জলনূপুর পর্ব ৮

0
794

#গল্পঃজলনূপুর❣️❣️❣️
#Sharifa_Suhashini
#পর্ব___০৮

নবনী যেন কিছুটা হক চকিয়ে গেল, মানে এই ভদ্রলোক ক্লাস সিক্সের বাচ্চার মত গড় গড় করে সেদিনের কথাগুলো হুবুহু উগরে দিচ্ছে! আমান আবার বলতে থাকে,

ঠিক সেই সময় আমি আপনার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম আমি আপনার বাবার সাথে আরও প্রায় মিনিট দুই এর মত কথা বললেন।তারপর রিক্সা ডেকে চলে গেলেন রিকশাতে ওঠার সময় আপনার সাথে আমার চোখা চোখিও হয়েছিল।

আরে! সত্যিই তো।একটা ছেলেকে আমি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলাম তবে আমাদের বাসায় এসে যেদিন গিয়েছিলেন সেদিন চিনতে পারলাম না কেন? কারন আপনি তো সেদিন শুধু একটা মানুষকে দেখেছিলেন আমাকে নয় হঠাৎ ডিভোর্স হয়ে যায়, স্বামীর ঘর ছেড়ে এসে বাবার কাছে কল দিয়ে একটু আশ্রয় চাই সে ওই মুহূর্তে লক্ষ্য করবেই বা কিভাবে?আপনার জানা প্রয়োজন আমার ঠিক সেই মুহূর্তেই আপনার প্রতি মুগ্ধতা সৃষ্টি হয়েছিল এমন কঠিন মুহূর্তে এত শক্ত থাকতে পারে তার ধৈর্য শক্তি কতখানি তা একজন ডাক্তার হিসেবে আমি ঠিকই অনুভব করতে পারি আর এর সাথে ও টের পাই আপনি ভিতরে অনুভূতিগুলো কত গোপনই চাপা দিয়ে রাখতে জানেন।

জানিনা কেন সেদিন আপনাকে ওইভাবে সত্য কথা বলতে দেখেই আমার ভালো লেগে গেছিল আপনি তোমাকে জিজ্ঞেস করেন আপনাকে ভালোবাসে নির্দিষ্ট কারণ কি তবে আমি হয়তো স্রেফ এইটুকই দেখাতে পারবো।

নবনি কিছুক্ষণ চুপ করে রইল পৃথিবীতে এতদিন বোধহয় তার জন্য এই অদ্ভুত পুরুষটি অপেক্ষা করেছিল এই মানুষটি সাথেই তার মিল বন্ধন জুড়ে দিতে এতগুলো দিন এতগুলো বাকের খেলা করলেন নবনী উত্তর খুঁজে পায় না একবার শ্বাস নিয়ে জিজ্ঞাসা করে
এরপর?

এরপর?এই যে,আজ এখানে।
-উহু।আমি জিজ্ঞাসা করেছি আমাকে ফলো করার ভূত মাথায় ঢুকলো কবে থেকে থেকেই আপনি ঠিক কেমন জানেন কোকোনাট যার বাইরে শক্ত ভিতরে কোমলতায় ছাওয়া।আর এমন মেয়েরা শত ঝড়েও নিজেকে এবং পরিবারকে আগলে রাখতে জানে যদি সেখানে তার সম্মান আর স্থানটুকু বজায় থাকে। চলে যাবার পর আমার হঠাৎ মনে হল এই মেয়েটিকেই আমার জীবনে খুব করে প্রয়োজন পাশের দোকানদারের থেকে আপনার নাম জানলাম এরপর সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক খুঁজেছি ফেসবুকে পাইনি। আমার পেজ ফলো করবেন কাপল লাভ স্টরি-যতগুলো পেয়েছি সব কয়টা হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাসের নামের ফেক আইডি।তবে হাল ছাড়িনি আপনার প্রাক্তন শ্বশুরবাড়িতেও কৌশলে যোগাযোগ করে ইনস্টাগ্রামে আপনাকে ঠিকই খুঁজে পেয়েছিলাম।আর সেখান থেকে ফেসবুকের লিংকও! এই তো সেই থেকেই আবার স্টক করা শুরু আপনি অনেক ভারী ভারী কথাটি স্ট্যাটাস দেন প্রথম প্রথম আমার বুঝতে অনেক প্যারা খেতে হতো এখন শিখে গেছি। আচ্ছা, ওয়েট।

কি হলো আবার?

