এ মন মেলুক পাখনা পর্ব ১৮

0
504

#এ_মন_মেলুক_পাখনা 💚
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ১৮

সময় সকাল নয়টা ছাপ্পান্ন। খরগোশ ছানাটার ঘন লোমে হাত চলছে বিরতিহীন ভাবে। বিছানা ছেড়ে উঠার স্পৃহা নেই। কারণটা অবশ্য অফিসে যাই না বলেই। গ্ৰাম থেকে ফিরেছি তিনদিন। ‘অফিস অথবা অভ্র স্যার’ কারো সম্মুখীন হওয়া হয়নি। ঝংকার তুলছে আবার মুঠোফোনে রিংটোন শুরু হলো। স্ক্রিনে নজরবন্দি না করে আড়চোখে চেয়ে থেকে কল রিসিভ করলাম। কিছুক্ষণ নিশ্চল থেকে শোনা গেল অপ্রত্যাশিত চেনা কণ্ঠস্বর, “হ্যালো মোম।”

“হম।”

পুনরায় লিপ্ত হলো নিস্তব্ধে। দ্বি মুহুর্ত নির্বাক থেকে মৃদু স্বরে বললাম, “কিছু বললেন?”

জড়তার ইতি টেনে বললেন, “হুঁ। অফিসে কেন আসছেন না? এতদিন একজন মানুষ অসুস্থ থাকে না। আগে আমি ছুটি দিলেও গত তিনদিন আপনি নিজের ইচ্ছাতে বন্ধ দিয়েছেন। এই স্যালারী কিন্তু পাবেন না।”

“ঠিক আছে।” সংক্ষিপ্ত উত্তর।

“ঠিক আছে মানে? ঘনঘন এত বন্ধ দেয়, এমন কর্মচারী আমার প্রয়োজন নেই।”

“ঠিক আছে।”

“ঠিক আছে মানে? এক্ষুনি আপনি অফিসে আসবেন। রাইট নাও..!” বলেই বিচ্ছিন্ন করলেন কল। ‘যাক বাবা, হলো টা-কি!’ বিছানা ছেড়ে উঠলাম। কিট্টির শরীরে কাঁথা প্যাঁচিয়ে দিলাম। একটা গাজর সামনে রেখে ওয়াশরুমের উদ্দেশ্য অগ্ৰসর হলাম।

__

“আসব স্যার?”

“নো।”

“বাড়িতে ফিরে যাবো?”

“নো?”

“তাহলে?”

“তাহলে আর কী, আমার মাথায় চড়ে নাচুন।” হাতের ফাইলটা ছুড়ে দিয়ে বললেন। আমি ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলাম। পুনরায় ছুড়ে দেওয়া ফাইলটা তুলে দেখতে দেখতে বললেন, “কয়েকদিন পর নতুন একটা পোশাক লঞ্চ করা হবে। ডিজাইন দেখেছেন?”

“না।”

“আপনার ডিকসনারিতে হ্যাঁ-বোধক কোনো শব্দ আছে মিস্ মোম? আমার তা মনে হয়না।”

“আপনিই তো বলেছেন, আপনার প্রতিটি কালেকশন আলাদা আলাদা ডিজাইনারদের দিয়ে করান। তাহলে আমি দেখতে চাওয়া নিছক দুঃস্বপ্ন ছাড়া কিছু নয়।” অভ্র স্যার ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে ফাইলটা এগিয়ে দিয়ে বললেন, “নিন, দেখে নিন। ঠিক আছে কি-না। তাহলে এটাই ফাইনাল করব।”

হাত বাড়িয়ে ফাইলটা ধরে নজরবন্দি করলাম পৃষ্ঠাতে। সুন্দরের মাঝেও কমতি অনুভব করলাম। আমতা আমতা করে বললাম, “আপনি যে এখানে নিশ্চিতে আছেন, পুলিশের সাথে কথা হয়েছে?”

“না। পুলিশের সাথে হয়নি। উকিলের সাথে হয়েছে। তিনি আমার জা/মি/ন করে রেখেছিলেন। জা/মি)নের এক কপি নিজের কাছে রেখে বাকিটা থানাতে দিয়ে এসেছি।”

“অগ্নি বা টিনার সাথে আপনার কথা হয়েছে?” সন্দিহান কণ্ঠস্বর।

“অগ্নি লাপাত্তা, টিনার সাথে কথা বলব আমি? অসম্ভব। শুনেছি এখন সুস্থ। কালকে আদালতে হাজিরা দিতে হবে। সময় হলে আপনি আমার সাথে আদালতে যাবেন।” বলেই দৃষ্টি নিবদ্ধ করলেন ফাইলে। বাটন ফোন চেপে অগ্নিকে কল করার প্রচেষ্টা করলাম বেশ কয়েকবার। বন্ধ বলছে। অভ্র মুচকি হেসে বললেন, “আমিও বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছি, বন্ধই বলেছে। অযথা চেষ্টা না করে নিজের কাজটা করুন।”

উক্ত ডিজাইনের পৃষ্ঠা-টা আলাদা করে অভ্র স্যারকে দেখিয়ে বললাম, “দেখুন তো এখানে ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। একটু গর্জিয়াস করলে ভালো লাগবে।”

“চেয়ারে বসে বাকিটা শেষ করুন।”

