মিঠা রোদ পর্ব ৪৮

0
1579

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৪৮
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“সহস্র কোটি বছরের দূরত্ব তোমার-আমার লিটল চেরী।আমাদের ভালোবাসাকে তুমি কীভাবে সঙ্গায়িত করবে?যেখানে বয়স,সম্পর্কের অসীম মতভেদ?”

“জীবনে সবথেকে অদ্ভূত বিষয় কী কবীর শাহ?বাবার বন্ধুকে প্রেমিক বানানো,বয়সের দ্বিগুণ পুরুষকে প্রেম নিবেদন?নাকী একজনকে ভালোবাসা, সম্পর্কের দোহায় দিয়ে ঠকানো?যা অন্যরা করে।অথবা সমবয়সী বিয়ে গুলো ভেঙে যাওয়া?আমার মা-বাবার মধ্যে কতো প্রেম ছিল একসময় সেটা আপনি দেখেছেন।আজ তারা দুই মেরুর মানুষ।সেখানে ভালোবাসা শব্দটা আমি ব্যবহার করলেও ভীষণ মেকি লাগে কথাটিকে।বস্ততপক্ষে ভালোবাসা ত্যাগ শিখায়।আমি পারবো না ত্যাগ করতে।”

“কথায় আছে যে ভালোবাসায় পূর্ণতা নেই তাতে খাদও নেই।আমি কিন্তু কথাটির সাথে সহমত নই তোশামণি।তুমি?”

তিমিরে দৃষ্টি রেখে একমনে দেখছে তোশা।মৃদুমন্দ বাতাস বইছে।যুবতীর কাঁধে ঝুলতে থাকা একগুচ্ছ চুলকে দুলিয়ে দিচ্ছে বাতাস।আনমনে সে দেয়ালটিতে মাথাটি ঠেকিয়ে আছে।ধারণা করা যায় সে মোহমায়া এবং ইহজাগতিক সব বিষয় থেকে উর্ধে কিছু একটা ভাবছে।কবীরের গাঢ় শিকারী দৃষ্টি মেয়েটির মুখে আলোকছটা খুঁজে চলেছে।

” চাওয়া থেকে পাওয়া না হলো তা কীসের মায়া কবীর শাহ।মায়া তো সকলকে করা যায়।কিন্তু কাছে পাওয়ার মায়া কয়জনকে করা যায়?”

“তুমি ভীষণ বড় বড় কথা বলছো তোশামণি।যেটা এক কালে ছিলনা।”

তোশা হেসে বলল,

“খেয়াল করুন আমি একুশে পা দিতে চলেছি।”

“আর আমি একচল্লিশে।”

বাক্যের শেষটিতে কবীরের অন্ত:করণ হতে দীর্ঘ এক শ্বাস বের হয়ে এলো।কী দারুণ য’ন্ত্র’ণা কথাটিতে।তোশার কান্না পায়।আরো সন্নিকটে যায় কবীরের।বাহিরে থেকে হৈচৈ এর শব্দ শোনা যাচ্ছে।আসিফ মানুষটা এমন যখুনি পার্টির আয়োজন করে তখন হৈ-হুল্লোড় থাকবেই।

“আমরা একসাথে অনেক বছর বাঁচবো কবীর শাহ।হোক না দুজনের আলাপ স্বল্প সময়ের।তাছাড়া আপনি এখনও যা ফিট। দেখবেন আহনাফের ছেলের বিয়ে দেখে যেতে পারবেন।আর আমাদের মেয়ের মেয়ের বিয়েও।”

“তাই?তুমি কীভাবে জানলে আমাদের মেয়ে হবে?”

“জানি জানি।আচ্ছা বলেন তো এতো বয়সে আপনার চুলগুলো কীভাবে কালো থেকে গিয়েছে।গোপন রহস্যটি বলুন। ”

“হেয়ার ট্রিটমেন্ট করাচ্ছি নিয়মিত।”

“এর মানে আপনিও নিজেকে গ্রুমিং করান। বাহ এজন্য তো বলি দেখতে নায়কের থেকে কম না।উল্লাস তো বলে চল তোকে আর তোর প্রেমিককে দিয়ে রহিম -রুপবান সিনেমা নতুন করে তৈরী করি।কিন্তু আমি চিনিনা এরা কারা।আপনি বলুন না কারা?”

