#প্রিয়োসিনী
#নীরা_আক্তার
#পর্ব_৪
কফি সপে ইসরাক আর তার এক্স নীলাঞ্জনা মুখোমুখি বসে আছে,নীলাঞ্জনা বেশ জোরে জোরেই কাঁদছে।নাক মুখ লাল হয়ে গিয়েছে তার।আশে পাশের লোক জন হা করে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
ইসরাক কফিতে একটা চুমুক দিয়ে নীলাঞ্জনার দিকে তাকায়,ধমকের সুরে বলে উঠে,
-কান্না থামাও
-(..)
-বললাম না কান্না থামাও
নীলাঞ্জনা ইসরাকের হাতটা ধরতে নিলে ইসরাক হাত সরিয়ে নেয়।
-ধরবা না আমাকে।
-আমার ভুল হয়ে গিয়েছে ইসরাক মাফ করে দাও প্লিজ।আমি আজই এ্যাবোর্শান করিয়ে নেবো।
ইসরাক কিছু বলছে না আস্তে আস্তে চুমুক দিয়ে কফি খাচ্ছে
-কিছু বলছো না কেন?
-কি বলবো?
-আমার ভুল হয়ে গিয়েছে!
-সজলকে বিয়ে করে নাও।
নীলাঞ্জনা সজলের নাম শুনে কেঁপে উঠে।কান্নার বেগ বেড়িয়ে দেয়।
-তুমি নিজে থেকে না বললোও আমি সব জানি বাচ্চাটা সজলের তাই না?তুমি আমায় ঠকিয়েছো!
নীলাঞ্জনা মাথা নিচু করে কাঁদতে থাকে।
[ইসরাক আর নীলাঞ্জনার সম্পর্ক প্রায় সাড়ে চার বছর হতে চললো।ইসরাকের খুব কাছের বন্ধুদের একজন সজল।নীলাঞ্জনা ইসরাকের ভার্সিটিতে ১ বছরের জুনিয়র ছিলো।ভার্সিটির কালচ্যারাল অনুষ্টানে প্রথম দেখা নীলান্জনার সাথে।হালকা নীল রঙের শাড়ি।হাত ভর্তি চুড়ি।চোখে ঘন কালো কাজল।মাথায় ঢিলে খোপায় গোঁজা বেলী ফুলের মালা।সব মিলিয়ে যেন পরমাসুন্দরী। প্রথম দেখায় ইসরাকের বুকটা ধক করে উঠে।প্রথম দেখায় ভালোবাসায় বিশ্বাসী ইসরাক মনে মনে এই মেয়েটিকেই নিজের প্রিয়োসী হিসেবে মেনে নিয়েছিলো।সেদিনই এক গোছা ফুল হাতে নিয়ে হাটু গেড়ে বসে পরে নীলাঞ্জনার সামনে….প্রকাশ করে নিজের মনের লুকানো অনুরক্তি।
-তুমি কি আমায় বিয়ে করবে?আমায় বলো বিয়ে করে আমায় ভালোবাসবে নাকি ভালোবেসে বিয়ে করবে?কোনটা চাও?তুমি যা চাও তাই হবে কথা দিলাম।
নীলাঞ্জনা ইসরাকের এমন প্রস্তাবে আকাশ থেকে পরে।সচরাচর প্রেমিক পুরুষরা প্রেমের প্রস্তাব দেয়।কিন্তু এ কেমন পুরুষ?
ক্যাম্পাসে সব মেয়েরা যার জন্য পাগল সেই ইসরাক ইমতিয়াজ তার সামনে বসা।নীলাঞ্জনা মুচকি হেসে ইসরাকের হাত থেকে ফুল গুলো নিয়ে চলে যেতে থাকে।
-এই যে মিস….
-নীলান্জনা…
ইসরাক মুচকি হাসে
-উওরটা তে দিয়ে যাও?
