#গল্পকথারা
ওয়েডিং প্ল্যানার
8
এনগেইজমেন্টের দিন সকাল থেকে ঈশান নীতিকে বলে যেতে লাগলো কিভাবে তাকে চলতে হবে ! কিভাবে অতিথি অভ্যাগতদের সাথে কথা বলতে হবে ! কিভাবে ড্রিংক নিতে হবে ! এটা বলতেই নীতি অসহায় ভাবে বললো
‘ ‘ আমি ড্রিংক করিনা ! ‘ ‘
ঈশান চিন্তায় পড়ে গেল । ড্রিংক করাটা যে তাদের সোসাইটির স্ট্যাটাস । তখন অদ্যুত এগিয়ে এসে নীতিকে বললো
‘ ‘ ম্যাম আপনি ড্রিংকের গ্লাসটা হাতে নেবেন , আমি পিছন থেকে এসে আপনার গ্লাস বদলে আপনার হাতে জলের গ্লাস তুলে দেবো । আপনি সেটাতেই চুমুক দেবেন , কেউ কিচ্ছু বুঝতে পারবে না । ‘ ‘
তাই করা হলো । বিকেলে দামী ভারী ড্রেস পরে সাথে হাই হিল জুতো পরে , হেভি মেকআপ করে প্রায় পা চেপে চেপে চলে ভয়ে ভয়ে নীতি পার্টি হলে এলো । পার্টি হলে এতো লোকজন দেখে সে আরো ভয় পেয়ে গেল । ঈশান তার হাত ধরে গেস্টদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিল । এমন ভারী ড্রেস আর হাই হিল জুতো পরে নীতির স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা করতে খুব অসুবিধা হচ্ছিল । জুতোয় তার পায়ে ফোসকাও পড়ে গেছে । সে প্রায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছিল । কিন্তু ইশানের সেদিকে লক্ষ্য নেই । সে তখন অতিথিদের নিয়ে ব্যস্ত । বৈভব একটু দূরে দাঁড়িয়ে নীতিকে দেখছিল । তার কেন জানিনা এই প্রথম তার প্রাক্তন স্ত্রীর ওপরে করুণা হলো । তার সাথে বিয়ের পরে যেই আঠাশ দিন নীতি ছিল হীরের আংটি নিয়ে সমস্যাটা ছাড়া তাকে এরকম অসহায় অবস্থা সহ্য করতে হয়নি অন্ততঃ ।
একসময় নীতিকে অন্য গেস্টদের সাথে হাতে ড্রিংকের গ্লাস নিতে হলো । সে গ্লাস নিয়ে এদিকে ওদিকে তাকাতেই ঈশানের সেক্রেটারী অদ্যুত এসে তার পিছনে দাঁড়ালো । নীতি তার গ্লাস শুদ্ধ হাত পিছনে করে দিতে অদ্যুত তার হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে তার বদলে জল ভর্তি গ্লাস তার হাতে দিলো । এইভাবে যতবার নীতি ড্রিংকের গ্লাস হাতে নিলো ততবার অদ্যুত তার গ্লাস বদলে দিলো । এইসব দেখে বৈভবের এক সময় রাগ হলো এই ভেবে এইসব কেন মানছে আর করছে নীতি !
একসময় নীতি দেখলো ঈশান এতো ড্রিংক করেছে যে ঠিকমতো দাঁড়াতেই পারছে না । নীতির তখন খুব অস্বস্তিকর লাগছিল ওই পরিবেশে । তার যেন দম বন্ধ হয়ে আসছিল । কি কৃত্রিম তার চারপাশের সবকিছু ! নিজেকে ফ্রেশ করতে নীতি বাথরুমে গিয়ে তার চোখে মুখে জল ছিটিয়ে দিয়ে বাইরের লনে খোলা হাওয়ায় এসে তার হাই হিল জুতো জোড়া খুলে খালি পায়ে লনের ঘাসের উপড়ে দাঁড়ালো । তার একটু আরাম বোধ হলো ।
এমন সময় অদ্যুত সেখানে এসে বললো
‘ ‘ ম্যাম স্যার আপনাকে ডাকছেন ! ডেট অ্যানাউন্স হবে ….. একি ম্যাম ! আপনার মেকআপ যে ঘেঁটে গেছে ! আপনাকে স্টেজে উঠতে হবে যে এখন ! ‘ ‘
অদ্যুত বলতেই নীতি বোকার মতো তাকিয়ে রইলো তাকে দেখে । অদ্যুত মাথা নীচু করে দেখলো নীতির খালি পা আর তার পা দুখানি ফোসকা পড়ে দগদগ করছে । অদ্যুত ব্যস্ত হয়ে বললো
