এ মন মেলুক পাখনা পর্ব ১৯

0
517

#এ_মন_মেলুক_পাখনা 💚
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ১৯

পেন্সিল দিয়ে নতুন একটা ডিজাইন আঁকার প্রচেষ্টা করতে ব্যস্ত আমি। ভেবে রাখা ডিজাইনটা কিছুতেই রুপ দিতে পারছি না, ক্ষণে ক্ষণে চুমকির কথাগুলো মস্তিস্ক আওড়াচ্ছে। আমার প্রচেষ্টাকে পুনরায় ব্যর্থ করে রিংটোন বাজল ফোনের। ভাবনাকে পেছনে ফেলে কল রিসিভ করলাম। অভ্র স্যার ফোন করেছে। রিসিভ করে সালাম বিনিময় করে বললাম, “জি স্যার, কিছু বললেন?”

“হম। আমি উকিলের সাথে দেখা করতে এসেছি। আপনি একটু চলে আসুন।”

সকাল সাতটায় ঘড়ির কাটা। এত সকালে তিনি পৌঁছে গেছেন ভেবেই আশ্চর্য হলাম। ইতস্তত করে বললাম, “এখনই আসতে হবে, একটু পর আসলে হবে না? তাছাড়া শ্যামল স্যারের ঠিকানা আমার কাছে নেই।”

“এখন আসুন‌। আজকে অফিসে যেতে হবেনা। ঠিকানা আপনাকে মেসেজ করে দিচ্ছি।” বলেই কল বিচ্ছিন্ন করলেন। পরক্ষণে মেসেজের টুং শব্দ শুনতে পেলাম। অপেক্ষা না করে তৈরি হতে ওয়াশরুমে গেলাম।

.
বাদী ও আসামি উভয়ে উপস্থিত আদালতের একটি ছোট কক্ষে। বিচারক আসার অপেক্ষায়। দশটায় বিচার কার্যের সূচনা হবে। আদালতে আমার সাক্ষ্য উপস্থাপন করা হবে। ইতোমধ্যে আরও একবার নিজের সাক্ষ্য দিয়েছি। মামলার কাগজপত্র সাক্ষী ডাকার জন্য থাকা এসিস্ট্যান্ট বা পেসকার, তিনি দাঁড়িয়ে বললেন, “বিচারপতি আসিয়াছেন, আপনারা মামলার জন্য প্রস্তুত হোন।”

বলা মাত্র সবাই দাঁড়িয়ে তাকে সম্মান প্রদর্শন করলেন এবং নীরব হয়ে গেল কক্ষ। বিচারক এসে হাতের ইশারা করে বসতেই বসল সকলে। পেসকার দাঁড়িয়ে কাগজ দেখে পড়তে শুরু করলেন, “আসসালামু আলাইকুম, ১৪ তারিখ শাহরিয়ার ফ্যাশন হাউসের সনামধন্য মডেলকে শাহরিয়ার ফ্যাশন হাউসের মালিক মুন্তাসির শাহরিয়ার অভ্র বন্ধ ঘরে মা/রধ/র করে। ঘটনাস্থল থেকে বা/দী টিনাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় প্রতিবেশীরা। পরবর্তীতে তিনি আইনের আশ্রয় লাভের জন্য মামলা দায়ের করেন।
মামলার যাবতীয় কার্যক্রম শুরু হোক।”

দুই উকিলের তর্ক বিতর্ক চলল দীর্ঘক্ষণ। একপর্যায়ে আমাকে ডাকা হলো। ছোটো একটি বই স্পর্শ করে সত্য বলার প্রতিজ্ঞা বদ্ধ হলাম। আসামি পক্ষের উকিল বললেন, “ঘটনার দিন আপনি কোথায় ছিল, নয়টা নাগাদ?”

“অভ্র স্যারের সাথে।” সংক্ষিপ্ত জবাব।

“কেন ছিলেন। একটু খুলে বলবেন।”

“কাঁটাগঞ্জে অভ্র স্যারের নতুন শোরুম উদ্বোধন করা হবে। মডেল হিসেবে আমিও গিয়েছিলাম তার সাথে। আটটার পর থেকে রাত দশটা এগারোটার মতো আমরা একসাথে ছিলাম।”

উকিল আমাদের পক্ষে থেকে যুক্তি উপস্থাপন করে কিছু কাগজপত্র এগিয়ে দিয়ে বললেন, “এখানে শাহরিয়ার অভ্র ও মোমের ফোন নাম্বারের লোকেশন রয়েছে। তাছাড়াও কাঁটাগঞ্জে যেতে সময় লাগে মিনিমাম চার ঘণ্টা। সাড়ে বারোটা নাগাদ সে কাঁটাগঞ্জে পৌঁছে গেছে এবং শোরুমে উদ্বোধন করেছে তার লাইভ আমরা সবাই দেখেছি। সাড়ে আটটা নাগাদ রওনা দিলেই পৌঁছানো সম্ভব। নয়টা নাগাদ মিস টিনার এই অবস্থা করে সেখান থেকে বের হতেও কম করে হলে সাড়ে নয়টা বেজে যাবে। তিন ঘণ্টায় কাঁটাগঞ্জে পৌঁছানোর সম্ভব।”

“অপজেকশন। ওভার রান করে পৌঁছেছেন।”

“তাহলে নিশ্চয়ই ট্রাফিক পুলিশরা ধরবেন। নয়টা নাগাদ দেওয়া ব্রীজের টোল নিশ্চয়ই মিথ্যা বলবে না।”

বিরোধী পক্ষের উকিল থেমে থাকলেন না। আমাকে পালটা প্রশ্ন করলেন, “আপনার সাথে অভ্র স্যারের সম্পর্কটা ঠিক কী, মিস্ মোম?”