-মৌনতা সম্মতির লক্ষন।
নীলান্জনার না বলার কারণও উপায় কোনোটাই নেই ইসরাক নীলাঞ্জনার দেখা প্রথম পুরুষ যে প্রথম দেখায় প্রেমের প্রস্তাব না দিয়ে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসে আছে ।
তারপর চলে দুজনের প্রেমের পালা।মাঝে অনেক বার মনমালিন্য হলেও কখনো ছাড়া ছাড়ি হয় নি।ইসরাক অনার্স কমপ্লিট করে দেশের বাহিরে চলে যায় হায়ার এডুকেশনের জন্য।নীলাঞ্জনা বড্ড একা হয়ে যায় ইসরাককে ছাড়া।
এই সময়ের মাঝেই ইসরাকের আড়ালে নীলাঞ্জন আর সজলের সম্পর্ক গড়ে উঠে।সম্পর্ক মন থেকে শরীর পর্যন্ত চলে যায়।ইসরাক ফেরার পর ব্যাপ্যারটা একটু একটু করে উপলব্ধি করতে থাকে।তার নীলাঞ্জনা আর তার নেই।নানা রকম সন্দেহ মাথা চাড়া দিতে থাকে ইসরাকের বুকের ভেতর।
তবুও ইসরাক নিজেকে সামলে রেখেছিলো।বিশ্বাসই যে সম্পর্কের মূল ভিত্তি।সেই বিশ্বাসের খুটিই যদি নরভরে হয়ে যায় তাহলে সম্পর্ক টিকে থাকবে কিসের জোড়ে।
সপ্তাহ খালিক আগেই ইসরাক নীলাঞ্জনা আর তার এক কোমন ক্লোজ ফ্রেন্ডের মাধ্যমে জানতে পারে নীলাঞ্জনা প্রেগনেন্ট।ব্যাস ইসরাকের আসমান জমিন এক হয়ে যায়।
সে ঠকে গিয়েছে।ভলোবেসে ঠকেছে।ইসরাক এখন মনে প্রানে বিশ্বাস করে ভালোবাসলেই ঠকতে হবে।]
নীলাঞ্জনার ডাকে ধ্যান ভাঙ্গে ইসরাকের
-কিছু বলছো?
-আমার ভুল হয়ে গিয়েছে।প্লিজ আমাকে ক্ষমা করো
-তুমি ভুল করো নি যা করেছো জেনে বুঝে করেছো।আর সেটা অন্যায়। যদি তুমি রাস্তায় কারো কাছে ধর্ষিত হতে। হয়ে যদি প্রেগনেন্ট হতে আই সোয়ার ওন গড আমি সেই মুহূর্তে তোমায় বিয়ে করে নিতাম।কোনো কিছুর
পরোয়া করতাম না। গোটা পৃথিবী থেকে তোমায় লুকিয়ে রাখতাম কারো পরোয়া করতাম না বাট….
-আমি এ্যাবোর্শান….
ইসরাক টেবিলে কয়েকটা বারি দেয়।জোরে জোরে কথা গুলো বলে উঠে,
-আর একবার এবোর্শ্যানের নাম মুখে নীলে এখানেই মেরে পুতে ফেলবো তোকে।নোংরামি করবি তোরা আর ফল ভোগ করবে এইসব অনাগত বাচ্চারা।
তাদের কি দোষ?
সবাই তাদের দিকে তাকায়।নীলাঞ্জনা লজ্জা পায়।ইসরাক নিজেকে সামলে নিয়ে প্রশ্ন করে
-সজলকে জানিয়েছো?
-হু?
-বিয়ের কথা বলোনি?
-তুমি ছাড়া আমি কাওকে বিয়ে করবো না।মরে যাবো আমি
ইসরাক হো হো করে হেসে উঠে,
-ছলনা কাকে বলে কতো প্রকার ও কি কি তা তোমাদের মেয়েদের কাছ থেকে শেখা উচিত।সোজা উওর দিলেই পারতে সজল বিয়ে করতে চাইছে না।ভগিজগি কাকে বুঝাও তুমি?
নীলাঞ্জনা আবারও শব্দ করে কেঁদে উঠে।ইসরাক নীলান্জনাকে কফির মগটা এগিয়ে দিয়ে বলতে শুরু করে,
-আমি সজলকে বুঝিয়ে বলবো।সজলের সাথে তোমার বিয়ের দায়িত্বটা আমি নিলাম।নিজের আর নিজের অনাগত বাচ্চার খেয়াল রেখো!
