#হৃদয়ে_মেঘগলি
|০৩|
লাবিবা ওয়াহিদ
[সকলের কাছে অনুরোধ নিচের “বিঃদ্রঃ” পড়ে নিবেন]
ক্লাস শেষে আনোশী অফিস রুমে বসতেই তার পাশে চেয়ার নিয়ে বসলো নীল। নীলকে খেয়াল করেনি আনোশী। নীল হঠাৎ করে চুটকি বাজাতেই আনোশী চমকে উঠলো। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কোনো টিচার আছে কী না। নাহ, নেই। বেশিরভাগ ক্লাস নিতে গেছে। আর কিছু অফিস রুমের বাহিরে অবস্থান করছে। নীল হঠাৎ বলে ওঠে,
–“কী দেখছো? জানো না এই টাইমটায় টিচার’রা সেরকম থাকে না?”
–“জানি।” আনোশীর সোজা-সাপটা উত্তর।
নীল কাচের টেবিলটায় কনুইয়ের ভার দিয়ে গালে হাত গুঁজলো। আনোশী নীলকে দেখানোর জন্যে মিথ্যে ব্যস্ততা দেখানোর চেষ্টা চালালো। এতে অবশ্য সেরকম লাভ হলো না। নীল আলতো হেসে বলে,
–“আমাকে দেখলে ব্যস্ততা দেখাও কেন?”
আনোশী আড়চোখে নীলের দিকে চেয়ে বলে,
–“কোথায়?”
নীল আবার হাসলো। হেসেই বললো,
–“কিছু তো আছে যা আমার থেকে লুকাতে চাইছো। নয়তো আজ তোমার চেহারা অন্যরকম লাগছে।”
–“অন্যরকম বলতে?”
–“এইযে অন্যমনস্ক, মুখ ভার, অতিরিক্ত মাত্রায় চুপ হয়ে যাওয়া! কী হয়েছে বলো তো?”
–“কিছু হয়নি।”
আনোশীর এমন সোজা-সাপটা ছোট উত্তরে নীল অভ্যস্ত। মেয়েটা চাপা স্বভাবের সেটা নীল প্রথম দিন থেকেই অবগত। সহজে কারো সাথে মিশতে চায় না, এটাও তাঁর আরেক গুণ। তবে নীলের ব্যাপারে আনোশী বেশি নয়, একটু অন্যরকম। নীলের কত কাঠখড় পোহাতে হয়েছে আনোশীর সাথে বন্ধুত্ব করার জন্য। নীল আবার বললো,
–“কিছু তো একটা হয়েছে।”
–“আপনার ক্লাস নেই?”
–“আগামী দুই পিরিয়ড ফ্রী আছি!”
আনোশী এলোমেলো ভঙ্গিতে আশেপাশে তাকালো। নীল মাথা একটু ঝুকিয়ে আনোশীর দিকে চাইলো, যাতে আনোশীর নজর খুব সহজেই তাঁর উপর পরে। আনোশী আড়চোখে চাইলো নীলের দিকে। নীল বললো,
–“বলবে না?”
আনোশী কোনো উত্তর দিলো না। নীল এবার হার মানলো আনোশীর কঠোরতার কাছে। চেয়ারে হেলান দিয়ে টানটান হয়ে বসে বলে,
–“ঠিকাছে বাদ দাও।”
একটু থেমে নীল আবার টেবিলের দিকে ফিরে এলো। এবং আলতো স্বরে বললো,
–“আজ আবার প্রপোজ পেয়েছি এক ছাত্রীর কাছে!”
আনোশী আড়চোখে চেয়ে বলে,
–“তো ছাত্রী বিয়ে করার স্বপ্ন পূরণ করে ফেলুন!”
নীল হেসে বলে,
–“ছাত্রী বিয়ে করলে আমার পাপ হবে বুঝলে। আমি তো চাই একজন ম্যাচিওর মেয়ে। যে আমার ছাত্রীও হবে আবার ছাত্রীদের শিক্ষিকা!”
নীলের ইঙ্গিত আনোশী বেশ ভালোভাবেই বুঝলো তবে কোনোরকম পতিক্রিয়া জানালো না। এই ইঙ্গিত আজ প্রথম নয়, নীল বেশ কয়েকবার-ই ইঙ্গিত দিয়েছে। তবে মাথাভর্তি চিন্তা থাকার কারণে নীলের কথাগুলো ঠিকভাবে মস্তিষ্কে প্রবেশ করতে পারছে না। নীল অবশ্য কিছুটা সুপুরুষের কাতারেই পরে। আনোশী তাকে ভার্সিটি লাইফ থেকেই চিনে। নীল আনোশীর সিনিয়র ছিলো। এক সাথেই দুজনে জয়েন করেছে। এখন শিক্ষকতাও একসাথে করছে। নীল সেভাবে চিনতো না আনোশীকে। তবে আনোশীর ভার্সিটির নাম এবং ব্যাচের সাল শুনে সে আনন্দিত হয়েছিলো। স্বভাবে কিছুটা মিশুক নীল। আনোশীর ক্ষেত্রে একটু বেশি-ই বাচ্চামো-পনা করে সে। স্কুলে রীতিমতো ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে আলোচনা হয় যে, আনোশী এবং নীলের মাঝে কোনো সম্পর্ক চলছে।
নীল হুট করে বলে ওঠে,
–“চায়ের বড্ড তৃষ্ণা পেয়েছে, চলো চা খেয়ে আসি।”
আনোশী অমত জানিয়ে বললো,
–“না, ভালো লাগছে না। অন্য কোনো একদিন যাবো!”
–“অন্য কোনোদিন কেন? আজকের পর আমরা বেঁচে থাকবো তাঁর কী গ্যারান্টি আছে? চলো আমার সাথে। এক কাপ চা খেলেই দেখলে মন-মেজাজ ফুরফুরে হয়ে গেছে!”
নীলের জেদের কাছে হার মেনে আনোশী দীর্ঘশ্বাস ফেললো। অতঃপর বাধ্য হয়েই নীলের সাথে বের হলো। তিন তলার একটি ক্লাস থেকে একজন ছাত্রী তাদের একসাথে দেখে পাশেরজনকে ধাক্কালো। ওদের দিকে ইশারা করে বললো,
–“ওই দেখ। আনোশী ম্যাম এবং নীল স্যার একসাথে বেরোচ্ছে। আমাদের সন্দেহ-ই ঠিক ছিলো।”
–“হ্যাঁ। যাক, নীল স্যারের কপাল খুলেছে। আমাদের আনোশী ম্যাম তো কম সুন্দরী না!”
বান্ধুবীর কথা শুনে জানালার পাশের মেয়েটা হাসলো।
আনোশী চায়ে চুমুক দিতেই প্রশান্তিতে তাঁর চোখ বুজে এলো। আসলেই এক কাপ চায়ের ভীষণ প্রয়োজন ছিলো। ভার হয়ে যাওয়া মাথা এবং ঘাড় ধীরে ধীরে সতেজ হচ্ছে। নীল চায়ে চুমুক দিতে দিতে আনোশীকে দেখছে। আনোশীর মুখ জুড়ে থাকা তৃপ্তির রেশ নীল ভালোভাবেই লক্ষ্য করেছে। হেসে বললো,
–“কী? আমার কথা ঠিক হলো তো?”
চায়ের কাপ হাতে নিয়ে আনোশী নীলের দিকে তাকালো। নীলের চোখের ভাষা অন্যরকম, তবে সেই ভাষা আনোশীর পরিচিত। আনোশী জোরপূর্বক হেসে বলে, “হ্যাঁ, লাগছে ভালো!”
–“প্রতিদিন দুই কাপ চায়ের আড্ডা হলে মন্দ হতো না আনোশী। তোমার কী মনে হয় না, এই দুই কাপ চায়ের আমেজ পাশাপাশি উপভোগ করা প্রতিদিন প্রয়োজন?”
নীলের বলা কঠিন বাক্যগুলোর উত্তর আনোশী খুঁজে পেলো না। তাই কিছু বলতেও পারলো না।
———————-
অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে অবশেষে তিশুতি রাইমা অর্থাৎ শেহরিমের ভাবীর নাম্বার পেলো। দরজাটা হালকা ভেজিয়ে তিশুতি রাইমাকে কল করলো। কয়েকবার রিং হতেই রাইমা রিসিভ করে বললো,
–“হ্যালো কে?”
–“আমি তিশুতি!”
রাইমা ফোঁস নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
–“কল দিয়েছো কেন?”
–“জরুরি কথা আছে বলেই তোমার নাম্বারটা জোগাড় করেছি।”
রাইমা বিরক্তি দমিয়ে বললো,
–“কী বলবে বলো!”
–“এমন ভাবে বলছো যেন আমার উপর খুব বিরক্ত?”
–“বিরক্ত না হওয়ার মতো কোনো কাজ করেছিলে তুমি? নিজের গাছ তো কেটেছোই সাথে আমারটাও কাটতে নিয়েছিলে!”
–“রাখো পুরানো কথা। বর্তমানের কথা বলছি শুনো!”
–“এত হেয়ালি না করে বলো তো এবার!”
–“শেহরিম এবং আনোশীর বিয়েটা যেকোনো ভাবে ভেঙে দাও।”
–“কেন? শেহরিম কী দোষ করেছে?”
–“সেটা তুমি বুঝবে না। আমি চাই না তোমার দেবরের মতো দায়িত্বহীন ছেলের সাথে আমার বোনের বিয়ে হোক।”
–“তোমার কথা শুনতে আমি বাধ্য নই!”
–“আচ্ছা। ঠিকাছে, ওয়েট রাইমা আপু। আমি সরাসরি তোমার সাথে কথা বলতে চাই। তুমি আমাকে যেখানেই বলবে আমি সেখানেই দেখা করবো। শুধু আমার কথাগুলো একটু শুনে নিও।”
রাইমা কিছুটা ভেবে বললো,
–“ঠিকাছে।”
———————-
হসপিটাল থেকে ফিরতে ফিরতে শেহরিমের রাত হয়ে গেলো। শেহরিম আসতেই রাইমা একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিলো শেহরিমের হাতে। শেহরিম প্যাকেটের উপরের নামটা দেখেই মুচকি হাসলো। যেন সে বুঝতে পেরেছে এই পার্সেলটি কার তরফ থেকে এসেছে। তাও রাইমা বললো,
–“বিকালে দারোয়ান গেটে এসে দিয়ে গেলো।স উনি-ই বললো আনোশী এসেছিলো তোমার জন্যে এই পার্সেলটি নিয়ে। এখন দ্রুত হাত-মুখ ধুঁয়ে এসো। আমি খাবার বেড়ে দিচ্ছি।”
শেহরিম প্যাকেটটাকে যত্ন করে আগলে নিয়ে বললো,
–“মা কী ঘুমিয়ে পরেছে?”
–“হ্যাঁ। তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলো। আমি জোর করে ঘুমোতে পাঠিয়ে দিয়েছি!”
–“ভালো করেছো ভাবী!”
বলেই শেহরিম উপরে চলে গেলো। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে এসে প্যাকেটটা খুললো। কিন্তু একি, ভেতরের জিনিসটাতেও প্যাকেট করা। শেহরিম একে একে প্যাকেটগুলো খুলতে শুরু করলো। যতোই প্যাকেট খুলছে ততোই প্যাকেট ছোট হচ্ছে। শেহরিমের তো ধৈর্যের সীমা পেরিয়ে যাচ্ছে। এই প্রথম তাঁর প্রিয় মানুষটির থেকে উপহার পেয়েছে৷ সেটা কী তা জানার আগ্রহ ক্রমশ বেড়েই চলেছে। একসময় ছোট একটি প্যাকেট পেলো। প্যাকেটটি খুলতেই শেহরিম থমকে গেলো।
ঘন্টাখানেক হয়ে গেলো শেহরিম নিচে খেতে আসছে না। শেহরিমের জন্যে অপেক্ষা করতে করতে রাইমা ক্লান্ত। শেহরিম আসবে কী না তা জানতে রাইমা উপরে গেলো। শেহরিমের দরজা ভেজানো ছিলো, যা হালকা ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো। দরজাটা খুলতেই শেহরিমকে এলোমেলো অবস্থায় বিছানার সাথে হেলান দিতে দেখা গেলো। তাঁর আশেপাশে বেশ কিছু কাগজ ছড়িয়ে ছিটিয়ে। তার হাতে একটা আংটি এবং চিঠি। রাইমা এগিয়ে এলো শেহরিমের দিকে। আলতো স্বরে বললো,
–“খেতে আসবে না?”
শেহরিম তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
–“চিঠি পড়েই পেট ভরে গেছে ভাবী!”
রাইমা উঁকিঝুঁকি দিয়ে রিংটা দেখে নিলো। রিংটা চিনতে অসুবিধা হলো না রাইমার। রাইমা হতবিহ্বল চাহনিতে চেয়ে রইলো রিংটার দিকে। সে কখনো ভাবতেই পারেনি এভাবে ঘটা করে আনোশী শেহরিমকে রিংটা ফিরিয়ে দিবে। রাইমা অবাক সুরে বললো,
–“এসব কী শেহরিম?”
শেহরিম আহত নয়নে চাইলো রাইমার দিকে। ভাঙা গলায় বললো,
–“আনোশী এমন কেন করছে ভাবী?”
রাইমা বুঝতে পারলো না সে ঠিক কী উত্তর দিবে। শেহরিম চুপ করে রইলো। রাইমার কোনোরূপ উত্তরের অপেক্ষা করলো না। রাইমা ঠোঁট কামড়ে বললো,
–“আজ তিশুতি আমাকে কল করেছিলো!”
শেহরিম তড়িৎ মাথা তুলে চাইলো রাইমার দিকে। ভ্রু কুচকে বললো,
–“কেন কল করেছে?”
–“বিয়ে ভাঙার জন্যে!”
শেহরিম চোখ বুজে চুপ করে রইলো। পরক্ষণে বললো,
–“আমি ঘুমাবো ভাবী!”
–“কিন্তু খাবার?”
–“আর খাবো না।”
রাইমা আর কিছু বললো না। নিজের রুমে চলে গেলো। নিজের রুমে গিয়ে দেখলো শাহেদ ফোন দেখছে। রাইমা মাথার ঘোমটা সরাতে সরাতে বলল,
–“ঘুমাওনি!”
–“না। তোমার অপেক্ষা করছিলাম।”
রাইমা আলতো হেসে তাহানের পাশ দিয়ে বসলো। ঘুমন্ত তাহানের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
–“তোমার ভাই ভীষণ আপসেট!”
শাহেদ ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
–“হওয়াটা-ই স্বাভাবিক। নিষিদ্ধ পথে পা বাড়িয়েছে!”
–“তোমার কী মনে হয়, তোমার ভাই ওই মেয়েকে বিয়ে করবে?”
–“না করাটাই ভালো। প্রাক্তন স্ত্রীর ছোট বোনকে বিয়ে, আমাদের সম্মান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে ভাবতে পারছো? ছেলেটার উপর দিয়ে যা বিপদ গেছে তাতে কিছু বলতেও পারি না!”
রাইমা আলতো হেসে শাহেদের হাতের উপর হাত রেখে বললো,
–“সব ঠিক হয়ে যাবে দেখো!”
–“আমি বাবাকে নিয়ে চিন্তায় আছি!”
রাইমা ভ্রু কুচকে বললো,”কেন?”
–“বাবা কখনোই মানবে না এই বিয়ে। হতে দেয় কী না সন্দেহ।”
রাইমা মাথায় হাত দিয়ে কিছু একটা ভাবলো। অতঃপর আবার শাহেদকে আশ্বাস দিয়ে বলে,
–“সব ঠিকঠাক হবে। এত চিন্তা করো না। তাহানের এই নিষ্পাপ মুখ দেখে সব ভুলে যাও তো দেখি!”
——————-
ক্লাস টেস্টের খাতা দেখতে ব্যস্ত আনোশী। পুরো দিনে কারো সাথে কথা বলেনি আনোশী। ফিরেছেও ইচ্ছাকৃত সন্ধ্যার পরপর। বাসা কেমন বিষাদ লাগছে তাঁর। উপায় থাকলে সারা রাতেও আনোশী ফিরতো না। বাসায় ফিরলেও দরজা আটকে রুমে বসে আছে। মামী, তাশুতি দুজনেই তাকে ডেকেছে কিন্তু কোনো রকম সাড়া দেয়নি সে। খাতা দেখতে দেখতে হঠাৎ-ই ফোন বেজে ওঠে তাঁর। আননোন নাম্বার। আনোশী নাম্বারটা চিনেও ফোন ফেলে দিলো না। বরং রিসিভ করলো। যতই হোক, তাঁর চিঠির উত্তর তো জানতে হবে। আনোশী কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে শেহরিম বললো,
–“রিং কেন ফিরিয়ে দিয়েছো?”
