এ মন মেলুক পাখনা পর্ব ৮

0
504

#এ_মন_মেলুক_পাখনা 💚
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ০৮

“যেটা সত্যি, সেটা বলেছি স্যার। এতে কারো খারাপ লাগলেও সত্যিটা সত্যি। সত্য তেতো হয়ে সমসময়।” দৃঢ় গলায় বললাম। ঊষা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। আমার হাত ধরে অভ্র স্যারকে উদ্দেশ্য করে বলে, “হ্যাঁ বাবাই, এই আন্টিটার হাঁটা আমার ভালো লাগছে না। অজগর সাপের মতো মুচড়ামুচড়ি করছে। চিড়িয়াখানায় আমরা সেই সাপটা দেখেছি, সেটার মতো।”

মডেল প্রত্যুত্তর কথা বলার মতো ভাষা খুঁজে পেল না। ঊষার জায়গায় আমি থাকলে দু চার কথা শুনিয়ে দিতো ঠিকই। স্যারের মেয়ে বলে নিশ্চুপ দাঁড়ানো। অভ্র স্যার বললেন, “ঊষা তোমাকে কতদিন বলেছি, ‘তুমি ছোটো। বড়রা কথা বললে কথা‌ বলবে না।’ যাও, তোমরা দুজনে আমার কেবিনের দোলনায় গিয়ে বসো।”

ঊষা বাবাইয়ের কথার অবাধ্য হতে পারল না। আমার হাত টেনে ধরে বলে, “এই কিট্টির মাম্মি। তুমি ঐ পোশাকটা পরে দেখি দাও, সে মৃগী ব্যারাম তোমার নেই।”

ঊষার আবদার ফেলতে পারলাম না। ঈষৎ পূর্বে ছুঁয়ে দেওয়া পোশাকটা নিয়ে ওয়াশরুমে ছুটে গেলাম। শত জড়তা নিয়ে পরিধান করলাম পোশাকটি। পিঠ, কাঁধ হাঁটু উন্মুক্ত। খোঁপা করা চুলগুলো খুলে বেরিয়ে এলাম। মনে মনে নিজেকে বাহবা দিলাম, “কন্ট্রোল মোম, কন্ট্রোল। তুই পারবি, বি নরমাল।”

আমাকে দেখে উপস্থিত সবাই হতভম্ব হয়ে আছে‌। মডেলিংয়ের মথো ওয়ার্ক করে দেখালাম। বিভিন্ন ভঙ্গিমায় ফটো হলো ক্যামেরা বন্দি। উদিতা ও ঊষা করতালি দিয়ে বলে, “বাহ, তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে কিট্টির মাম্মি।”

মডেল জ্বলে উঠল। উত্তেজিত কণ্ঠে বলে, “অভ্র স্যার, যেহুতু আপনি ভালো মডেল পেয়ে গেছেন। আমাকে আর দরকার নেই তাহলে। আমি আসছি।”

অভ্র স্যার এতক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল। মডেলের পেছনে পেছনে গিয়েও তাকে পথভ্রষ্ট করতে পারলেন না। ফিরে এসে বাজখাঁই গলায় বলেন, “আপনি আমার কেবিনে আসুন। (স্টার্ফদের উদ্দেশ্য করে) আপনারা উদিতা আর ঊষার দিকে খেয়াল রাখুন।”

বলা বাহুল্য অভ্র স্যার নিজ কক্ষের দিকে অগ্রসর হলেন। নত দৃষ্টিতে আমিও অগ্ৰসর হলাম তার কক্ষের দিকে। মডেল প্রস্থান করল অন্যদিকে অগ্নি অফিসে হাজির হলো। তাকে দেখে এই পোশাকে লজ্জা পেলাম আমি‌। নিকটে এসে মুচকি হেসে বলল, “ইউ আর লুকিং সো হট মোম। তুমি মোম, এমনিতেই গরম থাকো। আজ অগ্নির আগুন বাড়িয়ে দিলে।”