ইসরাক নীলাঞ্জনা কে বাড়ি পৌছে দেয়।ইসরাকের গাড়ি থেকে নামার সময় নীলান্জনা ইসরাককে জড়িয়ে ধরে,
-প্লিজ ক্ষমা করে দাও না আমায়।তুমি ছাড়া আমি আর কিছু চাই না কাওকে চাই না।প্লিজ!চলো না বিয়ে করে নিই।তোমার বাড়ির এক কোণে পড়ে থাকবো
-আমি অলরেডি বিবাহিত।নিজের খেয়াল রেখো।মাতৃত্বর সাথে অনেক দায়ত্ব আর সন্মান রয়েছে।প্লিজ নিজেকে এতো ছোট করো না যে মাটিতে মিশে যাতে হয়।
ইসরাক চলে যায়।
নীলাঞ্জনা ইসরাকের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
“এই পৃথিবীতে সবচেয়ে লাকি পারসোনটা ছিলাম আমি যে তোমার মতো কাউকে জীবন সঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলাম।এখন সবচেয়ে আন লাকি পারসোনটাও আমি যে তোমাকে পেয়েও হারিয়ে ফেললাম।নিজের বিবাহিত জীবনে সুখি হও।তোমার পথের কাটা আমি কখনোই হবো না!
নীলাঞ্জনা সেখানে দাড়িয়েই ইসরাকের নাম্বারে মেসেজটা সেন্ড করে দেয়।তারপর কাঁদতে কাঁদতে ঘরে চলে যায়।
মেসেজটা ইসরাকের কাছে না পৌছালেও নওরিনের কাছে ঠিক পৌছে গিয়েছে।নওরিন ফোনটা তুলে জোরে একটা আছাড় মারে…সাথে সাথে ফোন ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হয়ে যায়।
নওরিনের অবস্থা ভীষন খারাপ রাগে ক্ষোভে ঘেন্নায় তার যা ইচ্ছে তাই করতে মন চাইছে।
বাবা কি না শেষ পর্যন্ত তাকে এমন নোংরা অসভ্য ছেলের সাথে বিয়ে দিলো।যার না আছে চরিত্রের ঠিক না জানে সভ্য আচরন।।
” আচ্ছা ওনি কি সত্যিই ওনার প্রেমিকাকে প্রেগনেন্ট অবস্থায় ছেড়ে দিয়েছেন?ছি ছি কি নোংরা লোক।এমন লোকের সাথে থাকবো কি করে”
নওরিন নিজে নিজেই কথা গুলো বলছিলো। এমন সময় পেছন থেকে ইশা আসে,
-কাকে নোংরা বলছিস?
-কাকে আবার আমার বুড়ো বরকে…!
নওরিনের কথায় ইশা ফিক করে হেসে দেয়।নওরিনের রাগে গা জ্বলছে।
-তোর ভাইয়ের কোনো গফ ছিলো?
ইশা একটু ভেবে উওর দেয়
-কেন?
-বল
-ছিলো তো…তবে এখন আর
-থাক বাদ দে
কিছু একটা ভেবে ইশা চোখ মুখ শক্ত করে দাড়ায়।কাঁদো কাঁদো মুখ করে নওরিনকে প্রশ্ন করে,
-আমান ভাইকি তোকে কখনো ফোন করেছে রিনি?কোনো যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে কি?জানিস কিছু?
আমানের নামটা শুনেই নওরিনের হাত পা কাঁপতে শুরু করে।ইশা নওরিনের কাছে দুই ধাপ এগিয়ে আসে।নওরিনের হাতটা শক্ত করে ধরে
-সেদিনের পর থেকে এতোগুলো দিন কেটে গেলো বছর গড়িয়ে গেলো আমান ভাইয়ার কোনো খোজ নেই জানিস!মরে গিয়েছে না বেঁচে আছে আমরা সেটাও জানি না।
নওরিন তোক মুখ শক্ত করে হাপাতে থাকে।
-মরলে মরবে বাঁচলে বাঁচবে তাতে আমার কি।আমি এই লোকটার নামও শুনতে চাই না প্লিজ….এমন লোকের মরাই উচিত।
নওরিন কথা গুলো বেশ জোরে জোরেই বলে উঠে…..
