প্রিয়োসিনী পর্ব ৬+৭

0
449

#প্রিয়োসিনী
#নীরা_আক্তার
#পর্ব_৬
“তুমি কি দরজা খুলবে নাকি আমাকে দরজা ভাঙ্গতে হবে?”
ইসরাক দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে।

নওরিন বাসা থেকে বার হওয়া মাত্রই ইশা ইশরাককে ফোন দেয়।
-ভাইয়া নওরিন চলে গেছে?পাগলামো করছে।তুমি নাকি নীলাঞ্জনাকে….
এতোটুকু বলেই ইশা চুপ হয়ে যায়।এমন অসভ্য কথা ভাইকে বলতে তার ভীষন লজ্জা লাগছে।
ইসরাক জোরে দম ছাড়ে।নওরিন এমন কিছু যে করবে তা সে বেশ বুঝতে পেরেছিলো।

ইশা আরেকটু থেমে বলে উঠে,
-পাগলীটাকে নিয়ে আয় ভাইয়া।কি না কি করে বসবে কে জানে
ইসরাক ধমকের সুরে বলে উঠে,
-তোর মাথা খারাপ বন্ধুর ছাগলামো দেখার সময় আমার নেই। ক্লাস আছে রাখছি।আর ফোন দিবি না
-ভাইয়া…
ইসরাক ফোন কেটে দেয়।
ক্লাস শেষ করে ইসরাক বেরিয়ে পরে নওরিনের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
*****
ইসরাক নওরিনকে দরজা খুলতে বলে দরজায় সজোড়ে বারি দেয়।
নওরিন কোনো উওর দিচ্ছে না।
-দরজা খুলবা নাকি সত্যি ভাঙ্গবো।আমি কিন্তু কোনো কিছুর পরোয়া করি না।

ইসরাকের কথাটা নওরিনের কান অব্দি পৌছানো মাত্রই খট করে দরজাটা খুলে দেয়।নওরিন সবার ডাক উপেক্ষা করতে পারলেও ইসরাকের ডাক উপেক্ষা করতে পারে না।লোকটা প্রচুন্ড বদ মেজাজি সঙ্গে পাগল।মাথার কয়টা তারটা কটা কে জানে!বাড়ি ভর্তি লোকের সামনে হয়তো এমন কিছু করে বসবে যে লজ্জায় নওরিন মুখ দেখাতে পারবে না।

ইসরাক মুচকি হাসে।
-নিজে থেকে বাড়ি যাবে নাকি আমি কোলে করে নিয়ে যাবো?
নওরিন ছোট্ট একটা ঢোক গিলে ইসরাকের পেছনে তাকিয়ে দেখে তার পেছনে তার দুই ভাবি মুখ টিপে হাসছে আর নওরিনের বাবা লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে।তিনি সেখান থেকে প্রস্থান করেন।হাজার হোক মেয়ে জামাইয়ের এমন কথার মাঝে শ্বশুর হয়ে না থাকায় ভালো

নওরিনের মা ইসরাকের কাছে যায়
-বসো বাবা।বিয়ের পর প্রথম এলে একটু আপ্যায়ন তো করতে দেবে।
ইসরাক শ্বাশুড়ির দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দেয়,
–আপনার মেয়ে বাড়িতে কাওকে কিছু বলে আসে নি।সবাই জানে ও কলেজে এসেছে।কলেজ আওয়ার তো শেষ হতে চললো। মা জানলে খুব রাগ করবে প্লিজ কিছু মনে করবেন না অ্যান্টি।আমাদের যেতে হবে
-কি বলো বাবা….বেশ তুমি ওকে নিয়ে যাও কোনো সমস্যা হলে জানিও।আর অ্যান্টি বলো কেন আমি তো তোমার মায়ের মতো মা বলে ডাকো।শ্বাশুড়ি তো আরেক মা।
ইসরাক মাথা নাড়ে।নওরিন সেখানে দাড়ায় না ঘরের ভেতরে চলে যায়।নওরিনের মা নওরিনের হাত চেপে ধরে,
-পুরুষ মানুষের শত দোষ থাকলেও মেয়ে মানুষকে দুধে ধওয়া তুলসি পাতা হতে হয়।পুরুষ মানুষের এতো দোষ ধরলে চলে না।মেয়ে মানুষকেই বিশুদ্ধ হতে হয়।কথায় আছে পুরুষ মানুষের সাত খুন মাফ।

নওরিনের মা কথাগুলো ইসরাকের সামনেই বলে।ইসরাক ভ্রু কুচকে তাকায়!
সত্যিই কি তাই?

