#হৃদয়_মাঝারে_২
#পার্ট_২
#হালিমা_চৌধুরী
ঘড়ির কাটা সন্ধ্যা ৬ টা ছুইছুই। ফারিহা একমনে বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে। এখনো তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো ভাবছে ফারিহা। হঠাৎ করে ফারিহার ফোন ভেঁজে উঠে। চরম বিরক্তি নিয়ে বেলকনি থেকে রুমে আসে ফারিহা। রুমে আসতে আসতে কল কেটে যায়। কললিষ্টে গিয়ে দেখে একটা আননোন নাম্বার থেকে ফোন এসেছে। নাম্বার টা চেনা নয় তাই আর কল ব্যাক করার প্রয়োজন মনে করলো না ফারিহা। ফোনটা হাতে নিয়েই আবার বেলকনিতে চলে এসেছে ফারিহা। ফোন হাতে নিয়ে দেখে সেই নাম্বার থেকে একটা ম্যাসেজ এসেছে।
‘প্রেয়সী, খোলা চুলে তোমাকে একদম পরীর মত লাগছে। আর এত ভেবে লাভ নেই, তুমি আমাকে খুজে পাবে না যতক্ষণ না আমি তোমাকে আমার পরিচয় টা নিজে না দিই।’
ম্যাসেজ টা দেখে হতভম্ব হয়ে যায় ফারিহা। তাড়াতাড়ি করে বেলকনি থেকে চলে আসে ফারিহা। ম্যাসেজ টা দেখে ফারিহা বুঝে গেছে যে কেউ তাকে দেখেছে নিচ থেকে নয়তো অন্য কোনো জায়গা থেকে। ফোন টা নিয়েই পিয়াসের রুমের উদ্দেশ্য রওনা দেয় ফারিহা। পুরো রুম তন্নতন্ন করে খুজেও পিয়াস কে পায় না ফারিহা। হতাশ হয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই চোখ যায় জানালার পাশে পর্দার দিকে। পর্দার আড়ালে কারো ছায়া মানব দেখা যাচ্ছে। তা দেখে ফারিহা ভয়ে একদম গুঁটিয়ে যায়। তাড়াতাড়ি করে রুম থেকে বের হতে নিতেই বেডের সাথে ধাক্কা খায় ফারিহা। ব্যাথায় কুকিয়ে উঠে ফারিহা। ফারিহার আর্তনাদ শুনে পর্দার আড়াল হতে ছায়া মানব টি বেরিয়ে আসে। পিয়াস রুমের লাইট অন করতেই দেখে ফ্লোরে বসে আছে ফারিহা।
‘এই ফারু কি হয়েছে তোর?’
পিয়াসের কথা শুনে ফারিহা নিজের পা থেকে চোখ সরিয়ে ওর দিকে তাকায়। নিজের সামনে পিয়াস কে দেখে রাগে অভিমানে ফারিহা কেদে দেয়।
‘আরে কাঁদছিস কেনো ফারু? কি হয়েছে বলবি তো!’
‘হারামি জিঙ্গেস করছিস কি হয়েছে? এতক্ষন পর্দার পিছনে লুকিয়ে কার সাথে কথা বলেছিস? পর্দার পিছনে তোর ছায়া দেখে আমি ভেবেছি ভূ..ভূত আছে!’
ফারিহার কথা শুনে হো হো করে হেসে দেয় পিয়াস। তা দেখে ফারিহা পিয়াস কে একটা গাট্টা মেরে বলে,
‘তোর জন্য আমি পায়ে ব্যাথা পেয়েছি। আম্মুকে তো আজ তোর ইটিস-পিটিসের কথা বলেই দিবে।’
‘এই একদম আমি ইটিস-পিটিস করছি না, আমি তো প্রেম করছি আর পুরো পৃথিবী কে জানালেও আমার সমস্যা নেই।’
‘আচ্ছাহ, পুরো পৃথিবীকে জানাবো না শুধু আম্মুকেই জানাবো।’
বলেই ফারিহা দাড়িয়ে যায়, পিয়াস ওকে আটকে রেখে বলে,
‘ওকে নিজের ভুল স্বীকার করলাম আমি। তুই পায়ে ব্যাথা পেয়েছিস সেই দোষ টাও আমার। এখন কি জন্য এখানে এসেছিস সেটা বল।’
‘ওহ আমি তো ভুলেই গেলাম কি জন্য এসেছি! দেখ আমার মনে হয় কাল রাতে এই লোক টিই আমাকে ফোন দিয়ে বলেছে ও মাহতিম চৌধুরী, আমাকে বিয়ে করতে চায় না এই সেই আরো কত কিছু।’
বলেই নিজের ফোন টা পিয়াসের সামনে বাড়িয়ে দিলো ফারিহা।
‘এরকম ম্যাসেজ তোকে কে দিবে? তুই কি কাউকে চিনিস এরকম হতে পারে?’