পেছন থেকে ইসরাকের কানেও কথাগুলো চলে যায়।ইসরাক দরজার সামনেই ছিলো।ঘরে ঢোকার সময় আমানের নামরা কানে পৌছাতেই ইসরাক থেমে যায়।
দরজায় সজোরে একটা ঘুষি মারে।
নওরিন ইশা দুজনই দরজার দিকে তাকায়।ইসরাকের ইচ্ছে করছিলো নওরিনের গলাটা চেপে ধরতে যাতে মুখ দিয়ে আর একটা কথাও না বার হয়,
“লজ্জা করলো না কথাগুলো বলতে?ঘেন্না লাগে না নিজের উপর?তোদের মতো মেয়েরা শুধু ভালোবাসার নাম করে ছলনাই করতে পারে।একজন পুরুষের হৃদয় আত্তা সত্তা সবটা নিংড়ে নিয়ে তাকে মাটিতে মিশিয়ে ফেলতে পারে….. ”
ইসরাকের খুব ইচ্ছে করছে নওরিনকে কথাগুলো বলতে।কিন্তু সে নিজেকে সামলে নেই।মনে মনে কথাগুলো বলেই ওয়াশরুমে চলে যায়।
ইশাও ভাইকে দেখে সেখান থেকে প্রস্থান করে।
ওয়াশরুম থেকে বার হয়ে ইসরাক নওরিনের সামনে আসতেই…নওরিন ইসরাকের কলার চেপে ধরে,
-আপনি যে অসভ্য একজন পুরুষমানুষ এটা কাল রাতেই বুঝে গিয়েছিলাম,কিন্তু এতোটা চরিত্রহীন সেটা আজকে আবিষ্কার করলাম
ইসরাক ভ্রু কুচকে তাকায় নওরিনের দিকে,
নওরিন ইসরাকের ভাঙ্গা ফোনটা ইসরাকের সামনে উচু করে ধরে….ইসরাক বড়বড় চোখ করে তাকায় ফোনের দিকে!
নওরিন ইসরাকের মুখের সামনে এসে তুড়ি বাজায়,
-আপনার মতো বুড়ো খোকাকে কি করে শায়েস্তা করতে হয় তা আমার খুব ভালো করে জানা আছে।
ইসরাক নওরিনের হাতটা পেচিয়ে ধরে,
-কি বললে?
-বুড়ো বলেছি।চরিত্রহীন পুরুষমানুষ।ধরবেন না আমাকে। ঘেন্না লাগছে।আপনার সংসার তো আমি এমনিতেও করবো না….তবে যাওয়ার আগে আপনার শাস্তির ব্যবস্থা করেই যাবো!
–ওহ্ তাই নাকি তুমি আমাকে শাস্তি দেবে নাকি আমি তোমাকে দেবো?
–আমি আবার কি করলাম?
চলবে…..
#প্রিয়োসিনী
#নীরা_আক্তার
#পর্ব_৫
“ইশা আমি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি তোর এই চরিত্রহীন ভাইয়ের সাথে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না….”
নওরিন কথাগুলো বলেই ব্যাগ হাতে বেরোতে গেলে ইশা নওরিনের হাত চেপে ধরে।
*******
[কাল রাতে ইসরাক আর নওরিনের মাঝে বেশ রাগারাগি হয়।নওরিন বার বার করে ইশরাকের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।প্রশ্নটা যখন একজন চরিত্রবান মানুষের চরিত্র নিয়ে উঠে তখন নিজেকে সামলে রাখা কঠিন হয়ে দাড়ায়।ইসরাক চেষ্টা করছে নিজেকে সামলে রাখার।
কিন্তু নওরিন ছাড় দেওয়াতে বিশ্বাসী নয়,
সে তো নিজের মতো করে অভিযোগ করেই যাচ্ছে,
-আপনি আপনার প্রগনেন্ট গফকে বিয়ে করে ফেলুন ডিভোর্স আমি দিয়ে দেবো।
ইসরাক ভ্রু কুচকে উওর দেয়,
-কি বললে?
