#গুছিয়ে_রাখা_আবেগ
#পর্ব_৪
#আজরিনা_জ্যামি
“আচ্ছা বড়মামা তুমি আরুহিকে জিজ্ঞেস করলে কেন? ও একেবারে দেশে এসেছে কিনা? ও আগে কোথায় থাকতো।”
নিতুর কথায় সবাই খাওয়া ছেড়ে ওর কথায় মনোযোগ দিল। তখন আফরিন বলল,
“ও আগে লন্ডনে থাকতো।”
“কি! লন্ডনে থাকতো আর আমি তো ওর ড্রেস আপ দেখে ভেবেছিলাম । হয়তো কোন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে বিলং করে। যাই হোক ও কি একা থাকতো?”
“না একা থাকতো না ও ওর পরিবার নিয়ে থাকতো।”
তখন আনোয়ার খান বললেন,,
“আচ্ছা ওর পরিবারে কে কে আছে?’
তখন আনোয়ার খানের স্ত্রী বললেন,,
“আগে খাওয়া শেষ করুন পড়ে গল্প হবে। খাওয়ার সময় কথা বলতে নেই।”
সবাই খাওয়ায় মনোযোগ দিল আর আরুহির কথা আপাতত এখানেই শেষ হলো।
_______________
ওর মা বেঁচে আছে শুনে আরুহি কি রিয়্যাক্ট দেবে ভুলেই গেল। ওর চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পরছে। যখন মস্তিষ্ক জানান দিল লোকটা পুরো কথা না বলেই মারা গেছে তখনি ও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উচ্চারণ করলো,,
“- ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন।
ও আস্তে আস্তে কেবিন থেকে বের হলো। আর কাউকে ফোন দিয়ে লোকটার পরিবারকে জানাতে বলল সাথে কিছু টাকা দিতে বলল। আর ওনার পরিবার কে পরে দেখা করতে বলল। ও বের হতেই দেখলো আবরার বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। ও এগিয়ে গিয়ে বলল,,
“আরে মিস্টার নিশান আপনি এখানে?”
“আপনাকে সাহায্য করতে এলাম যদি কোন সাহায্য লাগে।”
“তার আর দরকার নেই উনি মারা গেছেন।”
“ইন্না লিল্লাহি _ _ _ _ _ _
“আপনি বাড়ি গেলে যেতে পারেন আমি এখন বাড়ি যাবো। আর ওভাবে আসার জন্য সবাইকে সরি বলে দেবেন।”
“মন খারাপ মিস! উনি কি হয় আপনার?
“আমার কোন এক শুভাকাঙ্ক্ষী।”
“ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তায়ালা ওনাকে উত্তম প্রতিদান দান করবেন।”
“ইনশাআল্লাহ!”
“আপনি তো কিছুই খান নি চলুন খেয়ে তারপর বাসায় যাবেন?”
“আমার খেতে ভালো লাগছে না মিস্টার নিশান আবরার।”
“কিন্তু খেতে যে হবেই মিস।”
“সবসময় জোর চলেনা মিস্টার ভুল সময় তো নয়ই। আপনি এখন বাড়ি যান।”
“ওকে না খেলেন চলুন আপনাকে একটা জায়গায় নিয়ে যাই।”
“আমি এখন বাড়ি যাব কোথাও যাব না। তাছাড়া ছেলেমেয়ে এটা আলাদাভাবে ঘুরাঘুরি করা উচিৎ নয়।”
“সরি বুঝতে পারি নি।”
“আপনি তো কিছুই বুঝতে পারেন না।”
“আপনি কি কোন ভাবে রেগে আছেন?”
