তাকে আঁটকে রাখেনা।”
“মন খারাপ করিনি।শুধু ভাবছি আম্মু,আব্বুর কথা।”
“তারা ভালো আছে।তুমি খুব শীঘ্রই দেখতে পারবে।”
“তাহলে আজ থেকে আমি আপনার বউ?শাড়ীটা যে এনে দিলেন।”
“তা তুমি অনেক আগে থেকে লিটল ডেভিল চেরি।বড় ভ’য়ংকর মেয়ে তুমি।ষোল বছরের তোমার পাগলামি দেখে ভেবেছিলাম যে মেয়েকে পানি খাইয়ে মা’তা’ল করতে পারি।সে তো কাঠের পুতুল।কিন্তু আজ উপলব্ধি হলো তুমি আমাকে প্রেমের নেশায় বুদ করে দিয়েছো।”
কবীরের কথায় উচ্চ শব্দে হেসে উঠলো তোশা।স্মরণে হয়ে গেলো তারা একটি গেইমেও খেলেছিল যেখানে কবীরকে পাওয়ার জন্য একবারও জিতেনি সে।অথচ কোনো গেইম,পরীক্ষা লাগেনি সে এমনিতে মানুষটার ভালোবাসা পেয়েছে।এক বছর পূর্বেও কবীরকে নিজের করে পেয়েছিল না। অথচ আজ সব নতুন।তোশা আস্তে করে কবীরের কাঁধে মাথা রাখলো।যদিও স্বাবধান বাণী শুনতে পেলো,
“আস্তে ব্যান্ডেজ এখনও আছে।”
“আমাকে কেন ভালোবাসলেন কবীর শাহ?আপনার বন্ধুর মেয়ে।অর্ধেক বয়সী।আপনি যেখানে কোটি তৈরী করেন সেখানে মা-বাবার টাকায় আমি চলি।বলেন তো কেন ভালোবাসলেন?”
“শুনতে চাও?বলবো সঠিক সময়ে।এখন সময়টা উপভোগ করো।”
চোখ বন্ধ করে তোশা সময়টা উপভোগ করার চেষ্টা করলো।কতোক্ষণ অতিবাহিত হলো?একটি ঘন্টাও না।কবীরের ফোনের অনবরত কম্পন সে বুঝতে পারছে।
“আপনাকে কেউ কল করছে।”
“হ্যাঁ।তুমি তৈরী তো?আমাদের এক জায়গায় যেতে হবে।”
“কোথায়?”
“আজ সেই দিন যেদিন তাহিয়ার মুখোমুখি হতে হবে আমাদের।”
চট করে চোখ খুললো তোশা।বুকের হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি পেয়ে গেলো।অধরযুগল জিহবা দ্বারা সিক্ত করে বলল,
“আমাকে হালাল করার জন্য এতো সুন্দর করে সাজিয়েছেন?ভীষণ খারাপ কবীর শাহ।”
“এই পদক্ষেেপের আগে মনে ছিলনা সামনে কঠিক এক পরিস্থিতি আসতে চলেছে?”
“আমি কেন ইংল্যান্ড ভেগে যাবো?ভালো করেছি।”
“গুড।”
কবীর উঠে দাঁড়ালো।পাশ থেকে ব্লেজারটা গায়ে দিতে দিতে বলল,
“গালে দুই চারটে পড়লে আবার কান্না করো না।যদিও আমি আছি।কিন্তু তাহিয়া,মায়ানের থেকে বড় অভিভাবক হয়নি।”
“আম্মু মা”রবে?”
“অসম্ভব কিছুনা।”
তোশা কিছু একটা ভাবলো।এরপর কবীরের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
“গালে আদর করে দেন।যদি কিছু খেতে হয় তখন ব্যাথা কম হবে।”
“আদর?সেটা কী?”
“স্মুচ।”
“ওয়েল স্মুচ?”
“একটু আগে না বউ বললেন?তাহলে কীসের লজ্জা?কাম’অন কবীর শাহ আপনি পারবেন।”
“তোমার মাথাটায় একটু সমস্যা আছে না?আমাদের মেয়েকে এমন পাগল বানিও না লিটল আনরাইপ টম্যাটো।”
“আশ্চর্য আমি অপরিপক্ক?”
“ইংরেজি বললাম দেখে বুঝোনি?”