-আমি হিন্দি সিরিয়ালের সাইড নাইকার মতো নায়ককে নিয়ে অন্য মেয়ে মানুষের সাথে কামড়াকামড়ি করতে পারবো না।আর আপনার মতো চরিত্রহীন লম্পটের জন্য তো একদমই নয়
-ইউ…
-জ্বী নীলাঞ্জনা নাকি খঞ্জনা তার সাথে কথা হয়েছে আমার।ভুলে ফোন রেখে গিয়েছিলেন।তাই তো সব জানলাম।আপাতোত সব জেনে গেছি আমি লুকানোর চেষ্টা করবেন না।
নওরিন একটু থেমে আবারও বলে উঠে,
-ছি ছি মিস্টার ইসরাক আপনি নাকি একজন শিক্ষক।নিজের স্টুডেন্টদের কি শেখাবেন আপনি?কিভাবে মেয়ে পটিয়ে তাদের খে*য়ে ছেড়ে দেওয়া যায় সেই সব?
-কি ভাষা?
–আপনার মতো নেংরা মানুষের জন্য এটাই উপযুক্ত ভাষা
ইসরাক আর নিজেকে সামলাতে পারে না ঠাটিয়ে একটা চড় বসিয়ে দেয় তার গালে,
-নীলাঞ্জনা কি তোমায় বলেছে বাচ্চাটা আমার?দেন হু দ্যা হেল আর ইউ?আমার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলার সাহস কি করে হয় তোমার?কতোটুকু চেনো তুমি আমায়
-আপনার গফের পেটে আপনার বাচ্চা থাকবে না তো কি ভূতের বাচ্চা থাকবে?আবার সেই বাচ্চা নষ্ট করার কথা বাচ্চার ভূত বাবাকে না বলে আপনাকে বলবে?আমাকে দেখে কি মনে হয় আমি ঘাস খাই
-তুমি আসলেই ঘাস খাও কি না সে ব্যপারে আমার সন্দেহ আছে!
-কতোটা নোংরা আপনি।সব জানার পরও আমার কাছে সবকিছু অস্বীকার করে সাধু সাজছেন।
ইসরাক অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় নওরিনের দিকে,
-বাচ্চা আমার নয়।আমি সব বুঝিয়ে বলছি….
নওরিন কোনো কথা শুনতে চায় না।
-আমি থাকবো না আপনার সাথে।কালই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবো।বেরিয়ে সোজা পুলিশের কাছে যাবো।রেপ কেস থেকে শুরু করে নারী নির্যাতন সব মামলা দেবো আপনার নামে।বাকি জীবন জেলেই কাটাবেন।আপনাকে আপনার উপযুক্ত শাস্তি দিয়েই যাবো।
রাগে গজ গজ করতে করতে কথাগুলো বলে নওরিন।ইসরাক এবার আরো রেগে যায়।চিনচিন করে মস্তিষ্কের রক্ত প্রবাহ বাড়তে থাকে।ইসরাক কিছু বলার আগেই
নওরিন এবার কাঁদতে শুরু করে…..
-ছলা কলা তোমাদের মতো মেয়েদের কাছ থেকে শেখা উচিত।কি করে পুরুষমানুষের মাইন্ড ডাইভার্ড করতে হয় তার একটা কোচিং ক্লাস শুরু করো।
-কি বললেন?
-তোমার অতীতের সব রেকর্ডই আমার জানা।
-কি বললেন
-গেট আউট
-কি?
-বাড়ি যাবা নাকি যাও বেরিয়ে যাও!আমার চোখের সামনে যেন তোমাকে না দেখি।
নওরিন অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।
ইসরাক বিছানা থেকে বালিশটা নিয়ে ঢিল মারে নওরিনের দিকে।
-বার হও আমি ঘুমাবো!
-বিন্দু মাত্র মায়া দয়া নেই আপনার শরীরে।এইসব পাগলা ঘোড়ার মতো মানুষের সাথে আমি ও থাকতে চাই না।চাইনা আপনার বালিস আপনি রাখুন।রাক্ষস একটা…
নওরিন বালিসটা আবারও ইসরাকের দিকে ছুড়ে মারে।তারপর ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
ইশার দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে নওরিন।অনেক রাত হয়েছে।হয়তো ঘুমিয়েও গেছে কিন্তু না ডেকে উপায়ও নেই।দরজায় দুইবার নক করতেই ইশা দরজা খোলে। নওরিন কাঁদতে কাঁদতে ইশাকে জড়িয়ে ধরে।
সে রাতে দুজন একসাথেই ঘুমোই]
সকাল সকাল নওরিন জামা কাপড় পড়ে তৈরী হয়।এ কয়দিন নওরিন শাড়ি পড়লেও আজ সালোয়ার কামিজ পড়েছে।নওরিন ব্যাগ হাতে ঘর থেকে বার হতে হতে ইশাকে বলে উঠে,
-ইশা আমি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি তোর এই চরিত্রহীন ভাইয়ের সাথে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না…
ইশা অবাক হয়,
-কি বলিস এই সব?