‘ ‘ ম্যাম আপনি এখানেই থাকুন আমি ব্যান্ড এইড নিয়ে আসছি ! ‘ ‘ কিন্তু অদ্যুতকে আর যেতে হলোনা ।
তার আগেই টলোমলো পায়ে ঈশান এসে নীতিকে দেখে বললো
‘ ‘ একি ! মেকআপ কি হলো ! আর জুতো খুলেছ কেন ? পরো তাড়াতাড়ি জুতো পরো । গেস্টরা দেখে কি বলবে ! অদ্যুত তাড়াতাড়ি মেকআপ আর্টিস্টকে ডাকো ! ‘ ‘
নীতি দেখলো ঈশান তার পায়ের ফোসকা দেখলো না । তাকে জিজ্ঞেস পর্যন্ত করলো না সে এখানে লনে কি করছে ! তার তখন সব চিন্তা গেস্টদের নিয়ে , নিজের নাম , সম্মান আর প্রতিপত্তি নিয়ে । যেগুলোর সাথে মানিয়ে নিতে নিতে নীতি এর মধ্যেই ক্লান্তি বোধ করছে । তুষার সেখান থেকে যেতে গেলে নীতি তাকে থামিয়ে দিয়ে ঈশানকে বললো
‘ ‘ গেস্টরা কি বলবে বলছিলে না ! গেস্টদের গিয়ে বলে দাও এই বিয়ে হবেনা । ‘ ‘
সেখানে তখন বাজ পড়লেও এতো চমকাতো না যতো নীতির কথা শুনে চমকে উঠলো ঈশান আর অদ্যুত । ঈশান তখন নিজের নাম আর সম্মান বাঁচাতে নীতির প্রায় পায়ে পড়ে বললো
‘ ‘ আমি যদি কিছু ভুল করে থাকি বা ভুল বলে থাকি ক্ষমা করে দাও প্লিজ এখন চলো আমার সাথে । অতিথিরা সব অপেক্ষা করছে । আজকের পার্টির উপড়ে আমার অনেক বিজনেস ডিল নির্ভর করছে মেখলা । তোমাকে মেকআপ করতে হবেনা ! এইভাবেই চলো । ‘ ‘
নীতি স্থির স্বরে ঈশানকে বললো
‘ ‘ তোমার হীরার বিজনেসের যাতে ক্ষতি না হয় তার জন্যে আমাকে কি করতে হবে বলো আমি তোমাকে সাহায্য করবো কিন্তু তোমাকে আর বিয়ে করতে পারবো না । কারণ বিয়েটা আমার কাছে কোনো বিজনেস ডিল নয় । আমি তোমার সাথে আমার একান্ত ব্যক্তিগত মুহুর্তগুলো কাটাতে চেয়েছিলাম কিন্তু ভুলে গেছিলাম তোমার জীবনটা প্রাইভেট নয় , পাবলিক নির্ভর । আমি তোমার জীবনে একদম বেমানান । পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও । ‘ ‘
নীতি আর কিছু বললো না আর সেখানে অপেক্ষা না করে খালি পায়েই হোটেল থেকে বেরিয়ে গেল ।
গেটের বাইরে আসতে নীতি বৈভবকে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো । বৈভব নীতিকে দেখেই বললো
‘ ‘ আমাকে ঈশান পাঠিয়েছে ! ‘ ‘
‘ ‘ কেন ! ‘ ‘
‘ ‘ তোমাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ওর সাথে বিয়ে করার জন্যে রাজী করাবার জন্যে । ‘ ‘
‘ ‘ এটাও তোমার ওয়েডিং প্ল্যানারের কাজের মধ্যে পড়ে নাকি ! ‘ ‘ নীতি একটু কটাক্ষ করে জিজ্ঞেস করতে বৈভব ধীরে ধীরে বললো
‘ ‘ না ! ঈশান জানে যে আমি তোমার এক্স হাসবেন্ড ! আমিই ওকে সব বলে দিয়েছি । তাই ও আমার ওপরে আশা করছে আমি তোমাকে ওর সাথে বিয়ের জন্যে রাজী করাতে পারবো । ‘ ‘
নীতি এবারে অবাক চোখে বৈভবকে দেখলো ।
চলবে …….
#Bengali #ebook #ebooks #kobo #payhipbooks #Amazon #Amazonkindle #story #storybook #storybooks #book #books #facebook #Instagram #bengalistory #bookstagram #romantic #romance #Love #romanticstory #lovestory #fictionbooks #ebookstagram #booklover #ebooklover #digitalbook #instabook #bengalibook #bengalibooks #bengalistorybook #bookpic #ebooksale #golpokothaara
……………