লজ্জায় কাবু হলাম। ইতস্তত নিয়ে পোশাকটা টেনেটুনে ঠিক করতে করতে বললাম, “মোমের সাধ্য নেই একা একা জ্বলে উঠার। অগ্নি ছাড়া।”

“আমি তো মোমকে জ্বালাতে সবসময় প্রস্তুত থাকি।”
অগ্নির বেসামাল চাওনি। হাত মুচড়ামুচড়ি করতে করতে সামনের দিকে তাকালাম। অভ্র স্যার বুকে হাত গুজে বললেন, “আপনাকে কখন আসতে বলেছি, এখানে দাঁড়িয়ে কি করছেন? (অগ্নিকে উদ্দেশ্য করে) তুই এখানে কী করছিস? তোর না ঐখানে যাওয়ার কথা ছিল‌?”

“হ্যাঁ, গিয়েছিলাম তো। ডেলিভারি ডান। এখানে আসলাম ওদেরকে নিয়ে যেতে।” অগ্নি বলে।

“ওখানে আছে নিয়ে যা।” ইশারায় করে বলে। অগ্নি চলে গেল সেদিকে। অতঃপর অভ্র স্যার বললেন, “আপনি কি এখন এই পোশাক পরে থাকবেন। নিজের পোশাক পরুন। যেই পোশাকে নিজেকে কমফোর্ট ফিল করতেন পারবেন না। কখনো পড়েন অবধি নি। অন্যের দেওয়া চ্যালেঞ্জ জিততে কেন সেই পোশাক পরে হেন/স্থা/র শি/কার হচ্ছেন?

“আসলে..

অভ্র বুঝতে পারল আমার অস্বস্তি। নিজের ব্লেজারটা খুলে আমার দিকে এগিয়ে এগিয়ে দিয়ে বললেন, “কালো পোশাকের সাথে লাল রঙয়ের টা মানাচ্ছে না। (চোখাচোখি হতেই বলেন) ফিতা দেখে বুঝলাম। আমি আপনার লাল রঙের জামাটা এনে দিচ্ছি। কেবিনের ভেতরে গিয়ে বলুন। স্টার্ফ দিয়ে পাঠাচ্ছি।” বলেই অভ্র স্যার মডেলিং কক্ষের দিকে অগ্ৰসর হলেন। আমি জমে গেলাম। হাত পা হিম হয়ে গেল। ব্লেজারটা জড়িয়ে নিলাম অতিদ্রুত। আশেপাশের মানুষের দৃষ্টি বড্ড অস্বস্তিতে ফেলছে আমাকে। হাত বাড়িয়ে দরজা খুলে ঢুকে গেলাম অভ্র স্যারের কেবিনের ভেতরে। অভ্র আর অগ্নি দু’জনের মুখমণ্ডল একই হলেও ব্যক্তিত্বের দিক থেকে দু’জনেই আলাদা। একজন অস্বস্তিতে ফেলতে জানে, আরেকজন কাটিয়ে তুলতে জানে। একদম অচেনা

কানামাছি ভোঁ ভোঁ,
যাকে পাবি তাকে ছোঁ!
আমার চোখে কাপড় বাঁধা। উদিত আর ঊষাকে ধরার চেষ্টা করছি। গত আধঘণ্টা ধরে দু’জনকে ধরার চেষ্টা করছি। ওদের স্পর্শ করা নাগালের ভেতরে হলেও আমি এড়িয়ে যাচ্ছি। প্রতিবার ছেড়ে দেওয়ার পর দু’বোনের খিলখিল করা হাসি আমায় মাতোয়ারা করে দেয়। ঊষাকে ধরার জন্য এগিয়ে যেতে পেছনে সংস্পর্শ পেলাম উদিতা। পিছু ফিরে ধরলাম। কিন্তু সে নড়াচড়া করছে। হাতের বন্ধন আলগা করে দিলেও সরছে না। এমন সময়ে উদিতা ও ঊষা একসাথে করতালি দিয়ে ঊষা বলে, “বাবাইকে ধরেছ, বাবাই এবার চোখ বাঁধবে।”