“একটা মিথ আছে রুপবান নামক বারো বছরের বালিকার সাথে বারো দিনের বয়সী রাজপুত্র রহিমের বিয়ে হয়।এরপর বনবাসে পাঠানো হয় তাদের।নানা সময় অতিক্রমের পরে দুজনে বড় হয়।কিন্তু রহিম শেষে রুপবান বয়সে বড় হওয়ায় বিয়েটা মেনে নিতে পারেনা। মাঝে কিছু একটা হয় রুপবান যৌবন ফিরে পায়।এটা নিয়ে বহু বাংলা সিনেমা আছে।”

“আমরা কী ওরকম?আর বলবেন না যে একটা মিরাকেল হবে আর আপনি যৌবন ফিরে পাবেন।”

“সম্ভব নয়।এই কারণে তো নিজেকে গ্রুমিং করি।আমি কখনো চাইনা কেউ আমাদের দেখে বলুক ছি:মেয়েটা বেশী বয়সের লোককে বিয়ে করেছে।”

“যা সকলে আপনি না বললেও করবে।দেখুন না আপনার সঙ্গে তেমন কোনো সম্পর্ক না থাকার পরেও সুগার গার্ল বলে।এটা মানুষের স্বভাব।”

তোশার বড় মানুষের মতোন কথাবার্তা কবীরকে অবাক করে।সেই ছোট্ট কন্যাটি আজ কতোকিছু বুঝতে সক্ষম হয়েছে।মেয়েটির মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

“আমি ছোট্ট,মাসুম এবং আহ্লাদী এক তোশাকে ভালোবেসেছি।তোমার বড় হতে হবেনা।শুধু নিজেকে সব ঝড়ের থেকে সামলে রেখো। কবীর শাহ নামক বিশাল বাজপাখি তোমাকে ছায়া দিবে সবসময়।”

(***)

“রাস্তাঘাটে রোজ তো কতো মানুষ ম’র’ছে কবীর শাহ।দেখবেন কোনো একসময় মৃ’তের তালিকায় আপনার নাম না উঠে যায়।”

ছোটখাটো হু’ম’কি স্বরুপ চিঠি এসেছে।কবীর তোয়াক্কা করলো না তা।কাগজটিকে দুমড়ে মুচড়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিলো।তার জীবনে বড় হওয়ার গল্পে এরকম বহু চিঠি এসেছে।পাশ কাঁটিয়ে সে এগিয়ে গিয়েছে।

“স্যার, আপনার জুয়েলারিটা ডেলিভারি দিয়ে গিয়েছে।আপনি কী দেখবেন?”

“সিওর।”

এসিসট্যান্ট মেয়েটি একটা ব্যাগ কবীরের দিকে এগিয়ে দিলো।সেখান থেকে একটা বক্স বের করে নিলো।তাতে দামী একটি চুড়ি রাখা।যার গাঁয়ে ডায়মন্ড বসানো।এই বহুমূল্য জিনিসটি সে ক্রয় করেছে তোশার জন্য।যেদিন তাদের মিলনের রাত হবে সেদিন প্রেম নিবেদন করে মেয়েটির হাতে পরিয়ে দিবে।

“থ্যাংক ইউ ইয়ামিনা।তুমি আসতে পারো।”

“স্যার এটা কোনো স্পেশাল মানুষের জন্য?”