বাড়ির অন্যান্য সদস্যরাও সেখান থেকে প্রস্থান করে।

ইসরাক শার্টের কলারের কাছের দুইটা বোতাম খুলতে খুলতে নওরিনের কাছে আসে।নওরিন বিছানায় বালিস কোলে করে বসে আছে।ইসরাক নওরিনকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে থাকে,
মুখটা শুকিয়ে গেছে।চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে।হাতে কালচে দাগ।গত রাতে একটু বেশিই শক্ত করে হাতটা ধরেছিলো হয় তো তাই এমন হয়েছে।এই মুহূর্তে ইসরাকের ভিষন মায়া হচ্ছে।বাচ্চা একটা মেয়েকে হয়তো একটু বেশিই কষ্ট দিয়ে ফেলছে।
কিন্তু নওরিনের অতীতটা যে এমনই বার বার ইসরাককে বাধ্য করে নওরিনকে কষ্ট দিতে।
ইসরাক নওরিনের কাছে গিয়ে বসে পড়ে।নওরিনের হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নেয়,
-আমার উচিত তোমাকে ঘৃনা করা।আমাই চাই তোমাকে প্রচুন্ড ঘৃনা করতে।কিন্তু আমার মন মানছে না।ইচ্ছে করছে না তোমায় কষ্ট দিতে…এটাকে কি ভালোবাসা বলে?

নওরিন থতমত খেয়ে যায়।
-কিসব বলছেন আপনি।আপনি আমায় ভালোবাসেন?
ইসরাক হো হো করে হেসে দেয়।
-তোমার থেকেই শেখা।
-কি?
-ছলাকলা…এটাকে কি বলে জানো ছলনা।আমি তোমায় ভুলিয়ে ভালিয়ে নিজের সাথে নিয়ে যাবো তারপর ইচ্ছা মতো পিটাবো।পিটায়ে তক্তা বানিয়ে ফেলবো।বিয়াদপ মেয়ে।এভাবে কেউ বেরিয়ে আসে?

নওরিন চোখ বড় বড় করে তাকায় ইসরাকের দিকে,
ঘামে প্রায় ভিজে গেছে শার্ট টা।শার্টের হাতা ফোল্ড করা।বুকের কাছে দুইটা বোতাম খুলে রেখেছে।লোমশ বুকটা দেখা যাচ্ছে।
-অসভ্য একটা এভাবে বুক দেখিয়ে মেয়ে পটান বুঝি?
ইসরাক ভ্রু কুচকে তাকায়।
–আমি যাবো না আপনার সাথে প্লিজ আমাকে জোর করবেন না।রাগ থেকে বলছি না,ঠান্ডা মাথায় বলছি,আপনার নীলাঞ্জনাকে বিয়ে করে নেওয়া উচিত।পিতার পরিচয় ছাড়া সন্তানের কোনো দাম নেই।
-কিসের সন্তান?
-এখনো অস্বীকার করবেন?
ইসরাক গলার স্বরটা গম্ভীর করে বলে উঠে,
-নাহ ভুল হয়ে গেছে আমার।নাও স্বীকার করছি বাচ্চাটা আমার।এমন আরো অনেক বাচ্চা আছে।ওরা সবাই পেট থেকে বার হলে তোমার কোলে তুলে দেবো।তুমি মানুষ করবে।সকাল বিকেল রাত তাদের ফিডার খাওয়াবে সাথে নিজেও খাবে বাচ্চাদের সাথে সাথে তোমার মস্তিষ্কেরও বিকাশ ঘটবে।

নওরিন দাঁত কিড় মিড় করে বলে উঠে,

-নির্লজ্জ লোক একটা
-বাড়িতে কি বলেছো?
–শুধু এতোটুকু বলেছি আমি আপনার থেকে ডিভোর্স চাই।ভয় নেই ইসরাক ইমতিয়াজ সিকদারের চরিত্রের বিবরণ কাউকে দেইনি।নিশ্চিন্তে থাকুন।আপনাকে নিয়ে কামড়াকামড়ি আমি করতে পারবো না মাফ চাই।আপনি ফিরে যান।আমি যাবো না।

ইসরাকের রাগ উঠে যায়।মাথার মধ্যে চিন চিন করছে,
এই মেয়ে কি ধাতু দিয়ে তৈরী,? ভাঙ্গবে তবুও মচকাবে না!

ইসরাক নওরিনকে কোলে তুলে নেই।দ্রুত পায়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নওরিনকে গাড়িতে বসিয়ে দেয়।ভেতরে সবাই হা করে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।তবে ইসরাককে আটকানো সাহস কারোর নেই।
নওরিনের বাবা একটা জোড়ে নিঃশ্বাস ফেলে।”মেয়েটাকে সে একেবারে ভাসিয়ে দেয় নি বোধয়”

কিছু সময় বাদে নওরিন গাড়ির সিটের সাথে মাথা ঠেকিয়ে দেয়,
-খারাপ লাগছে?কার জার্নিতে কি প্রবলেম হয়?
নওরিন কিছু বলে না,
একটু পর নওরিন ইসরাককে গাড়ি থামাতে বলে,
ইসরাক রোড সাউডে গাড়ি থামায়।নওরিন গাড়ি থেকে নেমে গড়গড়িয়ে বমি করে দেয়।
রাস্তার পাশেই পেট ধরে বসে পড়ে
ইসরাক নওরিন কে ধরে।
-খারাপ লাগছে?
-উহু।পেট ব্যাথ্যা করছে।
-কেন?খাওয়ার অনিয়ম করেছো তাই হয়তো। কিছু খাবে…কবে থেকে পেট ব্যাথ্যা?বলোনি কেন?
-গত পরশু ভোর থেকে।টাইম টা বলবো?ওহ সরি টাইমটা তো আপনার চেয়ে ভালো আর কে জানে?নাকি আমাকে জোড় করতে এতোই ব্যস্ত ছিলেন যে দিন দুনিয়া সব ভুলে গিয়েছিলেন?
ইসরাক কিছু একটা বুঝে মাথা নিচু করে নেয়।
নওরিন শান্ত দৃষ্টিতে ইসরাককের দিকে তাকায়।