মন পাবনের নাও ভাসাইলাম
বন্ধু তোমার নদীতে।
নাওয়ের মাঝি বড়ই পাজি
বৈঠা চালায় গোপনে।
বাটন ফোনের ছোট্ট মেমোরিতে সেভ করা সেই প্রিয় গানটি বাজছে। সেই গানের লিরিক্স ‘এ’ ওষ্ঠ মেলাতে মেলাতে পেন্সিল চালাচ্ছি কাগজে। এক পর্যায়ে উপলব্ধি হলো সেই প্রিয় গানটা বাজছে না। মাথার সমুখ অংশ ঈষৎ উঁচু করে দৃষ্টিপাত করতে নজরে এলো শুভ্র শার্ট। তার মাঝে কালো রঙের টাই ঝুলছে। ভ্রু কুঁচকে বললাম, “কী?”

“সুন্দর হচ্ছে, পাশাপাশি আপনি অপূর্ব গান করেন। মাঝে মাঝে ডুবে যান সেই গানে। তাই হয়তো আপনার হাতের কাজ এমন অসাধারণ।”

“ধন্যবাদ।”

দু-জনের কথপোকথনের মাঝে দরজায় করাঘাত পড়ল। অভ্র স্যার দূরত্ব বজায় রেখে সরে গিয়ে অনুমতি দিলেন প্রবেশের। ট্রে হাতে নিয়ে খাবার রেখে যাওয়ার পাশাপাশি এক পলক তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো মেয়েটি।

অভ্র স্যার খেতে বসেছেন। ভাত ও বাঁশপাতা শুঁটকি দিয়ে একেক পর এক লোকমা তুলছেন মুখে। শুঁটকির গন্ধে পেটে নাড়া দেওয়ার পাশাপাশি হাতের কাজ থেমে গেছে। নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম দীর্ঘক্ষণ। অভ্র স্যার খাওয়ার মাঝপথে থেমে বললেন, “কী, ক্ষুধা লেগেছে? কিছু খাবেন?”

“উঁহু।”
আমার নত দৃষ্টিতে অভ্র স্যার বুজে নিলেন উত্তর। অর্ধ খাওয়া প্লেটটা সমুখে রাখতেই তড়িগড়ি করে বললাম, “একি? আমি এঁটো খাবো?”

“স্বামীর এঁটো স্ত্রী খেলে এতে ভালোবাসা বাড়ে.. বলেই মুখে খিল দিলেন। তাজ্জব! অভ্র স্যার নিজেও পড়লেন ফ্যাসাদে। “মানে, সকালে খেয়ে এসেছেন বলে মনে হয়না। এঁটো হোক আর যাই হোক, খালি পেটে পান্তা ও মরিচ-ও অম্রিত।”

দরজার করাঘাত না দিয়েই মিনিট তিনেক পর মেয়েটি এলো ‘দিয়ে যাওয়া খাবারের’ এঁটো থালা বাসন নিয়ে যেতে। অভ্র স্যার ল্যাপটপে কাজ করছেন। করাঘাত না করাতে বিরক্তের সাথে বললেন, “চুমকি, আপনাকে কতদিন বলেছি, নক করে ঢুকবেন।”

“স্যরি স্যার।”

“প্রতিবার আপনি এমন বলেন। কিন্তু কাজের বেলাতে করেন না।”

অভ্র স্যার এই সামান্য ধমকানিতে পুরো অফিসে যেন গেল আমার আর তার সম্পর্কের কথা। এই সম্পর্ক নামহীন।

রাত্রিবেলা অফিস থেকে বের হওয়ার সময় চুমকি সহ আরও দুইজন কর্মচারীর দেখা পেলাম। ব্যাগপত্র নিয়ে মেইন দরজা পর্যন্ত আসতেই চুমকি বলে উঠল, “আমরা এই অফিসে তিনবছর ধরে কী কাজ করলাম। অভ্র স্যারের কেবিনে ঢুকতে হলে অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু এই মোম ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনুমতি বিহীন থাকে। স্যারের জন্য নিয়ে যাওয়া খাবার থেকে স্যার তাকে ভাগ দেয়।”

আরেকজন বলে উঠে, “কী বলছিস, সত্যি!”

আরেকজন তাল মিলিয়ে বলে, “দেখিস না, অভ্র স্যার চোখে হারায়। কোথাও গেলে সাথে নিয়ে যায়।”

“হ্যাঁ, খাবারের ভাগ দেয়। এমনি এমনি তো দিবি না। নিশ্চয়ই এমন কিছু দিয়েছে, যাতে অভ্র স্যার এমন করতে বাধ্য হয়েছে।”

“ছেলেদের মন। মেয়েদের চালচক্কর বুঝে উঠতে পারে? কোনোভাবে অভ্র স্যার এই মেয়েকে বিয়ে করলে, মেয়ে দুটোর যে কী অবস্থা হবে।” চুমকি বলে।

আড়চোখে তিনজনের দিয়ে চেয়ে ব্যাগটা আঁকড়ে ধরে এগিয়ে চললাম সামনের দিকে। অসহায় নিয়তি!

[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]

গ্ৰামে নেটের অবস্থা শোচনীয়। তারউপরে লেখার সময় পাই না। আর দুই পর্ব দিয়ে অসমাপ্ত করে দিবো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here