-ঠিকিই বলছি।আমি আব্বুর কাছে চলে যাবো।তোর ভাইয়ের মতো নোংরা একটা লোকের সাথে আমার পক্ষে থাকা সম্ভব না।
–আমার ভাইকে নিয়ে এই সব বাজে কথা বলবি না রিনি!
নওরিন ইশার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
-তুই কি জানিস তোর ভাই তার গফকে প্রেগনেন্ট করে ছেড়েছে।এখন বাধ্য করছে এবোর্শনের জন্য।মেয়েটার না জানি কি অবস্থা হয়েছে।
-অসম্ভব আমার ভাই এমন না।
নওরিন একটা বড় নিঃশ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করে,
-জানি বিশ্বাস করবি না কিন্তু তবুও বলছি কাল ঐ মেয়েটার সাথে আমার কথা হয়েছে।
ইশা যেন আকাশ থেকে পড়ে,
-নীলাঞ্জনা আপু নিজে তোকে এই সব বলেছে?
– ফোনে বলেছে।
নওরিন ইশাকে সব খুলে বলে।ইশার যেন কিছুই বিশ্বাস হচ্ছে না,
-আমার ভাইয়ের রাগটা একটু বেশিই।রেগে গেলে নারী পুরুষ ছোট বড় কাওরে ছাড় দেয় না তবে আমার ভাইয়ের চরিত্রে সমস্যা এটা গোটা পৃথিবী বললেও বিশ্বাস করবো না।
-তোরা তোদের বিশ্বাস নিয়ে থাক।আমি চললাম।
ইশা নওরিনের হাত থেকে ব্যাগটা কেড়ে নেয়।
-নিচে চল খাবার খাবি।কাল থেকে কিছু খাস নি।তারপর ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখবি।
নওরিন কথা বাড়ায় না।বলে লাভ নেই।নিজের ভাইকে নিয়ে খারাপ কথা বললে যে কারোরই খারাপ লাগবে এটাই স্বাভাবিক।
নওরিন আর ইশা একসাথে নিচে নামে।ব্রেকফাস্ট টেবিলে অলরেডি সবাই বসা আছে।নওরিন সবাইকে সালাম দিয়ে বসে পড়ে।দাদু আজ ঘরেই ব্রেক ফাস্ট করবে তার শরীরটা নাকি খারাপ।তবে বাকিরা এখানেই আছে।
নওরিনের শ্বশুর নওরিনের দিকে তাকায়।মুচকি হাসি দিয়ে প্রশ্ন করে,
-কেমন আছো মা?এবাড়িতে তোমার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো?
নওরিন মাথা নাড়ায়,
জিনাত সিকদার খাবার নিয়ে টেবিলে আসতেই চোখে পরে নওরিনের দিকে।
রিনরিনিয়ে বলে উঠে,
-এইসব কি পড়ছো?তুমি না বাড়ির বউ?