কোনো রকম আস্তে ধীরে করে গাড়িতে উঠে বসে।
-ডাক্তারের কাছে যাবে?আর কোনো প্রবলেম হচ্ছে কি?আগে বলোনি কেন?(ধীরে ধীরে)

-আমাদের সমাজে বিয়ের পর অনেক স্বামীরাই স্ত্রীকে ব্যাক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে দেখে। তাদের কাছে ব্যাপারটা এরকম যে তারা বিয়ের পর স্ত্রীর সাথে যেভাবে ইচ্ছা ব্যবহার করবে।স্ত্রী টাকা দিয়ে কেনা কোনো সম্পদ নয়।শারীরিক সম্পর্কের আগে স্ত্রীরও অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন।অনুমতি ছাড়া কারো সাথে….এটাকে রেপ বলে।বিয়ের পর ম্যারিটাল রেপ।
আই আম ওনলি ১৯।আপনি না শিক্ষিত সমাজের একজন উচ্চ শিক্ষিত পুরুষ আপনি কি করে পারলেন?আই ওয়াজ ব্লিডিং বাট ইউ ডোন্ট নোটিশ এনিথিং।যন্ত্রণায় মরে গেলেও আপনি আপনার টা নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন।

নওরিন একটু থেমে আবারও বলে উঠে,
-কোনো ডাক্তার দেখাতে হবে না।তখন যখন মরি নি এখনও আর মরবো না।ব্যাস শুধু একটু পেইন..ব্যাস ঠিক আছি আমি।

নওরিনের চোখ দিয়ে পানি পরছে।ইসরাক নওরিনের মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়,
–আমার ভুল হয়ে গিয়েছে।মাফ করে দাও আর কখনো হবে না।
–আমি আপনাকে জোর করার পর সেম কথা বললে আপনি আমাকে ক্ষমা করতেন?কি বলতেন তখন?
ইসরাক দ্রুত উওর দেয়,
-তুমিও চাইলে আমায় জোর করতে পারো।চাইলে এক্ষুনি করো সমস্যা নেই আমি কিছু মনে করবো না!বরং আমার ভালোই লাগবে

নওরিন ভ্যাব্যাচ্যাক্যা খেয়ে যায়।
-অসভ্য লোক একটা।

বাড়ি ফিরে ইসরাক নওরিনকে কোলে নিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায়।নওরিন ইসরাকের বেড রুম ছিলো দোতালায়। শিড়ির পাশের ঘরটার পর্দার ফাঁক দিয়ে এক জোড়া চোখ নওরিন আর ইসরাককে একদৃষ্টিতে দেখছিলো।ইসরাক সেদিকে লক্ষ না করলেও নওরিন ব্যাপ্যারটা ঠিকিই অনুভব করে।

অন্যসময় হলে ছুটে গিয়ে খপ করে ধরতো পর্দার আড়ালের মানুষটাকে।কিন্তু আজ তার শরীর কুলাচ্ছে না।
ইসরাক নওরিনকে বিছানায় শুয়ে দেয়।
যদিও সে নিজেও ক্লান্ত তাতে কি। আপাতোতে নওরিনের সেবা করাটায় তার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।ছোট চাচীকে বলে নওরিনের জন্য কিছু খাবার ব্যবস্থা করে।তারপর নিজে হাতে নওরিনকে খাইয়ে শুয়ে দেয়।
তারপর বিছানা থেকে বালিশটা নিয়ে সোফায় গা এলিয়ে দেয়।ভিষন রকম ক্লান্ত সে।

রাতে খাবারের ডাক পরে।ইসরাক ঘুমোচ্ছে।বিকেলে এসে সে ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়ে।কখন ঘুমিয়েছে ইসরাক নিজেও টের পায় নি।নওরিনের গায়ে দুম জ্বার এসেছে।
নওরিন উঠে ইসরাককে কয়েকবার ডাক দেয়।ইসরাক হু হা করে আবার ঘুমিয়ে পড়ে।নওরিন ওয়াশরুমে চলে যায়।মাথা ঘুরাচ্ছে বমি পাচ্ছে।

নওরিন ওয়াশরুম থেকে বার হতেই দেখে একটা মেয়ে ইসরাকের মাথার কাছে বসে এক দষ্টিতে ইসরাককে দেখছে আর ইসরাকের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।মেয়েটি দেখতে প্রচুন্ড সুন্দরী।নওরিনের মনে হচ্ছে এ যেন কোনো পরী।ইসরাক ঘুমের মধ্যেই মেয়েটির হাত টেনে বুকের কাছে নিয়ে যায়।