আপনি ভাবছেন তবে কি প্ল্যানিং করে আমি রিতুকে দেখতে গিয়েছিলাম?

জবাবে নবনী মৃদু হাসলো সেই হাসিতে যে আমানের প্রশ্নের নির্বুদ্ধিতাকে প্রকাশ করা হলো তাই স্পষ্ট।আমান ভ্রু পুঁচকে ওর দিকে তাকায় ব্যাপারটা কি হল সে প্রশ্ন করার আগেই নবনী জানায়,

নবনিকে এতটা বোকা ভাবলেন আমা সাহেব আমি খুব ভালো করেই জানি এটা কো ইনসিডেন্স।যদিও আমার মনে হয় রীতিকেও আপনি দেখতে আসতেন না কিন্তু আমার বোনের জন্যই আপনি আসতে বাধ্য হয়েছেন এই তো?

আমার চোখের দৃষ্টি আরো প্রশস্ত করে ওর দিকে তাকালো ঘটেছে নবনির বুদ্ধিমত্তায় সে যেন আরো একবার মেয়েটির প্রতি চরমভাবে দুর্বল হয়ে গেল। এটা সত্যের প্রেমে পড়ার ব্যাপারটা যে কতটা মধুর তা এই মুহূর্তে সে টের পাচ্ছে।
না কেয়ার হাতছাড়া করাই যাবে না এক্ষুনি কি নবনীকে আবার বিয়ের প্রস্তাব দিবে? চোখের দিকে তাকালো কিন্তু মেয়েটির চোখে চোখ রাখতে ওর কেমন কান্না পাচ্ছে।পেশাগত ভাবে সে একজন ডাক্তার অথচ নিজের ভিতর কার অজানা অসুখের হদিসই জানেনা।হঠাৎ আমাদের চোখের কোন থেকে এক ফোটা জল মুছে নিয়ে বলে উঠলো,

আমান সাহেব ভালোবাসার কাছে মানুষ এত সরল হয়ে যায় কেন?

আমি জানিনা নবনী।

চোখের জল অনেক মূল্যবান একটি সম্পদ তাকে এভাবে অনাথরে ফেলবেন না প্লিজ।আপনি সত্যিই একজন চমৎকার মানুষ কেন জানেন? মানুষেরা তার কাছের মানুষদের কাছে নিজের আবেগকে লুকোতে পারেনা প্রকাশ করে ফেলে এই যেমন আপনি।

নবনী আমি সারা জীবন আপনার সাথে এভাবেই পাশাপাশি থাকতে চাই আপনি কি আমাকে সেই অধিকার দিবেন?

যদি বলি আমার আরো কিছুদিন সময় প্রয়োজন?

হ্যাঁ! আরো!

আমার যেন মুহূর্তেই আঁককে ওঠে আশা নিয়ে সে আজ নবনীর সামনে উপস্থিত হয়েছে অথচ হ্মনিকেই সেই আশা ছাই হয়ে উড়ে গেল হাওয়ায়।সে হাওয়ার পিছু আমান ছুটবে কি করে!ডিভোর্সি মেয়ে মানেই দুর্বল নয় আর চাক্ষুষ প্রমাণ নবনী।কি কঠোর,কত উঁচুতে তার আত্মসম্মান ডিভোর্সি মেয়ের জন্য পাত্র পেলেই তাবিজের মত ঝুলে যাবার স্বভাব থেকে এসে শত শত ক্রশ দূরে বসবাস করে।নবনী কে হারানোর ভয় ঠিকই হচ্ছে তার তবে আফসোস নেই।