‘আরে ভাইয়া আমি কিভাবে চিনবো! চিনলে বুঝি তোর মত…’
ফারিহার কথা শেষ হওয়ার আগেই পিয়াস ফোঁড়ন কেটে বলে,
‘আমার মত মানে! কি বলতে চাইছিস তুই?’
‘কিছু না, কথা হলো গিয়ে ওই লোকটা আমাকে কিভাবে দেখলো? নিশ্চয় এখনো আশেপাশে আছে ওই লোকটা।’
ফারিহার কথা শুনে চিন্তায় পড়ে গেলো পিয়াস।
‘তোর রুমে চল তো ফারিহা।’
বলেই পিয়াস ফারিহা কে টেনে ওর রুমে নিয়ে যায়। বেলকনিতে এসে বলে,
‘এখানেই তো চিলি তুই তাইনা?’
‘হুম, আচ্ছাহ তুই কি গোয়েন্দাগিরি শুরু করেছিস নাকি?’
‘আরে বাদ দে এসব। নিচে সিসি ক্যামেরা আছে চল নিজাম কাকাকে বলে যদি ফুটেজ টা চ্যাক করা যায়।’
ফারিহাও ভাইয়ের কথায় সায় দিয়ে বলে,
‘চল যাই, যদি কোনো প্রমান পাই কিনা। কিন্তু লোকটা এখানে থাকবেই বা কেনো?’
‘এসব পরে দেখা যাবে।’
.
‘মিস্টার চৌধুরী আপনি কি বলছেন এসব? আপনি কিভাবে মিটিং টা ক্যান্সেল করতে পারলেন? আপনি জানেন এই ডিল টা যতটা আপনার কোম্পানির জন্য জরুরি ছিলো ততটা আমাদের কোম্পানির জন্যও জরুরি ছিলো।’
‘গলা নিচু করে কথা বলুন শিকদার সাহেব আর আমাকে চৌধুরী ডাকবেন না এই টাইটেলের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই আর কোনো দিন সম্পর্ক তৈরি হবেও না। আমার ইচ্ছে হয়েছে আমি মিটিং ক্যান্সেল করেছি। এরকম অনেক লোক পড়ে থাকে আমার সাথে মিটিং করার জন্য। আপনার মিটিং থেকেও ইমফরট্যান্ট কাজ আমার ছিলো। আর আমি কারো কাছে জবাবদিহি করতে বাদ্য নই।’
বলেই অপর পাশে ব্যাক্তির কথার অপেক্ষা না করেই কল কেটে দেয় মুরতাসিম।
.
‘কাকা আমাদের একটু বলবে সন্ধ্যা ৬ টা থেকে সাড়ে ৬ টার ভিতরে এমন কোনো লোককে কি দেখেছো তুমি?’
পিয়াসের কথা শুনে নিজাম সাহেব কিছুটা হকচকিয়ে যায়।
‘না পিয়াস এখানে তো কাউকে দেখিনি, সারাদিনে তো গেটেই থাকি তেমন সন্দেহ জনক কাউকে দেখিনি আমি।’
‘আরে সন্দেহজনক লোকের কথা বলছি না তো, আচ্ছাহ বাদ দাও আমাদের সিসি টিভি ফুটেজ টা দেখতে দিলেই হবে।’
পিয়াসের কথা শুনে নিজাম আপত্তি জানিয়ে বলে সে ফুটেজ দিতে পারবে না।
‘কাকা এই বাসার কারো কোনো ক্ষতি হলে কিন্তু আমি সবার আগে তোমার নামেই কেস করবো।’
পিয়াসের কথা শুনে নিজাম ভয় পেয়ে যায়।
‘আচ্ছাহ চলো আমার সাথে।’
পিয়াস আর ফারিহা খুশি মনে নিজাম সাহেবের সাথে যেতে লাগলো। পিয়াস সিসি টিভি ফুটেজ চ্যাক করে দেখে ৬ টা থেকে ৬:১৫ পর্যন্ত কোনো ফুটেজ নেই। মনে হয় কেউ জেনে শুনেই ডিলিট করে দিয়েছে।
‘এটা কি হলো কাকা এখানে পনেরো মিনিটের কোনো ফুটেজ নেই কেনো? কি করেছো তুমি? এরজন্যই বুঝি তোমাকে আন্টিরা এই বাসার দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছে?’