নওরিনের চোখে অন্ধকার নামে ধপ করে সেখানেই পড়ে অজ্ঞান হয়ে যায়।নওরিনের পড়ে যাওয়ার শব্দে ইসরাক লাফিয়ে উঠে।

*****
কতক্ষণ পর নওরিনের হুস ফিরে আসে।নওরিন চোখ খুলে দেখে ইসরাক তার পাশে বালিশে ঠেস দিয়ে বসে ফোন চাপছে!
নওরিন গোটা ঘরে চোখ বুলায়।
-শুনুন
ইসরাক ফোন রেখে ব্যস্ত হয়ে পড়ে
-কোনো সমস্যা হচ্ছে?দেখি জ্বরটা কমলো নাকি
ইসরাক নওরিনের গালে মুখে হাত বুলায়
-হাত সরান আপনার সাথে মেয়েটা কে ছিলো?কোথায় মেয়েটি?
ইসরাক ভ্রু কুচকে তাকায়
-মেয়ে কোথায় মেয়ে?কোন মেয়ে?মাথা ঠিক আছে?
-ভূত পেত্নীর সাথেও কি আপনার সম্পর্ক আছে?
-কি সব ভুল ভাল বকো?
-আমি তো দেখলাম!
-কিছু খেয়ে ঔষুধ খেয়ে নাও।আর দেখবে না

****
সকালে ইশার ডাকে ঘুম ভাঙ্গে নওরিনের
-জান তোর শরীর কেমন এখন?
-এই তো ভালো।
-নিচে চল আরো ভালো হয়ে যাবে
-কেন?
-তোর সতীন এসেছে বিয়ের দাওয়াত দিতে।
নওরিন অবাক হয়ে তাকায় ইশার দিকে,
-কিহ?
-হুম্ম নীলান্জনা আপু এসেছে।চল।
ইশা নওরিনকে টানতে টানতে নিচে নিয়ে আসতে থাকে।

সামনে নীলাঞ্জনার বিয়ে সজলের সাথে।বিয়ের ব্যবস্থা ইসরাকই করেছে।নীলাঞ্জনা ইসরাককে কৃতজ্ঞতা জানাতে এসেছে।

নীলাঞ্জনা এদিক সেদিক তাকিয়ে ইসরাকের নতুন বউকে খুজছে।
নওরিন নিচে আসতেই নীলাঞ্জনা নওরিনকে দেখে চমকে উঠে…
ইসরাক সেখানেই বসা…
-তুমি নওরিন না?ইসরাক তোমাকে বিয়ে করেছে?
নওরিম মুখ বাঁকিয়ে অন্য দিকে তাকায়।নীলাঞ্জনা বিষফোড়ক চোখে তাকিয়ে আছে নওরিনের দিকে,
-ইসরাক কি করে পারলো তোমায় বিয়ে করতে?তুমি তো কক্সবাজারের সেই মেয়েটা….তোমাকে কেন…? ইসরাক মা তোমাকে ঘেন্না করে?

ইসরাক দ্রুত এসে নীলাঞ্জনাকে থামিয়ে দেয়।পানির গ্লাসটা এগিয়ে দেয় ওর দিকে।নীলাঞ্জনা ঢক ঢক করে পানি খেতে থাকে।নওরিন অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।এই একটা ঘটনা কি তাকে সারা জীবন বয়ে বেরাতে হবে?প্রচুন্ড ঘেন্না লাগছে তার নিজের উপর।চরিত্রে দাগ যে কখনো মিটতেই চায় না….

হটাৎ ই নওরিনের চোখ যায় কিচেনের দিকে।কিচেন থেকে চায়ের কাপ হাতে বারিয়ে আসছে একটি মেয়ে।
এটাতো রাতের সেই মেয়েটা?কে এই মেয়ে?

চলবে…..