“আমি তার‌ ফ্যাশন ডিজাইনার।”

“কতদিন হয়েছে?”

“১৫ দিন।”

“মাত্র পনের দিন। এই পনের দিনে এমন কী হলো যে, সামান্য একটা ডিজাইনারকে নিয়ে উদ্বোধন করতে গেলেন তিনি। শুনেছি চিত্রশিল্পীরা উপরে ওঠার সিঁড়ি হিসেবে নিজের সতীত্বকে ব্যবহার করে, আর আপনি এইক্ষেত্রে ব্যবহার করলেন। শুনেছি বেশ কিছুদিন আপনি অভ্র স্যারের বাড়িতে ছিলেন। নতুন হোস্টেলে শিফট হওয়ার পর সেখানেও তিনি যাতায়াত করতেন। এমনি এমনি। ভালো।”

“অপজেকশন..

“অপজেকশন! অপজেকশন!” বলে দুজনের লড়াই চলতে থাকল। স্থির দৃষ্টিতে আমি সব তাকিয়ে দেখতে থাকলাম। শুনতেও পেলাম বটে, কিন্তু বেশি নয়। সামান্য, একদম সামান্য। বিচারক আজকের মতো মামলা স্থগিত করে চলে গেলেন আমার অদেখায়। বিরোধী পক্ষের উকিলও চলে গেছেন। কোনো এক আগন্তুক এসে স্পর্শ করল আমার কাঁধ। ভাবনা থেকে ফেরত এসে অনুভব করল আমার গালে নোনাজল। অতি সন্তর্পণে চোখ মুখে ফেরতেই দেখলাম অভ্র স্যার দাঁড়ানো। সৌজন্য হেসে বললাম, “সবাই তো চলে গেছে, আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন?”

“আপনি একা থাকবেন।” যত্ন সহকারে বললেন।

“আমি তো একাই থাকি, একাই আছি। মানুষ কেন আমাকে অ/শ্লী/ল ইঙ্গিত করে? আমার বাবা মা নেই, মামির মা/র খেয়ে বড় হয়েছি। কিছু টাকার লোভে চেয়ারম্যানের বিগড়ে যাওয়া ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করেছে। মামা আমার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে এই শহরে পাঠিয়েছে। আমি আগামীকাল গ্ৰামে ফিরে যাবো। এই শহরে আর ভিড় বাড়াতে চাই না।” অভ্র স্যার ভাষা খুঁজে পেলেন না। আমি পুনরায় বললাম যাবেন না? অভ্র স্যার ‘হম।’ বলে চললেন। রাতে আবার এলেন তিনি।

ভয়ে ভয়ে দরজা খুলে দিচ্ছি। আমার রুমমেট দুইজন ঘুমিয়ে পড়েছে। কিয়ৎক্ষণ পূর্বে অভ্র স্যার ফোন করে দরজা খুলতে বলেছে। মাঝরাতে এমন প্রস্তাব প্রত্যাশার বাইরে ছিল। দরজার ছিটকিনি খুলে হাত সরানোর বিলম্ব হতেই বাইরে থেকে তড়িৎ গতিতে বুকে এসে পড়ল কেউ। মিনিট দুই পর সোজা হয়ে ঢুলতে ঢুলতে দাঁড়াল অভ্র স্যার। ভেঙেচুরে পড়ে যাচ্ছে। ভারী গলায় বলে, “আপনি না আমার বউ, তাহলে কেন দূরে দূরে থাকেন? সবসময় আমার সাথে সাথে থাকবেন।”

বলতে বলতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল সে। হাত নাচাতে নাচাতে বলে, “মোম আমার বউ।‌ আমার বিয়ে করা বউ।”

পুনঃপুন বলা কথাগুলোতে বিরক্ত হয়ে উঠছি আমি। শরীর থেকে তীব্র গন্ধে নাক কুঁচকে যাচ্ছে। ভেতর থেকে তিঁতকুটে ঢেকুর উঠছে। কাঁধে হাত রেখে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে এলাম ঘরে। তিনি হাত ছাড়লেন না। উলটো পিঠে চুমু খেয়ে বললেন, “মোমবাতি।”

অবিলম্বে কেঁপে উঠলাম। মাতাল করা ব্যবহার ও জড়িয়ে যাওয়া কথায় আমি হতভম্ব। কম্পিত গলায় বললাম, “আপনি বাড়িতে যাবেন না?”

“না, আজ আমি আমার বউয়ের সাথে থাকব।”

“সেদিন বললেন, ‘ঊষা ও উদিতাকে ছেড়ে আপনি রাতে থাকেন না। আজ রাতে থাকবেন কীভাবে?”

[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here