মিঠা রোদ পর্ব ৫০

0
2070

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৫০
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“আপনার কী খুব ব্যাথা করছে?য’ন্ত্র’ণা লাগছে?ডক্টরকে ডাকবো?”

তোশা ব্যস্ত হয়ে কবীরকে প্রশ্নগুলো একের পর এক করে যাচ্ছে।অন্যদিকে মানুষটি ধীর, শান্ত মেজাজে এক মনে পাশে দাঁড়ানো যুবতীর উৎকণ্ঠা মেপে নিচ্ছে।সে কী ভেবেছিল ছোট্ট ফোলা ফোলা গালের মেয়েটিকে সে ভালোবাসবে?বরং খুব বেশীই ভালোবাসা তৈরী হবে?যে তার দুঃখে দুঃখিত হবে।াতার ব্যাথার চোটে যার মুখবিবর নীল আভা ধারণ করবে।

“আমার য’ন্ত্র’ণা করছে সেটা কীভাবে জানলে তুমি?”

“চোখের ভাষায়।”

“কীরকম বেলাডোনা?আমার চোখ কী বলছে?”

“বলছে আপনি কষ্ট পাচ্ছেন।ক্ষ’ত জায়গায় ব্যাথা করছে।”

কবীর হেসে ফেললো।এই সময় শঙ্খের মতোন শুভ্র দাঁতটা দৃশ্যমান হলো।হসপিটালের আকাশী রঙের পোশাকে কালো কবীরকে মানাচ্ছে না।বড্ড পানসে লাগছে দেখতে।

“ইয়াং ওমেন।ক্ষ’ত একজনের হয় ব্যাথা আরেকজনে পায়।তোমার -আমার তাহলে দুই প্রাণ এক শরীর।”

বিদ্রুপে তোশার মন খারাপ হয়।সে তো শুধু চিন্তা করছে মানুষটিকে নিয়ে।এই চিন্তা কী দোষের?এখনও মায়ান ফিরেনি।কবীরকে দেখতে বার কয়েক নার্স এসেছিল।সব বলে ঠিক আছে কিন্তু বারবার মানুষটি সিলিঙ ফ্যানের দিকে তাঁকিয়ে নির্জীব হয়ে যাচ্ছে।তোশা পাশে বসে কবীরের চুলের গভীরে আঙুলের সাহায্য স্পর্শ করলো।অন্য হাতটি বুকে রেখে বলল,

“বাচ্চামো বলুন কিংবা অল্প বয়সী উত্তেজনা কবীর শাহ।আমি ভীষণ চিন্তিত আপনাকে নিয়ে।যে কারণটি বললেন অসুস্থ হওয়ার তাতে ভয় আরো বেড়ে গেলো।লোকটি যদি ধরা না পড়ে?”

“পড়বে আমি বেঁচে না থাকলে হয়তো বেঁচে যেতো।মায়ান কিছু সন্দেহ করছে তোশা।”

তোশা চমকে উঠলো।সোজা হয়ে বসে বলল,

“কী দেখে?”

“ওর কথার মাধ্যমে বোঝা গেলো।তবে ভয় পাওয়ার কারণ নেই।এমনিও তো আমরা কালকে সকলকে জানানোর ইচ্ছায় ছিলাম।বিষয়টি এখন যা পিছিয়ে গেলো।”

“হুঁ।”

“মন খারাপ করলে এরকম অসুস্থতায়?”

“আপনার এখানে কোনো হাত নেই।”

দরজার বাহিরে মায়ানের কণ্ঠ শুনে তোশা দূরে সরে গেলো।তখুনি তার বাবা ভেতরে প্রবেশ করলো।মেয়েকে দেখে একটু অবাক হলো সে।

“তোশা তুমি একা কেন?”

“আমাকে দেখতে এসেছিল তাহিয়া।ওকে রেখে গিয়েছে।তোর সঙ্গে বাড়ী ফিরবে তাই।”

মায়ানকে তবুও সন্তুষ্ট হতে দেখা গেলো না।সে কবীরের সঙ্গে টুকটাক কথা বলে তোশাকে নিয়ে চলে গেলো।শূন্য রুমে এবার কবীরের মুখের রঙ বিবর্ণ হতে দেখা গেলো।বুকে খুব বেশী ব্যাথা করছে তার।চট জলদি নার্সকে ডেকে নিলো।সে সত্যিই খুব কষ্টে ছিল এতোক্ষণ।কিন্তু চায়না তোশা আরো কষ্ট পাক।

কবীরের মাথায় আরো একটি বিষয় উত্থিত হচ্ছে।যদি কাল সে ম’রে যেতো কিংবা গুলিটা ঠিক হৃদপিন্ড বরাবর এসে আ’ঘা’ত করতো তাহলে তোশা নিজেকে কীভাবে সামলে নিতো?দীর্ঘ এক জীবনে সব থেকে বড় কষ্ট তবে এটাই হতো মেয়েটির জন্য।কবীর যেহেতু জীবনের অনেকটা সময় অতিবাহিত করে এসেছে তাই তার কাছে এখন সূর্যাস্তের সময়টা বাকী আছে।সেখানে তোশার জীবনে কেবল উজ্জ্বল সকাল।এরমধ্যে নিজের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া সবথেকে স্বার্থপরের মতোন কাজ হবে।একটা আ’ঘা’তে কবীরের মন পরিবর্তন হচ্ছে।কিন্তু পরক্ষণে ভাবছে তোশাকে সুন্দর একটি সংসারের স্বপ্ন দেখিয়েছে সে একটু আগেও।সেই ওয়াদার কী হবে?কবীরের নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।ডক্টর দেখে ইঞ্জেকশন দিয়ে গেলো।শরীরের ব্যাথা কমে এলেও মনের ভেতর বয়ে যাওয়া আশংকার তীব্র ঝড় কমেনা।

