#অন্তঃপুরে_দহন (পর্ব-7)
#আরশিয়া_জান্নাত
কাঁচের দেয়াল ঘেঁষে পানির গড়িয়ে পড়া দেখতে বেশ ভালো লাগে অন্তরার। কৃত্রিম ফাউন্টেইনগুলো আজকাল প্রায় রেস্টুরেন্ট এ থাকে। মানুষ আজকাল ফুডের চেয়ে বেশি ডেকোরেশনকেই প্রায়োরটি দেয়। অন্তরা অপরপাশের জানালা দিয়ে দেখে ব্যস্ত রাস্তার লম্বা গাড়ির লাইন। সাউন্ড প্রুফ হওয়ায় যানজটের শব্দ নেই তাই সেইসব দেখতে খারাপ লাগছেনা। অন্তরা এখন অছে উত্তরার একটি রেস্টুরেন্টে। সে চুপচাপ চারপাশ দেখার মতো ভাবুক মেয়ে না। কিন্তু এখন এ ছাড়া কিছু করার নেই। সে এখানে এসেছে তার বাবার খাতিরে কোন এক ছেলেকে দেখতে। তাঁর মা তাকে বারবার করে নিষেধ করে দিয়েছে ফোনে ডুব না দিতে। তার মায়ের ধারণা ফোনে ডুব দিলে সে সব ভুলে ফোনেই পড়ে থাকবে। ছেলেকে আর দেখবেনা। তাছাড়া এটা নাকি ব্যাড ম্যানার্স! অন্তরা বুঝেনা এই যুগে এসেও ফোন হাতে রাখা ব্যাড ম্যানার্স কিভাবে হয়। তবে সে বাবার রেপুটেশন নষ্ট করতে একদমই ইচ্ছুক না। তাই লক্ষী মেয়ের মতোই বসে আছে। কিন্তু এমনভাবে সময় কাটে নাকি। কোথায় সেই সুপাত্র! সময়ের কোনো হুঁশ নেই নাকি?
এক্সকিউজ মি। মিস অন্তরা?
হুম।
আমি নাহিদ। আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। অনেক লেট করে ফেলেছি। প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড।
অন্তরা মনে মনে বললো, আসছে মনু মোরে দুঃখিত কইতে। কপাল ভালা তোমার বাপের লাইগা চুপচাপ আছি নয়তো অন্তরাকে অপেক্ষা করানো! ব্যাটা সেই বাঁচা বেঁচে গেছস।
কিন্তু মুখে ভদ্রতার হাসি দিয়ে বললো, কোনো সমস্যা নেই। আমিতো বেকার মানুষ অফুরন্ত সময় হাতে নিয়ে বসে থাকি। এখানে ব্যস্তরা লেট করে আসলেও কোনো ক্ষতি নেই।
নাহিদ হেসে বললো, সুন্দরীদের খোঁচা হজম করতে পারা বেশ কঠিন দেখছি! তবুও দোষ যেহেতু করেছি নতশিরে মাথা পেতে নিলাম। আগে কিছু অর্ডার করি? বাই দ্য ওয়ে আপনাকে ছবিতে যেমন দেখেছি আপনি তেমন না।
ছবিতে ফিল্টার মেরে সুন্দরী হয়েছি বাস্তবে জরিনা। এমনকিছু?
হাহা আপনি বেশ মজার তো। আমি সেটা বুঝাই নি। আপনি ছবির চেয়ে বাস্তবে অনেক বেশি স্নিগ্ধ।
তাই নাকি!
জ্বি একদম।
ধন্যবাদ।
ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম।
আপনার হাইট কত বলুন তো?
কেন দেখে বোঝা যায় না?
5’8″?
বাহ বেশ তীর্যক নিশানা। একদম বরাবর গেঁথেছেন।
আন্দাজে মাঝেমধ্যে ঢিল লেগে যায় আর কি।
আচ্ছা এবার কাজের কথায় আসি। আমার সম্পর্কে আপনার কোনোকিছু জানার থাকলে জিজ্ঞাসা করতে পারেন। তবে শুরুতে আমি নিজে কিছু বলে রাখি। আমি কলেজ লাইফে একজনকে অসম্ভব পছন্দ করতাম। সে আমার ক্লাসমেট ছিল। বলা বাহুল্য আমাদের দেশে একই ক্লাস বা এইজের ছেলেমেয়ের রিলেশনশীপ বেশিদূর এগোতে পারেনা। আমারটাও পারেনি। আমি স্টাবলিশ হতে হতে সে দুই সন্তানের জননী হয়ে গেছে। আমার প্রাক্তন বলতে ওই একজন।
এরপর আর কেউ আসে নি!
আসেনি বলা যাচ্ছে না তবে আমিই আর জায়গা দেই নি।
আচ্ছা! আমি আপনাকে একটা প্রশ্ন করবো আপনার উত্তরের পর আপনি চাইলে সেইম প্রশ্ন আমাকেও করতে পারেন। তবে এই প্রশ্নের উত্তরটা আপনি আপনার মতো করে দিবেন। সাজিয়ে গুছিয়ে এক্সট্রা কিছু বলার দরকার নেই।
আ’ম ফিলিং নার্ভাস! সিরিয়াস কিছু?
বি ইজি! প্রশ্নটা আহামরি না।
ওকে ফাইন। জিজ্ঞাসা করুন তবে,
আপনার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড বা ক্যারিয়ার বাদে কোনো মেয়ে আপনাকে কেন বিয়ে করতে চাইবে? আই মিন একটা সাধারণ নাহিদের ব্যক্তি হিসেবে কি কি গুণ আছে যা একটা মেয়েকে আকর্ষণ করবে?
