#এ_মন_মেলুক_পাখনা 💚
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ০৬
“হেই ক্যান্ডেল? কথা বলছো না কেন? তুমি আমাদের বাড়িতে কী করছো?” বুকে হাত দিয়ে সন্দিহান গলায় বলেন অভ্র স্যার। কোমরে হাত দিয়ে বিপরীত কণ্ঠে বললাম, “এজন্য আমি আপনার সাথে আসতে চাইনি। আপনি এই আমাকে চিনতে পারেন, এই না চেনার অভিনয় করেন। আপনার এই অভিনয় দেখে বিরক্ত হয়ে গেছি।”
রাগ দেখিয়ে খরগোশ ছানাটা আঁকড়ে ধরে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই পরিচিত কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম। অভ্র স্যার বললেন, “এ কি মোমবাতি? আপনি চলে যাচ্ছেন কেন?”
আবার ‘আপনি’? সম্বোধন। উদাসীন হয়ে পেছনে ফিরতেই থমকে গেল আমি। ওষ্ঠদ্বয় বিচ্ছিন্ন রয়ে গেছে। মিলিত হচ্ছে না। আমার সামনে দুইজন অভ্র স্যার দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টি ভ্রম ভেবে চোখ মুছলাম। ‘না’ আমার দেখা ভুল নয়। সত্যি, পরপর দুটো কাশি দিয়ে মিনমিন করে বললাম, “দুজন এলো কোথা থেকে, মাত্র তো একজন দেখলাম।”
দু’জনেই এক সাথে হেসে উঠল। একজনের গালে টোল পড়ে, অন্যজনের পড়ে না।হাসতে হাসতে একজন বলে, “লাইক সো ফানি হ্যান্ডেল। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমরা জমজ ভাই। আমি অগ্নি আর সে অভ্র।”
অবিলম্বে হাত ফসকে গেল। পরিস্থিতি বুঝে উঠার পূর্বেই হাত ফসকে নিচে পড়ল খরগোশ ছানা। এতক্ষণে সবকিছু আমার মস্তিষ্কে ঢুকল। তারমানে অভ্র স্যার আমাকে ‘আপনি’, অগ্নি আমাকে ‘তুমি’ সম্বোধন করতো।
অগ্নি এগিয়ে এসে আমাকে ধরল। টেনে নিয়ে সোফাতে বসালো। ছুটে গেল ড্রাইনিং রুমে। গ্লাসে করে পানি নিয়ে এলো। এগিয়ে দিয়ে বলেন, “খেয়ে নাও।”
পানি পান করে বললাম, “আগে কেন বললেন না, আপনারা জমজ। তারমানে ‘উদিতা ঊষা’ অভ্র স্যারের মেয়ে। আমি তো চমকে গিয়েছিলাম।”
অগ্নি অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন ও বললেন, “চমকানোর কিছু নেই। তোমার চমক এখনো বাকি আছে। এক জোড়া দেখে চমকেছো, আরেক জোড়া দেখে নাও আগে।”
“তারমানে আপনারা চৌমজ? মানে চারজন অভ্র। ও মাই গুডনেস। আপনাদের বাকি ভাইদের ডাকুন। একসাথে সবাইকে দেখি।”
না, আমরা দু’জনই। আর দুজনকে পরে চিনে নিবে। মেয়েরা অপরিচিত কারো সাথে তেমন কথা বলেনা, আমি নিজের পরিচয় দিলে তুমি আমার সাথে কথা বলতে না। তাই।” অগ্নির কথাতে বুকে থুথু দিয়ে নিজেকে শান্ত করলাম। অভ্র স্যারের দিকে এগিয়ে গেলাম দু পা। উত্তেজিত হয়ে বললাম, “দেখেছেন অভ্র স্যার, আমি আপনাকে বলেছিলাম না দেখা হয়েছে। দেখা হয়েছিল ঠিকই কিন্তু আপনার জমজ ভাইয়ের সাথে।”
অভ্র স্যার জবাব দিলেন না। এজন্যই অগ্নি সেদিন অভ্র স্যারের ওয়ালেট চিনতে পারেনি। অগ্নির দিকে তাকিয়ে বললাম, “বিশ হাজার টাকা দ্রুত বের করুন।”
“কীসের?” ভ্রু কুঁচকে অগ্নি।
“সেদিন অভ্র স্যারের ওয়ালেট মে/রে দেওয়ার পর আপনি বিশ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। আমি জানতাম, আপনি অভ্র স্যার তাই দিয়েছিলাম। এখন আর দিবো না। ফিরত দি… বাক্য শেষ হওয়ার পূর্বে অগ্নি ছুটে এলো নিকটে। মুখ চেপে ধরল। কানে কানে বললেন, “হিস, অভ্র এখানে। সব জানতে পারলে, তোমার থেকেও বিশ হাজার নিবে। তারচেয়ে চুপ করে থাকো।”
“কীসের ওয়ালেট?” অভ্র স্যার বললেন।
“আমার ওয়ালেট, তোর ওয়ালেট, মোমের ওয়ালেট। তুই ঊষা আর উদিতার কাছে যা। মেয়েরা কেঁদে কেঁদে ভাসিয়ে ফেলেছে বাবাইয়ের জন্য। দ্রুত যা।” অগ্নি বলল। সেকেন্ড খানেক সময় আমাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে থেকে অভ্র স্যার নিজ কক্ষের দিকে পা বাড়ালেন। দৃষ্টি আড়াল হতেই অগ্নিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বললাম, “এবার টাকা দিন।”
“ভাইয়াকে বলব?”