নওরিন শ্বাশুড়ির দিকে তাকায়,
-কোই অ্যান্টি খারাপ তো কিছু পরিনি।
নওরিন মিন মিন করে উওর দেয়।
জিনাত সিকদার স্বজোরে টেবিলের উপর বাটিটা রাখে,
-এই মেয়ে একটা কথাও মাটিতে পড়তে দেয় না।সব কথারই মুখে মুখে উওর দেয়া চাই।
নওরিন মুখ শুকনা করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।নওরিনের শ্বশুর স্ত্রীকে ধমক দেয়।
-কি শুরু করলে?বউমা ছেলে মানুষ।তাকে একটু নিজের মতো থাকতে দাও
জিনাত কোনো উওর দেয় না। রান্না ঘরে চলে যায়।
নওরিনের ভিষন ক্ষুধা লেগেছে।আপাতোতো এইসব বড়লোকি খাবারে তার পেট ভরবে না।
এবাড়িতে সকালে কেউ ভারি খাবার খায় না।সে অসহায় মুখ করে চায়ের কাপটা এগিয়ে নিতে গেলে শিউলি পারভিন সেটা হাত থেকে নিয়ে এক প্লেট গরম ভাত এগিয়ে দেয়।
নওরিন অবাক হয়ে তাকায়।
-তোমার মুখটা শুকিয়ে গেছে খেয়ে নাও।নতুন বউ এভাবে না খেয়ে থাকতে নেই।মায়ের মন, মেয়ের কষ্ট ঠিক বোঝে।
মায়ের মন মেয়ের কষ্ট ঠিক বুঝে।
নওরিন একবার সবার দিকে চোখ ঘুরিয়ে নেয় যে যার নিজের মতো খেয়েই চলেছে।সে খেতে শুরু করে।
ইসরাক বেরিয়ে যায়।আজ তার মর্নিং এ ক্লাস নিতে হবে।রাতের পর থেকে নওরিনের সাথে তার আর কোনো কথা হয় নি।বার কয়েক চোখাচোখি হলেও কথা হয় নি। দুজনই দুজনকে এড়িয়ে চলছে।
********
দশটা নাগাত সে কাঁধে ব্যাগ হাতে বের হয়।গুটি গুটি পায়ে দরজার কাছে আসতেই দেখা হয় জিনাত সিকদারের সাথে।চোখে চশমা এটে তিনি পত্রিকা নিয়ে বসে ছিলেন।নওরিনকে ব্যাগ হাতে দেখে প্রশ্ন করেন,
-এই সকালে কোথায় বার হচ্ছো তুমি?
–আমি আসলে চলে….
পেছন থেকে ইশা বলে উঠে,
– ও একটু কলেজ যাবে।খুবই ইম্পোর্টেন্ট ক্লাস আছে।ভাইয়াকে বলেছে সে…..!!
জিনাত সিকদার চেচিয়ে উঠে….
-বাড়িতে কি শুধু তোর ভাইই থাকে?
ইশা একটু ইতস্ততভাবে বলে উঠে,
-মা প্লিজ ইম্পোর্ট্যান্ট।
জিনাত সিকদার রিনরিনিয়ে বলে উঠেন,
-বাড়ির বউ বিয়ের সাত দিন না গড়াতেই বাহিরে যাওয়ার বায়না?কি করবে পড়াশোনা করে?
এবারও জিনাত সিকদারের কথায় তেমন কান দেওয়া হয় না।দাদু নওরিনকে অনুমতি দেয় যাওয়ার।
নওরিনের মনের কথাটা মনেই থেকে যায়।সে তো কলেজ যাবে না সে তো একেবারে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে।ইশা নওরিনকে থামিয়ে দেয়।পাশে টেনে চিমটি কাটে,
“বুঝেছি তোর মন খারাপ।বাবা মায়ের কাছ থেকে একটু ঘুরে আয় ভাললাগবে।এদিকে আমি ম্যান্যাজ করে নেবো।বিশ্বাস কর রিনি আমার ভাই এমন কাজ করতেই পারে না।ওর চরিত্রে কোনো দাগ নেই”
নওরিন কোনো কথা বলে না।বেরিয়ে পড়ে।বাড়ি থেকে গাড়ি দিতে চাইলেও সে জীদ করে গাড়ি ছাড়ায় বার হয়ে যায়।
নওরিন মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে সে আর ফিরবে না।সে মনে প্রানে বিশ্বাস করে ইসরাকও তাকে ফেরাতে চাইবে না।একজন পুরুষ মানুষ যা চায় তা তো সে পেয়েই গিয়েছে।আর কেনই বা তাকে ফেরাতে চাইবে।
নওরিন বাড়ির দরজায় এসে অনেক সময় দাড়িয়ে আছে।কয়েকবার কলিং বেল বাজাতেই দরজা খোলে নওরিনের বড় ভাবি।
নওরিন বড় ভাবিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,নওরিন কান্না করছে ।
তিনি নওরিনকে ভেতরে নিয়ে যান।নওরিন কান্না করতে করতে বলে উঠে,
–সে আর ঐ বাড়িতে যাবে না।সব ছেড়ে ছুড়ে চলে এসেছে!