(***)

মায়ানের বাড়ী তোশার নিজের হলেও ততোটা আপন মনে হয়না।কাল অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল।কিন্তু এখানে এসে শুনতে পেলো কবীরের অসুস্থতায় তা হচ্ছে না।এক সপ্তাহ পিছিয়ে যাচ্ছে।

“তোমাকে খুব ক্লান্ত লাগছে তোশা।শরবত করে এনে দেই?খাবে?”

টিনাকে আন্তরিকতার সাথে না করে দেয় তোশা।মানুষটা তার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী।এই কারণে কিছুটা এড়িয়ে চলে।বিষয়টি বুঝতে সমস্যা হয়না টিনার।সে হেসে বলে,

“আমাকে অপছন্দ করো তুমি তাইনা?”

“সেরকম নয়।আপনি ভুল ভাবছেন আন্টি।”

“তোমার মায়ের সাথে একদিন আলাপ করিয়ে দিবে?কথা বলার ইচ্ছে ছিল।”

“কেন?”

“এমনি।আলাপ করার ইচ্ছেটা।”

তোশা বার কয়েক চোখের পলক ফেললো।কিছু মানুষের অহেতুক কৌতুহল তার পছন্দ নয়।শক্ত কণ্ঠে বলল,

“আমার মা আপনার সাথে কথা বলার জন্য কম্ফোর্টেবল বোধ করবে না।সেক্ষেত্রে আলাপ না হওয়া ভালো।”

“শুনো দ্বিতীয় স্ত্রী যে হয় সে খারাপ হবে এমন কথা নেই।কখনো তাহিয়াকে নিজের কম্পিটিটর রুপে দেখিনি।”

“কারণ সে আপনার সাথে কম্পিটিশনে নামেনি।আমার বাবাও কোনো সুসজ্জিত ট্রফি নয়।”

ড্রয়িং রুম থেকে উঠে নিজের ঘরের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো তোশা।টিনা বার দুয়েক ডাকলো।কিন্তু সে উত্তর করলো না।ঘরে ঢুকে দরজাটি ভালো করে বন্ধ করে দিলো।হেলেদুলে ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে দিলো।শব্দ করে চিকন ধারায় পানি ঝড়ছে।সঙ্গে বাড়ছে কান্নার বেগ।এক সময় মেঝেতে বসে আর্তনাদ করে উঠলো সে।কালো কেশগুচ্ছ পানির ছোঁয়ায় উজ্জ্বলিত হচ্ছে।ফর্সা মুখটা মুহুর্তে লাল হয়ে উঠলো।তোশার মনে অনেক দুঃখ।কিন্তু সেটা কেউ বুঝেনা।বি’ষ’ধ’র সাপের মতোন রোজকার জীবনে অনেকগুলো চিন্তা রোজ দ’ং’শ’ন করে চলেছে।কবীরের কিছু হলে সে কী করতো?মনে নানা ভয় উঠে।সেগুলোকে কান্নার সাথে গিলে নেয়।অনেকটাক্ষণ শাওয়ারের নিচে বসে কান্না করলো তোশা।মাঝে কেউ খোঁজের জন্যও এলো না।অথচ মায়ের বাসা হলে এতোক্ষণে দরজা ভে’ঙে ফেলতো তাহিয়া।মা তার ভীষণ ভালো একজন মানুষ।তাকে কীভাবে নিজের ভালোবাসার কথা জানাবে?কিন্তু তোশাও সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে।কাপড় বদলে রুমে এসে সে উল্লাসের নাম্বারে ডায়াল করলো।

“উল্লাস!আমি আজকে নিজের শটটা আজকে দিতে চাচ্ছি।”

উল্লাস কিছুসময় নীরব থেকে বলল,

“তুই অনেক কষ্ট পেয়েছিস তোশা।ভয় নেই কবীর শাহ ঠিক আছে।হসপিটালে এতোক্ষণ ছিলাম আমি।”

“উহু,আমি দিবো।এক সপ্তাহের মধ্যে টেলিকাস্ট করতে বলবি।”

“বলবো।কিন্তু…।”

“উল্লাস কবীর শাহ জীবনের অনেকগুলো দিন অতিবাহিত করে ফেলেছে।আমি একা থাকতে চাচ্ছি না আর।”

“তাকে অনেক ভালোবাসিস তাইনা?”

“হ্যাঁ।”

এলেমেলো উল্লাস বেদনায় হাসে।বিনা শব্দে ফোন কেঁটে দেয়।ভালোবাসা কী অদ্ভূত জিনিস।তার মা ভালোবাসলো সে ডুবলো,তোশা ভালোবাসলো সে-ও ডুবলো।চারিধারে যারা ভালোবাসে তারা ডুবে যায় কষ্টের অতল সাগরে।এলেমেলো উল্লাস তাইতো ভালোবাসবে না।কখনো না।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here