“মিস্টার নিশান আবরার আপনি প্লিজ এখান থেকে যান। আপনাকে আমি কিছু উল্টোপাল্টা বলতে চাই না। আমাকে একটু একা থাকতে দিন।”
আবরার বুঝতে পারল আরুহি কোন কিছু নিয়ে চিন্তা করছে। তাই ও আল্লাহ হাফেজ বলে চলে গেল। আরুহি তাড়াতাড়ি করে বাড়ি চলে এলো। আর রুমে গিয়ে ফ্লোরে বসে পড়লো আর কাঁদতে লাগলো। আর বলতে লাগলো,,,
“আমার মা বেঁচে আছে। এখন যা বলার আমার মা~ই মায়ের নামের মিথ্যা অপবাদ সব প্রমান করতে পারবো। আমার মা খারাপ নয় আমার মা খারাপ হতে পারে না। কিন্তু এখন কোথায় খুজবো মাকে আমি যে আরেকটুর জন্য মাকে হাড়িয়ে ফেললাম। আমার মা আবার হাড়িয়ে গেছে ভাইয়া।”
ও আরহাম কে ফোন দিল এবার একবার রিং হতেই আরহাম ফোন ধরলো। আরুহি কাঁদতে লাগলো। ওপাশ থেকে আরহাম ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করল,,
“কি হয়েছে আরু তুই কাঁদছিস কেন? কি হয়েছে তোর কেউ কিছু করেছে না বলেছে তুই শুধু একবার বল আরু। কি হয়েছে আরু?”
আরুহি কোন রকম এ বলল,,
“ভাইয়া মাকে দেখেছে নাদিম ভাইয়া কিন্তু ভাইয়া মাকে আবার হাড়িয়ে ফেলেছি উনি পুরো কথা বলার আগেই মারা গেছে ভাইয়া। তুমি তাড়াতাড়ি এসো ভাইয়া। আমার আর কিছু ভালো লাগছে না। মাকে খুঁজতে হবে যদি তাদের হাতে পরে যায় তাহলে মাকে আবারও মারতে চাইবে ভাইয়া। তুমি প্লিজ তাড়াতাড়ি এসো মাকে বাঁচাতে হবে।”
সব কথা শুনে আরহাম থমকে গেল। ও নিজেকে সামলিয়ে বলল,,
“আরু তুই চিন্তা করিস না। তোর ভাই এখনি রওনা হচ্ছে। আমি আসছি আরু আমি আসছি । আমি তোর পাশেই থাকবো সবসময়। চিন্তা করিস না আমরা এসে মাকে খুজবো।
“ভাইয়া প্লিজ তাড়াতাড়ি এসো আমার খুব কষ্ট হচ্ছে ভাইয়া। আজকে আনোয়ার খানের পরিবারের সাথে দেখা হয়েছিল ভাইয়া। আমার খুব যন্ত্রনা হচ্ছিল ভাইয়া বারবার তাদের কথাগুলো মনে হচ্ছিল তাদের পুরনো কথাগুলো আমার দেহে আগুনের মতো লাগছিল ভাইয়া। মাকে পেয়ে গেলে সব প্রমান করবো ভাইয়া আমার মা ধোকাবাজ নয়। ভাইয়া আমার মা বাবাকে ছেড়ে যায় নি তার শাস্তির জন্য মৃত্যুও হয় নি ভাইয়া।”
“তাদের সাথে কোথায় দেখা হয়েছে বোনু!”
“তুমি আগে এসো পরে সব বলবো ভাইয়া। তুমি প্লিজ তাড়াতাড়ি এসো। আমার কাঁদতে ইচ্ছে ভাইয়া তোমার কোলে মাথা রেখে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। আজকে আমি ধৈর্য্য ধারণ করতে পারছি না। মনে হচ্ছে আরুহি হেরে যাচ্ছে ভাইয়া।
“চিন্তা করিস না কাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই তুই তোর ভাইকে পাবি ইনশাআল্লাহ । ধৈর্য্য হারাস না বোনু তুই আরুহি মাহমুদ খান তুই অনেক স্ট্রং মনে রাখবি তুই অল্পতে ভেঙে পরিস না। মনে রাখিস আল্লাহ তায়ালা ধৈর্য্যশীল দের সাথে আছেন।
আরহাম কাঁদছে হ্যা আরহাম কাঁদছে এটা যে খুশির কান্না দশ বছর ধরে যে কষ্টটা বয়ে নিয়ে চলছে ওরা দুজন তার থেকে মুক্তি পাওয়ার আনন্দে কিন্তু সব ঠিক হয়ে যাবে নাকি এর থেকেও ভয়ঙ্কর কিছু ওদের জন্য অপেক্ষা করছে।
_______________
আরুহি ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে ওযু করে বের হয়ে এলো। ওর মনটা খুব অশান্ত হয়ে আছে। নামাজ পড়তে হবে। আজ যা হলো সবকিছুর জন্য মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। আরুহি নামাজে দাঁড়ালো শেষ এ সবকিছুর জন্য শুকরিয়া আদায় করলো। নামাজ শেষে বেলকনিতে দাঁড়ালো মৃদু বাতাস বইছে হুট করেই মনটা ভালো হয়ে গেল। তখনি ওর ফোনটা বেজে উঠলো ও দেখলো আননোন নাম্বার ও ফোন উঠিয়ে সালাম দিল,,
“আসসালামু আলাইকুম!”