“না!” একরোখা জবাব। কাঁচুমাচু মুখ করে বসে রইলাম সোফায়।
অগ্নি টিভি বন্ধ করে সোফায় আমার মুখোমুখি বসলেন। বললেন, “এমন কী হয়েছে, যে তোমাকে বাড়িতে নিয়ে এলো?”
অতঃপর ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো অগ্নির কাছে বলতে শুরু করলাম। অগ্নির সাথে আমার বেশ ভাব জমে উঠল।
_
নিচতলায় একটা ঘরে আমি আর কিট্টি শুয়েছি। কিট্টি আমার খরগোশের নাম।
মাঝরাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটল। উঠে বসলাম। আলো জ্বালিয়ে দিলাম। রাতে খাওয়ার জন্য কিনে রাখা পুরি কোথায় জানা নেই। গাড়ির ভেতরে না-কি ফেলে দিয়েছে? কিট্টি কিছু খায়নি। ওকে কিছু খেতে দেওয়া উচিত। বিছানা ছেড়ে নামলাম। সম্পন্ন বাড়ির আলো নেভানো। বাটন ফোনের আলো জ্বালিয়ে রান্নাঘরে গেলাম। খরগোশটা পায়ের কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। ফ্রিজ খুলে টাটকা টাটকা সবজি দেখতে পেলাম। তার থেকে একটা গাজর নিয়ে কিট্টিকে খেতে দিলাম। কিট্টি গাজর নিয়ে দিল ঘরে দৌড়। ফ্রিজের দরজা বন্ধ করতে গিয়ে কৌতুক বশত খুঁজে দেখি কী কী আছে? একটা আইসক্রিমের বাটি নজরবন্দি হলো। অবিলম্বে হাতে নিলাম। উদিতা বা ঊষার হবে। রান্নাঘরের মেঝেতে বসলাম আয়েস করে। আইসক্রিমের একটু অংশ মুখে দিতেই শুনতে পেলাম বাচ্চা গলা। মেয়েটি আঙুল তুলে বলছে, “এই মেয়ে, কে তুমি? আমার আইসক্রিম খাচ্ছো কেন?”
আইসক্রিমের বাটিটা হাত থেকে ছিটকে পড়ল। ক্ষুধার জ্বালায় চু/রি করতে এসে ধরা খেলাম। ‘ছলছল নয়নে, হাসিমাখা বদনে’ অনুভূতি নিয়ে সমুখে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল। ‘পেঁ পুঁ’ জুতা বাচ্চাটির পরনে, কোলে একটা টেডি বিয়ার, মাথায় চর্ট লাইট জ্বালানো। ধীরে ধীরে বাচ্চাটির মুখশ্রী দৃশ্যমান হলো। এইতো উদিতা। পুনরায় উদিতা বলে উঠল, “কী হলো? কথা বলছো না কেন? না বলে অন্যের কিছু খাওয়া মানে চু/রি করা। চুরি করা পঁচা কাজ, তুমি জানো না? আমি ছোটো মানুষ জানি, তুমি জানো না?”
অভ্র স্যার বলেছিলেন উদিতা বোবা, কথা বলতে পারে না। তাহলে আমার সাথে কথা বলছে কে? আইসক্রিমের বাটিটাও ভয়ে হাত ফসকে গেছে আরও আগে।বাচ্চা উদিতা আমার দিকে এগিয়ে আসছে। দুহাত জোর করে বললাম, “আমার ভুল হয়েছে ভুত উদিতা। আমি আর কখনো চু/রি করবো না। তোমার আইসক্রিম খাবো না, তোমার বাবার পকেট মা/র/ব না। আমার ঘাড় মটকে দিও না।”
উদিতা তবুও এগিয়ে আসছে। ভূতের ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম। মিশে গেলাম মাটিতে। পুরুষালি কণ্ঠস্বর শ্রবণ হলো, “ঊষা, এই ঊষা। কোথায় গেলি?”
শত চেষ্টা করেও চোখ মেলতে পারলাম না। জ্ঞান ফেরার পরে এই বাড়ি থেকে চলে যেতে হবে। ভুতের বাড়িতে আমি থাকব না।
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]
রেসপন্স করার অনুরোধ রইল।
হঠাৎ করে একটু ব্যস্ত হওয়ার কারণে দিতে বিলম্ব হয়েছে। আজকের পর্বটা ছোটো হয়েছে, মানিয়ে নিয়েন।