জলনূপুর পর্ব ৯

0
647

#জল_নুপুর
#Sharifa_Suhashini
পর্ব – ০৯

কোথায় গেছে?

তুমি দেখনি? বাইরের বাগানে।

নবনী আর কথা বাড়ায় না ছুটে আবার বাইরে বেরিয়ে আসে উদাস হয়ে গাছে পানি দিচ্ছেন দুশ্চিন্তায় মগ্ন এই মানুষটা।নবনী কোন কথা না বলেই মাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। তরু বেগম ঘাড় ঘুরিয়ে পাস ফিরে তাকালে রে হোক তার চোয়াল এর কাছে মেয়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন।

কি হয়েছে?

নবনি মায়ের গালে আলতো করে চুমু খায় মেয়ের চোখে মুখে যে আনন্দ ঠিকরে পড়ছে তা তো ওর বেগম ঠিকই অনুভব করতে পারছেন। পর যেন তার নবনী হাসছে দুই চোখ চলাচল করে ওঠে নবনি সেভাবেই মাকে জড়িয়ে ধরে জানায়।

মা আমার মনে হলো আমাকে আমার বিয়ে করা উচিত।ছেলেটার সাথে মিশেছি হেঁটেছি ওর ধৈর্যের পরীক্ষাও আমি নিয়েছি।He is a nice guy.

তুই সত্যি বলছিস?

নবনী ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসির রেখা টেনে জবাব দেয়,

মা তুমি তোমার মেয়েকে খুব ভালো করেই জানো।আমাকে কেউ বিন্দুমাত্রও অসম্মান করবে এমন ব্যক্তি স্থান থেকে আমি শত মাইল দূরে সরে যাই। রাতে আমার যেটা ঘটেছে তার জন্য আমার বিন্দুমাত্র আফসোস নেই কিন্তু আমানও যদি সেই একই পথে হাটে তবে আমি হয়তো থেমে যাবো।বারবার মানুষকে ভরসা করা যায় না এতটা সহ্য ক্ষমতা আল্লাহ কোন মানুষকে দেন নাই আর এই বিষয়টা জেনে বুঝেই আমি আমান ফাহমিকে কাছ থেকে জানার চেষ্টা করেছি।তার সম্পর্কে যথেষ্ট খোঁজখবর নিয়ে তবেই আমার এই সিদ্ধান্ত।

তোর সিদ্ধান্তে আমি ভীষণ খুশি হয়েছি মা আমার ফোন কই? ফোনটা দে না। আমি এখনই কল দিয়ে তোর বাবাকে খুশির খবরটা জানাতে চাই।

মায়ের খুশি দেখে নবনী মুচকি হেসে মাকে মোবাইল ফোনটা এগিয়ে দিয়ে নিজের ঘরে ফিরে আসে। ঘরে ঢুকেই সে জানালার পর্দা সরিয়ে দেয়। যেভাবে শাড়ি পড়েছিল সেটা সেভাবেই পড়ে জানালার পাশে এসে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ে। সন্ধ্যার নেমে আসা আলো যেন ঠিকরে পড়ছে ওর জানালায়।বাগান থেকে তার মায়ের লাগানো বেলফুলের স্বরূপ ভেসে আসছে।মুখের মুহূর্তে নবনীর সুখে যেন মরি মরি অবস্থা সে আবার নতুন করে নিজেকে সাজিয়ে তুলবে, নিজেকে ভালবাসবে।বাসাবে, আর ভালবাসবে- আমান ফাহমিকে, বাসাবে।সে নিজের ডায়েরিটা বের করে নিজের একান্ত ব্যক্তিগত কিছু কথা সাজাতে শুরু করে শব্দের মায়াজালে।

নতুন করে কারো সাথে জীবন সাজাতে হবে একথা সাত স্বপ্নেও ভাবিনি।একবার ভয়ংকর ভাবে অপমানিত হবার পর আমি মানুষকে বিশ্বাস করতেই ভুলে গেছিলাম। আমান ফাহমিকে জানার পর আমার সিদ্ধান্ত পাল্টাতে বাধ্য হলাম।মানুষটাকে প্রচন্ড ভালো বলবো না।তবে মানুষকে সম্মান দেবার অভ্যাসটুকু তার মধ্যে আছে আর আমি আমার লাইফ পার্টনারের থেকে ঠিক এইটুকুই সবার আগে চাই।আমি জানি, আমান আমাকে কখনোই কোন বিষয়ে না করবে না।কিন্তু নিজের পরিচয়টা আমাকে ধরে রাখতে হবে। বর্তমানে আমি যে জবটা করছি বেশ ভালো এটা আমি ছাড়তে চাই না।এই চাকরিটা আমার কয়েকটি পরিচয় অথচ আমানের এই নিয়ে বিন্দুমাত্র সমস্যা নেই এ যোগ্য পুরুষ আমি আর কোথাও পেতাম,খোদা?বলে দিতে পারো আমি এই মানুষটির সাথে সারাজীবন থাকতে চাই,সারাটা জীবন।

ডাইরি লেখা শেষ করে সে আবার জানালা লাগিয়ে দেয় তারপর ঘরে মোবাইলের মৃদু আলো দিয়ে একটানে নিজের শাড়ি খুলে ফেলে সে।এই শরীরে এক সময় অন্য পুরুষের স্পর্শ লেগেছিল।সেই দাগ তুলে ফেলার ক্ষমতা ওর নেই। তবে সম্ভব হলে তাই করতো অতীত সুন্দর হলে তাকে আকড়ে ধরে বাঁচতে ইচ্ছে করে।কিন্তু সেই অতীত যদি মানুষের জীবনের সমস্ত খুশী টুকুই কেড়ে নেয় তবে অতীতের সেই স্মৃতির ব্যবচ্ছেদ করে নেওয়াটাই উত্তম।

নবনির নিজের শরীরের প্রতি খুব বিরক্ত লাগছে হঠাৎ এইখানে যে নকিবের ছোঁয়াজ ও লেপটে আছে তা সে কিভাবে কাটাবে?ওর খুব ইচ্ছে চামড়াগুলো খুলে ফেলে দিতে কিন্তু তাই কি সম্ভব!