#প্রিয়োসিনী
#নীরা_আক্তার
#পর্ব_৭
-তুমি নওরিনকে কেন বিয়ে করেছো তাকি জানি না ভেবেছো?
নীলাঞ্জনা এমন প্রশ্নে ইসরাক একটু নড়েচড়ে বসে।ইসরাক, নীলাঞ্জনা আর নোহা…(ইসরাকের ছোট চাচার মেয়ে তিনজন নোহার ঘরে আসর পেতেছে।হটাৎ নওরিনকে দেখে নীলাঞ্জনা এমন রিয়াক্ট করে বসবে তা ইসরাক বুঝতে পারে নি। অবস্থা বেগতিক দেখে নীলাঞ্জনা কে উঠিয়ে নিয়ে আসে।পিছু পিছু নোহাও আসে
ইসরাক চোখমুখ শক্ত করে প্রশ্ন করে,
-কি জানো?
-সব জানি আমি ইসরাক।তোমার চোখে আমি সেদিন অন্যকিছু দেখেছি।আমার দৃষ্টি ভুল করে না!
-দাদু কথা দিয়ে রেখেছিলো তাইবিয়েটা করেছি।
নোহা ইসরাকের পাশে বসে হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে কাধে মাথা রাখে।
-ঠাট্টা করছো দাভাই?
-তোরা কি শুনতে চাস?
-যেটি সত্যি সেটা
-এটাই সত্য।দাদুর জন্য!
-তোমার জন্য দাদুভাই এমন হাজার লক্ষ্য কথাকে ছুড়ে ফেলার ক্ষমতা রাখে।
ইসরাক নোহার হাত থেকে হাতটা ছাড়িয়ে উঠে দাড়ায়,
–আমি শুধু চাই নওরিনকে শাস্তি দিতে চাই ভালোবাসার মানুষটা ঠকালে কতোটা যন্ত্রনা হয় এটা বুঝাতে ।ও বুঝে গেলেই হবে।আর কিছু চাই না।ভালোবাসা খেলার জিনিস নয়!!
নোহা একটু হাসে,
-তারপর??ছুড়ে ফেলে দেবে?
ইসরাক মাথা নিচু করে নেয়,
-ফেলে দিও।নওরিনের মতো ছুড়ে ফেলা ফুল আমি সযতনে তুলে রাখবো।যত্ন করবো।রোজ দিনে দুই দুইবার করে পানি দেবো।কখনো নুয়ে পড়তে দেবো না।

ইসরাক আর নীলাঞ্জনা দুজনই ভ্রু কুচকে তাকায় নোহার দিকে।নোহার বয়স খুব বেশি না।হিসেব করলে নওরিনের সমবয়সী কিংবা এক দুই বছরের বড় হবে।তবে এতো অল্প বয়সেই মেয়েটি বড্ড বড় হয়ে গিয়েছে।বড্ড হেয়ালি করে।কখনো কখনো তার অনেক কথায় কারো বুঝে আসে না।

নোহা মিচকে হেসে বলতে শুরু করে,
-কি দেখছো?আচ্ছা দা ভাই নীলাঞ্জনা আপাও তো তোমায় ঠকালো তাকেও কি তুমি বিয়ে করে শাস্তি দেবে?নওরিনের মতো?

ইসরাক দাঁত কিরমির করে উওর দেয়,
-নওরিন আর নীলাঞ্জনা দুজনের ব্যপ্যারটাই আলাদা।
নীলাঞ্জনা মাথা নিচু করে নেয়।
নোহা ইসরাকের গলা জরিয়ে ধরে,
-দাভাই পরশু তো আমার জন্মদিন আমায় উপহার দেবে না?
ইসরাক হাসে…
-কি চাই?
-তোমার সবচেয়ে দামী জিনিস চাই
ইসরাক পকেট থেকে কার্ড বার করে দেয়।যতো ইচ্ছে কেনা কাটা কর সমস্যা নেই।
-এটা নয়
–আচ্ছা যা চাস দেবো আপাতোতো এটা বোনাস হিসেবে রাখ।
-কথা দিলে কিন্তু….বলো পাক্কা প্রমিস!
-দিলাম!
নোহা মুচকি হেসে বেরিয়ে যায়।যেতে যেতে বলে যায়,
“তোমার বউকেও কিন্তু নিয়ে যাবো…তবে ইশাকে নেবো না।হিংসুটে বুড়িটা আমার সুখ সইতে পারে না”
ইসরাক হাসে….

নীলাঞ্জনা বিছানায় বসে কাঁদছিলো…ইসরাক নীলাঞ্জনার কাছে গিয়ে বসে।
-কাঁদো কেন?
–আমাকে কি সত্যিই ক্ষমা করা যায় না।
–না!
-ঠিক আছে।আজ সজল ওর বাবা মাকে নিয়ে আসবে বলেছে।বিয়ের কথা বলবে বলে।আমি জানি সবটা তুমি ম্যানেজ করেছো।আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ।যদি বিয়েটা হয় তুমি এসো।আমার কষ্ট মিশৃত একটু সুখ লাগবে।আমার ভালো লাগবে।
ইসরাক হাসে।
–বিয়েটা হবে।ভয় পেয়োনা।আমি আছি।
-তুমি নেই ইসরাক।
-সত্যিই আমি নেই।তোমার কাছে নেই তবে তোমার পাশে আছি।বন্ধু হিসেবে,শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে।এর বেশি কিছু নয়।

ইসরাক ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।নীলাঞ্জনা সেখানেই বসে আছে।ভীষন ঘামছে সে শরীর চলছে না।উঠে দাঁড়ানোর মতো ক্ষমতা নেই।জীবনটা সত্যিই বদলে গেলো।