“কবীর শাহ।”
“চলুন মিস চেরী।আমাদের যুদ্ধ নামতে হবে।শাড়ী পরেই চলো।”
কবীর হাত বাড়িয়ে দিলো।তোশা আনমনে সেটা আঁকড়ে ধরলে হ্যাচকা টান অনুভব করলো।তামাটে পুরুষটি নিজের সঙ্গে একেবারে মিশিয়ে নিয়েছে মেয়েটাকে।তোশা দৃষ্টি মেলে দেখলো।দুজনের শ্বাস মিশে যাচ্ছে গভীর আকুলতায়।
“বেলাডোনা, মাঝেমধ্যে বুঝতে পারিনা তোমাকে নিয়ে আমি কী করবো?এতোটা আদর লাগে।সেখানে নতুন করে আদর দিয়ে মে’রে ফেলতে চাইনা।সবুর করো।”
(***)
তোশাকে নিয়ে যখন কবীর তাহিয়ার বাড়ীতে এলো তখন সন্ধ্যা সাতটা।ড্রয়িং রুমে থমথমে পরিবেশ।কবীরের শক্ত হাতটাকে আঁকড়ে ধরে আছে তোশা।বিশাল পুরুষালি দেহের পিছনে মেয়েটা নিজেকে আড়ালের বৃথা চেষ্টা করছে।অবনত চোখে মা, বাবার দিকে তাঁকালো সে।তাহিয়াকে বড় ক্লান্ত লাগছে।মায়া লাগলো তোশার।পুরো রুমে এবার সে চোখ বুলালো।তার নানার বাড়ী,দাদর বাড়ীর কেউ মনে হয় বাদ যায়নি এখানে উপস্থিত হতে।পরিবেশ উষ্ণ না হলে ছোটখাটো গেট টুগেদার বলা যেতো।সবার চোখে প্রশ্ন,আকুলতা।হুট করে তোশার নিজেকে বাহুবলি মনে হচ্ছে।ওইযে প্রথম পার্টের শেষটায় বাহুবলির পরিচয় পাওয়ার পর সকলে কেমন উৎসুক হয়ে তাঁকিয়ে থাকে তেমন।পরবর্তীতে নিজেকে ধিক্কার দিলো।ছি: এমন পরিস্থিতিতে কী ভাবছে সে?
কিন্তু বিশ বছর বয়সী তোশার সবথেকে খারাপ লাগলো এটা দেখে সুদর্শন নায়ক উল্লাস পরিবেশের সম্পূর্ণ বিপক্ষে গিয়ে সোফায় বসে একমনে কিছু খাচ্ছে।নিশ্চয় সেটা মামীর তৈরী সেমাই।তোশা মানছে জিনিসটা মজা হয়।তবে এই পরিবেশে এতোটা বেখেয়ালী কীভাবে নায়কটা?
“তোশা আমার কাছে এসো।”
তাহিয়ার কণ্ঠ শুনে বাস্তবে ফিরলো তোশা।ধীর স্থির কিন্তু শক্তিশালী লাগছে মা কে আজ।ভয় বেড়ে গেলো মেয়েটার।
“আম্মু।”
“কবীরের হাত ছেড়ে আমার কাছে এসো তোশা।ও সঠিক নয় তোমার জন্য।বুঝতে পারো না?কেন পারো না বেয়া’দব মেয়ে।”
তাহিয়ার চিল্লানোর কণ্ঠে রুমের সকলে নড়েচড়ে বসলো।মায়ান অবশ্য নির্বিকার।পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছে।কম্পিত হওয়া তোশাকে এক হাতে আগলে নিলো কবীর।
“স্বাভাবিক কণ্ঠে কথা বলো তাহিয়া।তোশা ভয় পাচ্ছে।”
তাহিয়া যেন পাগল হয়ে গেলো।দৌড়ে কবীরকে নিজের মেয়ের কাছ থেকে সরিয়ে নিতে নিতে বলল,
“ছাড়ো আমার মেয়েকে।ছাড়ো।ও তোমার কেউনা।আমার মেয়ে তোশা তোমার কেউ না কবীর।”
চলবে।
এডিট ছাড়া পর্ব।সকলে রেসপন্স করবেন কাইন্ডলি।
আপনাদের ভালোবাসায় “সায়নের অপ্রিয় অরোরা” ই-বইটি এই সপ্তাহে বইটই এপে বেস্ট সেলার #১ ছিল।ধন্যবাদ সকল পাঠকককে এমন মায়া দেখানোর জন্য।
Photo copy unknown