হ্মীন কণ্ঠে সে জবাব দেয়,

আপনি যখন আমার সাথে আবার দেখা করতে চেয়েছেন,আমি নিশ্চিত আপনি আমার চেয়েও কয়েক গুন খোঁজখবর নিয়েই এখানে এসেছেন পর সুন্দর করে শাড়ি পরে,কপালে টিপ দিয়ে অভিনব এক মায়াবিনী রূপে আমার সামনে আপনি বসে আছেন সেটার কারণ ও নিশ্চয় আমাকে বলে দিতে হবে না? আপনি আমাকে পছন্দ করেন এর চেয়ে ধ্রুব সত্য এই মুহূর্তে আপনার তরফ থেকে আর কিছু নেই।

নবনি শুধু মুচকি হাসলো কিন্তু আমানের কথায় বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ করল না।প্রসঙ্গ পাল্টে সে আমানকে বলে,

জানেন, আপনি আমাকে যতটা সাহসী ভাবছেন ততটা সাহসী আমি নই ভীষণ প্রিয় বস্তু,প্রিয় মানুষকে আমি ঠুনকো কারণেই হারিয়ে ফেলি।প্রিয় বস্তুগুলো আমার আয়ত্তে থাকে না। আর ঠিক এ কারণেই এই নবনীর কোমলতার ভিতর একটা বিশাল বড় ভয়ের দানা বসবাস করে।এইযে আমার মন খারাপ হয়ে গেল। আমার ইদানিং এভাবেই হুটহাট মন খারাপ হয় কান্না পায় তখন ভীষণ করে আমার মাকে দেখতে ইচ্ছে করে।

আমি কি আপনাকে বাসায় ড্রপ করে দিয়ে আসবো?

আপনি কি সুন্দর ভাবে বুঝে গেলেন আমান সাহেব, আপনাকে আমিও সত্যিই পছন্দ করি স্বীকার করছি।

আমাদের খুব ইচ্ছে হলো নবণীর হাতের আঙ্গুলগুলো ধরে রাস্তা অব্দি হেটে যেতে কিন্তু সাহস করে আর বলা হলো না।পেজ নাম কাপল লাভ স্টরি বাসায় ফিরে নবনী মায়ের ঘরে ঢুকতে গেলে ঋতুর সাথে ধাক্কা লেগে গেল।
মৃত তখন মোবাইল ফোনে কথা বলতে ব্যস্ত। নবনী তার দিকে আর চোখে চেয়ে জিজ্ঞাসা করে,

সারাদিন ওর সাথে ক্লাসে দেখা হয় না তোর?

কি বলো আপা আমি তো জাস্ট একটা দরকারি কথা বলছিলাম আর কি।তুমি সব সময় আমাকে এমন সন্দেহ করো কেন?

সন্দেহ করছি কোথায়?যা সত্য তাই বললাম।প্রেমে পড়ছিস তো তাই পরিবারের সবাইকে শত্রু মনে হচ্ছে।

আমি!আমি তোমাদেরকে শত্রু বলছি?

অবশ্যই।প্রেমে পড়লে মেয়েরা পরিবারকে মনে করে শত্রু।বাবা মা কি মনে হয় তালই ভাই হয়ে যায় খু//নি আলেকজান্ডার,আর বোনকে ভাবে দূর সম্পর্কের ননদ!তারাই তার ভালোবাসার পথের প্রধান কাটা।শুধুমাত্র প্রেমিক পুরুষটি তার মন বুঝে, বাকিরা নির্বোধ। আচ্ছা এবার সর।মায়ের সাথে জরুরী কথা আছে।

-কিন্তু মা তো এখানে নেই।

চলবে……?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here