*******
এতোক্ষন ইশা আর নওরিন তাদের ঘরে বসা ছিলো।নওরিন ইশাকে এটা সেটা প্রশ্ন করছে।ইশা উওর দেয় না।এক হাতের তালু দিয়ে আরেক হাতের তালু ঘসতে থাকে।
-মেয়েটা কে?
-(…)
-ওনার গফ কেন এসেছেন?
-(…)
-কি হলো ইশা কথা বলিস না কেন।আমি চললাম
নওরিন রেগে গেছে….নওরিন উঠে বসতেই নোহা এসে নওরিনের হাত ধরে,
-তুমি কিন্তু ভীষনরকম সুন্দর।
নওরিন অবাক হয়।ইশা নোহার দিকে তাকায়।
–আমি নোহা।তোমার ছোট চাচাশ্বশুরের একমাত্র মেয়ে।ইশার থেকে আমার ইন্ট্রোডাকশন চেও না নাইলে ওর মতো তুমিও আমায় ঘেন্না করবা।
নওরিন অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।
-রেডি হও তোমায় নিয়ে শপিং এ যাবো।দাদা ভাই কার্ড দিয়ে দিয়েছে ইচ্ছে মতো শপিং করতে পারবো।

ইশা দাঁত কিরমির করে উওর দেয়,
-কোই আমাকে তো কখনো দেয় না!
-তোকে তো দাভাই ভালোইবাসে না তাই দেয়ও না আমায় বাসে তাই দিয়েছে।

নোহা চলে যায়।চিকন গড়ন মাথায় লম্বা চুল।ধবধবে সাদা গায়ের রং নোহার।ঠোঁট টা গোলাপের পাপড়ির মতো গোলাপি।
চোখের মুণিটা হালকা নীল চোখের দিকে তাকালে মনে হবে গোটা আকাশটায় যেন মেয়েটি নিজের চোখে ধারণ করেছে।যেকোনো পুরুষ মেয়েটির চোখের সমুদ্রে হারাতে বাধ্য।

নওরিন ইশাকে হালকা ঠেলে প্রশ্ন করে..
-কে রে এটা?কি সুন্দরী ঠিক যেন অপ্সরা….
ইশা মুখ বাকিয়ে উওর দেয়…
-ছাই!এই বাড়ির হেড মিস্ট্রেস ওনি।যখন যা চায় তাই দেয় সবাই।ছোটকা আর বাবার চোখে মুণি।তোর বরের হৃদপিণ্ড।সবাই ওকে এতো ভালোবাসে কেন বুঝি না।অসহ্য একটা….আমান ভাই তো ওকে পারলে মাথায় নিয়ে নাচতো….!!.এই টুকু বলে চুপ হয়ে যায় ইশা নওরিনের দিকে তাকায়..
-সরি মাফ করে দে জান
-কেন এই নামটা নিশ আমার সামনে….

নোহা ছুটে আসে…
-এখনো রেডি হওনি তুমি।
নওরিন হাসার চেষ্টা করে।নোহা ইশার দিক আড় চোখে তাকায়….
-ও নিশ্চয় তোমায় আমার নামে ভুজুংভাজুং বুঝিয়েছে।আমি ওর মনে মনে না হওয়া সতীন তাই আমার উপর ওর এতো রাগ… প্রিয়ো বোনটি আমার যা রেডি হয়ে নে তোকেও নিয়ে যাবো সমস্যা নেই…

ইশা মুখ বাকিয়ে উওর দেয়..
-দরকার নেই।
-দাভাইকে বলে দিয়েছি দাভাই আমাদের নিয়ে যাবে তুই না গেলে না যা নওরিনকে নিয়ে যাবো।
-ভাইয়ার নাকি ক্লাস আছে।
–আমি বলেছি নিয়ে যাবে
ইশা রাগে গজ গজ করতে করতে বলে উঠে,
–আমিও যাবো না আমার বেস্টু ও যাবে না।কেউ কোথাও যাবো না!তোর দরকার পড়লে তুই যা।

নোহা চোখ বড় বড় করে তাকায়।ইশা কিছু একটা ভেবে রাজি হয়ে যায়।
তিনজন রেডি হয়ে বেড়িয়ে পড়ে।

গাড়িতে ড্রাইভিং সিটে ইসরাক বসে আছে।নওরিন, ইশা,নোহা তিনজনই জিন্স আর লোং টপস পড়েছে।গলায় প্যাচ্যানো ওরনা। ইশা নওরিনের হাত ধরে এগিয়ে যেতে যেতে বলে…
-জান গিয়ে সামনে বস।দ্রুত যা এই খচ্চর পত্নী যেন ভাইয়ার পাশে বসতে না পারে।

নওরিন ভ্রু কুচকে তাকায়…
-বসলো বসুক তাতে কি…তবে আমি এই উগ্র পাগল বদমেজাজি গন্ডার,শয়তানের নানা,ছাগলের তিন নম্বর ছানা,বখাটে লোকের সাথে বসবো না আমরা পেছনে বসবো।

ইশা বোকার মতো হাসে।এক নিঃশ্বাসে তারই সামনে তারই ভাইকে কতোগুলো গালী দিলো।অন্যকেউ দিলে এতোক্ষণ মেরে নাক ফাটিয়ে দিতো।