“ওয়ালাইকুমুস সালাম।”
“মেঘ বালিকার মুখ থেকে কি মেঘলা আকাশ সরেছে?
“কে বলছেন?
“বারে এখন আমাকে চিনতে পারছেন না!”
“মিস্টার নিশান আবরার! আপনি আমার নাম্বার পেলেন কোথা থেকে?”
“আপনার এই পুরোনো নাম্বার আমার কাছে পাঁচ বছর আগে থেকেই আছে মিস।”
“ওহ আচ্ছা ফোন দিয়েছেন কেন?”
“ভাবলাম আপনার মন হয়তো খারাপ তাই!”
“আমার মন খারাপ আমি নিজে ঠিক করতে পারি কারো প্রয়োজন নেই আমার। আমি ঠিক আছি এখন ফোন রাখুন।”
“হাওয়ার মিঠাই খাবেন?”
“আপনি খাওয়াবেন নাকি !”
“আগে লাঞ্চ করে নিন তারপর খাবেন?
” আমার কিছু লাগবে না আল্লাহ হাফেজ রাখছি।’
“আরে আমার কথাটা তো শুনুন!”
আরুহি ফোনটা কেটে দিলো। আবরারের সাথে কথা বললে ও পুরোনো কিছু স্মৃতি মনে পড়ে তখন ওর কষ্ট হয়।
___________________
“আসসালামু আলাইকুম আফরিন বল!”
“ওয়ালাইকুমুস সালাম! দুপুরে কিছু খেয়েছিস?”
“না এখনো খাই নি?”
“মা তোকে আসতে বলছে। ভাইয়া বলল লোকটা নাকি মারা গেছে।”
“হুম মারা গেছে। রোজা বাড়ি গেছে?
“না মা রেখে দিয়েছে আর তোকেও আসতে বলছে তাছাড়া ঐ দাদুরা যায় নি আজ থাকবে বলেছে। সেই জন্য মা ও চাইছে তুই যাতে আসিস এমনিতেও তো তুই কিছুই খেলি না। ”
“সরি রে আজ আর কোথাও বেরুবো না।”
তখন আবরারের মা নাসরিন খান ফোন নিয়ে আরুহি কে বললেন কিন্তু আরুষি তাদের মুখোমুখি হতে চায় না তাই মানা করলো। এমন কি এটাও বলল কাল ওর ভাই আসছে। পরে ওকে নিয়ে যাবে। তাই নাসরিন খান আর কিছু বললো না।
___________________
মিস আরুহি মাহমুদ খান আমার বিশ্বাস হচ্ছে না আমি তোমাকে পেয়ে গেছি। এবার তোমাকে আমার হাত থেকে কে বাঁচাবে। খুব শখ ছিল না তোমার আমার মুখোশ খুলে দেওয়ার। এবার তুমি আমার হাত থেকে বেঁচে দেখাও। কতদিন অপেক্ষা করছিলাম এই দিনটা দেখার জন্য। তোমার মা তো মরেছেই সাথে তোমার বাবাও এবার তুমি। তোমাকে শেষ করলে আরহাম এমনিতেও মরে যাবে তারপর সব আমার। রেডি হয়ে থেকো মিস আরুহি। তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে আগে আগে দেখো কি হয়।
আরেকটা নতুন দিনের সূচনা। আরুহি চোখ খুলে দেখলো আরহাম ওর সামনে খাবার নিয়ে বসে আছে। আরুহি বিছানা থেকে উঠে ভাইকে জরিয়ে ধরলো আর বলল,,
“তুমি কখন এলে?”