“জি তোমাদের ম্যামের জন্য।”

তোশাকে নিজ জীবন সঙ্গীনি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়াতে আলাদা প্রশান্তি পেলো কবীর।মিষ্টি হেসে হাতের জিনিসটা পকেটে ভরে বের হয়ে গেলো।তার প্ল্যান খুব সাদাসিধা।দুদিন পর মায়ানের বাড়ীতে অনুষ্ঠান।সেদিন সবার সামনে তোশাকে চাইবে সে।সাধারণ বিষয় অনেক কান্ড ঘটবে।কিন্তু কবীর জানে তাহিয়া রাজি হলে অন্য কারো অভিমত কী দরকার?কবীর অফিস বিল্ডিং এর নিচে আসার সঙ্গে সঙ্গে জোরে একটা ফায়ারিং এর আওয়াজ হলো।প্রচন্ড ধাক্কায় বিশাল দেহটি নিচে পড়ে গেলো।আশেপাশে কোথা থেকে শ্যু’ট করা হয়েছে সেটি বুঝা গেলো না।হট্টগোল শুরু হলো মুহূর্তের মধ্যে।ফিনকি দিয়ে র’ক্ত মুহুর্তে ভূমিকে রঙিন করে তুললো।

(***)

তোশা হাত ভর্তি করে ব্রাইডাল মেহেদী দিচ্ছে।তার দাদী একটু পর পর উঁকি দিয়ে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করছে।অদ্ভূত বিষয়।দুদিন পর তাদের বাড়ীতে অনুষ্ঠান তাই বলে কী এভাবে মেহেদী দিতে হবে?তোশার অণুকরণ করে অন্যসব মেয়েরাও বায়নায় মেতেছে।

“তুমি এতো গর্জিয়াস মেহেদী কেন দিচ্ছো তোশা আপু?মনে হচ্ছে বিয়ে হয়ে যাবে।”

“হতেও পারে।কিন্তু তোমরা সবাই কেন দিবে?”

“দেখাদেখি।এক মিনিট দাঁড়াও কার নাম লিখেছো দেখি?”

“তুমি বুঝবে না।”

তোশা আগে থেকে আর্টিস্টকে কৌশলে শাহ লিখতে বলেছিল।এটা যদিও কেউ বুঝবে না তবুও সে কাওকে দেখাতে নারাজ।তারা সকলে বারান্দার কাছটায় বসে ছিল।হুট করে গেইটের সামনে একটি গাড়ী থামলো।তোশা চিনে গাড়ীটাকে।মিনিট খানেক বাদে তাহিয়া হন্তদন্ত বাড়ীর দিকে ছুঁটছে।মানুষটার ফর্সা মুখটা রক্তিম হয়ে আছে।তোশা দুহাত ভর্তি মেহেদী নিয়ে মায়ের উদ্দেশ্যে ছুঁটলো।

“আম্মু,তুমি এখানে?কী হয়েছে?”

“তোমাকে নিতে এলাম তোশামণি।হসপিটালে যেতে হবে।”

“নানার কিছু হয়েছে?”

“নাহ কবীরের।ওকে কেউ শ্যু’ট করেছে।তুমি এতো মেহেদী কেন দিয়েছো হাতে?ধু্ঁয়ে এসো।”

তোশা নিস্তেত কণ্ঠে শুধালো,

“তিনি কেমন আছেন মা?”

“আইসিইউতে।তুমি ধুঁয়ে জলদি এসো।”

তোশা নির্বিকার হয়ে দুহাত ভর্তি মেহেদী নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।অদ্ভূতভাবে ভেতর থেকে সে কাঁপছে।ভয় লাগছে।বুক ফেঁটে কান্না আসছে।মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে।মানুষটা কী শেষ হয়ে যাবে?এই আশংকায় বুকের হৃদস্পন্দন বাড়ছে।আশ্চর্য এরকমভাবে কাঁদলে সে কৈফিয়ত দিবে কী?কবীর শাহ এর কী হয় তাইয়ুবা চৌধুরী তোশা?

চলবে।

এডিট ছাড়া পর্ব।সকলে রেসপন্স করবেন ভালো।এতে নিয়মিত হওয়ার তাড়া থাকে আমার।আপনারা ঝিমিয়ে পড়লে আমারও তেমন মনে হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here