নওরিনের ফেছনের ছিটে বসে…ইসরাক নওরিনের দিকে তাকায়।নওরিন মুখ বাঁকিয়ে অন্য দিকে তাকায়।
ইশা পেছনের ছিটে বসতে নিলে নোহা এসে দুম করে বসে পড়ে।
-তুই সব সময় বলিস না আমি তোকে দা ভাইয়ের পাশে বসতে দিই না আজ বস আমি তো নওরিন দ্যা নিম ফুলের পাশেই বসবো।
নওরিন নোহার অদ্ভুত আচরনে বার বার বোকার মতো হাসছে।

গাড়ি আপন মনে ছুটছে।নোহা আর নওরিন পেছনে বসা।নোহা বার বার নওরিনের দিকে তাকাচ্ছে।খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে।
নওরিনের একটু বিরক্ত লাগছে।
-কি দেখো এতো?
-তোমাকে?
-কিহ্
-তোমার কতো সাহস। সেদিন এতোগুলো ছেলের সামনে দাড়িয়েও একটুও ভয় পাওনি।কি সুন্দর করে সবটা বুঝিয়ে দিলে।তুমি কি জানো তুমি বড্ড বেশি সুইট….
নওরিন বোকার মতো প্রশ্ন করে…
-কিসের কথা বলছো?
-কক্সবাজার যাওয়ার পথে ভুলে গেলে?
নওরিন থতমত খেয়ে যায়।
ইশা পেছন ফিরে তাকায়।নোহাকে ধমক দেয়।
-এইসব বলিস কেন?
-সরি।
নোহাও কিছু বলে না…!নওরিন অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
*****
শপিং মলে যে যার মতো ঘুরছে।ইসরাক তিনজনকে একটা জুয়েলারি সপে এনেছে।সামনে নোহার জন্মদিন। জন্মদিনে বোনকে স্বর্ন না দিলে হয়।আর বিয়ের পর নওরিনকেও কিছু দেওয়া হয় নি।দুজনকে দিলে ইশা রাগ করবে তাই ইশাকেও দেবে।

নওরিন এক জোড়া কানের দুল কানে ধরে…
পেছনে ইসরাক এসে দাড়ায়।নওরিন আনমোনেই বলে উঠে,
-ভাল লাগছে?
ইসরাক হাত থেকে নামিয়ে রেখে অন্য একজোড়া নওরিনের হাতে দেয়।নওরিন সেটা পড়ে ফেলে
-এটা?
-তোমার রূপের আগুনে পুড়তে চাই।পুড়াবে আমায়?রাতে অপেক্ষা করবো?
-নির্লোজ্জ
-তোমার কাছেই তো?
-আমি কে হই আপনার?
-ব্যক্তিগত সম্পত্তি!!
নওরিন ভ্রুকুচকে তাকায়।নওরিন কিছু বলতে যাবে এর আগেই নোহা আসে নওরিনের কান থেকে দুল গুলো খুলে অন্য আরেক জোড়া দুল পড়িয়ে দেয়
-এবার দেখো কত্তোসুন্দর লাগছে যেন রূপকথার কোনো পরী।দাভাইয়ের চয়েজ একদম ভালো না।
ইসরাক হাসে।তবে ইসরাকের পছন্দ করা সেই দুল জোড়াও সে প্যাক করে নেয়।নওরিনকে এটা পড়তেই হবে,পছন্দ হলে হোক না হলে না হোক!

*****
শপিং মলে ঘুরাঘুরি করার সময় হটাৎ ই একটা হাত নওরিনকে নিজের দিকে টেনে নেয়,প্রথমে নওরিন ভয় পেলেও পরে নওরিনের চোখ দিয়ে ঝড়তে থাকে এক রাশ ঘৃনা।
-কেমন আছো?
-বেঁচে আছি
-রাগ করো না নওরিন
-রাগ কোই করলাম ঘেন্না করছি। রাগ নয়।এটা ঘৃনা।গভীর প্রেমের পঠ চুকিয়ে বুকিয়ে ফেলার পর যেটা হয় সেটা।
লোকটা মাথা নিচু করে নেয়,
–আমি পালিয়ে যাই নি নওরিন আমাকে পালাতে বাধ্য করা হয়েছিলো।তোমায় ছেড়ে যেতে চাই নি আমি।
-চান নি কিন্তু গিয়েছেন মিস্টার সাগর। বাদ দেন এইসব কথা বলতে ইচ্ছ করছে না আর এখন এই সব বলেও লাভ নেই।

নওরিন হাত ছাড়িয়ে ছুট লাগায়।
–আমি ফোন করবো তোমায়।প্লিজ অনেক কথা আছে আমার।

নোহা দূরে দাড়িয়ে সবটা লক্ষ করে।রাগে গা রিরি করছে।
*****
আসরা পথে রেড লাইটে তাদের গাড়ি দাড়িয়ে যায়।গাড়ির ঠিক পাশে একজোড়া নতুত বর বউয়ের গাড়ি দাড়ানো।নোহা সেদিকে তাকিয়ে আছে।একমনে দেখছে ।
ইসরাক হেসে বলে উঠে,
-তোরও বিয়ে দেবো।এর চেয়ে বড় গাড়িতে তুই শ্বশুর বাড়ি যাবি।
নোহা একটা লম্বা নিঃশ্বাস নেই।ইসরাকও নিজের মুখটা থম থমে করে নেই।নোহার গাল বেয়ে একফোটা পানি গড়িয়ে পরে।
-সেটা কখনোই সম্ভব নয় দাভাই।শুধু শুধু মিথ্যে বলো না।
নওরিন আনমনেই প্রশ্ন করে
-কেন?
কেউ কোনো উওর দেয় না
_______

রাতে নোহা নওরিনকে ছাদে টেনে নিয়ে যায়।
-কিছু বলবা?
নোহা হেসে উওর দেয়,
-তুমি ভিষন সাহসী।
-এমন কেন বললা?
–আমি সবটা জানি নওরিন! শরীর কলঙ্ক নিয়ে বেঁচে থাকা বড্ড কঠিন।এই সমাজ অন্যায়কারীর চেয়ে যার সাথে অন্যায় হয় তাকেই বেশি ঘৃনা করে।তাকেই অন্যায়ের জন্য দায়ী করে।আর সে যদি নারী হয় তাহলে সোনায় সোহাগা।ইচ্ছে মতো তার শরীরে কালি লাগানো যায়।মনের মাধুরি মিশিয়ে কালী লেপে দেয়।
নওরিন অবাক হয়ে তাকায়…
-এইসব আমায় কেন বলছো।
নোহা একটু হেসে উওর দেয়,
-ইশার সব সময় কমপ্লেইন আমাকে সবাই কেন এতো ভালোবাসে!
-কেন?
–আই আই ওয়াজ রেপড হোয়েন আই ওয়াজ অনলি এইট ইয়ারস ওল্ড।বড়বাবার ফ্রেন্ড,
লোকটা আমায় অনেক আদর করতো মাঝে মাঝে আসতো।এভাবেই বিশ্বাসি হয়ে উঠেছিলো৷ একদিন আমি ঘরে বসে বসে পড়ছিলাম।সেদিন বাড়িতে ছোট্ট একটা পিকনিকের আয়োজন করা হয়েছিলো।লোকটা হটাৎ করেই আমার রুমে আসে।প্রশ্ন করে বাবা কোথায়।আমি হাত উচিয়ে বাহিরে দেখিয়ে দেয়।ওনিও চলে যান। একটু পর আবার ফিরে আসেন।তারপর ওনি আমার পাশে বসে পড়েন।লোকটা হটাৎ করেই আমার জামার মধ্যে…
নোহা দাত দিয়ে ঠোঁটে কামড় দেয়।
সেদিন আমার প্রত্যেকটা চিৎকারের সাক্ষী ছিলো দাভাই।ছোট্ট দাভাই সেদিন বুকদিয়ে আগলে নিয়েছিলো আমাকে।কিন্তু সর্বনাশ কেউ আটকাতে পারেনি।তারপর থেকেই তো আমায় এত্তো ভালোবাসে।সব ঘটনারই একটা ভালো দিক আর একটা খারাপ দিক থাকে।দেখোনা যদি সেদিন ঘটনাটা না ঘটতো,আমাকে কি সবাই এতো এতো ভালো বাসতে?দাভাইও বাসতো না।ঘটনাটা বাড়ির বড়রা ছাড়া কেউ জানে না।কাওকে বলোনা নওরিন।

নোহা কথাটা বলে কান্না করে দেয়।
নওরিন নোহার হাত ধরে।সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করে,
নোহা নিজেকে সামলে নিয়ে উওর দেয়,
-জানো নওরিন আই হেইট মেন। পুরুষ মানুষগুলোকে আমার সহ্য হয় না।গা জ্বলে।ভীষন গাজ্বলে।বিয়ে আমি কিছুতেই করবো না।

-এই পুরুষ মানুষগুলোই কিন্তু দিন শেষে আমাদের আগলে রাখে।সবাই এক নয় নোহা…
নোহা একটু হাসার চেষ্টা করে উওর দেয়,
-বাদ দাও।আমাকে একটা কথা বলো ঐ সাগরকে কি দেখে ভালোবেসেছিলে তুমি?একেবারে ভীতু।থাকার মধ্যে শুধু চকলেট বয় লুকটায় আছে।তোমায় কিভাবে একা ফেলে পালিয়েছিলো বলো তো….

নওরিন ভয়ার্ত কন্ঠে তাকিয়ে আছে নোহার দিকে….
পেছন ফিরে তাকাতেই দেখে ইসরাক দাড়িয়ে দরজার কাছে হাত ভাজ করে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে।
নোহা নওরিনের কানের কাছে এসে বলে উঠে,
-সব পুরুষমানুষই এক।কেউ নিজের ভেতরের রাক্ষসটাকে দমিয়ে রেখে ভালোমানুষের মুখোষ পড়ে থাকে আর কেউ মুখোশ ছিড়ে ফেলে রাক্ষস হয়ে বেঁচে থাকে।সবাই এক নওরিন।আই হেইট মেন

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here