দুই মিনিট ভাববার সময় দেওয়া যাবে?
জ্বি অবশ্যই আপনি ভেবে বলুন।
দেখুন মিস অন্তরা একটা ছেলের যে জিনিসটা সবাই দেখে তা হচ্ছে তার ক্যারিয়ার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড আর ক্যারেকটার। আপনি এখানে দুটো অপশন বাদ দিয়েছেন মানে আপনি ব্যক্তি নাহিদকে জানতে চাইছেন। ব্যাপারটা প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য I must say!
আমি মানুষ হিসেবে খুব সাধারণ আহামরি কিছুই নই। হাজবেন্ড হিসেবে মেয়েরা কেমন ছেলে চায় আমি জানিনা তবে আমি একজন হেল্পফুল, সাপোর্টিভ ছেলে। যেকোনো পরিস্থিতিতে পজিটিভ থাকতে পারি, অন্যকে মোটিভেট করতে পারি। আর আমার খারাপ কোনো নেশা নেই।আমি মেয়েদের সম্মান করি, ছোটবড় সকল শ্রেণীর মানুষকে শ্রদ্ধা করি। আমি নিশ্চিত আমার স্পাইউজ আমার কাছে অসম্মান পাবে না। মুদ্রার উল্টোপিঠের মতো কিছু খারাপদিক আছে যার মধ্যে অন্যতম হলো আমি মিথ্যা বলা একদম পছন্দ করিনা, মিথ্যাবাদীকে ক্ষমা করি না ।যে আমাকে ধোঁকা দেয় আমি তাকে আজীবনের জন্য বয়কট করি। অল্পতেই রাগ করিনা তবে রেগে গেলে সামলানো কঠিন।
জানি না এইসব এনাফ কি না আমাকে চুজ করার জন্য আপাতত এইসবই মনে এলো।
রেগে গেলে মারধর করেন নাকি? বৌ পেটানোর মতলব আছে?
হাহাহা সব রাগ কি মারলেই প্রকাশিত হয়? মানুষের রাগ প্রকাশের বিভিন্ন সিস্টেম আছে।একটা এডুকেটেড ছেলে দেশের আইন জেনে জ্ঞাতার্থে এইসব করবে না নিশ্চয়ই!
আমার প্রশ্ন শেষ। এবার আপনার প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন।
আপনি ডালা শাড়ি পড়তে পারেন? গাঁয়ের মেয়েরা পড়ে যে ঐভাবে?
অন্তরা অন্যদিকে ফিরে মুচকি হাসলো। নাহিদ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো তার দিকে।
।
।
অনীলের চেহারায় বিরক্তের রেশ ফুটে ওঠলো রিসিপশনিস্টের কল পেয়ে। সে গলার টাই ঢিলে করতে করতে ওয়েটিং রুমে বসে থাকা ছেলেটাকে ইশারায় বের হতে বললো।অফিস থেকে বেরিয়ে পাশের কফিশপে বসলো দুজন। অনীল অনেকটা রেগেই বললো, কতবার নিষেধ করেছি অফিসে আসতে। তারপরও কেন আসো?
আপনি ফোন রিসিভ করেন না কেন? ফোন রিসিভ করলে তো আর আসতাম না! আমার এতো শখ নেই আপনার অফিসে বসে অপেক্ষা করার।
কল করার সময় টাইম দেখো? কমনসেন্স আছে তোমার? কখন কল করতে হয় বুঝো?
সেসব বুঝে আমার কাজ নেই। আপনি আমার কল রিসিভ না করলে অফিস কেন প্রয়োজনে আমি আপনার বাসায়ও যাবো।
অনীল রাগে কটমট করতে লাগলো। কিন্তু সেটা সেই ছেলেটা পাত্তা দিলো না। সে শার্টের কলারটা একটু পেছনে ঠেলে দিয়ে আরাম করে হেলান দিয়ে বসলো। তারপর বললো, বিশ হাজার টাকা লাগবে বলেছিলাম। দিচ্ছেন না কেন?
টাকা কি গাছে ধরে? বললেই ছিঁড়ে দিয়ে দিবো?
এতো বড় কোম্পানির ম্যানেজার এসব বললে খাটে? এতো হিসেবনিকেশ না করে যা চাইছি দিয়ে ফেলুন। অযথা অপেক্ষা করাবেন না।
অযথা না। এই মাসে আর পাবেনা। আগামী মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করো। ব্যবস্থা করতে পারলে আমি নিজেই পাঠিয়ে দিবো। তোমার আসতে হবে না।
সেটা সিচুয়েশন ডিমান্ড। আপাতত কিছু বলতে পারছি না। খালি মুখে বসায়া রাখবেন না। কিছু অর্ডার দেন। গুণীজন ঠিকই বলেছেন। আল্লাহ যাকে ধন দেয় তাকে মন দেয় না। সেই ধনী ব্যক্তিদের থেকে খুঁজেই খেতে হয়। চোখে লাজশরম রেখে লাভ নাই।
অনীল ওয়েটারকে ডেকে খাবার অর্ডার দিলো তারপর বিল পে করে চলে গেল। ছেলেটা ফোনে ভিডিও দেখতে দেখতে বার্গারটা মুখে দিয়ে বললো, দামী বার্গারের টেস্টই আলাদা! উমম সেই খাইতে।
অনীল স্মোকিং জোনে একটার পর একটা সিগারেট টেনেই যাচ্ছে। এই অশান্তিটা কিভাবে মিটমাট করবে সে? গলায় কাঁটার মতো বিধে আছে যেন! নাহ এভাবে চলবেনা। কিছু একটা করতেই হবে
চলবে,,