“এই তো দুই ঘন্টা হয়েছে। এসেই তোর জন্য খাবার বানালাম। তোর তো নিষিদ্ধ সময় চলছে যা ফ্রেশ হয়ে আয় আমরা একসাথে খাবো।”
“তুমি দুই মিনিট বসো আমি পাঁচ মিনিট এ আসছি।”
আরুহির কথা শুনে আরহাম হাসলো। আরহাম জানে তার বোন কালকের ঐ সময়টার পর আর কিছু খায় নি। তাই এসেই আগে খাবার বানিয়েছে। আরুহি বেরিয়ে আসলে আরহাম ওকে খায়িয়ে দিল। খাওয়া শেষ হলে আরুহি বলল,,
“নেক্সট প্ল্যান কি ভাইয়া।”
“মাকে যেহেতু এই ঢাকাতেই দেখা গেছে তাহলে মা এর মধ্যেই আছে। আমি মাকে খোঁজার জন্য লোক লাগিয়ে দিয়েছি। তবে সিক্রেট লি।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।”
“এখন বল আনোয়ার খান কে কোথায় পেলি।”
আরুহি সব খুলে বলল। সব শুনে আরহাম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আর বলল,,
” বোনু আমি নতুন একটা চাকরি নিয়েছি।”
“কি?”
“হুম তোদের পরে বলবো এখন না তোর জন্য সারপ্রাইজ!”
“কিন্তু কেন?”
” এখন বললে কি আর সারপ্রাইজ থাকবে ।”
“আচ্ছা বাদ দাও তাহলে এখন বলো আফরিন দের বাড়িতে যাবে কবে? বিয়ের কথা বলতে।”
“খুব তাড়াতাড়ি আগে মাকে পেয়ে নিই তারপর!”
“ওকে ! তুমি তো ক্লান্ত তাও একটু ঘুমিয়ে নাও।”
“হুম যাচ্ছি।”
___________________
আরুহির আজ সকাল থেকেই মনটা বেশ ফুরফুরে। ও খুশি মনে আজ ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা হলো। ও ভার্সিটি গিয়ে দেখতে পেল আফরিন আর রোজার ওর জন্য দাঁড়িয়ে আছে। তা দেখে আরুহি ওদের দিকে এগিয়ে গেল ওদের সাথে কথা বলে ওরা ক্লাসে গেল। ওদের দুটো ক্লাস শেষ তখন প্রিন্সিপাল স্যার ঢুকলো পেছনে কাউকে একটা নিয়ে তার চেহারা দেখে তো আরুহি অবাক। প্রিন্সিপাল স্যার বললেন,,
“তোমাদের দুজন নতুন লেকচারার নেওয়া হয়েছে উনি হচ্ছে তোমাদের নতুন লেকচারারারের মধ্যে একজন!”
এ কথা শুনে যেনো আরুহির মুখ আপনাআপনি হা হয়ে গেল। আর আরেকজন মানুষের হার্টে মনে হচ্ছে কেউ ড্রাম বাজাচ্ছে । ওদের দুজনের ভাব দেখে বেচারা আরেকজন একবার ওদের দিকে তাকাচ্ছে আবার লেকচারারের দিকে আবার নিজের দিকে। আদোও যা দেখছে সত্যি তো।
~চলবে,,
বিঃদ্রঃ আসসালামু আলাইকুম। আজকের পর্বটা ছোট হওয়ার জন্য দুঃখিত। আজ আর এর থেকে বেশি লেখা পসিবল না। আসলে একটু ব্যস্ত ছিলাম। আজকের পর্বটাও হয়তো অগোছালো হয়েছে তার জন্য ও দুঃখিত। ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ।