#একটা_সাধারণ_গল্প
#পর্ব_দুই
#সঞ্চারী_চ্যাটার্জী
-এই তুই প্রথমেই ব্যপারটাকে কেঁচিয়ে দিচ্ছিস।
ফিসফিসিয়ে বললো মহিম।
-কি করে?
-এমন টোন কেউ কাটে!
-হু!
বলেই সেই নবগতার দিকেই মনোনিবেশ শুভ।
মাম্পির খাতা দেখে কিছু একটা লিখছে ও।
রথীন স্যারের পড়ানো শুধু খাতায় লিপিবদ্ধ করলো শুভম।মস্তিস্কে কিছুই স্থায়ী হল না।
ঘড়ি ধরে নির্ধারিত সময়ে পড়া শেষ করালো রথীন স্যার।
বাইরে চারচাকাটা দাঁড়িয়ে ছিল।ক্লাস থেকে বেরতেই হুস করে পর্ণা চলে গেল।
দরজায় দাঁড়িয়ে দেখল শুভ।
-যা চলে গেল!
-মহিম তুই এমন করে বলছিস যেন ও আর ফিরে আসবে না।
-না আসতেও পারে আমরাও কি কম করেছি এরকম।
না,পোষালে একদিন পড়তে গিয়ে তার পরেরদিনও যাইনি।এক্ষেত্র তেমনটা হতে পারে।
-ওইসব অশুভ কথা মুখে আনবি না।
সেই সময় সহপাঠী একজনের সাথে হাসতে হাসতে ঘর ছেড়ে বেরচ্ছিল মাম্পি।
-এই মাম্পি শোন!
খুব গুরুত্বপূর্ণ চলছিল ওদের মধ্যে,শুভর ডাকে বিরক্ত হল ও।
-কি বলবি তাড়াতাড়ি বল আমাকে আবার স্কুল যেতে হবে।
-স্কুলে তো আমিও যাব একটা কথা আছে শোননা ।
গলার স্বর নরম করলো শুভ।
-কি বল।
-পর্ণমোচি,ধুর! মানে ঐ পর্ণারে, ও কোথায় থাকে?কোন স্কুলে পড়ে রে?
-বাব্বা!প্রথম দিনেই এত জিজ্ঞাসা!লাভ নেই লাভ নেই ওর লাভার আছে।
শুভকে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ঐ স্থান ত্যাগ করলো মাম্পি।
-চুপসে গেলি যে। আমি তো আগেই বলেছিলাম ঐ মেয়ের লাভার থাকবে। আরে দেখেই তো বোঝা যায়..
-লাভার আজ আছে কাল না থাকতেও পারে। তা বলে চেষ্টা করবো না।
-সেই! লক্ষ্যে ঢিল তো মার,যদি লেগে যায়।
-চল এখন..
মুচকি হেসে সাইকেলের লক খুলতে উদ্যত হল শুভ।
-কি রে এখনো তোর ঘুম ভাঙেনি?এক বালতি জল ঢেলে সাহায্য করবো।
মাফলারটা কানে ভালভাবে জড়িয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছিল মহিম। সামনে শুভকে দেখে ভূত দেখার মত চমকে উঠলো। শুভ এত সকালে তাও ওর বাড়িতে!
-কম্বল দেব একটা?
-এই এখনো তো ছয়টা পনেরো হয়নি। এরমধ্যেই তুই আমার বাড়িতে উপস্থিত, ব্যাপারটা কি শুভ?
-ঘুম এলোনা রে,মনটা পর্ণা পর্ণা করে উঠলো।
-তুইতো শুনলি ওর লাভার আছে তবুও এত নাচানাচি করছিস কেন?
-আজ আছে কাল নাও থাকতে পারে। একটা চ্যান্স তো মারা যায়। মেয়েটাকে প্রথম দর্শনেই আমার ভালো লেগে গেল। একটু চেষ্টা করে দেখি না কি হয়।
-তুই একটা ক্যাঁচাল করবি মনে হচ্ছে।
-একদমই না। খুব শান্ত থেকে ব্যাপারটাকে হ্যান্ডেল করবো। ভয় নেই তোর বাবার কাছে কেউ অভিযোগ করতে পারবে না।
শুভর কথায় আশ্বস্ত হলো না মহিম,মুখে বললো,
-চল।
সময়ের অনেকটা আগে রথীন স্যারের ব্যাচে চলে এসেছে ওরা।তখনো আসেনি সেই কন্যা।
শুভর মনের মধ্যে তখনও সংশয় সত্যিই আসবে তো সে।
বেল বাজতে বাজতে থামলো দুটো সাইকেল। মাম্পির সাথে ঢুকলো পর্ণশ্রী সেন।
মহিমের অভিমুখে তাকিয়ে চোখ টিপল শুভ।
আজও পর্ণাকে নজরবন্দী করে রাখলো শুভ। মাম্পি এমনকি পর্ণার সাথেও চোখাচোখি হল।
তবুও চোখ সরালোনা ও।
আবারো নির্ধারিত সময়ে রথীন স্যার ছুটি দিল। মাম্পির সাথে গল্প করতে করতে সাইকেল হাটিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিল পর্ণশ্রী সেন।
-মাম্পি শোন একটা কথা আছে।
স্কুলে প্রার্থনা সংগীতের জন্য মাঠে যাওয়ার আগে মাম্পির রাস্তা আটকালো শুভদ।
-শুভদ আমি জানি তুই কি বিষয়ে কথা বলবি। আমি তোকে স্পষ্ট বলছি পর্ণার লাভার আছে। সো তুই ওকে পাওয়ার আশা দূরে রাখ,ওর দিকে তাকাসও না।
-মাম্পি আমি তোর সব কথা মানবো,তুই শুধু ওর ব্যাপারে ডিটেলে জানা।
-অসম্ভব আমার মুখ থেকে এক বর্ণ বার করতে পারবি না তুই।
-মাম্পি আমি তোকে এগরোল খাওয়াবো।
-এই আমাকে তুই ঘুষ দিবি?
চিৎকার করে উঠলো মাম্পি।
-প্র্যাকটিক্যালে তোর সব আঁকা গুলো আমি করে দেব।
মিনমিনে গলায় প্রস্তাবটা রাখল শুভ।
-অফ পিরিয়ডের সব বলছি।
-না, এখুনি ক্লাসে চল।
মাম্পি দেখল মাঠের মধ্যে সকলে লাইনে দাঁড়িয়েছে।তবুও লোভনীয় প্রস্তাবটা ছাড়তে পারলো না ও।
-চল তবে!
টিফিনেই স্কুল থেকে ডুব মারলো শুভ। কি কারণে যে শুভ গায়েব হল জানেনা মহিমও। শুভর অন্তর্ধান একটা রহস্য হয়ে রইলো ওর কাছে।
বিকেল সাড়ে চারটা:
কচিপাতা গার্লস হাই স্কুলের শেষ ঘন্টা পড়তেই ছাত্রীরা পিলপিলিয়ে বেরতে শুরু করল। ওই জনস্রোতের মধ্য থেকে একজন জনকে চিহ্নিত করা কষ্টকর। তবুও সেই কন্যাকে খুঁজে নিল শুভদ।
সামন্য চোয়াল খুলেছে সে। দুপাশের গজদন্ত বেরিয়ে মুখমন্ডলের শোভাবৃদ্ধি করছে।
রাস্তার ওপারে দাঁড়িয়ে আছে শুভদ।
সোজাসুজি তাকালেই পর্ণাও দেখতে পাবে ওর উপস্থিতি।
তাকাবে কি!
তাই হল, পর্ণার দৃষ্টিতে এলো শুভদ।চমকে উঠলো ও।থামিয়ে দিল ওর পদযুগল ও সাইকেল।মুহুর্তের মধ্যে নিজেকে সামলে নিল ও। বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে সাইকেলে প্যাডেল মারলো ও।
টানা পনোরো মিনিট সাইকেলিং করে ও ওর প্রাসাদসম বাড়ির দৈত্যাকার সদর দরজার সন্মুখে এল। ভিতরে প্রবেশ করার আগে পিছন ফিরে তাকালো।
হ্যাঁ ওর অনুমানই ঠিক।
অদূরে সাইকেল থামিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে।
শুভ নামে ছেলেটা ওরই পিছু নিয়েছে।ওষ্ঠ প্রসারিত হল ওর।
পরের ক্লাসে রথীন স্যারের কাছে পৌঁছে আবদারের সুরে পর্ণশ্রী বলে উঠলো,
-স্যার শীতকাল তো চলেই গেল আমাদেরকে কোথাও পিকনিকে নিয়ে চলুন।
-তুমি পিকনিকে যাবে?
মুখ ফসকে বলেই ফেলল শুভদ।
-প্রস্তাবটা যখন আমার মুখ থেকে প্রথম উচ্চারিত হলো তখন নিশ্চয়ই এটাতে সম্পূর্ণ সায় আছে।
গম্ভীর মুখে বললো পর্ণা।
-ইয়েস!
মহিতের অভিমুখে তাকিয়ে ডান হাতটাকে মুষ্ঠি করে নিজের দিকে টেনে উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বললো শুভ।