ওয়ে এক মিনিট!এসবের দরকারই বাকি!যদি ভালবেসে শরীর ও একটি বিশাল অংশ জুড়েই জড়িত।ভালোবাসা শরীর না থাকলে মানুষ আর কি বাচ্চা না হওয়ার অপরাধে এই যে কিছু ডিভোর্স দেয়? বা স্বামী স্ত্রী কারো একজনের ত্রুটি থাকলে অন্যজন কি এভাবে পরকীয়ায় শক্ত হয়?

ইশশ!পৃথিবীর সমস্ত নেগেটিভ চিন্তা মাথায় এসে ভর করছে ওর।

আমি কি বেশি খুশিতে পাগল হয়ে গেলাম নাকি ভয়ে আবোল তাবোল ভাবছি আমার আমাকে ভালবাসে সত্যিই ভালোবাসে,ওর আমার প্রতি ওর অনুভূতিগুলো এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর অনুভূতির একটি।

নব নিয়ে আয়নার দিকে আরো একটু ঝুঁকিয়ে এগিয়ে গেল। হঠাৎ আয়নার সামনে আপছা অন্ধকারে নিজেকে রুদ্ধশ্বাসে দেখতে ওর ভীষণ ইচ্ছে করছে।

নিজের এই বিচ্ছিরি ইচ্ছের প্রতি আজ তার ঘৃণা নেই বরং অদ্ভুত এক ভালো লাগা কাজ করছে। এই বুকেই সে আমাকে জড়িয়ে রাখতে চাই ঠিক যেন গভীরে। যেখানে তাকে জড়ালে হাজার বছর বাঁচতে ইচ্ছে করবে একসাথে চলতে ইচ্ছে করবে।

অন্যদিকে আমান ওকে নিয়ে কি মহা স্বপ্ন গুনছে কে জানে! এই মানুষটার বাচ্চা আমি দেখতেও ভালো লাগে খুব।

দুই পক্ষ থেকে বিয়ের কথা পাকাপাকি হয়ে গেল তবে ছেলেপক্ষে এবার আর মেয়ে দেখতে গেল না।একই মেয়ে বারবার দেখতে আসার নাটক করতে আরমান সাহেব পছন্দ করেন না। তার উপর আমাদের কারণে তো আরো নয় হোসেনকে ঠিকই যথেষ্ট খোঁজখবর নেয়ার অনুরোধ তিনি করেছেন।যদিও ফরিদ হোসেনের এসব নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই।ঋতুকে সেই দেখতে আসার দিনই এই পরিবার সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা তিনি পেয়েছেন।নিজের মেজ শালা বাবুকে নিজ দায়িত্বে ভালো-মন্দ যাচাইও করিয়েছেন। চারপাশের এত ইতিবাচক দিকের মধ্যে নেতিবাচক দিকগুলো খুঁজে পাওয়া যায়?

আজ রাতে আমান এবং নবনির বিয়ে বাড়ির গেটের সামনে বড় করে ফুল দিয়ে সাজিয়ে লেখা হয়েছে “নবনী ওয়েডস আমান”।

গতকাল থেকে টুকটা আত্মীয়-স্বজন আসা শুরু করেছেন। যদিও নবনি চাইনি তার এই দ্বিতীয় বিয়েতে আত্মীয়রা কেউ আসুক। কিন্তু ফরিদ হোসেন একান্ত কাছের মানুষগুলোকে বাদ দিতে পারলেন না।

পরিদেশন সবাইকে বলে দিলেন অতিথীদের খাতির যত্নে যেন ত্রুটি না হয়। বেয়াই তার এই শহরের সবচেয়ে ভদ্রলোক।

সন্ধ্যার পর পরি বরযাত্রী এসে হাজির হবে আর মাত্র কিছুক্ষণের অপেক্ষা। নবনীকে লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ানো হচ্ছে।কিন্তু ওর সবকিছু কেমন যেন লাগছে যেন কিছু একটা এলোমেলো হচ্ছে নবনীর কেমন যেন ভয় ভয় করতে লাগলো। শাড়ি পরানো যখন অর্ধ থেকে এসে দাঁড়ায় নবনির মোবাইলে টোন করে একটা শব্দ হলো।রিতু বোনের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে।

তোমার মেসেজ এসেছে আপা।

আমান ভাইয়া সেন্টে ফটো।

আচ্ছা দে কিন্তু ওয়াইফাই লাইন এ সকাল থেকে সমস্যা করছে এদিকে আমার ফোনেও তো ডাটা নেই তুই একটু হটস্পট দে তো।

ওসব পরে দেখলেও তো হবে এখনই তোমার ছবিটা দেখা লাগবে?

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here