–“স্বর্ণের আংটি, আমার অবহেলায় হারিয়ে গেলে তা শোধ করতে পারবো না। এজন্য আসল মালিকের কাছেই পৌঁছে দিয়েছি।”
–“তোমার আমার এঙ্গেজমেন্ট হয়ে গেছে আনোশী!”
–“এটা এঙ্গেজমেন্টের কাতারেই পরে না। আপনি আমার জন্য অশুভ এবং অপবিত্র। ভাবলেন কী করে আমি এই বিয়ে কবুল করে নিবো? বিয়ের ছোট্ট কোনো অংশও আমি মানতে রাজি নই!”
–“আমাকে ভুল বুঝো না আনোশী, আমি সত্যি..”
–“আমি বড়োই ব্যস্ত মানুষ। আপনি ফ্রী থাকলে আপনার দলের কাউকে খুঁজে নিন বিরক্ত করার জন্য। আল্লাহ্ হাফেজ!”
শেহরিমের কোনো কথা না শুনেই আনোশী কল কেটে দিলো। শেহরিম ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল। কীভাবে আনোশীকে মানাবে বুঝে উঠতে পারলো না। আনোশীর সাথে জোর-জবরদস্তিও করা সম্ভব না কারণ জোর করে কিছুই সম্ভব না। বেশ, আনোশীকে সময় দেওয়াই ভালো মনে করলো শেহরিম। সে নাহয় দূর থেকে-ই আনোশীকে দেখে যাবে।
আনোশী ফোন রাখতে না রাখতেই আবারও রিংটোন বেজে ওঠলো। এবার অবশ্য রঙ নাম্বার নয়। পরিচিত নাম্বার। নীল কল করেছে। আনোশী ফোনের দিকে এক ধ্যানে চেয়ে রইলো। যার ফলে রিংটোন একসময় বন্ধ হয়ে গেলো। আনোশী ফোনের দিক থেকে নজর ঘুরিয়ে খাতার দিকে দিলো। নীল বেশ কয়েকবার কল দিলো কিন্তু আনোশী সেদিকে মনোযোগ দিলো না।
রিংটোন বাজতে বাজতে একসময় হয়তো রিংটোনেরাও ক্লান্ত হয়ে পরলো। তাইতো ভাইব্রেশন হয়ে একটি মেসেজ দৃশ্যমান হলো। আনোশী কৌতুহলবশত ফোনের দিকে তাকালো। নীলের মেসেজ। লিখেছে,
–“আমি জানি তুমি জেগে আছো, আর ইচ্ছাকৃত কল ধরছো না।”
মেসেজিটি দেখে হাতের কলম নামিয়ে মুঠোফোনটি হাতে তুলে নিলো আনোশী। নীল আবার মেসেজ করলো,
–“ওকে ফাইন। কথা দিচ্ছি, কালকে আর চা খাওয়ার জন্যে জোর করব না। তাও কলটা ধরো প্লিজ। নয়তো কাল সারাদিন চায়ের উপর নির্ভরশীল হয়ে পরতে হবে!!”
নীলের কথা শুনে আনোশী আপনমনে হেসে উঠলো। নীল আবার কল জরলো। এবার আনোশী কল রিসিভ করলো। নীল সোজা-সাপটা বললো,
–“শেষ মেসেজের মানে বুঝেছো?”
আনোশী নৈঃশব্দে হেসে বললো,
–“বুঝেছি। আমি কারো ঘুম কাড়ার কারণ হতে চাই না!”
–“দ্যাট’স লাইক এ গুড গার্ল। তবে প্রতিদিন কল দিতে দিতে ক্লান্ত করে ফেলো কেন?”
–“সত্যি ক্লান্ত হন আপনি?”
–“এই না, না। কে বলেছে?”
এভাবেই বেশ কিছুক্ষণ দুজনের আলাপ চললো। আনোশী নীলের এই সঙ্গ অপছন্দ করে তাও নয়। বরং সে নীলের বাচ্চামো উপভোগ করে।
~[ক্রমশ]