দুরন্ত বজায় রেখে সরে গেলাম। চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে খুলে ফেললাম কাপড়ের টুকরো। সকালের ঘটনার পর লজ্জায় অভ্র স্যারের দিকে তাকাতে পারছি না। উল্টো পথে ধরলাম। অভ্র স্যার ডেকে উঠলেন, “দাঁড়ান, মোম।”

অদৃশ্য শিড়ক থেকে নিজের পা দুটো ছাড়াতে পারলাম না। অভ্র নিজেই সামনে এসে দুই থোকা লিচু এগিয়ে দিয়ে বলে, “একটা আপনার জন্য। অন্যটা অগ্নির জন্য।”

“আপনি আমাকে বলেছিলেন, নতুন ফ্লাট ভাড়া করে দিবেন। কবে দিবেন?”

“কথা বলে এসেছি আজ। সাত দিন পর নতুন মাস। এক তারিখ ছাড়া ভাড়া পাওয়া যাবে না। এই সাতদিন আমাদের সাথে থাকুন।
চলো ঊষা উদিতা।”

“আমরা দুজনে কিট্টির মাম্মির সাথে খেলবো।” ঊষা বলে।

“এখন অনেক রাত হয়েছে। ঘুমাবে, কালকে স্কুল আছে। এসো আমার সাথে।” বলেই অভ্র দুই মেয়েকে নিয়ে গেল তার কক্ষে। আমি টেবিলের উপর বসে লিচুর খোসা ছাড়িয়ে খেতে ব্যস্ত হলাম। কিছুক্ষণ পর দরজায় করাঘাত পড়ল। খাওয়া রেখে দরজা খুলে দিলাম। ম্যানেজার সাহেব এলেন বাড়িতে। আমাকে দেখে তিনি চমকে গেলেন, “তুমি এখানে? (আমার জবাব না পেয়ে পুনরায় বললেন) অভ্র স্যারকে একটু ডেকে দিবেন। আমার একটু দরকার ছিল তার কাছে।”

“ভেতরে আসুন। আমি তাকে ডাকছি।” ম্যানেজার কাদের সাহেব ভেতরে আসতেই আমি গেলাম অভ্র স্যারের কক্ষে। দুই মেয়েকে দু’পাশে নিয়ে শুয়ে আছে। লিচুর খোসা ছাড়িয়ে দিচ্ছেন। মৃদু স্বরে বললাম, “আসব স্যার?”

“আপনি?” হতবাক হয়ে।

“ম্যানেজার সাহেব এসেছে, আপনার সাথে জরুরি কথা আছে তার। নিচে বসে আছে।”‌

“আচ্ছা, আপনি একটু ওদের ঘুম পাড়ান। আমি দেখা করে আসছি।” অভ্র স্যার বেরিয়ে গেলেন। উদিতা ঊষা আমাকে দেখে খুশিতে আত্মহারা। আমি দুজনের মাঝে শুয়ে পড়লাম। টেবিল ল্যাম্প নিভিয়ে দিয়ে বললাম, “বাবাই চলে আসবে। তার আগে ঘুমিয়ে পড়তে হবে। কেমন। চোখ বন্ধ করো টু প্রিন্সেস।”

“তুমি এসেছ, আমি অনেক খুশি হয়েছি।” ঊষা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে। ঊষার সাথে যোগ দিয়ে উদিতাও আমাকে জড়িয়ে ধরে।
আমার কথায় সাড় দিয়ে উভয়ে চোখ বন্ধ করল। আমি দুজনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। কবিতা ধরলাম সাথে,
“খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো বগি এলো দেশে
বুলবুলিতে ধান খেয়েছে খাজনা দিব কিসে?”

চোখের পাতা লেগে এলো ঘুমে। আচ্ছন্ন ভাবনাটা দূর করার পরিবর্তে চোখের পাতা বুজে গেল। তলিয়ে গেলাম ঘুমের তলদেশে।

[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]
রেসপন্স করার অনুরোধ রইল 💚

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here