বড় ভাবি ছোট ভাবি সবাই অবাক,
সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে নওরিনকে নিয়ে।
এরই মাঝে নওরিনের মায়ের আগমন ঘটে।
নওরিন মাকে জড়িয়ে ধরে,
–আম্মু প্লিজ আমি আর ঐ বাড়িতে যাবো না।লোকটা ভালো নয় আম্মু।
নওরিনের মা নওরিনকে টেনে ঘরে নিয়ে যায়।ভেতর থেকে দরজাটা বন্ধ করে দেয়।
নওরিনের ভাবি রা হতবাক হয়ে দাড়িয়ে আছে।
নওরিনের মা নওরিনকে বিছানায় বসায়।এক গ্লাস পানি এগিয়ে দেয়।নওরিন ঢক ঢক করে সব পানিটুকু খেয়ে নেয়।
-কি সমস্যা হয়েছে তোর?
–আম্মু আমি থাকবো না ঐ বাড়িতে লোকটা,
নওরিনের মা নওরিনকে থামিয়ে দেয়,
-বিয়ে দিয়েছি তোমায়।তুমি এখন পরের ঘরের মেয়ে।আর ঐ ঘর বর সংসারটাই এখন তোমার নিজের।আমরা এখন পর।নিজের ঘরের কথা পরকে বলতে নেই।
নওরিন অবাক চোখে মায়ের দিকে তাকায়,
-রিনি তোকে ধর্ষিতা বলে এই গোটা শহরটা রিজেক্ট করেছিলো।তোকে নিয়ে তো মৃত্যু ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না।ইসরাকের মতো ভালো ছেলে নিজে যেচে পড়ে তোকে আশ্রয় দিয়েছিলো।হয়তো কোনো ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।প্লিজ রিনি মানিয়ে নে।একটু মানিয়ে গুছিয়ে নে মা।সব ঠিক হয়ে যাবে।
–আম্মু
-ধর্ষিতা হওয়ার অপবাদ কি কম পড়েছিলো যে এবার ডিভোর্সি নামক অপবাদ টা গায়ে নিয়ে বাঁতে চাচ্ছিস?এভাবে বাঁচতে পারবি তো???
নওরিন কোনো কথা বলে না।মা কি বুঝাতে চাচ্ছে সে বেশ বুঝতে পারছে।
নওরিন ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে আছে।ক্ষনে ক্ষনে তাকে ডাকা হচ্ছে কিন্তু সে দরজা খুলবে না বলে পণ করেছে।কিছুতেই না।নওরিনের বাবার কপালে চিন্তার ভাজ।কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না।
বউ ভাতের দিন ইসরাকের ব্যবহার তার মনে বেশ দাগ কেটে দিয়েছে।নওরিনের মা তখন থেকে নওরিনকে বকেই যাচ্ছে।নওরিনের বড় ভাই মাকে শান্ত করার চেষ্টায় আছে।বোন না চাইলে তাকে যেতে দেবে না সে।বোনের সব দায়িত্ব সে নেবে।হাজার হোক একটা মাত্র বোন তার।
কিন্তু নওরিনের মা মানতে নারাজ।সংসারে এমন অনেক সমস্যা হবেই,মেয়ে মানুষকে সব মানতে হবে,মানিয়ে নিতে হবে নিজেকে।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চললো,নওরিন ঘর থেকে বার হয় নি।সবাই ডেকেছে নওরিন এক কথায় উওর দিয়ে দিয়েছে।
-ঐ বাড়িতে আমি কিছুতেই ফিরবো না।দরকার পরলে সারা জীবন এই ঘর বন্দী হয়ে বেঁচে থাকবো।
নওরিনের ইচ্ছে করছে মরে যেতে।কিন্তু প্রান নিতে সাহস লাগে হোক সেটা অন্যের কিংবা নিজের।।
“তুমি নিজে থেকে দরজা খুলবে নাকি আমাকে দরজা ভাঙ্গতে হবে?”
নওরিন চমকে উঠে….
চলবে…..