‘আরে পিয়াস রেগে যাচ্ছে কেনো? কিছু সমস্যা হয়েছে তাই ৬ থেকে ৬:১৫ পর্যন্ত কোনো সিসি ক্যামেরা কাজ করছিলো না আবার হঠাৎ করেই সব ঠিক হয়ে গিয়েছিলো।’
নিজাম সাহেবেরর কথা মনে হয় না পিয়াস বিশ্বাস করেছে।
‘কাকা সিসি ক্যামেরা আপনা আপনি বন্ধ হয়ে গেছে আবার ঠিকও হয়ে গেছে আপনি এই ব্যাপারটা কাউকে জানানোর প্রয়োজন ও মনে করলেন না আপনি?’
ফারিহার কথা শুনে নিজাম সাহেব কিছুটা ঘাবড়ে যায়। পিয়াসও সায় দিয়ে বলে,
‘এই বাসার আন্টি টা বিশ্বাস করে আপনার কাছে তার বাড়ির দায়িত্ব দিয়ে গেছে আর আপনি কিনা এসব কাজ করে বেড়াচ্ছেন!’
‘ভাইয়া আর ঝামেলা করতে হবে না। ওদের বাড়ির দায়িত্ব ওরা যাকে মন চাইছে দিয়েছে আমাদের ভাবতে হবে না এসব, চল এবার।
বলেই একপ্রকার টেনে পিয়াস কে নিয়ে বাসায় আসে ফারিহা।
.
মুরতাসিম পকেট থেকে পাঁচশো টাকার একটা চকচকে নোট বের করে নিজাম সাহেব কে দেয়। নিজাম সাহেব একগাল হেসে টাকাটা পকেটো পুরে নেয়।
‘আচ্ছাহ সাহেব আপনিই বললেন ফারিহা একটা খারাপ মেয়ে তাই আপনি আপনার ভাইয়ের সাথে ওর বিয়েটা ভেঙে দিয়েছেন। এখন আবার কেনো ফারিহা কে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে আসেন আপনি?’
নিজাম সাহেবের কথা শুনে মুরতাসিম নিজের পকেট থেকে পি’স্ত’ল বের করতে গিয়েও করলো না কারণ, নিজাম সাহেব কে তার এখনো প্রয়োজন আছে।
‘আসলে যেই ছেলেটার বিয়ে ভেঙেছে সে আমার ভাই না শত্রু। ও যদি আমার প্রেয়সীর দিকে নজর দিতে চেষ্টা করে তবে ওর চোখ আমি তুলে শকুন কে খেতে দিবো।’
মুরতাসিমেরর কথা শুনে ভয় পেয়ে যায় নিজাম সাহেব।
‘কিন্তু শুনলাম ফারিহার বর নাকি আপনার ভাই ছিল। আর বর তো এমনিতেও এই বিয়েতে রাজি ছিলো না।’
‘এই একদম ফারিহার বর বর করবি না। মাহতিমের সাথে ফারিহার বিয়ে হয়নি তাহলে মাহতিম ফারিহার বর হয় কিভাবে? আর মাহতিম আমার ভাই নই আবারো বললাম। মাহতিম বিয়েতে রাজি না হয়ে নিজের প্রাণ বাঁচিয়েছে।’
বলেই মুরতাসিম নিজাম সাহেবের সামনে থেকে চলে যায়। আর নিজাম সাহেব ভাবতে থাকে সে মুরতাসিম কে সাহায্য করে ভুল করছে না তো! পরক্ষনে আবার ভাবে একটু হেল্প করেই তো পকেটে মোটা অংকের টাকা আসছে!’
চলবে….
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দূষ্টিতে দেখবেন।]